বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের ওপর পোস্তা করে..
লেখাটি যৌথভাবে লিখেছেন বাকী বিল্লাহ, পুষ্পিতা আকাশলীনা ও আশফাকুর রহমান
‘মেহেরজান’ ছবিটি নিয়ে ইতোমধ্যে পদ্মা-মেঘনায় অনেক জল গড়িয়েছে। ছবিটি নিয়ে বাতাসে ভাসছে নানা ধরণের কথা-বার্তা। গতকাল সকাল থেকে ফেসবুকে অনেকেই এ ছবি ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে বলে স্ট্যাটাসে জানাতে থাকলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। আরো কিছুটা সময় পার হলে জানা যায় যে সম্ভবতঃ নির্মাতারাই বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রেক্ষাগৃহগুলো থেকে ছবিটি কিছুদিনের জন্য তুলে নিচ্ছেন। ফলে ছবিটির প্রিমিয়ার শো-র পর থেকে অনেকের ভেতরেই যেমন ছবিটির বক্তব্যের বিরুদ্ধে জাতীয় ইতিহাসের আবেগগত দৃষ্টিকোণের দিক থেকে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, ছবিটি তুলে নেবার বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আবার এ ছবির নির্মাতাগণ কিছু সহানুভূতিও পাচ্ছেন।
গত ২৬শে জানুয়ারি ‘প্রথম আলো’র উপসম্পাদকীয় পাতায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মেহেজান’ বিষয়ে রোবায়েত ফেরদৌস, মাহমুদুজ্জামান বাবু, কাবেরী গায়েন ও ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নিবন্ধে ছবিটির আধেয় ও বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও এটি নিষিদ্ধ করা বা হল থেকে যেন প্রত্যাহার না করা হয়, সে নিয়ে আগেই সতর্কবানী দেওয়া হয়েছিল। ‘মেহেরজান’-এর এই সাময়িক বা আপাতঃ প্রত্যাহৃত অবস্থা সরকারের সিদ্ধান্ত না পরিচালক ও নির্মাতাপক্ষের আত্মরক্ষামূলক অবস্থান তা এখনো পরিষ্কার নয়। ভলতেয়ারের আপ্তবাক্য স্মরণ করাটা এক্ষেত্রে জরুরি মনে করছি: ‘তোমার মতের ব্যপারে আমি একমত নাও হতে পারি। কিন্তু তোমার মতকে রক্ষা করতে আমি প্রয়োজনে জীবন দেব। ’ গণতন্ত্রের এর চেয়ে সুন্দর চরিত্র আর কিছুই হতে পারে না।
কাজেই ‘মেহেরজান’ ছবির স্বাভাবিক প্রদর্শনী ও প্রচারের পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেই এ ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষন ও সুস্থ বিতর্কে জড়ানোও আমার নাগরিক অধিকার বৈকি।
বস্তুত: গত ২৬শে জানুয়ারি ‘প্রথম আলো’র উপসম্পাদকীয় পাতায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মেহেজান’ বিষয়ে রোবায়েত ফেরদৌস, মাহমুদুজ্জামান বাবু, কাবেরী গায়েন ও ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নিবন্ধে ও পাশাপাশি এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেনের বক্তব্য (Click This Link)পাঠের প্রেক্ষিতে নির্মাতাকে উদ্দেশ্য করে পাঠক হিসেবে আমাদের ভেতর কিছু বেদনাবিদ্ধ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ২০১০-এ ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর উইক এণ্ড ম্যাগাজিনে তিন কিস্তিতে প্রকাশিত রুবাইয়াতের নিবন্ধ ‘দ্য স্পিরিচ্যুয়ালিটি অফ সিনেমা’ পাঠক হিসেবে আমাদের আন্তরিক ভাবে মোহিত, মুগ্ধ করেছিল। একজন তরুণ ও নারী নির্মাতা হিসেবে রুবাইয়াতের পঠন-পাঠন, পরিশ্রম করার ক্ষমতা ও সঙ্কল্পকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানিয়ে, খুব নম্রভাবেই এ ছবির পরিচালকের কাছে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো তুলে ধরতে চাইছি:
