একশো সিঁড়ি। একটি শহীদ মিনার। বাংলাদেশের আর কোথাও এমনটি আছে কি না তা আমার জানা নেই। ক্যাম্পাসের কোথাও যখন বাতাসের ছিটে-ফোঁটা নেই তখনও শহীদ মিনারে শনশন করে বইতে থাকে বিশুদ্ধ হাওয়া। তনুমনে প্রশান্তির আবহ তৈরি করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এই শহীদ মিনার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট দিয়ে ঢুকে যে কেউ মুগ্ধ হবে রাস্তার দুপাশে ছবির মতো সাজানো বৃক্ষরাজি দেখে। কিন্তু তখনও বুঝা সম্ভব নয় সামনে কী অপেক্ষা করছে! মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই গোলক ধাঁধায় পড়তে হবে যে কোন আগন্তুককে। দেখে-শুনে-বুঝে গোল চত্ত্বরের গোলক ধাঁধা পেরিয়ে সোজা বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পথেই পৌঁছতে হবে শহীদ মিনারের পাদদেশে। কোন নামফলক না থাকায় সিঁড়িগুলো কেন দেয়া হল তা বুঝার জন্যে বোকা হয়েই কমপক্ষে ষাটটি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হবে। অমনি খানিকটা দৃশ্যমান হবে লক্ষ্যবস্তুটি।
তখন দ্বিগুণ গতিতে পা ছুটে যাবে সিঁড়ি ভাঙতে। এমনটি কেন হয় তা আজও আমার অজানা, হয়তো প্রাণের টানে হয়ে যায়। সিঁড়ি ভাঙা শেষ। এখন পাদুকা বিসর্জন। তারপর নিষ্পলক নয়নে চেয়ে থাকা, এক অনন্ত মুগ্ধতা।
শহীদ মিনার যে এতোটা কাছে টানতে পারে, এতোটাই তৃপ্ত করতে পারে এক নিসঃঙ্গ প্রাণকে তা আমার জানা ছিল না। এই জায়গা এমন যে এখানে দাঁড়িয়ে পুরো ক্যাম্পাসটাকে চোখের ফ্রেমে বন্দি করা যায়। তিনদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন, আর মিনারের ঠিক পেছন দিকটাতে শুধুই প্রকৃতি। বেশ কয়েকটা টিলা গাছে ভরপুর হয়ে অরণ্যের রূপ ধারণ করেছে। আবার কয়েকটা টিলা বৃক্ষহীন কেবল সবুজ ঘাসে আবৃত।
এ দু’য়ে মিলে এক অবিমিশ্রিত অনুভূতি তৈরি করে। নিজেকে মনে হয় কোন মুক্ত বিহঙ্গ, যে উড়ে চলে অবিরাম কোন অজানার দেশে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গনটা ছোট হওয়াতে এর চারপাশে কিছু বৃক্ষরাজি উঁকি দিয়ে বেশ ছায়াঘন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভা, চঁড়–ইভাতি কিংবা বন্ধুত্বের চারাগাছে পানি দেয়া - এ সবই হয়ে থাকে এখানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।