নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
সেদিনও যখন ঢাকার বাইরে যাচ্ছিলাম। তেজগাঁ নাখাল পাড়ায় লাইনের দু পাশের বস্তিতে পোড়া প্লাস্টিকের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তারপর আধা ঘন্টার মধ্যে শহর থেকে ছবির মত গ্রামের দৃশ্য ঢুকে গেলাম। অবারিত ক্ষেত। দিগন্তে মিলিয়েছে বিশুদ্ধ নীল আকাশ।
ঘরগুলো মাটির বা টিনের। সোঁদা মাটির গন্ধ মিশে আছে বাতাসে। মাটির পথে সাইকেলের আনাগোনা। ফেব্রুয়ারী মাস। ধানের চারা লাগানো হয়েছে মাত্র।
সেঁচ দিচ্ছে কৃষকেরা। কাদা পায়ে দলবদ্ধ ভাবে ব্যস্ত। সাদা সারস বিলের ভেতর দাঁড়িয়ে মাছ ধরছে। শিশুরা হাফপ্যান্ট আর খালি গায়ে দৌড়ে এল ট্রেনকে পাল্লা দিতে।
উড়ন্ত পাখিদের মতো উপর থেকে দেখার মত সেই দৃশ্য।
রঙগুলোতে কোন খাদ নেই - চলমান জীবনের সুখ মুগ্ধ করে দেয়। ছবি তুলে নিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু টেলিলেন্সটা জুম করলেই দেখা যেত খেতে পানি দিচ্ছে কংকালসার বাহুর কিষাণ আর বধুরা যে ঘাটে আসছে তার শাড়ীট আগের মতই সুতো ওঠানো। শিশুদের কোন শিক্ষা নেই। বাবার সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করতে এসে ট্রেনের আসা যাওয়াই একমাত্র বিনোদন।
গ্রামে দাদন ব্যবসা বাড়ছে বহুগুণ। কাবুলীওয়ালা আসছে। তার চেয়ে বেশী আসছে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক ও এনজিও । চড়া সুদে বন্ধাকৃত এসিআই বীজ কিনছে ফলন বাড়াতে। জেলে মাছ ধরছে - উঠে আসছে আফ্রিকান রাক্ষুসে মাছ।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা ফুলে ফেপে উঠছে। অভাব মেটাতে ছোট ভাইকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। উত্তর বঙ্গে মহিষের গাড়ি নেই - নসিমন ভটভটি চালিয়ে স্বচ্ছল কৃষক আকাশ ধোঁয়া করছে। নদীতে জাটকা নিধন হচ্ছে এবং হবে আর যন্ত্রের নৌকা ডিজেল ছড়িয়ে চলে যাবে উপসাগরের তৈলাক্রান্ত পাখির মতো..
তবুও সান্ত্বনা - ধীর লয়ের প্রশান্ত এই গ্রামীণ সৌন্দর্য এখনো টিকে আছে। এই ন্যানো টেকনোলজীর রুক্ষ্ম সময়েও বাংলাকে আলাদা করে চেনা যায়।
নদীগুলো কেমিকেলে জর্জরিত হলেও বয়ে যায় ট্রেনের সেতুর নিচে। সৌভাগ্য যে সামান্য কিছু ডিজেল পোড়ালে শহর পেরিয়ে ওখানে বেড়াতে যাওয়া যায়। সানগ্লাস তুলে রোদ এবং গাড়ির স্মোকি কাচ তুলে ফুসফুসে অক্সিজেন ভরে নেয়া যায়।
তবে খুব বেশী দিন এমন করা যাবে না। ঢাকা থেকে মহাসড়কটা উদ্বোধন হওযার পরদিনই ডেভলপারেরা মানুষ তাড়াতে ছুটে আসবে।
গ্রামটাকে কামড়ে-খামচে-ছিঁড়ে-খুড়ে মডেল টাউন করতে শুরু করবে। তখন আরও দুরে কোথাও গ্রাম খুঁজতে যেতে হবে।
--
ড্রাফট ১.০/ কমেন্ট করেছিলাম জুনের ব্লগে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।