আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তবুও শান্তির পায়রা উড়াতে হবে

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন ধরণের অপতৎপরতা চালিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট এই রাজনৈতিক দলটি নিজেদের অপরাধী চেহারা লুকাতে দেশে বিদেশে প্রচুর অর্থ ব্যায় করেছে, অবশ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া অনুদান এবং দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে উপার্জিত অর্থের প্রাচুর্য থাকায় দলটির নোংরা অপরাধী চেহারা লুকানোর প্রয়োজনীয় অর্থের কোনো অভাব ছিলো না। বিচারের রায়ের দিন এগিয়ে আসার পথে তারা পরিকল্পিত উপায়ে ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে বিচারপতি নাজিমুল হকের ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে তথ্য চুরি করে ,নিজামুল হকের ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করে সেসব তথ্য সরবরাহ করে বিদেশে ইকোনমিস্ট পত্রিকায় এবং দেশে আমার দেশ পত্রিকায় তারা এসব তথ্যের বিস্তারিত প্রদান করে। আমার দেশ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজামুল হক এবং জিয়াউদ্দিনের ব্যক্তিগত কথপকথনের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করে এবং উদ্ভুত বিতর্কে নিজামুল হক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে এরই ভেতরে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষত পুলিশের উপরে চোরাগোপ্তা সহিংস হামলা চালাতে থাকে, তাদের সন্ত্রাসী আক্রমনে হতাহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। এমন কি তারা কারওয়ান বাজারে একজন যুব লীগ নেতাকে জবাই করার চেষ্টা করে এমন একটি হরতালের দিন।

এমন পরিকল্পিত সহিংসতার মাধ্যমে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়াকে থামাতে ব্যর্থ হয়ে কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার আগের দিন দেশ জুড়ে হরতাল প্রদান করে এবং ব্যপক ভাঙচুর করে। এমন পরিকল্পিত নাশকতামূলক কর্মকান্ডের পরিকল্পনার তথ্য বিভিন্ন সময়ে আটক শিবির কর্মীদের কাছে পাওয়া গেলেও তাদের নিবৃত করা সম্ভব হয় নি। কাদের মোল্লার ঔদ্ধত্বে ক্ষুব্ধ তারুণ্য শাহবাগ মোড় অবরোধ করে গণজাগরণ মঞ্চ শুরু করার পর দেশের সাধারণ মানুষেরা এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে । সাধারণ মানুষের সচেতণ অংশগ্রহন প্রমাণ করেছে ১৯৭১ এর সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, এদের অধিকাংশ পরিবারই একাত্তরের ক্ষত নিয়ে জীবনযাপন করছে, এদের স্বজন নিহত হয়েছে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রাজাকার বাহিনীকে যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারের ক্ষমতা অর্পন করেছিলো, রাজাকার বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের আঁচড় লেগে আছে এইসব পরিবারের স্বজনদের গায়ে, তাদের বসতভিটা লুণ্ঠিত হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরে অত্যাচার হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যকে অপহরণ করা হয়েছে, ব্যক্তিগত বিদ্বেষে এদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে এবং এরাই নিয়মিত নারী নির্যাতন করেছে।

