আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যাডামের আম ছালা দুইই গেল



গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আশকারা ও ছত্রছায়ায় দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী একটি চিহ্নিত কুচক্রী মহল সরকার দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে বলে চিৎকার করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। শুধু সাইনবোর্ডধারী লোকবলহীন দু’একটি রাজনৈতিক দলের ভাবসাব দেখানো গায়ে মানে না আপনি মোড়ল ধরনের নেতাও এই অপপ্রচারে শামিল হয়েছেন। নিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী সুশীল সমাজের লোক বলে পরিচিত কিছু মুখচেনা লোকও এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে পরিবেশ গরম করে তুলতে চাইছেন। পত্রিকায় ছবি ছাপানো ও টিভির পর্দায় চেহারা দেখাতে উন্মুখ সুবিধাবাদী চরিত্রের এই লোকগুলো একবারও বলছেন না যে নবম সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ধনুকভাঙ্গা পণ করে বসেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য। কারণ, বেগম জিয়ার পরম পেয়ারের পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র পরামর্শ মোতাবেক এদেশে তার বিশ্বস্ত দোসর জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নির্বাচন বানচাল করে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত থেকে নির্বাচনের পূর্বে খালেদা জিয়ার কিছু বেসামাল মন্তব্য ও বক্তব্যও তার স্বাক্ষর বহন করে।
ইপ্সিত লক্ষ্য হাসিলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি ক্যাডারদের নানারূপ হিংস্র তৎপরতা ও প্রচ- সশস্ত্র বাধাবিঘœ উপেক্ষা করে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর দেশের মানুষের মধ্যে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি ফিরে আসে। স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দশম সংসদ নির্বাচন বানচালের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলার মুখে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে।

কারণ, স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কঠিন দিনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের মূল লক্ষ্য ছিল এদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলা। তাই তারা হরতাল-অবরোধের নামে হত্যা-অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মতো নানা জঘণ্য সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে নির্বাচন ভ-ুল করার ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছিল। সর্বত্র একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে ককটেল ও পেট্রলবোমা মেরে নিরীহ শিশু-মহিলা-বৃদ্ধসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নেওয়ার উন্মত্ত মহোৎসবে মেতে উঠেছিল। নির্বাচনকালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের কারণে সারাদেশে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও আনসারসহ মোট ২২ জন প্রাণ হারান।

কিন্তু দেশপ্রেমিক বীর বাঙালি ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে তাদের নাগরিক অধিকারের প্রকাশ করেছিল।
জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী তা-ব ও হিংস্রতার কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছিল বটে। কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষের বুঝতে আর কিছু বাকি ছিল না, একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখনও তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে।
জামায়াত-শিবির এবং ১৮ দলীয় জোটভুক্ত কিছু দলের ক্যাডার ও সশস্ত্র কর্মীরা এতোটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে গত প্রায় দু’টি মাসই মনে হয়েছে যে, দেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির যুদ্ধ চলছে।

বাঙালি জাতি যেন একাত্তরে ফিরে গিয়েছিল। এ যেন স্বাধীনতাকামী গণমানুষের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার শত্র“দের যুদ্ধ ঘোষণা। একাত্তরের বাঙালির অকুতোভয় দামাল ছেলেরা যেমন দুর্বার হয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করে তাদের শুধু পরাজিতই করেনি, একেবারে পর্যুদস্ত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল, তেমনি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানিদের ঘৃণ্য আদর্শের দোসর ও তাদের এদেশীয় দালাল ও তস্য দালালদের এবারও মোকাবেলা
করেছে এবং তা অব্যাহত রাখার দৃঢ়তা প্রদর্শন করে চলেছে। একাত্তরে যেমন নিকট প্রতিবেশী ভারত আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল, এবারও তারা এদেশের ন্যায় যুদ্ধে নৈতিক সমর্থনদানে পিছিয়ে নেই।
বর্তমান এ যুদ্ধে একটি অপূর্ব মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

