প্রতিদিন এমন হাজার হাজার ঘটনার জন্ম দেন আমার এই দেশটা... প্রতি সেকেন্টে সেকেন্টে একটা মুভি হবার মত ঘটনা তৈরী হয়। ঠিক বুঝলাম না, কোন কারনে আমগো আপার মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন প্রেম-পিরিতি টাইপের মুভি মাথায় আসলো, মাথা একখান... কল্পনাই যখন করবেন তখন পাকি নিয়া করলেন ক্যান? ঘানা, নাইজেরীয়া কাল্লু মামারা আরো এক্সপার্ট...। তাদের কথাই না হয় ভাবতেন... পাকি কিনু? কিনু? দরদ উতলায়া উঠে?চাঁদ-তাঁরা আমার আন্দোলিত করেনা। লু’হাওয়া আমায় শিহরিত করেনা। বৈশাখের ঝড়ো তান্ডবে আমি ভীত নই।
সুনসান রাত্রির গভীরতায় আমি ভয়ে কুকড়ে উঠিনা...... মানুষ আমায় আন্দোলিত করে, শিহরিত করে, ভীত করে,
অবাক করে...... বড়ই অবাক করে ......!ম্প্রতি মুক্তি পাওয়া "মেহেরজান" ছবিটি নিয়ে সমগ্র ব্লগ জগতে ও বিভিন্ন মিডিয়াতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমিও এই অংশে যে নিষ্প্রভ ছিলাম তা নয়। অন্যান্য ব্লগের লেখা পড়েছি এবং বিশ্লেষন। আর এখন ইন্টারনেটের যুগে ইনফোরমেইশন ছড়াবেই। আটকানো যাবে না।
একই সাথে মানুষের সব ধরণের তথ্য জানার অধিকার আছে। তাই এই ধরণের অল্প কিছু ঘটনা আছে তা প্রকাশে সমস্যা হবেনা। সমস্যা আসছে এর পরিবেশন পদ্ধতি নিয়ে। ব্লগে আমরা যারা আছি তারা ব্যাপারটি সহজে বুঝে নিয়েছি কিন্তু যারা সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকে আর টিন এজাররা - তাদের কাছে তথ্য বিকৃত হওয়ার আশংকা থাকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত এবং স্বাভাবিক ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক ব্যাতিক্রমকে উপজীব্য করে নির্মিত এই সিনেমার সাফল্য ভবিষ্যতে ইতিহাস বিকৃতিকারীদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
রুবাইয়াত আসলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বা বীরাঙ্গনা নিয়ে কেবল পড়েছে এইটুকু প্রচার করতে যে- সে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে রুবাইয়াত অনুধাবন বা উপলব্ধি করতে পারেন নি। এটা যতনা তার লজ্জা, তার থেকেও বেশী লজ্জা তার বাবা ও মায়ের। কারন সঠিক শিক্ষাটি তারা দিতে পারেন নি। অবশ্য তার বাবা-মা সেই শিক্ষাটি মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়েছেন কি না তাও বিবেচ্য।
রুবাইয়াতের মত পয়সাওয়ালার মেয়েরা আমেরিকায় পড়তে যায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এদের বন্ধু হয় কোনো পাকিস্তানী ছেলে। আমি অত্যন্ত শংকিত আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে... আমরা যদি এখনই কোন ব্যাবস্থা নিতে না পারি, তবে রুবাইয়াতের মত "পাকিস্তানিরা" একদিন ঠিকই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বুঝিয়ে দেবে যে - "৭১ এ দেশে একটা Slight misunderstanding হইসিলো, যার কারনে আমাদের দুইটা দেশে একটু আলাদা থাকতে হচ্ছে। এখন তোমরা চাইলে কিন্তু এই misunderstanding টা দূর করে আবার ভাই ভাই মিলেমিশে থাকতে পারো। "
একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, স্বাধীনতার পরে ও আশির দশকে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতগুলো ভাল মানের ছবি হয়েছে এর পরে আর তেমন দেখা যায় নাই।
এই গেল দশকে হাতে গোনা কিছু ছবি এসেছে। ঠিক এমনি বন্ধ্যা সময়ে এই ছবিটি আসলো। যারা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নতুন করে জানছে, সেই কিশোর কিশোরিদের মাঝে এই ছবির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটা নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন না যে এটা সবার মাঝেই ঘটবেই কিন্তু একটা উল্লেখযোগ্য অংশও যদি এভাবে বড় হয় তাহলে সে নব্য রাজাকার তৈরির প্রথম ধাপ পার হয়েছে ধরে নেয়া যেতে পারে।