এইসব পরিবারের সদস্যদের মন থেকে একাত্তরের অত্যাচারের ন্যায়বিচারের দাবি মুছে যায় নি, তারা সব সময়ই তাদের উপরে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার প্রতিকার চেয়েছে। শুধুমাত্র বাঙালী হওয়ার অপরাধে, শুধুমাত্র স্বাধীকারের বিশ্বাস করার অপরাধে কত মানুষকে খুন করা হয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই, এসব বেসামরিক মানুষের একমাত্র অপরাধ ছিলো তারা বাঙালী আর তারা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্নে বিশ্বাস করতো, বিশ্বাস করতো স্বাধীনতা অর্জন করলে তাদের সকল অভাব দুর হয়ে যাবে,তাদের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। সাঈদীর বিচারের রায়ে এই সাধারণ মানুষের উল্লসিত হয়েছিলো তবে রায় ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত শিবিরের প্রশিক্ষিত গুন্ডাবাহিনী যেভাবে দেশের আনাচে কানাচে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিলো সাধারণ মানুষের এই উল্লাস বিষদ ও আতংকে পরিণত হতে বেশী সময় লাগে নি। তারা পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করেছে, হত্যা করেছে পুলিশ বাহিনির সদস্যদের, তারা সংখ্যালঘুদের বসতিতে আগুণ জ্বেলেছে, তাদের মন্দির ভেঙেছে, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের নামে তারা ধর্মীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে দেশজুড়ে। পুলিশ সাধারণ মানুষ ও নিজেদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে কঠোর হয়েছে, সরাসরি সংঘাতে আক্রমণকারী শিবিরের কর্মীরা মৃত্যুবরণ করেছে, প্রতিটি মৃত্যুই অনভিপ্রেত তবে সমাজের বৃহত্তর প্রয়োজনে দেশের অপরাপর মানুষের প্রাণ রক্ষার্থে মাঝে মাঝে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যায়।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, জেহাদ আর শ্রেণী সংগ্রামকে এক করে দেখা চতুর মার্কসবাদী ব্যবসায়ী ফরহাদ মজহার জামায়াতের সমর্থক গণমাধ্যম পুলিশী আগ্রাসনকে পরিকল্পিত গণহত্যা বলেছে, ফরহাদ মজহার আমার দেশের কলামে বলেছেন যে হত্যাকাণ্ড চলেছে, তার সঙ্গে পাকিস্তান আমলেরও তুলনা করা চলে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ বছরে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এত মানুষ হত্যা করেনি, যত মানুষ শেখ হাসিনার সরকার শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে খুন করেছে। সরকার সমর্থিত পত্রিকাগুলো তথ্য গোপন করলেও গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০ ছাড়িয়ে গেছে কোনো একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় কিংবা তাদের গোত্র পরিচয় নির্দিষ্ট করে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনাকে গণহত্যা বলা যায় কিন্তু গতকাল, গত পরশু কিংবা আজ পুলিশের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত মানুষদের আক্রমন নস্যাত করার প্রচেষ্টায় হতাহত মানুষদের পুলিশ খুঁজে খুঁজে হত্যা করছে এমন না, বরং উল্টোটাই সত্যি, পুলশের ছোটো ছোটো টহল দলকে এরা আক্রমণ করছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রেল লাইন উপড়ে ফেলে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাহীন করে ফেলার অপচেষ্টা প্রতিরোধ করছে পুলিশ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার প্রয়োজনে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে, এই সত্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জানলেও বিশ্বাস করে না জামায়াতের সমর্থক গণমাধ্যম আর বিশ্বাস করে না জামায়াতের টাকা পাওয়া বিদেশী গণমাধ্যম। তারা বিভিন্ন ভাবে এই পরিকল্পিত আগ্রাসনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।

খালেদা জিয়া যেভাবে গণজাগরণ মঞ্চকে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করে গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিহত করতে চাইলেন তাতে আশংকা রয়েই যায়, তারা যদি জামায়াতের সাথে জোট বেধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণজাগরণ মঞ্চকে আক্রমণ করেন তাহলে এইসব সাধারণ মানুষেরাই আক্রান্ত হবে। গণজাগরণ মঞ্চ খালেদা জিয়াকে সহিংসতা ও অকারণ হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে গতকাল, তবে আপোষহীন নেত্রী এই আহ্বানে সাড়া দিবেন না, তিনি পণ করেছেন তিনি তারা আপোষহীনতা সাথে নিয়ে নর্দমায় ভাসবেন। তাকে এ পথ থেকে কোনো আহ্বানই ফেরাতে পারবে না। নেত্রীর সবুজ সংকেত পেয়ে অনেকেই গণহত্যা গণহত্যা চিৎকার করছেন, তারা আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করলেও বিষয়টা সত্য হয়ে যাবে না কিন্তু তাদের মৃতপ্রায় জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতির ফুটা পালে সে চিৎকারের বাতাস হয়তো সাময়িক গতি সঞ্চার করবে। তারা সহিংসতার হুমকি দিয়েছে, আজ সারাদিন বিভিন্ন মাত্রায় সহিংস আচরণ করেছে, আগামী ৩ দিনের হরতাল আরও বিক্ষুব্ধ, আরও সংঘাত মুখর হবে, আরও অনেক সাধারণ মানুষ হতাহত হবে, পুলিশের সাথে সরাসরি সংঘাতে আরও অনেক বিরোধী দলের কর্মী আহত নিহত হবে এবং এসবের প্রতিক্রিয়ায় আরও সহিংসতা ছড়াবে দেশজুড়ে।

দেশের মানুষ ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে পুনরায় এক ধরণের পরিকল্পিত সংঘাতের মুখোমুখি হয়ে গেলো। জনগণের প্রাণের দাবি উপেক্ষা করে ভোটের রাজনীতিতে ৩% ভোটের প্রত্যাশায় সরাসরি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মুঢ়তা শুধু আপোষহীন নেত্রীই দেখাতে পারেন। অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না কিন্তু সচেতন অন্ধতায়, সচেতন ভাবে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় সংঘাতের উস্কানি দিয়ে প্রলয়কান্ড ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে এইসব গণমাধ্যম। তারা এক ধরণের পরিকল্পিত রটনার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় আজ জাতীয় সংসদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব ও প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের পুত্র মাওলানা মামুনুল হক।

