Mahmood Khan
পৃথিবীর মুসলমানদের কাছে মক্কার পবিত্র কাবা গৃহের পর মদিনার মসজিদে নববী হচ্ছে সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। মদিনা মসজিদকে মসজিদে নববী বলা হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার পর সেখানে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মদিনায় হিজরতের পর নবাগত মুসলমানদের সার্বিক শিক্ষা বা তালিমের কার্যক্রম এ মসজিদেই সম্পন্ন হতো। রাসুল (সা.) কর্তৃক নির্মিত এ মসজিদটি আজো তার পবিত্র স্মৃতি বহন করে আছে।
অনেক আরব ঐতিহাসিক মদিনা মসজিদের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে বালাজুরী অন্যতম। তার মতে, মহানবী কর্তৃক মদিনা মসজিদ ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। মসজিদটি নির্মাণ করতে ৭ মাস লেগেছিল। ঐতিহাসিক ইবনে হিশামের মতে, ৭ মাসের অধিক সময় এবং ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয়।
বিভিন্ন ঐতিহাসিকের বর্ণনা থেকে যেটা প্রতীয়মান হয় তা হচ্ছে, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। মদিনা মসজিদের মাধ্যমে ইসলামী শিল্পকলার প্রকাশ ঘটে। মহানবী (সা.) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামে ২ বালকের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেন। অতঃপর মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিটি কোণ থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র।
বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ হয় ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এ রৌদ্র শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যকা থেকে আনীত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদ শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছ স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদ সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার ওপর কাদামাটির আস্তরণ দেয়া হয়েছিল। সে সময় মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। বর্তমানে মদিনা মসজিদ আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত ও নতুন ডিজাইনে নির্মিত।
প্রাচীন মদিনা মসজিদের পাশেই ছিল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাসগৃহ। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরতকারীদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ ও মুসলমানদের নামাজের সুব্যবস্থার নিমিত্তে জমি ক্রয় করা হয়। যার বৃহদাংশে মসজিদ ও অল্পাংশে হুজরা নির্মিত হয়। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজে হাত দেন। মহানবী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত, মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পৃথিবীর মানচিত্রে ‘মদিনা’ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এ স্বাধীন মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি মসজিদে নববী থেকেই ইসলাম প্রচার, রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৬৩ বছর জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ওফাত করেন।
পবিত্র মদিনা মসজিদটি মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর হজরত ওমর (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করেন।
তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণ দিকে ১০ হাত, পশ্চিম দিকে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হজরত ওমর (রা.)-এর সময় মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত, পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত। হজরত ওসমান (রা.)-এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুর পাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদে নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশা আবদুল আজিজ ইবনে সউদ। সব মিলিয়ে মদিনা মসজিদেই মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।