নানা অপপ্রচার ও অপপ্রয়াসের মধ্যেও এবারও শুধু ভারতই এগিয়ে আসেনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকের মতো রাশিয়াও আবার এগিয়ে এসেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি গঠিত নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। দেশের একজন সচেতন নাগরিক, বিশেষ করে একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত সবকিছু এখনও চোখের সামনে ছবির মতো ভাসছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এদেশের স্বাধীনতাকামী কোনো মানুষের পক্ষেই সেই ঐতিহাসিক দিনগুলোর কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ভারত ও তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নসহ আরও বেশ কিছু পূর্ব ইউরোপীয় দেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল।

এদেশের মানুষ অবশ্যই ভুলে যায়নি যে আমেরিকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কীভাবে দাঁড়িয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে এদেশে গণহত্যা ও তাদের ঘৃণ্য আগ্রাসনের নগ্ন সহযোগী হয়েছিল। দেশের জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যাননি যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে এবং বেগম জিয়ার সাধের পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সপ্তম নৌবহরের পারমাণবিক যুদ্ধ জাহাজ ইউএস এন্টারপ্রাইজ আমাদের বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিজয়কে ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।

চীনও অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে
পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরুতেই রণাঙ্গন ও কূটনৈতিক ফ্রন্টÑউভয় ফ্রন্টেই পাকিস্তানিরা বেধড়ক মার খেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানের সব কূটকৌশলই ব্যর্থ হচ্ছিল। হানাদার পাকিস্তানিরা বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমশ বন্ধুহীন হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ ঠেকাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করে।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশের বড় বন্ধু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পোল্যান্ড প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়ায়। কিন্তু ১০টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান করে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি ঠেকানোর জন্য সেভিয়েত ইউনিয়ন অবশেষে তার ভেটো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের এক মহান নেতা মাও সে তুংয়ের চীনের মুখে চুনকালি পড়ে।


দেশে কোনো গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে বিদেশি কূটনীতিকদের মুখাপেক্ষী হওয়া আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মানসিকতা আমাদের দেশের জন্য যে কতটা সম্মানহানিকর তা বোধহয় আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচন বানচালে বদ্ধপরিকর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে আলোচনায় বসার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে ও তালবাহানা করে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। শুরু থেকেই বিএনপি তার ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার পথ পরিহার করে আসছিল। তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে অনেক আগে থেকেই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল।

তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বানে কোনোরূপ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তারা ন্যক্কারজনক বাঁকাপথ ধরেছিল। একদিকে তারা বোমাবাজি করে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আর অন্যদিকে আবার আলোচনার নামে বিদেশি কূটনৈতিকদের দ্বারস্থ হয়েছে। নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেত্রী ঢাকায় নিযুক্ত ৩৪টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু কূটনীতিকরা সহিংসতা ও নাশকতা পরিহারের জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।


খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় বিরোধী জোট আশা করেছিল সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলেও তাদের ভাষায় এই ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পর গঠিত নতুন সরকারকে বিদেশি সরকার সমর্থন বা অভিন্দন বার্তা পাঠাবে না। কিন্তু বিরোধীদলকে চরম হতাশায় ডুবিয়ে রাশিয়া, চীন, ভারত, বেলারুশ, কুয়েত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা ও নেপালসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশ এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিন্দন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শেখ হাসিনা অপূর্ব দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সঙ্গে নির্বাচন বানচালে বিএনপি-জামায়াতের সকল বাধাবিঘœ মোকাবেলা করে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব করে তুলে নতুন সরকার গঠন করে তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর পদটিও হারিয়ে এখন শুধু বিএনপির চেয়ারপারসনই থাকলেন। তাই তাঁর হা-হুতাশের মাত্রা একটু বাড়ারই কথা। আর সেজন্যই এখন আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেছেন। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর তত্ত্ব¡াবধানে আরাম-আয়েশে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে দিন কাটানো খালেদা এখন হয়ত স্বপ্নে ভারতীয় বাহিনী দেখতে পান। সেজন্যই হয়ত তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় ওরকম উদ্ভট মন্তব্য করতে পেরেছেন।

