লেখা কিছুদিন ধরে লেখা গুলোয় একটা ব্যাপার বলার চেষ্টা করে আসছি। এই যুদ্ধে এক ধাপ এগিয়ে থাকা জরুরী। প্রতিপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে বা হতে পারে ভেবে নিয়ে এগুনো দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে? আইনগত? আপিল? তা হয়তো করা হবে। তবে তা করা হবে লোক দেখানো।
আপিল কিংবা আইনগত রাস্তায় যাওয়া হবে স্রেফ সময় ক্ষেপনের জন্য। তবে একটি চেষ্টা হবে, তা হচ্ছে রায় বিপক্ষে গেলে অরাজকতা সৃষ্টির ভয় দেখানো। বিশাল ক্যাডার বাহিনী নিয়ে গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও করা কোন সমস্যাই হবে না।
সত্যিকারের চেষ্টা হবে দেশী ও বিদেশী শক্তিকে সংগঠিত করা। দেশী শক্তি হিসেবে কে কে পাশে দাঁড়াবে আজকে সেই ঘোষণা এসে গেল।
বিরোধী দলীয় নেত্রী বেশ কিছু বাহানার আড়ালে এই অরাজকতাকে সমর্থন দিলেন। এখন বাকী রইল বিদেশী শক্তির সমর্থন। তাও বোধহয় অচিরেই আসবে। কত অচিরে তা নির্ভর করছে কতটা লাশ তাঁদের দরকার। সামনের আরও দুই তিনটা হরতালের নিহতের সংখ্যা আগের নিহতের সংখ্যার সঙ্গে যোগ করে সঙ্খ্যাটা কে আশঙ্কা জনক প্রমাণের একটা চেষ্টা তো হবেই।
পরবর্তী পদক্ষেপের ভেতর আরও কিছু রটনা শোনা যাচ্ছে। আত্মঘাতি হামলা কিংবা প্লেন হাইজ্যাক। বিরোধী বা গণজাগরণ মঞ্চের নেতা কর্মীদেরকে একে একে ঘায়েল করা। দুই একজন ব্লগার এর বাড়ীতে আক্রমনের চেষ্টার খবরও এসেছে। একজন দুইজনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে হয়তো বাকীদের ক্ষেত্রে হুমকিতেই কাজ হবে, এমন একটা প্ল্যান থাকতে পারে।
তবে এই মুহূর্তে তা করতে যাওয়া বেজায় ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ভীতি তৈরির চেয়ে উৎসাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে সেই রাস্তায় এই মুহূর্তে বোধহয় যাবে না।
১/১১ ধাঁচের কিছু আনার চেষ্টা করবে কি না নির্ভর করছে যারা আসবেন তাঁরা কেমন মানসিকতার। আবার সব রাজনৈতিক নেতাদের জেলে ঢোকাবেন কি না? তাঁর চেয়েও বড় প্রশ্ন বিচারাধীন এই মানবতাবিরধিদের প্রতি কি আচরণ দেখাবেন।
আবার মানবতা বিরোধী আইন বাতিল? কিংবা বিচার স্বচ্ছ হয়নি বলে পুনরায় শুরু?
