আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পবিত্র মক্কা ও মদীনা থেকে তোলা আমার কিছু ছবি ও আমার পবিত্র ওমরাহজ্ব পালন । (ছবি ব্লগ-১)

পৃথিবীটা যদি একটা বিশাল নদী হয় , তবে আমি ভাববো পৃথিবীর উপর আমি একটি ভাসমান নৌকা । যার ধর্মই হচ্ছে বয়ে চলা । ২০১২ সালের প্রথম দিকে আমি পবিত্র ওমরা হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদীনাতে গিয়েছিলাম । এটি ছিলো আমার ৩য় বার ওমরা হজ্ব করা । তাই প্রথমেই মহান আল্লাহ্‌ পাককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

কারণ, আমার মত একজন সাধারন ব্যাক্তিকে তিন তিন বার তার পবিত্র স্থান গুলো দর্শন করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন । বিকেল প্রায় ৪টার দিকে রিয়াদ সিটি থেকে বেড়িয়ে আরবের এই মরু পথ ধরেই যাচ্ছিলাম পবিত্র মদিনার উদ্দেশ্যে । গাড়ীর গ্লাসের বাইরে হালকা বৃষ্টির পানি থাকায় ছবিটি একটু অপরিস্কার দেখাচ্ছে । দীর্ঘ ১০ঘন্টা গাড়ীতে চড়ার পরে পরদিন ভোর প্রায় ২টার দিকে পবিত্র মদীনায় গিয়ে পৌছেছি । রিয়াদ সিটি থেকে মদীনা সিটিতে যাওয়ার পথে দেখলাম কতশত বর্গকিলোমিটার জায়গা মরু ভূমি রুপে খালি পরে আছে ।

যতদুর চোখ যায় শুধু মরুভূমি আর মরুভূমি । আর তখন মনে হলো আমাদের বাংলাদেশে জায়গার কতই না সমস্যা । এখানে কত জায়গা খালি । পবিত্র মদীনা শরিফের সদর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা । তখন রাত ৩টা।

মদীনা শরীফের ভিতরের অংশে এই স্থানটিতে দাঁড়িয়ে নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আযান দিতেন । এর ঠিক বাম পাশেই নবীজীর পবিত্র রওজা অবস্থিত । ছবির এই কক্ষটিই হচ্ছে নবীজীর পবিত্র রওজা । এর ভিতরেই সারা দুনিয়ার মুসলিম জাহানের পথ প্রদর্শক বিশ্ব নবী , আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চির শায়িত আছেন । সবচেয়ে সৌভাগ্যের কথা হলো যে , (ছবিটির দিকে ভালো ভাবে লক্ষ করুন সেখানে দেখা যাচ্ছে সোনালী রঙের তাঁকের মাঝে অনেকগুলো কুরান শরিফ রাখা আছে ।

) আমাদের বাঙ্গালী কিছু মুসলিম ভাই এই তাক গুলো দৈনিক ঘোসে মেঝে পরিস্কার করছে । কতই না সৌভাগ্য তাদের । আমি যখন পবিত্র রওজা স্পর্শ করলাম আমার হৃদয় যেন শান্ত শীতল হয়ে গেল । আর মনে মনে ভাবলাম , যিনি এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ্ মানব , যিনি বিনা হিসেবে বেহেশত্ এর অধিকারী । যেই নবীর উম্মত হওয়ার জন্যে নবী হযরত ঈসা (আঃ) আবার এই পৃথিবী্তে আগমন করিবেন ।

আমি সেই মহা মানব মুহাম্মদ (সাঃ) এর খুভ পাশেই দাঁড়িয়ে । তখন নিজেকে যে কতটুকু ভাগ্যবান মনে হয়েছে তা আপনাদের বলে বুজাতে পারব না । সেই স্থানে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম অসংখ্যবার । জান্নাতুল বাগীর গেট ছবিতে যেই গেট টি দেখছেন , এটি পবিত্র রওজা শরীফের বাম পাশে একটু দূরে অবস্থিত । এই গেটের ভিতরে আছে একটি গোরস্থান ।

যার নাম হচ্ছে ইসলামী ভাষায় ( জান্নাতুল বাকি ) যাকে আমরা বেহেশত এর বাগান বলে থাকি । এই গোরস্থানে ২টি লাশ কবর দেওয়ার কাজে অংস গ্রহণ করেছি । শুনেছি এই গোরস্থানে যারা শায়িত আছে তাদের সকলেই নাকি বেহেশতে প্রবেশ করবেন । সুবাহানাল্লাহ ! ঐ গোরস্থানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করেছি তিনি যেন কাল কেয়ামতের ময়দানে আমাকেওএবং আমাদের সকলকে সেই গোরস্থানবাসীর সাথে বেহেশত যাওয়ার তওফিক দান করেন। জান্নাতুল বাকির পবিত্র কবর গুলোর একাংশ ( ভোরের অন্ধকারে তোলা ছবিটি ) আপনারা সবাই হয়তো এই গজলটি শুনেছেন ঃ- সালাতু সালাম গো আমার , দুরুদে সালাম গো আমার , কইও নবী মোস্তফায় তোমরা যদি যাওগো মদীনায় , মদীনাতে যাওয়ার পথে , আমি সকাল হতে দাঁড়িয়ে আছি গো ..... কেউ নেয় না মোর সালাম খানি , কেউ নেয় না মোর দোয়া খানি , পাক নবীজীর রওজায় , তোমরা যদি যাওগো মদীনায় ।

