আত্মমাঝে বিশ্বকায়া, জাগাও তাকে ভালোবেসে
মানুষটির পুরো নাম জর্জ মারিও পেদ্রো বার্গাস ইয়োসা। পরবর্তী সময়ে এই দীর্ঘ নাম থেকে জর্জ ও পেদ্রো শব্দ দু’টি খসে যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে সাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক নোবেল পুরস্কারের জন্য যে কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম শীর্ষে উচ্চারিত হচ্ছিল ওই ব্যক্তিও তাদের একজন। অবশেষে তা সত্যি হয়ে ধরা দেয়। ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ীর নাম তাই মারিও বার্গাস ইয়োসা।
সাহিত্যে তাঁর নানা কাণ্ড-কীর্তি-সামর্থ্য যতটুকু নজরে এসেছে, তারচেয়ে কোনো অংশেই অগোচরে থাকেনি এই ক্ষ্যাপাটে মানুষটির ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ঘটনা। সময়ে সময়ে তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন, ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, নিজেও ঘটনা হয়ে উঠেছেন বৈকি!
ইয়োসার জীবন-যাপন প্রণালী ও বিশ্বাসের স্থানটি কখনো কখনো পরস্পরবিরোধিতার আভাস দেয়। এই যেমন, জীবনের প্রথম ভাগে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় আকৃষ্ট ইয়োসা ছিলেন কিউবান বিপ্লবের সমর্থক। সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্বদেশ পেরুর নিষিদ্ধঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টিতে। কিন্তু তাতে আবিষ্ট থাকেননি কিংবা বলা যেতে পারে তিনি পরিবর্তিত হয়েছিলেন।
যে কারণে পরবর্তী সময়ে ঝুঁকে পড়েন বামবিরোধী রাজনীতির দিকে। এমন কী তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস এতোটাই তীব্র ছিল, ১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পরাজিত হন।
এছাড়াও ১৩ বছর বড় সম্পর্কে খালাকে বিয়ে অথবা অপর নোবেলজয়ী খ্যাতিমান লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে ঘুষি মেরেও আলোচিত ও সমালোচিত হন তিনি।
পেরুর দক্ষিণাঞ্চলীয় আরেথিফা শহরে ১৯৩৬ সালের ২৮ মার্চ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ইয়োসা ১০ বছর বয়স পর্যন্ত মা ও নানা-নানীর বলিভিয়ার কোচাকাম্বায় ছিলেন। এ সময় পর্যন্ত তিনি পিতার সান্নিধ্যে সময়যাপনের সুযোগ পাননি, কেননা তাঁর জন্মের আগেই বাবা-মার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
শৈশব থেকেই তাকে জানানো হয়, তাঁর বাবা বেঁচে নেই। কেননা ইয়োসার মা ও নানা-নানী তাদের পরিবারের ভাঙ্গনের বিষয়টি তার কাছে ব্যাখ্যা করতে চায়নি।
পরবর্তী সময়ে ইয়োসার নানা সরকারের একটি কূটনৈতিক পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তারা পেরুর সমুদ্র উপকূলীয় শহর পিউরায় চলে আসেন। সেখানে ইয়োসা একটি স্কুলে ভর্তি হন এবং পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও যেতে হয় তাকে।
১৯৪৬ সালে ১০ বছর বয়সে ইয়োসার বাবা-মা পুনরায় বিয়ে বিচ্ছেদের অবসান ঘটিয়ে একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন।
তখন প্রথমবারের মতো ইয়োসা তার বাবার সান্নিধ্যে আসেন এবং পরিবারের সঙ্গে লিমায় থাকতে শুরু করেন। সেখানে ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত একটি খ্রিস্টান মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করেন।
১৪ বছর বয়সে ইয়োসার বাবা তাকে লিমার মিলিটারি একাডেমিতে পাঠান। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়ার একবছর আগে থেকে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে শৌখিন সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। মিলিটারি একাডেমি ছেড়ে দিয়ে পিউরায় পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দেন।
১৯৫৩ সালে লিমার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সান মার্কোসে আইন ও সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য যান। ১৯৫৫ সালে সম্পর্কে খালা জুলিয়াকে বিয়ে করেন। জুলিয়া ছিলেন ইয়োসার মামার স্ত্রী অর্থাৎ মামীর বোন। তখন ইয়োসার বয়স ১৯ আর জুলিয়ার ৩২।
১৯৫৭ সালে ছোট ‘দ্য লিডারস’ এবং ‘দ্য গ্রান্ডফাদার’ প্রকাশের মাধ্যমে ইয়োসার লেখকজীবনের যাত্রা শুরু হয়।