নাকি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে নতুন একজন শাসক নিয়োগ? যে ঘটনাই ঘটুক সিদ্ধান্ত তাঁদের অনুকুলে গেলে আপত্তি করবে না।
বিরোধী নেত্রীর বিদেশ সফর এবং ফেরত আসবার পরের সাংবাদিক সম্মেলন একটি ঘটনার ই ইঙ্গিত দিচ্ছে, আর তা হচ্ছে বিদেশী প্রভুরা ঠিক করে ফেলেছেন তাঁরা কোন দিকে যাবেন। বিরোধী দল তাই এখন অনেকটাই নির্ভার বোধ করছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই তবে, কিন্তু, যদি—এমন কথাবার্তা আর তাঁদের এখন বলতে হবে না। ‘স্বচ্ছ বিচার’, ‘নিরপেক্ষ বিচার’ এসব কথার বদলে এখন তাঁরা নাস্তিক, কাফের, ইসলাম, এই ধাঁচের কথাবার্তা শুরু করবেন।
মুক্তিযুদ্ধ, মার্কিন মুল্লুকের বিরোধিতা সত্ত্বেও শুরু হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্য ও সেদিন পাশে ছিল না। শুধু সঙ্গে ছিল বাঙ্গালী জাতীয়তা বোধ। অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আবার একই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি ৪২ বছর পরে।
তখনও রাজাকারদের পক্ষে ছিল বিদেশী শক্তি, এখনও আছে। এবার কি হবে? গণজাগরণ মঞ্চ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আশার জায়গা। এই একতা ধরে রাখতে হবে। কারণ প্রথম চেষ্টাই হবে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’। তবে এই মুহূর্তে চাই খুবই বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত আর শত্রুর পরবর্তী চাল আন্দাজ করা।
কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিদেশী শক্তিদের এই ঘটনায় সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে। আর তাঁদের সম্পৃক্ত করতে সত্যিকার অর্থে এই মুহূর্তে তাঁদের চাই দুটো জিনিস। প্রথম টা ‘লাশ’ কিংবা তাঁদের ভাষায় ‘শহীদ’। আর দ্বিতীয়টা বিরোধী নেত্রীর আশীর্বাদ।
প্রথমটা তাঁদের জন্য জোগাড় করা কোন সমস্যা না। যে বিশাল ক্যাডার বাহিনী তাঁদের রয়েছে, এক নির্দেশে তাঁরা গাড়ী ভাংচুর, পুলিশ পেটানো যে কোন কাজে নিয়োজিত হয়ে যাবে। পুলিশ গুলি না ছোড়া পর্যন্ত সেখান থেকে নড়বে না। ‘লাশ’ এমনিতেই আসবে। আর সেই লাশের ছবি দেখিয়ে পরের দিন থেকে চলবে সহানুভুতি আদায়ের খেলা।
দেশী সহানুভুতির চেয়ে বিদেশী সহানুভুতি বেশী জরুরী। আর সেই জন্য লাশের সংখ্যা বাড়ানো এই মুহূর্তে তাঁদের প্রধান এজেন্ডা। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে আসছে আরও তিনটা হরতাল। তবে লাশের দহাই দিয়ে হরতালের সংখ্যা বাড়তেও পারে।
দ্বিতীয় জরুরী জিনিশটা আজকে পেয়ে গেল।
বিরোধী নেত্রীর সমর্থন। এখন তাঁরা বিশাল একটা টিম। বেছে বেছে কিছু ব্যাপার তিনি উল্লেখ করলেন। উনি অরাজকতা সৃষ্টি টা দেখতে পেলেন না, দেখতে পেলেন পুলিশের বাঁধা দান। শাহবাগের অহিংস অবস্থানের পেছনের প্রেরনা দেখতে পেলেন না, দেখতে পেলেন সব নাস্তিক দের।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ব্যাপার, তিনি পূর্ণ মাত্রায় সমর্থন দিলেন, বিদেশ সফরের পরে। বিদেশে কেন গিয়েছিলেন তা নিয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত একটা বক্তব্য যদিও বাজারে চালু আছে, দেখার বিষয়, সেটা সঠিক কি না। আগামী কিছুদিন বিদেশী নেতৃবৃন্দের কি বক্তব্য দেয়, বিদেশী পত্র পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যম কিভাবে ঘটনাটিকে উপস্থাপন করে, তা থেকে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
গনজাগরন মঞ্চ কিভাবে এগোবে কিংবা বিরোধী পক্ষের পরবর্তী চাল মাথায় রাখছে কি না জানি না। খুব জরুরী এই মুহূর্তে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স।
বিরোধী শিবির কোন পথে এগোচ্ছে তা আঁচ করে এক ধাপ এগিয়ে থাকা। এই মুহূর্তে শুধু দেশী মিডিয়া তে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরলেই হবে না। যেহেতু তাঁদের চেষ্টা বিদেশী প্রভুদের ডেকে আনার রাস্তা প্রশস্ত করা তাই বিদেশী মিডিয়া তেও নিজেদের বক্তব্য প্রচার জরুরী। আরও জরুরী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সবাইকে বোঝানো এই আন্দোলনের চাওয়া টা কি? জানাতে হবে দেশবাসী কেবল আইনের শাসন চায়। ৪২ বছর আগে ঘটে যাওয়া কিছু অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে চায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।