আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নয়...জনতার দাবি মানতে হবে।



ঢাকার পাশেই বিক্রমপুরের আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে স্থানীয় জনগণের বিক্ষোভ দমনের ঘটনায় সংঘর্ষে পলিশের এক কর্মকর্তা নিহত এবং পুলিশ সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, সংবাদিকসহ দেড় শতাধিক গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দেয়ায় হতাহতের সংখ্যা বাড়েনি। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ ফাঁড়িসহ বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এরপর রাতভর আশপাশের গ্রামগুলোতে র্যাব-পুলিশের অভিযানের ফলে পুরুষশূন্য গ্রামগুলো এখন অজানা আতঙ্কে ভৌতিক হয়ে উঠেছে। সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে মাসখানেক ধরে আড়িয়ল বিলের ওপর নির্ভরশীল মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার তিনটি উপজেলার মানুষ বিলরক্ষার আন্দোলন করছে।

সরকার পক্ষের লোকজন এ আন্দোলনে বাধা দেয়ায় ও সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় দুই হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় ক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে। সোমবারের অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার ফলে জনবিস্ফোরণে সৃষ্ট সহিংসতা কারও কাম্য ছিল না। পুলিশ কর্মকর্তার দুঃখজনক মৃত্যুর পাশাপাশি আন্দোলনরত জনতাকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দেয়াও অনাকাঙ্ক্ষিত। দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন আড়িয়ল বিলের দৈর্ঘ্য ২৬ মাইল এবং প্রস্থ ১০ মাইল। ২ হাজার ৬০০ বর্গমাইল বা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ একর এই বিলের ২৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধুনগর নির্মাণ করলে বিলটির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

উর্বরতার কারণে এখানে অন্য এলাকার তিন ফসলের সমান (একরপ্রতি ১০০ মণ) ফসল হয় এক মৌসুমেই। অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে বছরে ৪০ হাজার টন ধান, প্রায় ৭০০ টন মাছ ছাড়াও সবজি ও রবিশস্য উত্পাদন হয় প্রায় ১০ হাজার টন। লক্ষাধিক স্থানীয় লোকজনসহ এই বিলের ওপর উত্তরবঙ্গ, ফরিদপুর ও নেত্রকোনা এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। ফলে একান্ত জীবিকার স্বার্থেই দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ বিমানবন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। দলীয় উস্কানির কথা এক্ষেত্রে খুবই হাস্যকর ও উদ্দেশ্যমূলক।

রাজনীতি ও দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে জীবন-জীবিকা রক্ষাই আন্দোলনকারীদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষে জনগণের এমন অনুভূতি আমলে না নেয়ার পেছনে কী কারণ সেটা ভেবে দেখার বিষয়। তাছাড়া হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে যে বিলের প্রতিবেশগত ভারসাম্য সেটা ধ্বংস করে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেশের প্রচলিত পরিবেশ আইন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক আইনেরও সুস্পষ্ট বরখেলাপ। আইন অমান্য করে এভাবে প্রাকৃতিক জলাভূমি, জীববৈচিত্র্য ও শস্যভাণ্ডার ধ্বংস করা হলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো অসম্ভব হয়ে উঠবে। রাজধানীর আশপাশে বন্যা ও জলাবদ্ধতার প্রকোপও এর ফলে বেড়ে যাবে এমন অভিমত পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের।

আশ্চর্যের কথা, এতকিছু অগ্রাহ্য করে সরকার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমীক্ষাই করা হয়নি। অথচ ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এমন অস্বাভাবিক পরিকল্পনা যে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়বে তাতে সন্দেহ কী। তাছাড়া হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করে আরও ২০-৩০ বছরের চাহিদা মেটানো অসম্ভব নয় মোটেই। এজন্য এরই মধ্যে অধিগ্রহণকৃত জমিতে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণই যথেষ্ট বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

আমাদের বিমান বহরের বর্তমান অবস্থায় নতুন একটি অত্যাধুনিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনই-বা কতটুকু? এসব প্রশ্নের মীমাংসা ও প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সন্তোষজনক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করাই ছিল গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য স্বাভাবিক। সে পথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে নেয়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার এমন তাড়াহুড়া জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে না। নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী করার ভাবনা খুবই ছেলেমানুষী বলা যায়। এজন্য ক্ষমতার জোরে মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়া সম্ভব হলেও প্রকৃতির প্রতিশোধ ঠেকানো যাবে না র্যাব-পুলিশ দিয়ে বা কঠোর আইন জারি করে। স্তাবকদের কথায় কান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে বিতর্কিত না করে আড়িয়ল বিল থেকে হাত গুটিয়ে নেয়াটাই সবদিক থেকে ভালো হবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য।

আড়িয়ল বিল এলাকার হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকে এমনটাই আশা করে। ইতিহাস বলে জসতার দাবি দমিয়ে রাখা যায়না। জনতার জয় অবসম্ভাবী। তাই সরকারের উচিত জন সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখিয়ে বিমানবন্দর নির্মাণের মত খেয়ালী পরিকল্পনা বাতিল করা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.