এ সময় তিনি পেরুর দুটি সংবাদপত্রে কাজ করতেন। গ্রাজুয়েশন সম্পন্নের পর ১৯৫৮ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে স্পেনের কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রিদে পড়তে যান। ১৯৬০ সালে তার বৃত্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন ইয়োসা প্যারিসে চলে যান এবং সেখানে পড়াশোনার জন্য একটি বৃত্তি পেতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করেন। কিন্তু প্যারিসে নেমে তিনি বুঝতে পারেন তার বৃত্তির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
কিন্তু তারপরও অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে যাওয়া ইয়োসা এবং জুলিয়া সিদ্ধান্ত নেন প্যারিসেই থেকে যাবেন। ইয়োসার মনে হয়েছিল প্যারিসেই তার লেখার যথাযথ কদর পাবেন। ইয়োসা ও জুলিয়ার বিয়ে কয়েকবছর মাত্র টিকে ছিল। ১৯৬৪ সালে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এক বছর পর ইয়োসা তার চাচাতো বোন প্যাট্্িরসিয়া ইয়োসাকে বিয়ে করেন।
এই সংসারে তাদের তিনটি সন্তানের জন্ম হয়।
সার্বক্ষণিক লেখালেখি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত লন্ডনের কিংস কলেজে স্প্যানিশ আমেরিকান সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন।
বাবার সঙ্গে ইয়োসার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তার লেখালেখিতে নানা-নানী উৎসাহ দিলেও তার বাবা ছিলেন ঠিক এর বিপরীত। পিতাপুত্রের এই সম্পর্ক সম্পর্কে ইয়োসা নিজ জবানিতে জানান, “পরস্পরের বিরোধী ছিলাম আমরা।
কেউ কাউকে শ্রদ্ধা করতাম না। ”
এমন কী ইয়োসার লেখালেখির কারণে তার বাবা তাকে সামরিক একাডেমিতে পাঠিয়ে দেন। ওই সময়টাকে ‘নরক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইয়োসা। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’ সামরিক একাডেমির অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে। আত্মজৈবনিক অভিজ্ঞতানির্ভর উপন্যাসটি ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয়।
এটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। শাসকযন্ত্রের যে স্বাভাবিক অসহিষ্ণুতা তাই স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে পেরুর সামরিকযন্ত্রের নিয়ন্ত্রকেরা সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন। এমন কী তা এই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছায় যে, আয়োজন করে উপন্যাসটির হাজার খানেক কপি পুড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এর বিপরীত চিত্রই উঠে আসে বোদ্ধা শ্রেণীর কাছে।
সামরিক একাডেমির অমানবিক আচরণ ও নানামাত্রিক দুর্নীতি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে হাজির করায় তা অন্যমাত্রা লাভ করে। উপন্যাসটির প্রকাশভঙ্গি অভিনবত্বের কারণে প্রশংসিত হয় আর অর্জন করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। প্রথম এই উপন্যাসের কারণেই ইয়োসা বিদগ্ধ লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান।
১৯৬৫ সালে ইয়োসা নির্মাণ করে উপন্যাস ‘দ্য গ্রিন হাউজ’। একটি বেশ্যালয়কে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি রচিত হয়।
এটি প্রকাশের পরপরই পাঠক-সমালোচক মহলে আলোচিত হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমেই মারিও বার্গোস ইয়োসা ল্যাতিন আমেরিকার কাহিনীকার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর বলে বিবেচিত হন। কোনো কোনো সমালোচকের কাছে ‘দ্য গ্রিন হাউজ’ এখনো ইয়োসার সবচেয়ে নিখুঁত ও গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। ল্যাতিন আমেরিকার সাহিত্য সমালোচক গেরাল্ড মার্টিন জানান, এটি ল্যাতিন আমেরিকা থেকে উঠে আসা মহান উপন্যাসগুলোর একটি।
ইয়োসার তৃতীয় উপন্যাস ‘কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথিড্রাল’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।