১. প্রিয় রুবাইয়াৎ, ‘প্রথম আলো’র উপসম্পাদকীয় পাতায় আপনার নিবন্ধের শুরুতেই আপনি বলেছেন ‘মেহেরজান একাত্তরের নারীপ্রধান একটি আখ্যান। এই আখ্যানে রয়েছে সেই নারীদের গল্প, যাঁরা নিজেদের মতো করে যুদ্ধ করেছেন- কখনো হয়তো বন্দুক ছাড়াই; অহিংসার পথে রক্ষা করেছেন আত্মসম্মান।
’
রুবাইয়াৎ, অহিংস পথে আত্মসম্মান রক্ষার বিষয়টি আপনি যদি একটু বিশদভাবে বুঝিয়ে দিতেন, তবে বড় উপকৃত হতাম। বীরপ্রতীক তারামন বিবি, খাসিয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি বা বরিশালের নূরজাহান বেগম যিনি চোদ্দ বছর বয়সে রাইফেল চালনা করে, রজ:স্বলা হবার পূর্বেই পাক বাহিনী কর্তৃক ধৃত ও ধর্ষিতা হয়ে যুদ্ধের পর পর পিতার বয়সী একজনকে বিয়ে করতে বাধ্য হন এবং ইতোমধ্যে তাঁর মৃত্যু না হয়ে থাকলে ঢাকার কোন বস্তিতে দাইগিরি করে জীবন চালাচ্ছেন (‘বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ’ কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা নারীদের উপর প্রকাশিত গ্রন্থটি এ প্রসঙ্গে বিশেষ দ্রষ্টব্য), এদের কারোরই আসলে অহিংস পথে আত্মসম্মান রক্ষার কোন উপায় ছিল না। এমনকি সহিংস পথ বা ‘বন্দুক’ ধরেও সবসময় আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারেন নি তাঁরা। নারী হিসেবে অহিংস থাকার একটাই অর্থ ছিল একাত্তরে...আর তা’ হলো ধর্ষিতা হওয়া!
২. আপনি আপনার লেখায় আরো উল্লেখ করেছেন যে ‘নীলিমা ইব্রাহিম তাঁর ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’র ভূমিকায় ৩০-৪০ জন মেয়ের উল্লেখ করেছেন, যাঁরা আত্মসমর্পণকারী বা বন্দী পাকিস্থানী সৈন্যের সঙ্গে ভারতে চলে গিয়েছিল (আমি বীরাঙ্গনা বলছি, নীলিমা ইব্রাহিম, জাগৃতি, ১৯৯৮)। ’ কিন্তু এতে কি প্রমাণিত হলো রুবাইয়াৎ? আপনার এই লেখার পরপরই ২৬ শে জানুয়ারি ‘প্রথম আলো’ ব্লগে এক পাঠিকা মন্তব্য করেছেন যে নারী হিসেবে আপনি কি বোঝেন না কোন্ বেদনায় তাদের চলে যেতে হয়েছিল? সমাজ তাদের আর গ্রহণ করবে না।
কাজেই পাকিস্থানী সৈন্যের ঘরে গিয়ে বধূ, রক্ষিতা বা গৃহ পরিচারিকা...যে স্থানই লাভ হোক...সেই অনিশ্চিত অন্ধকারে তাদের ঝাঁপ দিতে হয়েছে। এ কি কোন প্রেমের যাওয়া? বাংলাদেশে বসবাস ও কর্মরত বিদেশী সমাজসেবী থেরেশ ব্লশের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিভাবে যুদ্ধ নয়, স্রেফ দারিদ্র্যের কারণে শয়ে শয়ে বাংলাদেশী নারীকে প্রতিবছর পাচার হতে হচ্ছে ভারত ও পাকিস্থানে। উত্তর ভারতীয় বর্ণ হিন্দু পুরুষ বা পাকিস্থানী ‘শরীফ’মুসলমান পুরুষের বধূ, রক্ষিতা বা গৃহপরিচারিকার জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। তবু, তারা দেশে ফিরতে চাইছেন না। কারণ তারা জানেন যে ফিরলে আরো নিদারুণ প্রতিকুল অবস্থায় তাদের পড়তে হবে।
