এরা যত বেশী পড়ে, তত বেশী জানে, তত কম মানে। -_-
একটা সময় ছিলো, সত্যযুগের মত। একটা সময় ছিলো আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগে, শিক্ষকদের সেই স্বর্ণালি যুগ, এই বাংলার মাটিতে। একটা সময় যখন শিক্ষকদের কথার মূল্য বাবা-মার কথার চেয়েও বেশী ছিলো। ছেলে হয়তো বেয়াড়া হয়ে গেছে, কথা শুনে নাই বা বেয়াদপী করছে, বিচারটা বাবা-মা দিতেন সেই ছেলের শিক্ষকের কাছে যে- স্যার আপনে একটু দেইখেন, পোলাডা কথা শুনে না।
মুরব্বীদের সামনে উঁচু গলায় কথা বলা, তর্ক করা, সিগারেট খাওয়া- এগুলো এত মারাত্নক অপরাধ ছিলো যে তা গুনাহ এর শামিল ছিলো। শাসন করা, সঠিক পথে চালানোর দায়িত্বের বড় একটা অংশ ছিলো শিক্ষকের কাঁধেই। পরীক্ষার আগের রাতগুলোতে বা অন্যান্য দিনেও শিক্ষকরা হারিকেন হাতে নিয়ে বের হতেন, নিজের ছাত্রদের বাসার কাছে গিয়ে দেখতেন যে কার ঘরের বাতি নিভানো অর্থাৎ কে পড়াশোনা না করে ঘুমাচ্ছে। পরের দিন সেই ছাত্রের ধোলাই। এই শিক্ষকেরা বিনা বেতনে বহু ছাত্র পড়িয়েছেন, মেধাবীদের জীবন গড়ার পথ সুগম করে দিয়েছেন।
এখনকার মতন বাড়িতে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে স্কুলে এসে ছাত্রদের পিঠের ছাল উঠানো শিক্ষক এরা ছিলেন না। কতই না সহজ-সরল ছিলো মানুষগুলো, এত উচ্চাকাঙ্খা তো তখন ছিলো না- জীবন ছিলো আরো সহজ, মানুষের মনগুলো এখনের চেয়ে ছিলো সুন্দর।
সময় পাল্টেছে, সত্যযুগ কলি যুগ হয়েছে। ভালো শিক্ষক নেই বলবো না, খোঁজ-দ্যা সার্চ করে পাওয়া গেলেও যেতে পারে। কোচিং বানিজ্য, অমুক টিচারের কাছে না পড়লে নাম্বার কম দেয়, টিচারের প্রকাশিত বই কেনা লাগবে, প্রশ্ন ফাঁস, নোটপত্র- আরো কত কিছু! হ্যাঁ, অর্থনীতি আমাদের শিক্ষকদের জাপটে ধরেছে, জিনিস-পত্রের বাড়তি দামের কারণে নিজেদের সন্তানদেরই ভাল জীবন দিতে পারছেন না তারা।
শিক্ষার্থীরাও পারিবারিক শিক্ষা না পেয়ে ঔদ্ধত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, রাজনীতিতে জড়িয়ে তার নোংরা ব্যবহার দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করছে, শিক্ষককে পেটানোর মত ভয়ংকর খবরও আমরা দেখতে পাই- যেটা কিনা উপরে উল্লেখিত সত্যযুগে কেউ বিশ্বাসই করতো না। তবে যত যাই হোক, শিক্ষকদের সেই আন্তরিকতা আর নেই সেটা বলতে বাধ্যই হচ্ছি। উনাদের অধিকাংশই নিজেদের মর্যাদা নিজেরাই ভুলে গিয়েছেন।
এখন আসি কেন আমি এত আজাইরা প্যাচাল করতেছি। এসব প্যাচালের কারণ টিভিতে যখন দেখলাম এই.এস.সি রেজাল্টের পর আমার ছোট-ভাই বোনগুলোর কান্না আর আর্তনাদ।
গতবছর আমি যেই নোংরামির শিকার হলাম, আজ আমার ছোট-ভাই বোনগুলোও তার শিকার হলো। গতবছর এর রেজাল্ট ভালো হয়েছিলো এবারের চেয়ে অবশ্যই, কিন্তু কি পরিমাণ হয়রানির শিকার হয়েছিলাম তা আমি জানি। গতবছরও ছিলো একই রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি, শংকা। উপরন্তু; আমার পাশে যেই মেয়েকে দেখলাম বইয়ের অর্ধেকও ভালো মত পড়েনি আমি নিশ্চিত, সে এ+ এর মিষ্টি বিতরন করে বেড়ায়, আমি পড়তে পড়তে শহীদ আমার এ+ নাই। জানি তো আপনি কি ভাবছেন... “ও, এ+ পাও নাই নিজে তাই এখন গেজাইতে আইছ তুমি? বুঝছি তো এইবার তোমার গীত গাওয়ার রহস্য”।