আমারো এখন কেন জানি মনে হচ্ছে এই লেখা তাদের প্রচারে সাহায্য করছে।
এই ছবি হিট হলে এইসব সমালোচনা আর মানুষের মনে থাকবে না। তখন সবাই ওরে বলবে হিটওয়ালি। এই নাম নিয়ে সে এই রকম আরেকটা প্রজেক্ট নামাবে। আবার মানুষ দেখতে হলে যাবে। অথচ কারো খেয়াল থাকবেনা দেশের জন্য মায়াকান্না দেখিয়ে আড়ালে এরা দেশকে ধর্ষণ করছে।
তারা সব ফ্রন্টেই নেমেছে যুদ্ধ করতে কিন্তু আমরা কি প্রস্তুত? আমাদের নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।
ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করার কারনে তাসলিমার বই নিষিদ্ব করলে তারা ক্ষোভে ফেটে পরে।
তারা মুক্তবুদ্বির কথা বলে,তারা চিন্তার স্বাধীনতার কথা বলে,তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে।
আবার তাদের মতের বিরুদ্বে কিছু গেলে তার বিরুদ্বে উঠে পরে লাগে। বন্ধ কর,নিষিদ্ব কর।
আসলে এটাই তাদের আসল রুপ। শ্রেনীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার নামে তারা অপরকে দমন করার যে নযীর রেখেছে তা আর কোথায় আছে?কে পারবে মানুষ হত্যার তাদের পেছনে ফেলতে?একের জনের কাছে এক ঘটনার একেক রকম ব্যাখ্যা থাকে। তো তাল গাছ আমার বলে শুধু আমার কথাটাই ঠিক আর সব ভুল আমার তা মনে হয় না। সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে,সবার কথা শুন্নতেহবে। এটাও একটা স্বাধীনতা যার জন্য যুদ্ব হয়েছিল।
"ধরা যাবেনা ছোয়া যাবেনা বলা যাবেনা কোন কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম হায়রে এমন স্বাধীনতা"
মুভিটি নিয়ে বিতর্ক চলছে চলুক। সমস্যা নেই। ছবিটি নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। ছবিটি ব্যাবসাসফল হতে পারে বা ব্যার্থ হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে এর সবচেয়ে বড় সাফল্য বামদের মুখোষ খুলে দেয়া।
ধন্যবাদ মেহেরজান আরেকবার তাদের মুখোষ খুলে দেবার জন্যে। যার লজিক আছে সে লজিক দেবে,যার অন্তরে গালি ছাড়া আর কিছু নাই সে তো গালিই দেবে। দেন গালি। যুদ্ধের সময় যেভাবে প্রেমের অভিসার দেখানো হয়েছে তা আসলেই খুব হতাশাজনক। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করা হয়েছে এই সিনেমায়।
এই সিনেমায়। বীরাঙ্গনাদের অপমান করা হয়েছে। জয় হয়েছে শুধু খানসেনার ভালোমানুষী এবং গভীর ভালোবাসার (মহান ভালোবাসা গুলো পরিণতি পায় না)। তখন দেশ মাতৃকার জন্য রক্ত দিতে মায়ের আচল ছেড়ে সোনার ছেলেরা যুদ্ধে গিয়েছিলো সেখানে এই মুভিতে মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বাচাঁর জন্য বিয়ে-সাদী করে নিজেকে সুখী করতে চেয়েছিলো। সিনেমার ভাষা ছিলো আধুনিক "খাইসো,গেসো,করসি টাইপ"।
ড্রেস আপের কথা নাই বা বললাম। মুভির শেষ দিকে মেহেরজানের উপলব্দি খান সেনাকে মন দিয়ে সে ভূল করেনি। সারাহ এসে প্রশ্নের মুখে দাড়ঁ না করালে হয়ত গিল্টি ফিলিংস নিয়েই তাকে বাকী জীবন কাটাতে হতো (রাজাকারদের কি মেহেরজানের মতো মনে হয়?)।
রুমির বলিষ্ঠ কন্ঠ, জনগন এখন স্বাধীনতাই চায়। এটাই তাদের প্রানের কথা।
(আরও কিছু বাক বিতন্ডা পড়ে) আমি কোন দল্ভুক্ত নই, কোন রাজনৈতিক দলের শ্লোগান বয়ে বেড়াই না। কিন্তু আমি সাধারন বুদ্ধি সম্পন্ন, মান-অপমান জ্জান সম্পন্ন একজন সচেতন মানুষ। আমার মনে হচ্ছে শেখ আজ অনায়াসে ঢাকা দখল করার মস্ত সুযোগ হারালেন। ২৫ শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট হয়ার আগেই রুমি এই ব্যাপারটা ধারনা করতে পেরেছিল তাই সকালেই তার মাকে বলে, আম্মা তুমি বুঝতে পারছনা মুজিব -ইয়াহিয়া আলোচনা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এটা ওদের সময় নেওয়ার অজুহাত মাত্র।