৩. বড় বেদনার সাথে লক্ষ্য করলাম আপনি আপনার নিবন্ধ ‘মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে’-এ আভাসে ইঙ্গিতে বাংলাদেশে দুই লক্ষ নারী আদৌ ধর্ষিতা হয়েছে কিনা তেমন সন্দেহ ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। এই সন্দেহের পক্ষে আপনার প্রদত্ত যুক্তি হলো ১৯৭৭-১৯৮৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দলিলপত্র-এ মোট ২২৭ জনের মধ্যে ২৩ জন নারীর সাক্ষ্য গৃহীত হয়েছে। এদের ভেতর মাত্র ১১ জন যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এতে কি প্রমাণিত হলো? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতায় ‘তিন লক্ষ’কে ভুলে ‘থ্রি মিলিয়নস্’ বা ‘ত্রিশ লক্ষ’ বলা নিয়ে কিছু গুঞ্জন বাতাসে রয়েছে। ধরা যাক ত্রিশ লক্ষ নয়, তিন লক্ষ মানুষই শহীদ হয়েছেন।
২৫ শে মার্চ ১৯৭১-এ এক রাতে পাকবাহিনী দুই থেকে আড়াই লক্ষ মানুষ হত্যা করলে বাকি আট/নয় মাসে আরো পঞ্চাশ হাজার সারা দেশে মরেছে নিশ্চয়। অবশ্য সারা দেশে আজো নিত্য নতুন যত গণকবর আবিস্কৃত হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যত গণহত্যার বিবরণ রয়েছে, তাতে ‘ত্রিশ লক্ষ’ কোন অসম্ভব অঙ্ক বলে মনে হয় না। কিন্ত আট খণ্ডের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দলিলপত্র-এ যদি গণহত্যার ভিকটিম পরিবারের বেঁচে যাওয়া বা প্রত্যক্ষদর্শীদের ভেতর থেকে পুরুষ সাক্ষীই পাওয়া যায় মাত্র ১৯৪ জন (২৩ জন নারী বাদ দিলে), তাহলে অবাক হবার কি আছে যে অসম্ভব পুরুষতান্ত্রিক সংস্কারের এই দেশে ২৩ জনের বেশি নারী স্বাক্ষী পাওয়া যাবে না, যাদের ভেতর আবার মাত্র ১১ জনই যৌন নিপীড়নের কথা বলবেন? নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’বা আইন ও সালিশ কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত ‘নারীর একাত্তর’ গ্রন্থেই প্রচুর ধর্ষিতা নারীর কেস স্টাডি রয়েছে। আপনার নিজের লেখাতেই আপনি বলছেন যে ‘গর্ভপাতের সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং যুদ্ধশিশুর সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০ হাজারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানে আসতে না পারায় বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যায়। ’ রুবাইয়াৎ, আপনার লেখার এই পংক্তিটি বসনিয়া হার্জেগোভিনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সেখানেও ঠিক কি পরিমাণ গর্ভপাত হয়েছে, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা অক্ষরে অক্ষরে পাওয়া যায় নি। কিন্তু সার্ব সৈন্যদের ধর্ষণের ফলে সৃষ্ট ভ্রুণ হত্যায় সেখানকার নারীরা ব্যপক হারে গর্ভপাত করিয়েছেন, একথা সত্য। কিন্তু,ধরা যাক, একজন ধর্ষিতা ও ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করিয়ে এ ব্যপারে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না, কথা বলতে চাচ্ছেন না...সেক্ষেত্রে আমরা কি ধরে নেব যে ধর্ষণের অভিযোগটি সার্ব (কিম্বা, পাকিস্থানী সৈন্য) সম্পর্কে ভিত্তিহীন? ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বেশ কিছু যুদ্ধশিশু যারা বাইরের দেশগুলোয় বিদেশী পিতামাতার ঘরে দত্তক সন্তান হিসেবে মানুষ হয়েছেন, বয়:প্রাপ্ত হয়ে তারা এদেশ ঘুরেও গেছেন। তাদের সাক্ষাৎকারও আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। এর পরও আপনার সন্দেহ? কয়েক বছর আগে ভারতীয় তাত্ত্বিক শর্মিলা বোস এমনি মন্তব্য করেছিলেন যে ১৯৭১-এ বাংলাদেশে পাক বাহিনী কর্তৃক নারী ধর্ষণের বিষয়টি অবাস্তব ও অতিরঞ্জিত।