ভাবেন, আমার কাছে তো ভিডিও ফুটেজ নাই, কি প্রমান দিবো? তা আপনি যাই ভাবেন, স্বেচ্ছায় ভাবুন। নিজের রেজাল্টের সময় বলিনি, কিন্তু এইবারের রেজাল্টের পর ছোট-ভাই বোন গুলোর আর্তনাদ দেখে আমি নিরব থাকছি না। কিছু কথা আমি বলবই।
প্রথমেই জেনে নেই এই বছরের এইচ.এস.সি রেজাল্টের পরিসংখ্যানঃ
গত ৩রা আগস্ট দেশের ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে প্রকাশিত হলো ২০১৩ সালের এইচ.এস.সি রেজাল্ট।
অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যাঃ ১০ লক্ষ ১২ হাজার ৫৮১ জন (গতবছর যা ছিলো ৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৭৩ জন)
গড় পাসের হারঃ ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (গতবার যা ছিলো ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ)
মোট জিপিএ পাঁচঃ ৫৮ হাজার ১৯৭ জন।
(গতবার ছিলো ৬১হাজার ১৬২ জন)
সরকারী দলীয় ট্রেডমার্ক করা বক্তব্যঃ
#জামায়াত-বিএনপির আন্দোলনের নামে জালাও পোড়াও হরতালের কারণে পরীক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে। অনেকে ঠিকমতো পরীক্ষার হলেও যেতে পারেনি। তিনি বলেন, এবারও পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করেছি।
# এবারে রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। এ জন্য ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষকদের কোনোমতেই দোষ দিচ্ছি না।
যারা শিক্ষার মর্যাদা বা গুরুত্ব বুঝতে চায় না, তারা নিজস্ব স্বার্থে হরতাল ডেকে ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করে দিল। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরকে জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে, কেন তারা ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত্ নষ্ট করল।
বিরোধী দলগুলোর ট্রেডমার্ক করা বক্তব্যঃ
#আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, এইচএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের জন্য বর্তমান সরকার, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগই দায়ী। তাদের সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির কারণে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা ভালোভাবে পড়াশুনা করতে পারেনি।
চারটি বিষয়ে এবার প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে।
#সরকারই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণের ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে নি। শিক্ষার্থীরাও পাঠে মনযোগী হতে পারেনি। ফলে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।
এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
আমার বক্তব্যঃ
->আমি কিছুটা একমত যে হরতালের কারণে রেজাল্টে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সেটা এই জন্য যে পরীক্ষার সময় সূচি বারবার পেছানো হয়েছে, বার বার প্রস্তুতি নেওয়াটা ধৈর্যের কাজ। আমাদের শিক্ষার্থীদের যেটা হয় যে পরীক্ষার আগে গ্যাপ পেয়ে গেলে আলসেমী ধরে, যেটা স্বাভাবিক। এমনিতেই বোর্ড পরীক্ষা বিশাল লম্বা সময় ধরে হয়, নাভিশ্বাস উঠে যায় পরীক্ষার মধ্যে থেকে।