১৯৫০’র দশকে স্বৈরশাসক ম্যানুয়েল আর্দিয়ার শাসনামলে পেরুর জীবন-যাত্রার যে অবক্ষয় তাই এই উপন্যাসের উপজীব্য। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠাজুড়ে অতিকায় সেই উপন্যাসে তিনি তৎসময় যাপিতজীবনকে উপস্থাপন করেছেন শৈল্পিকবাস্তবতায়। স্বদেশের রাজনীতি ও সমাজজীবনের নানা অভিঘাত, কপটতা আর নীতির আকাল নিয়ে উচ্চকণ্ঠ পরবর্তী উপন্যাসগুলোর ভূমিতল সৃষ্টি করে দেয় ইয়োসার ‘দ্য গ্রিন হাউজ’ ও ‘করভারসেশন ইন দ্য ক্যাথিড্রাল’।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসগুলোর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত কমেডিনির্ভর ‘ক্যাপ্টেন পান্তোহা অ্যান্ড দ্য স্পেশাল সার্ভিস’, ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্ট রাইটার’, ১৯৮১ সালের ‘ওয়ার অ্যাট দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য রিয়েল লাইফ অব আলেহান্দ্রো মাইতা’। এগুলোর মধ্যে ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্ট রাইটার’ একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস।
এটি তাকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করে তোলে। প্রথম স্ত্রী জুলিয়ার সঙ্গে তার দাম্পত্যজীবনের কথা শিল্পচ্ছলে উঠে এসেছে এর কাহিনী বয়ানে।
কাহিনী বয়ানে নানা স্বাদের উপন্যাস তিনি হাজির করেছেন। যার কারণে আমরা তার হাত ধরে পাই থ্রিলার ‘হু কিলড পালোমিনো মোলেরো?’। এটি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়।
এরপর একে একে প্রকাশিত হয়, ‘দ্য স্টোরিটেলার’ (১৯৮৭), ‘ইন প্রেইজ অব দ্য স্টেপ মাদার’ (১৯৯০)। ‘ইন প্রেইজ অব দ্য স্টেপ মাদার’ একটু ভিন্নধর্মী উপন্যাস। এতে সৎ মায়ের প্রতি ছেলের যৌনকল্পনার বিষয়-আশয় বর্ণিত হয়েছে।
ইয়োসা তাঁর রাজনৈতিক জীবনাভিজ্ঞতায় নিয়ে ১৯৯৪ সালে লেখেন ‘টেল অব অ্যা স্যাকরিফিসিয়াল লিয়ামা’। তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘দ্য নোটবুকস অব ডন রিগোবার্তো’ ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশের পরপরই এটি বিশ্বব্যাপী আড়াই লাখ কপি বিক্রি হয়।
ইয়োসার সাহিত্যে ব্যক্তির প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, দ্রোহ ও পরাজয়ের বলিষ্ঠ চিত্রায়ন এবং ক্ষমতাকাঠামোর অনায়াস উপস্থাপন বিশ্বে তাঁকে এক ব্যতিক্রমী শিল্পী হিসেবে অভিসিক্ত করেছে।
নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে কুণ্ঠিত ইয়োসা রচনা সম্পর্কে সাধাসিধে ভাবে জানান, তিনি তখনই একটি লেখা শেষ হয়েছে বলে মানেন, যখন তাতে আর বেশি কলম চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন অথবা ভাবেন, নতুন কিংবা অন্যলেখায় মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। লেখক হিসেবে তৃপ্তির চূড়া এখনো স্পর্শ করেননি বলে দাবি করেন ইয়োসা। তাই একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “লেখা ছাড়া এখন আর বেঁচে থাকার কথা আমি ভাবতে পারি না।
আমার জীবন আবর্তিত হয়েছে একজন লেখক হিসেবে। ”
রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসে একদা আক্রান্ত ইয়োসা তাঁর জবানিতে জানান, “রাজনৈতিক প্রভাব সাহিত্যেরও রয়েছে। আর এটি মানুষকে সংবেদনশীল হয়ে উঠতে সাহায্য করে। ”
ক্ষমতাকাঠামোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ক্ষমতার কর্তৃত্ববাদী অংশ সবসময়েই সাহিত্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে উৎসাহী। কারণ তারা জানে, সাহিত্য সচেতন মানুষ সচরাচর প্রভাবিত ও প্ররোচিত হয় না।
”
ইয়োসা ৩০ টিরও বেশি উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ লিখেছেন। একাধারে লেখক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক মারিও বার্গাস ইয়োসার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মধ্যদিয়ে আবারও লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের উঠোনে গড়াল এ পুরস্কার। ২০ বছর আগে সর্বশেষ ১৯৯০ সালে ওই অঞ্চলের অক্টাভিও পাজ নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
ল্যাতিন আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইয়োসার চিন্তা-চেতনার নানা মাত্রিক প্রভাব রয়েছে সারা বিশ্বে।
পুরস্কারের জন্য নির্বাচনের কারণ হিসেবে নোবেল কমিটির ভাষ্য, ১৯৬০ ও ’৭০’র দশকে ল্যাতিন আমেরিকান সাহিত্যের বিকাশে ইয়োসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।