অদ্ভুত ব্যপার হলো, শর্মিলাও মাকির্নী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক। ’৭১-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্থানের পক্ষ নিয়ে এদেশে সপ্তম নৌবহরও পাঠাতে চেয়েছিল, যা নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো দানের দরুণ সম্ভব হয় নি। যুদ্ধের চল্লিশ বছর পরও এই উপমহাদেশের বিদ্যার্থীরা যখন মার্কিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন ক্ষয়-ক্ষতি, হত্যা বা ধর্ষণের পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, তখন ‘বিপন্ন বিস্ময়ে’ আক্রান্ত হতে হয় বৈকি! অথচ, ২৬শে মার্চের এক সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে পাক বাহিনীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অন্তত: পঞ্চাশ থেকে ষাট জন ছাত্রী, হলে থাকা মেয়েদের খোঁজ নিতে আসা সত্তর বছরের নানী-দাদি থেকে সাত বছর বয়সী ছোট বোণেরা পর্যন্ত ধর্ষিত হয়েছেন। ধর্ষিতা বাঙালী নারীর স্তন কেটে ফুটবল খেলা, ধর্ষিতা ও পিপাসার্তা নারী পানি চাইলে তাদের মুখে পাক বাহিনীর প্রস্রাব করার বিবরণ আছে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে রচিত ‘শেখ মুজিব’ সহ একাধিক বাংলা ও ইংরেজি গ্রন্থে। শাহীন আখতারের ‘তালাশ’ উপন্যাসেও ক্যাম্পে অবরুদ্ধ বাঙালী নারীর স্তন বা বগলে পাক সৈন্যের পুরুষাঙ্গ মর্দন সহ বিকৃত নানা যৌনাচারের প্রসঙ্গ পড়লে শিউরে উঠতে হয়! সেই সব নির্যাতনের উল্লেখের ধার-কাছে না গিয়ে আপনার ছবির ‘নীলা’ বলে যে পাক বাহিনীই তাকে প্রথম ধর্ষণ করেনি।
করেছে ‘ছাত্র ইউনিয়নে’র ছেলেরা। হায়, এই সংলাপের মাধ্যমে মতিয়া-মেননের নেতৃত্বের ষাটের দশকের উদ্দীপ্ত ও আদর্শবাদী তারুণ্যের...বাংলাদেশ যে সততা ও ইষ্পাতদৃঢ়, যে ইসক্রা বা আগুনের ফুলকিসম তারুণ্য আর ফিরে পায় নি...সেই তারুণ্যের ইতিহাসের প্রতি আপনার ছবি চেতনে অথবা অবচেতনে, জ্ঞানে অথবা নির্জ্ঞানে প্রকাশ করলো অবজ্ঞা ও অসম্মান!
(আর ধর্ষিতা নারীর ‘যৌনাকাংখা’ থাকতে পারে বলে ইতোমধ্যেই ফেসবুকে কিছু লেখা পড়ছি। শত্রু সৈন্যের ক্যাম্প থেকে সদ্য ফেরা কোন ধর্ষিতা নারীর কতটুকু ‘যৌনাকাংখা’ থাকতে পারে, এ ব্যপারটা কল্পনা করতেও আমাদের মত ‘অ-উত্তরাধুনিক ও নেহায়েৎ সাধারণ তরুণ তরুণীদের যে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে! আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমাদের যে পূর্বপুরুষেরা রক্ত দিয়ে আর যে পূর্বনারীরা সম্ভ্রম দিয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা তুলনামূলক স্বাধীন ও নিরাপদ দেশ বা রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন, যে দেশে আমরা অন্তত: আর গণহত্যা ও গণধর্ষণের শিকার হই না, সেই স্বাধীন দেশে বসে এখন ত’ কত থিসিস রচনা করা যেতেই পারে, ফেসবুকে কত বিতর্ক তোলা যেতেই পারে যে ‘ধর্ষিতার’ও যৌনাকাংখা থাকে এবং সেই যৌনাকাংখা প্রকাশ করাই তার চরিত্রের বিপ্লবী দিক। নারীর ‘ফ্রিডম অফ সেক্স্যুয়ালিটি’র কথা বলে নিজেদের আমরা কতই না র্যা ডিকাল ভাবছি! হায়, একাত্তরের ধর্ষিতারা যারা মারা গিয়েছেন তারা নিশ্চিত তাদের কবরে শিউরে উঠেছেন এতক্ষণে! এত বড় বিদ্রুপ, এত বড় অবমাননা আমরা তাদের কি করে করছি? তাদেরই হারানো সম্ভ্রম ও আব্রু পায়ে দলে?)