তবে এটা সবার বেলায় নয়, পড়ুয়া স্টুডেন্টদের এমন হয় না এবং পড়ুয়াদের সংখ্যাই বেশী। আমাদের শিক্ষাবোর্ড বরাবরই যে সকল হাস্যকর রুটিন তৈরী করে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বহু শিক্ষার্থী আছি যারা অপেক্ষায় থাকি যে কখন হরতালটা দিয়ে আমাদের মানসিক অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে। এক পরীক্ষায় পাই ১২ দিন বন্ধ, আরেক পরীক্ষায় পাই ১দিন বন্ধ; কোন শিক্ষিত মানুষ যে রুটিন করেছেন তা বোঝাই কঠিন। আমি গতবার বায়োলজি ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষা দিয়েছি ১ দিন গ্যাপে, গণিত ২ পত্রের আগে কোন গ্যাপ আমি পাইনি; মিরপুর থেকে প্রতিদিন উদয়ন উচ্চ মাধমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আমার কি দশা হয়েছে সেটা রাজনীতিবিদরা কি বুঝবেন। একজনেরও ছেলে-মেয়ে দেশে পড়াচ্ছেন? কেউ নিজের সন্তান দেশে রাখে না, পরের সন্তানের প্রতি আপনাদের কোন মায়া থাকবে না তাইতো স্বাভাবিক।
আর সময়সূচী পেছানোর ব্যাপারে তাহলে আমি মেনে নিতে পারি যে জি.পি.এ ৫ এর সংখ্যা কমবে, আলসেমীর কারণে এ+ প্লাস ছুটে এ হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষার্থী বেশী হওয়া সত্ত্বেও ফেলের সংখ্যা বাড়বে তা মানবো কি করে, ফেল করার মত পড়াশোনা তো আজকাল কেউ করে না। অন্তত পাশের চিন্তায় পরীক্ষাটা দেয়। ধরে নিলাম, আপনারা মান বজায় রাখার জন্য এবার খাতা-দেখায় কিছুটা কঠোর হয়েছেন, কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াই তা করেছেন। কিন্তু আপনার পরের বার যে সরকার আসবে, সে কি মনে হয় ফলাফলের সুনামি দিয়ে সুনাম কামাবে না? তাহলে আপনার আমলে পাশ করা শিক্ষার্থী এবং পরের আমলে পাশ করা শিক্ষার্থী যখন চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাবে- চাকরিদাতা কি খোঁজ নিয়ে দেখবে ওরা কোন আমলে পরীক্ষা দিয়েছে, নাকি শুধু তাদের রেজাল্টটাই গন্য করবে? দোষ তো আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার যা নিয়ে প্রত্যেক আমলে রাজনীতি চলে।
আপনাদের শিক্ষানীতির কারণে সেই যে জিপিএ সিস্টেমে ৪র্থ বিষয় যুক্ত করলেন, তার আগের বছরের যারা আছে তাদের চতুর্থ বিষয় এড করলেন না আন্দোলন সত্ত্বেও- এখন যে তারা চাকরীর বাজারে ঘুরছে- কে দেখবে তাদের রেজাল্টের ফারাক কেন আছে? কারো সময় নেই দেখার। রেজাল্ট একটা শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় পরিচয়। সারাটা সময় খেয়ে না খেয়ে শত অনিয়ম করে পড়ার পর যখন কাঙ্খিত রেজাল্ট না পাওয়া যায়, সেটার কষ্ট আপনাদের নির্বাচনে ভরাডুবির কষ্টের চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশী। কারণ আপনারা তো আমাদের জন্য কোন কাজ না করেই বিজয় আশা করেন, আমরা জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেও রেজাল্টটা পেতে পারি না।
-> শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় একটাই আতংক, সেটা হল প্রশ্ন কেমন হবে।