এখন দুর্মুখেরা বলতে শুরু করেছে, নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন আম ও ছালা দুটোই হারালেন।
নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি গঠিত সরকার নিয়েও এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী প্রশ্ন তোলেন। এরা আবার নিজেদের দেশপ্রেমিক বলে দাবি করেন। তাঁরা নতুন সরকারকে ঐকমত্যের সরকার বলতে একেবারেই নারাজ। বিশেষ পরিস্থিতিতে একাধিকবার বিশ্বে ঐকমত্যের সরকার গঠনের নজির রয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিরোধীদল লেবার পার্টি থেকে উপ-প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। বিশ্বের এক মহান নেতা সদ্য প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার দক্ষিণ আফ্রিকায়ও আমরা এ ধরনের সরকার দেখেছি। যারা বলছে বাংলাদেশে যুদ্ধাবস্থা চলছে না, তাদের উদ্দেশেই বলছিÑএ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াত এবং দলটির অঘোষিত বর্তমান কা-ারি বেগম জিয়ার নেতৃত্বে যে খুনখারাবি, হত্যা-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চলছে এবং এখনও হচ্ছে তাকে যুদ্ধাবস্থার চেয়ে কোনো অবস্থায়ই ভালো বলার উপায় নেই। নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের মদদপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা সারাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।

নারীদের ধর্ষণ করে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই বলছি, এ যেন একাত্তরেরই প্রতিচ্ছবি। একাত্তরে তারা যেভাবে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করার পৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছিল, এবারও তারা তাই করেছে। অথচ বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া এখনও গলা ফুলিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের লোকজন হামলা চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। মিথ্যাচারেরও সীমা থাকা উচিত।

দোষ দিয়ে লাভ নেই মিথ্যাচার আর ধোঁকাবাজির ওপরই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া স্বাধীনতার শত্র“ জামায়াতকে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন। বেগম জিয়া এখন তাদের কা-ারি হবেন তাতে আর অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
বিদেশি কিছু পত্র-পত্রিকায় এদেশের নানা বিষয়ে অহেতুক নাকগলানো সম্পর্কে কিছু না বললে লেখাটি অসমাপ্ত থেকে যাবে বলে এ বিষয়ে কিছু না লিখে পারছি না। সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক খবর ছাপতে গিয়ে কিছু ন্যক্কারজনক কা- ঘটিয়েছে।

প্রভাবিত হয়ে এই পত্রিকা দু’টি বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছিল। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর চার দিনের ব্যবধানে এই পত্রিকায় দু’টি দারুণ তথ্যবহুল ও চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা, ঢালা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা’ শিরোনামে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর এবং ‘কথা বলছে ২৫ মিলিয়ন ডলার, আমেরিকান লবিস্ট ফার্ম ও জামায়াত নেতার মধ্যে চুক্তি’ শিরোনামে ২০১১ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন দু’টি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মধ্যে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অর্থ নামক অব্যর্থ অস্ত্রটি ব্যবহার করে জামায়াত তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দু’টি পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠাতে সমর্থ হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের আগুন চরিতার্থ করতে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।

‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লিখেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বাংলাদেশের বড় ইসলামিক দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে। টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করে এসব পত্রিকা আবার সাংবাদিকদের নৈতিকতা সমুন্নত রাখার ছবক দেওয়ার দুঃসাহস দেখায়। এবারও বাংলাদেশ সম্পর্কে এ দু’টি পত্রিকাসহ কিছু বিদেশি পত্রিকার ভূমিকা খুবই ন্যক্কারজনক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতর্কিত প্রায় সবাইকে নতুন মন্ত্রিসভার বাইরে রেখে প্রশংসিত হয়েছেন। সবারই প্রত্যাশা, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। সন্ত্রাসীরা দেশের শত্র“ সে বিবেচনায়ই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ‘দেশি-বিদেশি কোনো চাপের কাছে মাথানত নয়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রত্যয়ী ঘোষণাও প্রশংসার দাবিদার। কৃষি, শিক্ষা ও বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত মহাজোট সরকারের সাফল্য অনেক। এ সাফল্য সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে দিতে হবে।

পোশাক শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তাহলে দেশের জনগণ খুবই খুশি হবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.