৪. ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘নারীর একাত্তর’-এ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সাক্ষাৎকার আপনি উদ্ধৃত করেছেন। শুধু পাকিস্থানী সৈন্য নয়, বিহারি, আগাখানি, বাঙালি রাজাকার সবাই তাঁর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়েছে ও পাকিস্থানী মেজর আলতাফ করিম তাঁর জীবন বাঁচান বলেও আপনি উল্লেখ করেছেন।
রুবাইয়াৎ, ব্যক্তিগত ভাবে একজন পাকিস্থানী সৈন্য ভাল আচরণ করতেও পারেন। বাঙালি নারীর অসহায় অবস্থার সুযোগও বাঙালি রাজাকার নিতে পারেন। কিন্তু আপনার ছবির সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক দিক হলো মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র চিত্রণ। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা এখানে যুদ্ধ না করে নারী সঙ্গে কাতর ও উন্মুখ। অথচ, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে চিরদিনের মত পঙ্গুত্ব বরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আজো আলাপ করলে জানা যায় কিভাবে দিনের পর দিন গাছের ফল বা ক্ষুধার কৃত্রিম বড়ি খেয়ে তারা দু:সাধ্য সব অপারেশনে নেমেছেন।
আজো তারা অশ্রুজলে স্মরণ করেন কবে ও কোথায় তাঁরা পাক বাঙ্কার থেকে উদ্ধার করেছেন নগ্ন ও ধর্ষিতা বাঙালী মেয়েদের!
৫. বিশিষ্ট নারীবাদী চলচ্চিত্র তাত্তিক লরা মালভি তাঁর ‘ফেমিনিজম ইন সিনেমা’ গ্রন্থে বারবার বিরোধিতা করেছেন ‘মেল গেইজে’র যে গেইজে পুরুষের চোখে নারীর ‘যৌনবস্তু’ আবেদন ফুটিয়ে তোলা হয়। আপনি নারী পরিচালক হয়েও নায়িকা ‘মেহেরজানে’র কস্টিউম ও সাজগোজে সেই ‘মেল গেইজ’-এর কোন পরিবর্তন হয় নি। সত্যি কথা বলতে, এই ছবির প্রিমিয়ার শো-এর আগেই ‘দ্য ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় ‘মেহেরজান’-এর একটি দৃশ্যের ছবি দেখে প্রথমে আমরা খুবই অবাক হয়ে গেছিলাম। ঐ যেখানে কাদাজলে বসা ‘মেহেরজানে’র শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে স্লিভলেস ব্লাউজে একটি স্তন অনাবৃত, মুখোমুখি তার বালুচ সৈন্য। দেখুন, সোফিয়া লোরেন ‘টু উইমেন’ ছবিতে ধর্ষিতা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর’-এ বেশ কিছু ধর্ষিতা নারীর ছবি আছে যা দেখে শিউরে উঠতে হয়। কিন্তু যুদ্ধ, দাঙ্গা, খরা, বন্যা, জলোচ্ছাস, দূর্ভিক্ষ সহ প্রাকৃতিক বা মানবিক কোন বিপর্যয়ে তরুণী নারীর আলোকচিত্র বা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহারের এ্যাঙ্গেল দেখেই বোঝা যায় কোথায় নারীটির প্রকৃত অসহায় অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে আর কোথায় এই মর্মন্তুদ পরিস্থিতিতেও তার শরীরকে ক্যামেরায় ‘মেল গেইজ’ বা পুরুষ চোখের উপাদেয় পণ্য করে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে ‘মেহেরজান’-এর এই দৃশ্যে মনে হয় নি যে নায়িকা কোন বাস্তব সঙ্কটে আছে। ১৯৭১-এর ঐ ভয়াবহ দিনগুলোয় সর্ষে ক্ষেতে নায়ক-নায়িকার হাঁটা, নৌকায় ঘোরা, জলক্রিড়া...