দেশে এক ধরণের অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্যোগ এবং এমন সন্ত্রাসের হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও এদের কাউকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এরা আরও সংগঠিত হয়ে আরও কয়েকজনকে নির্বিবাদে হত্যা করবে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের একজন কর্মীকে খুন করা হয়েছে, আজ হত্যাকারীরা গ্রেফতার হলেও হত্যাকান্ডের উদ্যোক্তা এখনও গ্রেফতার হয় নি। হত্যাকারীরা জানিয়েছে তারা এই হত্যার উদ্যোগ নিয়েছে আরও এক মাস আগে, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের সাথে রাজীবের সংশ্লিষ্ঠতা এই হত্যাকান্ডের প্রধানতম কারণ নয়, তাকে হত্যা করা হতোই, এবং তাকে হত্যা করে তার ব্লগ কিংবা ফেসবুকের স্ক্রীন শট দিয়ে দেশে একই রকমের ধর্মীয় সহিংসতা সৃষ্টি করা হতো। গণজাগরণ মঞ্চের উপস্থিতি রাজীবের মৃত্যুকে তরান্বিত করেছে কিন্তু অবধারিত করে নি মোটেও। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী না হলেও রাজীবের মৃত্যু অবধারিত ছিলো।

ভোটের রাজনীতিতে ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভুতি নিজের পক্ষে নিয়ে আসার রাজনৈতিক নোংরামির প্রয়োজনে রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে । যদি শাহবাগ গণ জাগরণ মঞ্চ জন্ম না নিতো তাহলেও এই রাজীবকে হত্যা করতো তারা। নির্বাচনের বছরে ভোটারদের মনোরঞ্জন, ভয়ভীতি প্রদর্শণ কিংবা তাদের সন্ত্রস্ত করার রাজনৈতিক নোংরামি সামনে আরও স্পষ্ট হবে। জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বিচারের রায় যেমনই হোক না কেনো সন্ত্রাসের ছুতো খুঁজে এমন সহিংসতার চর্চা করতোই। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতের প্রস্তুতি নিয়েছে, তারা প্রযুক্তকে ব্যবহার করছে, তারা এন্টি টিয়ার গ্যাস শেল নিয়ে নামছে রাস্তায়।

সাধারণ দোকানে এসব পাওয়া যায় না, তাদের কোথাও না কোথাও থেকে এসব সংগ্রহ করতে হয়েছে। তারা বিপুল পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে, গোলাবারুদ বোমা ককটেল মজুত করেছে, এসব উদ্যোগ কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রস্তুতি হিসেবে তারা গ্রহন করে নি। গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সংহতি প্রকাশ করা মানুষগুলো এখন এদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে, তারা ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্রাসন শুরু করেছে, অথচ ন্যায় বিচারের দাবি জানানো এইসব মানুষদের ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোটাকেও অপরাধ সব্যস্ত করা হচ্ছে। সহিংসতার হুমকি দিয়ে, প্রতিটি গণজাগরণ মঞ্চ রক্তের বিনিময়ে দখল করার শপথ প্রচার করে তারা মূলত আগাম বার্তা দিয়ে রাখলো একাত্তরের চেতনাকে গলা টিপে হত্যা করতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্ত নয়। গণজাগরণ মঞ্চ অহিংস মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের দেয়াল, এই দেয়াল দেশের সংস্কৃতি রক্ষা করতে চায়, এই দেয়াল প্রমাণ করতে চায় এখনও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী।

এভাবে হুমকি দিয়ে, ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে সহিংস করা যাবে না। তারা প্রতিরোধ করবে কিন্তু তারা সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হবে না। তারা শান্তি মিছিল করবে কিন্তু সে শান্তি মিছিল থেকে কেউই ধেয়ে যাবে না এইসব স্বাধীনতা ও একাত্তরের চেতনাবিরোধী অপরাধীদের দিকে। তারা প্ আঘাতের জন্যে প্রস্তুত হয়ে মাঠে নামবে কিন্তু পাল্টা প্রতিশোধ আর রক্তের নেশায় তারা অন্ধ হবে না। যদিও এই সহিংস দিনে শান্তির কপোত ওড়ানো বৃথা তারপরও গণজাগরণ মঞ্চ তার শেষ শান্তি প্রস্তাব পাঠিয়ে দিতে পারে বিএনপির মুক্তিযুদ্দের চেতনায় বিশ্বাসী সঙ্গীদের দিকে, বন্ধুর মতো যারা এত দিন গণজাগরণ মঞ্চের দেয়াল পাহাড়া দিয়েছে সেইসব ছাত্র দলের তরুণ বন্ধুর প্রতি তারা আহ্বান জানাতে পারে ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে এভাবে বন্ধুর পিঠে ছুড়ি মারা অপ্রয়োজনীয় সহিংসতা।

