কোনো জটিলতা নেই তবুও জটিলতর শেষ বিকেলের রোদ
মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মেহেরজান’ নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা
‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধকে বিভ্রান্ত ও মনগড়া ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ছবির বিষয়বস্তু পর্যালোচনায় দেখা যায় ছবিটিতে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের অপমান করা হয়েছে। যদিও এর নির্মাতা দাবী করছেন চলচ্চিত্রটি তিনি মুক্তিযুদ্ধকে নারীর দৃষ্টিকোন থেকে বানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ২য় তলায় মুনীর চৌধুরী কনফারেন্স রুমে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে দেশের ৪টি চলচ্চিত্র সংসদ একযোগে এই আয়োজন করে।
সংসদগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ এবং ঢাকা চলচ্চিত্র সভা।
বৈঠকের শুরুতেই সঞ্চালক বেলায়াত হোসেন মামুন এই আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, কোনো একটি চলচ্চিত্র নিয়ে দেশের ৪ টি চলচ্চিত্র সংসদের এমন আয়োজন খুব সম্ভবত এটাই প্রথম। আমরা এই আয়োজন করেছি এজন্য নয় যে, ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রটি খুব উচ্চ শিল্পমান সম্পন্ন চলচ্চিত্র। বরং আমরা মনে করি এই ছবিটি শিল্পের বিচারে অতি নগন্য একটি চলচ্চিত্র। আমাদের এই আয়োজনের কারণ মূলত এই ছবির বিষয়বস্তু।
আমরা মনে করি মেহেরজান চলচ্চিত্রটি তার বিষয়বস্তুর জন্যই বিশেষ সর্তকতার দাবী করে। আমাদের আজকের আয়োজনের উদ্দেশ্য এই যে ছবিটির ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশিত হয়ছে তার শেকড় সন্ধান করা এবং এর স্বরূপ উন্মোচন করা।
আলোচনার শুরুতেই অন্যতম মূল আলোচক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রটি একটি চিন্তার বহি:প্রকাশ বলে আমি বলব। আর চিন্তাটির লক্ষ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী একটি মত প্রকাশ করা।
তিনি বলেন, এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে আক্রমন করা হয়েছে।
যা বাঙালীর ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে এই ভূ-খণ্ডের মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ‘মুক্তিযুদ্ধ’ কে আঘাত করে।
তিনি ‘মেহেরজান’ কে একটি ‘বাংলাদেশ বিরোধী’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী’ চলচ্চিত্র বলে অভিহিত করেন।
আলোচক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, এটা ঠিক যে ‘মেহেরজান’ মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন একটি ব্যাখ্যা হাজির করেছে যা আমরা এতদিন জেনে এবং দেখে এসেছি তার বিপরীত। তবুও আমি বলব এই ছবিকে তার প্রদর্শণী অব্যাহত রাখতে দিতে হবে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মেহেরজান’ কোনো শিল্পমান সম্পন্ন চলচ্চিত্র নয়।
তবুও আমরা এর এত আলোচনা করছি কারণ ছবিটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্রায়ন হয়েছে তা আমাদের আহত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনো আমাদের কাছে দগদগে রয়ে গেছে। ফলে এর যে কোনো ধরণের বিচ্যুতি আমাদেরকে আক্রান্ত করে। আমরা অপমানবোধ করি। তবুও আমি ছবিটি নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমালোচক সরওয়ার জাহান খান তার বক্তব্যে বলেন, গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে সারা পৃথিবীতেই এই ধরনের চলচ্চিত্র হচ্ছে, যা এক ধরনের বিজ্ঞাপনের ভাষার মত চলচ্চিত্র। এই ঘরানার চলচ্চিত্র পৃথিবীজুড়েই সকল প্রকার মানবিকবোধ, বিশ্বাস এবং স্থানিক ঐতিহ্যকে গুড়িয়ে দিয়ে তাকে পণ্যে রূপায়িত করছে। এই ধরনের ছবির বাংলাদেশি সংস্করণ হলো ‘মনের মানুষ’ ও ‘মেহেরজান’। ফলে এ ধরনের ছবিকে ‘ভাল চলচ্চিত্র’ অথবা ‘সুস্থ্য চলচ্চিত্র’ বলার প্রশ্নই আসে না।
এরপর একে একে আলোচনা করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মানজারে হাসিন মুরাদ, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, ডা. জহিরুল ইসলাম কচি, সাব্বির চৌধুরী, সব্যসাচী হাজরা, অদিতি ফাল্গুনী, জাঈদ আজিজ, রিপন কুমার দাশ ও জেবাইদা নাসরিন।
আলোচকরা ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রটির নানাদিক নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে আলোচকরা শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।