আর পরীক্ষা দেওয়ার টাইমটা আমাদের কাছে এমনই গুরুত্বপুর্ণ যে আপনাদের অত্যাচারে দরকার পরে পরীক্ষা হলে আগের দিন পৌছায়ে যাবো, রাস্তায় বোম খেয়ে ফুটুশ হলেও মরার ভয় থাকবে না, পরীক্ষার চিন্তা থাকবে। নিরাপত্তা দিবেন, বেডরুমে কেন শুধু- বাথরুমেও দিবেন- সরকার আপনি, আমার জান-মালের জন্য আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন, আর্মি নামায়ে দেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জেলে ভরে রাখেন সাহস থাকলে- দেখেন জনতা আপনার সাথে থাকে কিনা। আমাদের পরীক্ষার সময় আমরা মনযোগী ছিলাম না এই কথাটা ভুলেও উচ্চারণ করবেন না, কিছু মুর্খ রাজনীতিবিদ দেখলাম আমাদের মনযোগ কম ছিলো বলে বেড়াচ্ছে- নানা অযুহাত ও যুক্তিও দেখাচ্ছে এর পিছনে। আপনারা যেমন আমাদের কথা চিন্তা করেন না হরতাল দেয়ার সময়, বা হরতাল আটকানোর মত কোন পদক্ষেপ নেন না- বিশ্বাস করেন, আমরাও আপনাদের নিয়া চিন্তা করে বিন্দু মাত্র সময় নষ্ট করি না, অন্তত পরীক্ষার প্রেশারে তো আপনাদের নামও ভুলে যাই। আমরা বড়ই দুর্ভাগা জাতি যে রাস্তায় গাড়ি পোড়ানোর দৃশ্য দেখা এখন আমাদের কাছে দুধ-ভাত।
আপনারা নিজেদের মত চুলোচুলি করেন, টিভিতে খবর দেখলে শুধু বুঝি-ও আচ্ছা ওমুক দিন হরতাল, সাংবাদিকরা না থাকলে খবরও পাইতাম না। কাজেই হরতালে অনিশ্চয়তা-ভয়-ভীতি আমাদের কাজ করে না, থাকি তো বাসার ভিতরেই। একই কথা খাটে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষেত্রে- এটা স্বার্থপরের মত শোনালেও সত্য কথা এই যে, পরীক্ষার সময় আমরা কেউ চিরাচরিত বাংলার এই দৃশ্য নিয়ে মাথাঘামাই না; টিভিতে দেখে বিচলিত হই, পরক্ষণে পড়ার চিন্তা মাথায় এসে পরে; এগুলো নিয়ে সমস্যা হতে পারে বি.সি.এস ব্যাংক জবে এপ্লাই করা প্রার্থীদের, তাদের মেচ্যুরিটি সেই পর্যায়ের যে তারা এগুলো নিয়ে চিন্তা করবে। আমাদের নেই।
-> আপনি যেই সরকারই হোন, একট কথা বলবো যে আপনাদের প্রত্যেকের খুব বাজে একটা অভ্যাস ক্ষমতায় গেলেই শিক্ষাব্যবস্থা ও বইপত্রে উদ্ভট কিছু পরিবর্তন আনা।
শিক্ষা বিষয়ে সকলেই নিজের কিছু না কিছু পান্ডিত্য দেখাতে চায়। সে ক্ষেত্রে আমি বলবো, বাংলাদেশের শিক্ষাবোর্ডগুলো চিরকালই অথর্ব-লুলা ধরণের, আমরা প্রত্যেকটা নাগরিক বোর্ডে নিয়োজিত ব্যক্তিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রাখি। এই যে সৃজনশীল নামের একটা উটকো আতংক দিয়ে শিক্ষার্থীদের গলায় ফাঁস লাগালেন সেটা কি জন্য? তাও ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের রসায়ন বই নিয়ে? এ+ পাওয়ার জন্য যে শিক্ষার্থীটা পড়বে, রসায়ন এর প্রত্যেক পত্রের জন্য ন্যূনতম ৩টা ডিকশনারি সাইজের বই তাকে হুহহু পড়তে হয়, কারণ ভালো করতে হইলে কোন রিস্ক রাখা যাবে না। নির্দিষ্ট বই ই যেখানে নাই, দক্ষ বা যোগ্যতা সম্পন্ন টিচার নাই- তাদেরকে আপনি বললেন রসায়ন নিয়ে সৃজনশীলতা দেখাবেন! ট্রেনিং দিলেই হলো, ট্রেনিং ভিতরে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে না? বোর্ডের নমুনা প্রশ্ন দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় উনারা নিজেরাই কনফিউজড যে সৃজনশীলতা জিনিসটা আসলে কি। খাতাগুলা তো দেখে মানুষ, রোবট না- কাজেই সবার কাছে একই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন ভাবে পছন্দ হবে।
আমার সৃজনশীলতা স্যারের পছন্দ হলো, আরেক জনেরটা হলো না, আমি নাম্বার বেশী পেলাম অথচ ২জনের উত্তরই সঠিক। এ কেমন বিচার হল তাহলে?