আমরা এর বাইরে গিয়েও এক ধরণের নতুন সমাজ নির্মাণ করতে পারি। তারা বিএনপির প্রতি খোলা চিঠি পাঠাতে পারে গণমাধ্যমে, তারা খোলা চিঠিতে লিখতে পারে মাননীয়া প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান নেতা ও নীতিনির্ধারক সমীপে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। তারা স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সংগঠন যারা বিশ্বাস করে একাত্তরের পাপ ধুয়ে মুছেই শুধুমাত্র একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী শোষণ ও বৈষম্যহীন সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব। ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির সাথে জামায়াতের জোটবদ্ধতা এক ধরণের দু:খজনক বাস্তবতা কিন্তু এই দলটির উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন তাদের অনেকেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের এই গৌরবোজ্জল ভূমিকার কারণে সাধারণ তরুণদের একাংশের প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের সাথে বিএনপির রাজনৈতিক মৈত্রিত্ব বিষয়ে বিএনপি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের উদাসীনতায় আমরা মর্মাহত। আমরা বিশ্বাস করতে চাই বিএনপিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তারা বিশ্বাস করে ভোটের রাজনীতি বিবেচনা করে বিএনপি যেভাবে জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী এই অবস্থান বিএনপি উপলব্ধি করবে এবং জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধতা ভেঙে তারা তরুণদের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি উৎকৃষ্ট রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করবে।

আমরা তরুণেরা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নির্মাণে আগ্রহী এবং আমরা শ্রেণী-বর্ণ-পেশা লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক যারা একাত্তরের চেতনা নিজের ভেতরে ধারণ করে তাদের ঐক্যবদ্ধতায় বিশ্বাসী। আমাদের সামনে লড়াই স্পষ্ট, আমাদের প্রতিপক্ষ চিহ্নিত, আমরা জানি গত ৪২ বছরেও যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের সহযোগী অঙ্গ সংগঠনগুলো এখনও একাত্তরের অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় আস্থা স্থাপন করে নি, তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে না, তারা একাত্তরের মতো এখনও ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যার বৈধ্যতা দিতে আগ্রহী। আপনারা যাভেবে গণজাগরণ মঞ্চকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে গণমাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি বিষেদাগার করছেন তাতে আমরা মর্মাহত। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা আপনাদের ভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের অংশগ্রহণেই সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব।

আপনারা ধর্মপ্রাণ মানুষ ও মুসুল্লিদের উপরে হামলার প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেছেন কিন্তু একই সাথে ধর্মপ্রাণ মানুষদের উপরে হামলা চালানো দলটিকে নিজেদের রাজনৈতিক জোটের অংশীদার করে রেখেছেন, আপনারা ধর্মীয় সহনশীলতা ও ধর্মীয় অনুভুতিকে শ্রদ্ধা জানানোর দাবি উত্থাপন করেছেন অথচ আপনাদের চার দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিকে অশ্রদ্ধা করেছে। তারা সাধারণ মানুষের উপরে যে নৃশংস আগ্রাসন চালিয়েছে সেটা সাধারণ মানুষের অবগত। আপনারা ক্ষমতার লোভে দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, এই ভ্রান্তি স্পষ্ট দেখছে আজকের তরুণেরা। তারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তাদের এই ক্ষোভ প্রকাশিত হবে আগামি নির্বাচনে, তরুণ ও দেশের সাধারণ মানুষের অনুভুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে আপনাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটবে।

আপনাদের প্রতি অনুরোধ এই রাজনৈতিক আত্মহত্যার পথ ছেড়ে আপনারা সাধারণ জনগণের অনুভুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। আপনারা আমাদের কাতারে এসে দাঁড়ান আমাদের সহযোগী হয়ে, আমরা সকলে মিলে যুদ্ধাপরাধের পাপমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবো। জানি বিএনপি এই আহ্বানে সাড়া দিবে না, কিন্তু তারপরও সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাক গণজাগরণ মঞ্চ কখনও কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পোষা বাঁদর হয়ে তাদের ভোট বাড়ানোর অপচেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত রাখে নি। তারা যুদ্ধাপরাধ বিরোধী সকল মানুষের ঐক্যের ডাক দিয়েছিলো। তাদের বাড়ানো হাত অবজ্ঞা করেই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি যুদ্ধাপরাধীদের সাথে গাঁটছাড়া বেধেছিলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।