সবই ভারি অদ্ভুত! কাদা-জলে নায়িকার পোশাকের এই আপাত: বিস্রস্ত দৃশ্য যেন রঙ্গময় বিধাতা পুরুষ নায়কের কাছে নায়িকার সৌন্দর্য ও যৌনাবেদন পুরোপুরি উন্মোচন ও তাদের প্রণয় ঘনীভূতকরণের জন্যই নির্মিত। আমাদের বড় দূর্ভাগ্য এই যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি নারী হলেও তার মন্ত্রীপরিষদ, সেনাবাহিনী, সংসদ, আদালত, সংবাদমাধ্যম, পুলিশ প্রশাসন ও সুশীল সমাজ যেমন থাকে পুরুষশাসিত, একইভাবে নারী যদি চলচ্চিত্র পরিচালকও হয়, সেই ছবির প্রযোজক, স্ক্রিপ্ট লেখক, ক্যামেরা ক্রু, এডিটিং প্যানেল, ডিস্ট্রিবিউটর্স ও সর্বোপরি ভোক্তা শ্রেণীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সিদ্ধান্ত নির্মাতা অংশত পুরুষ।
তাই, লরা মালভি ও তার মাতা মাতামহীরা মিলে হাজারো ‘মেল গেইজ’-এর বিরুদ্ধে লিখেও বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন বলে ত’মনে হচ্ছে না। গোটা সিনেমা জুড়েই ‘মেহেরজান’কে আঁটোসাঁটো কামিজ, গলায় ওড়না ঝুলিয়ে চলা-ফেরা করতে দেখা গেছে। যদিও ’৭১ সালেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়েই কৈশোরে পৌঁছতে না পৌঁছতেই শাড়ি পরতেন। কিম্বা, সালোয়ার-কামিজ পরলেও ভয়ানক যুদ্ধের ভেতর অমন গলায় ওড়না দুলিয়ে গ্রামের রাস্তা জুড়ে চলা-ফেরা করা বেশ অকল্পনীয় ব্যপার বলেই মনে হয়। এ ব্যাপারেও আপনার কাছ থেকে সামাণ্য উত্তর যদি আমরা পেতাম!
৬. প্রিয় রুবাইয়াৎ, আপনি আরো লিখেছেন যে ‘শত্রু’“রেখার ওপারে নারী-পুরুষের প্রেম বাংলা ভাষায় ও সারা বিশ্বের কথাসাহিত্য, কবিতা, চলচ্চিত্র বা নাটকের চিরন্তন বিষয়।
’হ্যাঁ, অস্বীকার করছি না। দস্তয়েভস্কি সহ অনেক রুশ লেখকই যাঁর ‘ওভারকোট’ থেকে জন্ম নিয়েছেন, সেই নিকোলাই গোগোলের ‘তারাস বুলব্যা’-য় কসাক যোদ্ধা তারাসের ছোট ছেলে আন্দ্রে পোলিশ তরুণীর প্রেমে পড়ে স্বপক্ষ ত্যাগ করলে ক্রুদ্ধ পিতা আপন পুত্রকে সমরাঙ্গনে হত্যা করে। ‘প্রথম আলো’র ব্লগ পড়ে কৌতুক বোধ করেছি যখন অনেকেই আপনার পক্ষে যুক্তি দান করতে গিয়ে মুম্বাই মশালা ছবি ‘বীর-জারা’র প্রসঙ্গ তুলেছেন। শেষমেশ আপনার ছবিকে যারা সমর্থন করছেন, তাদের বীর-জারার মতো উদ্ভট বলিউডি ছবির রেফারেন্স টানতে হচ্ছে...এটাই দুঃখজনক।
শত্রুরেখা’র ওপারে নারী-পুরুষের প্রেম কখনোই দোষনীয় নয়।
গোগলের ‘তারাস বুলব্যা’-য় শত্রুপক্ষের পোলিশ তরুণীকে উদ্দেশ্য করে রুশ সেনা আন্দ্রের প্রেমোচ্চারণ আজো বড্ড শ্রুতিমধুর। কিন্তু, তাই বলে গোগল গোটা রুশ বাহিনীর সব সৈন্যকে মন্দ চরিত্রের দেখাতে যান নি। আন্দ্রেরই ভাই অস্তাপ ও পিতা তারাসের প্রবল আত্মোৎসর্গ...দেশমাতৃকার জন্য...সেখানে দেখানো হয়েছে। আপনার চলচ্চিত্রের তিন জন মুক্তিযোদ্ধার অন্তত: একজনের চরিত্রে সে গুনের উপস্থিতি দেখা গেলে জন প্রতিক্রিয়া, বিক্ষোভ ও রোষ এত তীব্র হতো না!