-> এবার বলি আপনাদের খাতা দেখা প্রসঙ্গে। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সব শিক্ষক এর খাতা দেখার ক্ষমতা এক না। একটি লিডিং কলেজের প্রফেসর এর খাতা দেখা এবং গ্রামাঞ্চলে একজন টিচারের খাতা দেখা এক নয়। কোন শিক্ষার্থী যদি আরো স্ট্যান্ডার্ড লেখা লিখে, সেটার জন্যেও নাম্বার কমে যেতে পারে কারণ সাধারণ বিষয়গুলো ছাড়া বোর্ডের নির্দিষ্ট বই নেই।
এবং ওই শিক্ষক হয়তো অপরিচিত লেখা দেখলেই কেটে দেন। ইন্টারমিডিয়েটের খাতা দেখার জন্য অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন টিচার প্রয়োজন। অনেক সময় যোগ্যতা ছাড়া টিচাররা খাতা দেখেন, আরেকটা কমন সিনারি হলো নিজের ছাত্রকে দিয়ে বোর্ড পরীক্ষার খাতা দেখানো। একটা ছাত্রের ২টা বছরের অমানুসিক পরিশ্রমের ফসল এভাবে সস্তায় কেটে ফেলা হয়। পরীক্ষার রেজাল্ট ৬০ দিনের মধ্যে আউলা-পাতারি খাতা দেইখা দিয়ে দাওয়ার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই, কৃতিত্ব তখন হবে যখন সেই খাতা দেখা প্রশ্নবিদ্ধ না হবে।
আমাদের এত শিক্ষক কই, জনবল কই? ভার্সিটি লেভেলে পড়ানোর মত যোগ্য টিচার কয়জন থেকে যায়, মেধার মূল্যায়ন না পেয়ে সবাই তো বিদেশেই চলে যায়। সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো ব্যবস্থা হত, কখন? যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ হতো ও প্রশ্নবিদ্ধ না হত, সারাদেশের শিক্ষকদের যোগ্যতায় একটা ভারসাম্য রাখা হত, যদি অযোগ্য লোকজন উচু পদগুলোতে না বসতো। দেশের সার্বিক অবস্থা অস্বীকার করে চোখ বন্ধ করে একটা ব্যবস্থা চালু করে দিলেই তো হলো না। পাখির ছোট বাচ্চাটির পাখাগুলো সুগঠিত হওয়ার আগেই যদি তাকে পাহাড় থেকে ছুড়ে ফেলেন, সে তো মরে যাবে। আগে তাকে বড় তো হতে দিন?
আমি কোন আম, জাম বা বীণের রাজনীতির চামচা না, আমি ছা-পোষা পাবলিক, পরিচয় নাই, হরতালের দুর্নাম গাইলাম দেখে আবার নাস্তিক ট্যাগও লাগাইতে পারে ছাগুরা, কে জানে? একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে আমাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত চলে যাওয়া কথা গুলোই বললাম শুধু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।