মদীনা শরীফের মাঝে .. বেহেশতের এটি বাগান আছে গো .... সেই বাগানে শুইয়া আছে , আমার দয়াল নবী মোস্তফা , তোমরা যদি যাওগো মদীনায় । ..........................। নবীজীর রওজা শরীফ ও জন্নাতুল বাকির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে এই গজলটি বার বার মনে হচ্ছেছিলো । তখন মনে ছিলো খুভ আনন্দ । এর পর নবীজীর রওজা শরীফ মোনাজাত শেষে সকাল ৭টার দিকে গাঁড়ী মদিনা ছেরে পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ।

মদীনা শহর থেকে বের হওয়ার আগেই মদীনা শহরে অবস্থিত ইসলামী ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ ঘুরে দেখলাম । মসজিদ-এ কোবার ভিতরের অংশ মসজিদ-এ কোবা , সামনে যাকে দেখছেন ও আমার ফ্রেন্ড মসজিদ-এ (কোবা)। হযরত মুহাম্মোদ (সঃ) পবিত্র মক্কা থেকে পবিত্র মদিনাতে হিযরত করার সময় একটি উটের পিঠে চরে মদিনা এসেছিলো । তখন মদিনা বাসি প্রত্যেকেই চাইলো মুহাম্মোদ যেন মেহমান হিসেবে তাদের ঘরে থাকে । তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া যে , মুহাম্মোদকে বয়ে আনা উট টিকে ছেরে দেওয়া হবে ।

উট টি মুহাম্মোদকে নিয়ে যেখানে গিয়ে থামবে , ঠিক সেখানেই হবে মুহাম্মোদ (সঃ) এর ঘর । আর এখানেই হবে ই্লামের সর্বপ্রথম মসজিদ । যেটি বর্তমানে ( কোবা ) মসজিদ নামে পরিচিত । মোট ৩ বার আমি এই মসজিদে গিয়েছি এবং প্রত্যেকবার ২ রাকাত করে নামায । মহান আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ, যিনি আমার মত এই সামান্য ব্যাক্তিকে এমন পবিত্র স্থনগুলো দর্শণ করার তওফিক দিয়েছেন ।

দুই কিবলা(কিবলাতাইন) মসজিদ দুই কিবলা( কিবলাতাইন) মসজিদ দুই কিবলা(কিবলাতাইন) মসজিদ এই মসজিদের নাম দুই কিবলা রাখার একটা কারণ আছে । তা হল, মসজিদ টি যখন প্রথম নির্মিত হয় , তখন নামাযের হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পর প্রথমদিকে আরবের তৎকালীন রীতি অনুযায়ী আমাদের নবী করীম (সাঃ) ও আর সবাই নামায পড়ত জেরুজালেমের দিকে মুখ করে। কিন্তু একদা এই মসজিদে নামাযরত অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছ থেকে ওহী নাযিল হল যে কিবলা ঘুরিয়ে মক্কার কাবা ঘরের দিকে করতে হবে। তখন নামাযরত অবস্থায় আমাদের নবী (সাঃ) ও সকল মুক্তাদীরা তাদের কিবলা মক্কার দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এই জন্যই এই মসজিদটির নাম দুই কিবলা মসজিদ নামে পরিচিত ।

এই মসজিদে জিয়ারত করার সময় দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয় । মদীনাতে আরো কয়েকটি গুরুত্ব পূর্ণ মসজিদে জিয়ারত করেছিলাম । তবে সেগুলোর ছবি না থাকা দিতে পরলাম না । মদীনা শহর ছেড়ে যাওয়ার সময় হেরাম মসজিদে বসে পবিত্র হজ্ব্‌ বা অমরা হজ্বে্র নিয়ত বাধতে হয় । সেই বর্ণনা এই পোস্টে আর দিলাম না ।

আমার পরবর্তি পোস্ট পবিত্র মক্কার ছবি ব্লগ নিয়ে। সেখানেই দিবো । আল্লাহ্‌ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ্ব পালন ও পবিত্র এই স্থান গুলো দর্শন করার তওফিক দান করুক । (আমীন ) ২৫শে সেপ্টেম্বর , দুপুর ৩টা ২০মনিট । রিয়াদ সময়ে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.