৭. নানাজানের চরিত্রের স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’র নিখিলেশ চরিত্রটির কথা উল্লেখ করেছেন। ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা ও সমালোচনা দুই-ই প্রাপ্য।
প্রশংসা একারণে যে বাঙালী বর্ণহিন্দু শ্রেণী নিয়ন্ত্রিত স্বদেশী আন্দোলনের সাথে সমাজের দরিদ্র চাষী ও বিশেষত: মুসলমান কৃষক শ্রেণীর বিচ্ছিন্নতা গভীর অন্তর্দৃষ্টির সাথে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। সমালোচনা এ কারণে প্রাপ্য যে সন্দ্বীপের মতো ভোগী, শঠ ও নিষ্ঠুর চরিত্র দিয়ে সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রীতিলতা বা কল্পনা দত্তদের রক্ত ও আত্মত্যাগকে ঢাকার চেষ্টা করে রবীন্দ্রনাথ অসম্ভব অন্যায়ও করেছেন বৈকি ইতিহাসের সাথে। ঠিক যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত বাংলার মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজের জন্যই ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলার দরিদ্র মুসলিম, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য তা’বিশেষ ফলপ্রসূ হয় নি। তাই বলে একাত্তরের রণাঙ্গনে সব মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগকে অস্বীকার করা যায় না।
কাজি নজরুল ইসলাম যখন ‘অগ্নিবীনা’লিখে কারারুদ্ধ বা শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ বিরোধী উপন্যাস ‘পথের দাবি’ ঔপনিবেশিক সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে, নিখিলেশের মুখ দিয়ে অহিংসা ও ভাববাদী নানা কথা বলিয়ে রবীন্দ্রনাথ পরোক্ষে ব্রিটিশের পক্ষে সাফাইও গেয়েছেন বৈকি।
৮. আপনার লেখার একদম শেষে এসে আপনি বলছেন যে আপনার এই ছবি ‘বাঙালী মুসলমানের আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান। ’ এবার সত্যিই অবাক হলাম। এ ছবি তবে কার? নারীর? না, কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠির? আপনার ছবির প্রচারণায় একবার বলা হচ্ছে যে এটা মুক্তিযুদ্ধে নারীর আত্ম-অনুসন্ধানের ছবি। আবার, ‘প্রথম আলো’তে প্রকাশিত আপনার নিবন্ধের শেষে বলা হচ্ছে যে ‘বাঙালী মুসলমানের আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান কোন অপরাধ হতে পারে না।
’অপরাধ কে বলছে রুবাইয়াৎ? যে কোন জাতি বা এমনকি ধর্মীয় গোষ্ঠিরও আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান করার ‘অধিকার’ আছে। ইস্রায়েলের ইহুদিরাও সেই যুক্তির আওতায় বলতে পারে যে তাদের ‘ইহুদি’পরিচয় বিষয়ে আত্ম-অনুসন্ধানের অধিকার আছে। বিজেপির ‘গরব সে কহো হাম হিন্দু হ্যায়’ শ্লোগানও এই ‘অধিকার বোধে’র আওতায় একভাবে বৈধ ত’ বটেই! কিন্তু, পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থের রচয়িতা পুরুষ ও উক্ত ধর্মগ্রন্থগুলোয় শুদ্রের অবস্থানে পতিত নারীর হাল কি এক? ইহুদি পুরুষেরা ঈশ্বরের কাছে সকাল বিকাল ধন্যবাদ জানায় তাদের নারী না বানানোর জন্য। মনুর সংহিতায় নারী নরকের দ্বার। ইসলামেও বেহেশতে পুরুষের অগ্রাধিকার।
