সব মানুষের কাছেই তার মাই পৃথিবীর সেরা মা। এই দাবি কেউ যদি করে যে আমার মাই জগতের সেরা, অন্য মাতৃপ্রেমীরা ক্ষুব্দ হন বলে আসম জানি না। সবাই বোঝেন এটা একক ব্যক্তিগত অনুভূতি যা সর্বজনীনসত্য।
আমার মা কিন্তু সত্যিই সেরা মা।
আমার ভাইয়ারা সবাই উচ্চশিক্ষিত।
বড় ভাইয়া প্রাইভেট উউনিভার্সিটিতে পড়ার নামে বাবার বারো লাখ টাকা উড়িয়েছেন। উড়িয়েছেন বলছি একারণে যে এই বিদ্যার্জন প্রকৃথ শিক্ষায় রূপ নেয়নি। এক স্যারের(হাইস্কুল) মেয়েকে ভাগিয়ে বিয়ে করে তিনি এখন বিশাল ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন। আর সপ্তাহের একদিন ; বৃহস্পতিবার ক্লায়েন্টজাতীয় লোকদের সঙ্গে ফাইভস্টার হোটেলে রাত কাটান। এই বয়সে নাকি এসব এনজয় করতেই হয়।
কিছুদিন আগে মা একটা মশারি কেনার জন্য ভাইয়ার কাছে কিছু টাকা চাইলে ভাইয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেয় এই মুহূর্তে তার হাতে টাকা নাই। বেতন পেলে...
বেতন আর তার পাওয়া হয় না। ছোটভাইটা পড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, গতমাসে নিয়েছে ৭হাজার, এমাসে নিল চার হাজার। প্রতিমাসে নেয় তিন হাজার। সেও পড়ছে আর মাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সে ভাইয়ার মতো হবে না...
অনেকদিন পর ভাইয়া বাড়ি এলো।
আমার এক বোনের ছেলেকে দেখতে। খালি হাতেই এলো। অজুহাত সেই আগেরটাই। বেতন পায়নি। মার কাছে টাকা চাইলো।
মা টাকা দিতে পারল না। শেষে বোনের স্বামীর কাছ থেকে দুশ টাকা ধার নিয়ে দিল। তাই দিয়ে বাচ্চার জন্য একটা ড্রেস নিয়ে এলো এবং কৌশলে কতবার যে বলল, জিনিসপত্রের দাম কীভাবে বাড়ছে! এই একটা প্যাকেট নিল ২২০টাকা!
পরদিন আবার পাঁচশ টাকা নিল ধার। ক্রেডিটকার্ড /এটিএম কার্ড ভাঙিয়ে দিয়ে দেবে। শনিবার বলে বন্ধ! তাই সে ঢাকা গিয়ে পাঠিয়ে দেবে।
...
চলে গেলো ভাইয়া। মা সাতশ টাকার ঋণী।
ভাইয়ার চলে যাওয়ার পর আমার সঙ্গে বাধলো। আমি তাকে কোনওভাবেই বোঝাতে পারিনি যে এটিএম বুথ কখনই বন্ধ থাকে না। তার মতে আমি কী জানি!
বাবার স্বপ্ন ছিল আমাকেও উচ্চশিক্ষিত করবেন।
মা বললেন মেয়েকে পড়িয়ে কী লাভ! সেকি ইনকাম করে বাবা মাকে দেবে?
অতএব আমার পড়ালেখা বন্ধ হলো ইন্টারের পরই।
ভাইয়া তার বিয়েতে কাউকে রাখেনি। কাউকে রাখার প্রয়োজনও বোধ করেনি। তবু মা বাড়ির গাছ কেটে তার জন্য ফার্নিচার বানালেন। মেহগনি গাছের সুন্দর সুন্দর খাট দেখে এবং তার একমাত্র গলার চেইনটি বন্ধক রেখে মিস্ত্রীর বিল দেয়ায় আমার খুব রাগ লাগে।
মা বলে ও টাকা পেলে দিয়ে দেবে বলেছে। ...
আমার গলার চেইনটাও মা বন্ধক রেখেছিল ওর জন্য। আজও তা ফেরৎ আনতে পারেনি। কারণ আমার ভাইর এইমুহূর্তে হাতে টাকা নাই।
নানীর বেশ খানিকটা জমি আছে, ভাইয়া জানিয়েছে অফিস থেকে ওকে বিদেশ পাঠাচ্ছে, কিন্তু কিছু খরচমানে প্লেনভাড়াটা ওকে ম্যানেজ করতে হবে, অতএব নানীর জমিটা বিক্রিকরে যেন কিছু টাকা পাঠানো হয়।
লাখ খানেক হলেই হবে।
গত ঈদে ভাইয়া সবার জন্য একটাকরে শাড়ী নিয়ে এসেছিল, একেকটা শাড়ী নাকি সাত আটশ টাকা দামের। বিশ হাজার টাকার বাজার করে ওর এখন হাত খালিযাওয়ার সময় মার কাছ থেকে নিয়ে গেলো চারহাজার টাকা। মা টাকাটা কীভাবে যোগাড় করেছে সেটা আর বলা সম্ভ নয়। আমাদের জ্ঞাত কোনও ফান্ড আর বাকী নেই।
...
বাবার রিটার্ডমেন্টের পর পার্টটাইমের নামে যে ১৮কর্মঘণ্টার চাকরিটা আছে সেখান থেকে অগ্রিম নিয়েছে।
মা বলেই হয়ত এসব তিনি করেছেন।
সত্যিই আমার মা অনন্যা। শুধু একটাই দুঃখ
মেয়েদের জন্য তিনি কিছুই করলেন না। বেতন আর পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ষাণ্মাসিক পরীক্ষায় আমার সিক্সে পড়ুয়া বোনটি অংশ নিতে পারেনি।
যে যাই বলুক এর পরও আমার মাই সেরা মা।
সূত্র: সংগৃহিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।