আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজিএমইএ ভবন ঘিরে নগরবাসীর ত্রিমুখী ভোগান্তি

A National Weekly Newspaper দৃষ্টি নন্দন হাতিরঝিলে অবস্থিত একটি অনাকাঙ্খিত স্থাপনার জন্য নগরবাসীকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ‘হাতিরঝিলের বিষ ফোঁড়া’ হিসেবে খ্যাত এই বিজিএমইএ ভবন নগরবাসীকে শুধু ভোগান্তিই উপহার দিচ্ছে না, বরং রাষ্ট্রের সকল আইন কানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভবনটি নগরীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতা ও দম্ভের প্রতীক হয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে নগরীর কিডনী হিসেবে খ্যাত হাতিরঝিলের মাঝে গ্যাট হয়ে বসা বিজিএমইএ ভবনটির কারণে নগরবাসীকে চরম পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এছাড়া আইনগতভাবে রাষ্ট্রের সব নিয়ম কানুনকে অবজ্ঞ‍া করার বিষয়টি পীড়া দেয় যে কোনো সচেতন নাগরিকের মনেই। হাতিরঝিল রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট।

নগরীর বৃষ্টির পানি এদিকে দিয়েই নেমে যাওয়ার কারণে জল‍াবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায় নগরী। পাশাপাশি হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয় এ নগরীর একটি বিশাল অংশের সুয়ারেজ বর্জ্র। কিন্তু মূল পয়ঃনিষ্কাশন চ্যানেলের ওপর স্থাপিত হওয়ায় বিজিএমইএ ভবনটি এখন নগরীর পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, উভয় ব্যবস্থাতেই বাধার সৃষ্টি করছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমেই এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমস্যাগুলো সম্পর্কে নগর পরিকল্পনাবিদরা জানান, বিজিএমইএ ভবনটি যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে তার প্রমাণ এরই মধ্যে আদালতে হয়ে গেছে।

তারপরও আইনী নানা জটিলতার মধ্যে প্রায় দুই বছর যাবৎ সদম্ভে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। এর অনুকরণে ভবিষ্যতে আরো অনেকেই অবৈধ ভবন বানানোর সাহস পাবে। যা নগরবাসীর জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের পরিচালক এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার্স অ্যান্ড আরবান সেফটির শিক্ষক মো. শাহীনুর রহমান বলেন,“হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবনের কারণে লেকটির একটি অংশ সরু হয়ে যাওয়ায় নগরীতে জমে যাওয়া বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ‍সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে একদিকে যেমন পরিবেশের দূষণ হচ্ছে, ঠিক তেমনি অন্যদিকে প্রভাব পড়ছে আশপাশের মানুষের উপরে, তা ছাড়া ভবনটি তো অবৈধ, এ ভবনটি যদি উচ্ছেদ করা না হয়, তবে এ ধরণের ব্যাড প্র্যাকটিস আরও অনেকেই করার সাহস পাবে।

তাই এ ধরণের কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করা উচিত। ” তবে বিশেষজ্ঞরা এ ভবনের প্রতিক্রিয়ায় যেসব সমস্যা ‍সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যাকেই সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে, বিজিএমইএ ভবনের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সুয়ারেজ লাইন আটকে যাচ্ছে। এর ফলে জমে থাকা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মল-মূত্র রাস্তার ওপরে ওঠে আসে। পরে রোদে ও বাতাসে শুকিয়ে এগুলো ক্ষতিকর গ্যাসের সৃষ্টি করছে, যা পরবর্তীতে মানুষের শরীরের জন্য নানা ধরণের ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের প্রকৌশলী দলের দলনেতা ইকবাল হাবিব বলেন, “আমরা বিজিএমইএ ভবনের ক্ষতি সম্পর্কে নানা সময়ে বলে এসেছি, এখনো বলছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। এর ফলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যাচ্ছে। মানুষ ভাবতে পারে যে টাকা থাকলেই যা ইচ্ছা তা করা যায়। তাছাড়া বিজিএমইএ ভবনটি শহরের সুয়ারেজ সিস্টেমকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত সমস্যাতো আছেই। বিজিএমইএ ভবনের কারণে যে শুধুমাত্র কারওয়ান বাজার ও আশেপাশের এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে তাই নয়, বরং এর সুয়ারেজ সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকার কারণে প্রায় পুরো নগরবাসীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং হবেন। কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে এখনই নজর দেয়া। ” অবশ্য বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলতে নারাজ। তবে নাম প্র্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিএমইএর সহসভাপতি বাংলানিউজকে বলেন, “এ ব্যাপারে যা হওয়ার তা কোর্টেই হবে।

” ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বিজিএমইএর ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। পরে আপিল করে এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ আনা হয়। এরপর থেকেই এ মামলা ঝুলছে প্রায় দুই বছর ধরে। আদালত রায়ে বলেন, ‘বিজিএমইএ’র ওই ভবনের জমির ওপর কোন মালিকানা নেই। কেননা জমিটি রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল ।

অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী কোন দাবিদার কর্তৃপক্ষের জন্য শুধু জনস্বার্থেই কোন ভূমি অধিগ্রহণ করা যায়। পরে যদি দাবিদার কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণকৃত জমি বা সে জমির অংশ অপ্রয়োজনীয় মনে করে তাহলে দাবিদার কর্তৃপক্ষ সে জমি সরকার বা জেলা প্রশাসনকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। এ ব্যাপারে দাবিদার কর্তৃপক্ষের কোন কর্তৃত্ব থাকে না। এ অবস্থায় হয় সরকার ওই জমি অন্য কোন জনস্বার্থে ব্যবহার করবে অথবা জমির মূল মালিকের কাছে তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। ’ রায়ে আদালত আরও বলেন, “ভবনটি সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পের জন্য একটি ক্যানসারের মতো।

এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে, এটি শুধু হাতিরঝিলই নয়, গোটা ঢাকা শহরকেই সংক্রমিত করবে। ’ উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবনটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবরে এর উদ্বোধন করেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে বিজিএমইএ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.