খ্রিষ্ট ধর্মেও নারীর হীনাবস্থার ব্যত্যয় নাই। পশ্চিমে সাদা, খ্রিষ্টান নারীকে সাদা ও খ্রিষ্টান পুরুষের সাথে বিস্তর লড়াই করে ভোটাধিকার, সম্পত্তির অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার পর্যন্ত আদায় করতে হয়েছে। হিন্দু বা মুসলিম নারীদেরও একই লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে বা হচ্ছে! পুরুষ কি আপনাকে এম্নি এম্নি একফোঁটা কিছু দেবে? নারী যে সব ধর্মগ্রন্থেই চিরশুদ্র, রুবাইয়াৎ! আর ১৯৭১-এর যুদ্ধে শুধু বাঙালী মুসলমান নারী ত’ ধর্ষিত হয় নি! পাক বাহিনীর অনেকেই এদেশে এসেছিল ‘হিন্দু’ বা ‘অর্ধ-হিন্দু বাঙালী মুসলমানে’র সাথে যুদ্ধ করতে। গণহত্যার মতোই গণধর্ষণের শিকারও জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে বেশি হয়েছে হিন্দু নারী। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় একাত্তরের যুদ্ধের সময় এদেশে জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ ভাগের কাছাকাছি হলেও ধর্ষিতা নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বাঙালী হিন্দু অবিবাহিতা নারী (৪৪% ভাগ)।
এরপর পর্যায়ক্রমে এসেছে বাঙালী মুসলিম অবিবাহিতা, বাঙালী হিন্দু বিবাহিতা, বাঙালী মুসলিম বিবাহিতা ও আদিবাসী, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠির নারীরা। সাঁওতাল, রাখাইন, চাকমা...কে ধর্ষিতা হয় নি? ধর্ষণের মুখ্য টার্গেট অবশ্যই হয়েছে বিবাহিতার বদলে অবিবাহিতা তরুণীরাই বেশি। এ-ও পুরুষতন্ত্রের আর এক সংস্কার বৈকি! অনাকর্ষিত মৃত্তিকার মতো অনাকর্ষিত নারী দেহের লোভ! এখন তবে ‘ধর্ষিতা’ হওয়ার যুক্তিতে বাঙালী মুসলমানের পাশাপাশি বাঙালী হিন্দু, সাঁওতাল, রাখাইন, চাকমা...সবাই ‘আত্মপরিচয়ে’র অনুসন্ধান করুক! দুঃখজনক রুবাইয়াৎ! আমরা যারা একাত্তর দেখি নি, তবে একাত্তরের গল্প শুনেছি আমাদের মা বাবাদের কাছ থেকে, আমরা জেনেছি যুদ্ধের ঐ ন’টা মাস এ দেশের সব মানুষ একাত্ম -একপ্রাণ হয়ে লড়াই করেছে। সেদিন দেশের জন্য রক্ত ঢালা পুরুষ বা ধর্ষিতা কুমারীর রক্তে ভেদ করা যায় নি যে কোন্ রক্ত কার? আজ তবে এই ভেদরেখা কেন? ফকির লালন সাঁই কি কম দুঃখে বলেছেন যে পৈতা দিলে যদি ব্রাক্ষণ হয়, তবে তিনি বামনী কি প্রকারে চিনবেন? কিম্বা, সুন্নত দিলে যদি হয় মুসলমান, মুসলমানীর কি হবে? ধর্মগ্রন্থগুলো যে পুরুষের রচনা, এ কথা বহু আগেই সাহস ভরে বলে গেছেন বেগম রোকেয়া! নারীর আত্মপরিচয়ের মীমাংসা ত’ তাই শাস্ত্র-শরিয়তের লক্ষণ রেখা ছাড়িয়েই শুরু হবার কথা।
ব্যক্তিগতভাবে যারা আপনার ছবি বাজেয়াপ্ত করা বা আপনাকে গ্রেপ্তারের কথা বলছে, তাদের দাবির প্রতি কঠোর ভিন্নমত পোষণ করেই আমরা এ লেখাটি শেষ করছি।
পরিশেষে আবারো এক তরুণ, মেধাবী লেখক ও পরিচালক হিসেবে আপনাকে অভিবাদন।
৩০ শে জানুয়ারি ২০১১।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।