ওরা আমাদের স্বাধীনতা দিবেনা। স্বাধীনতা আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে সশত্র সংগ্রাম করে। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জাহানার ইমাম বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য নিজের বাকি জীবন উৎসর্গ করেন। তারপর দূরারোগ্য ক্যান্সার ব্যধিতে আক্রান্ত হন।
যখন আওয়ামী ক্ষমতায় থাকে আমরা জানতে পারি শেখ মুজিবের অবদান। যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে আমরা স্বাধীনতার অন্য কোন কাহিনী শুনি। আমরা কি কখনও রুমির মত ছেলেদের মুল্যায়ন করেছি? শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন আমরা বলি কিন্তু স্বাধীনতা এসেছে যেই মূল্যের বিনিময়ে সেগুলো হল রুমি। শেখ মুজিব ঘোষনা করার আগেই যে বুঝে গিয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া স্বাধীনতা সম্ভব নয়। রুমির ২০ বছর বয়সের জীবনটা নিয়ে যে কি দুর্দান্ত একটা সিনেমা বানানো সম্ভব সেটা যদি সিনে নির্মাতারা একবার বুঝত তাহলে খুব ভাল হত।
আর রুমির বলে যাওয়া কথা গুলাই যেকোন চিত্রনাট্যের দারুন সব সংলাপ অনায়াসে হয়ে যাবে। রুমির ২০ বছর বয়সের জীবনটা নিয়ে যে কি দুর্দান্ত একটা সিনেমা বানানো সম্ভব সেটা যদি সিনে নির্মাতারা একবার বুঝত তাহলে খুব ভাল হত। আর রুমির বলে যাওয়া কথা গুলাই যেকোন চিত্রনাট্যের দারুন সব সংলাপ অনায়াসে হয়ে যাবে। ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি বিটিভিতে রুমিকে নিয় একটি নাটক বানানো হয়েছিলো - বলাই বাহুল্য যে নাটকটা দেখে যার পর নাই মেজাজ খারাপ হয়েছিলো। জাহানারা ইমাম এর ভূমিকায়া ছিলো শর্মিলী আহমেদ - এত সিজনড অভিনেত্রী হওয়া সত্বেও তিনি জাহানারা ইমাম চরিত্রকে ধারন করতে পারেননি।
একটু পর পর রুমির জন্য নাকি কান্না করেছেন আর জাহানারা ইমামের যে একটি কাঠিন্য ছিলো কিংবা যে দেশপ্রেমের কারনে তিনি ছেলেকে বলতে পেরেছিলেন - 'দেশের জন্য তোকে বিসর্জন দিতে আমি প্রস্তুত', সেই মুখ্য বৈশিষ্টই ছিলো শর্মিলী আহমেদের অভিনয়ে অনুপোস্হিত।
মেহেরজান নিয়া আর লাফালাফি করার দরকার নাই। কোন বই নিষিদ্ধ হইলে মানুষ আরো বেশি ওই বই পড়ে। আমিও, মেহেরজান নিয়া এত কথা শুইনা ট্রেইলারটা দেইখা ফালাইসি। নিজেটিভ পাবলিসিটিও প্রডিউসারের পকেট ভর্তি করতে সহায়ক।
তাই, আমরা যেন এইগুলা অগ্রাহ্য করি। ভাল ভাল কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কি সিনেমা বানানো যায়- সেইটার প্লট লিখি সবাই মিলে। তারপর সেই সিনেমা যেন বানানো হয়- সেইটা নিয়া একটা গণআন্দোলন শুরু করি। সেইটা বরং কাজে দিবে।
আর একটা বিষয় খেয়াল করেছেন, এটা এই পরিচালকের প্রথম ছবি, অথচ এ ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়া বচ্চন, ভিক্টর ব্যানার্জির মত অভিনেতা অভিনেত্রীরা। এত টাকা কিভাবে জোগার করলেন এই পরিচালক, যখন এটা কেবল তার প্রথম ছবি?
সময় অনেক আগেই হয়েছে কিন্তু এখনই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মূল্যায়ন আর মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারের উদ্যোগ না নিলেই নয়। নাহলে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন আমাদেরই পরবর্তি কোন প্রজন্ম এইসব বিকৃত মস্তিস্ক প্রসূত ফোক-ফ্যান্টাসিকেই নিজেদের ইতিহাস বলে জানবে। এখনই অনেক বাচ্চাকে দেখি যারা স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের পার্থক্য জানে না,অনেকে তো তারিখ নিয়েই দ্বিধাণ্বিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।