সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল (সিরিজ লেখা একটা গ্যাঞ্জামের মত। শেষ না করা পর্যন্ত অশান্তি ! তাই কস্ট হলেও টেনে টুনে শেষ করছি। যারা সাথে ছিলেন, যারা পড়েছেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি শেষ পর্বও সমান উপভোগ্য হবে । )
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
মাতালের অভিনয় করে তো দুই খোট্টা আমলা থেকে বাচলাম।
কিন্ত ওদের সিকিউরিটির চোখ এড়ানো গেলো না। তাই দূর থেকে ওদের আসতে দেখে আমি একটু ঘুর পথে অন্যদিকে গেলাম।
হঠাৎ দেখি কোলকাতার বাংলায় শাপশাপান্ত চলছে। কাছে যেতেই দেখি আরে ! এতো দেখি মমতাদি। শিং সাহেবকে ঝাড়ির মধ্যে রেখেছে।
এর আগে কি কথা বার্তা হয়েছিল জানি না। খালি শেষেরটুকু কানে গেলো
" যদি দেকেচি আমার কথার বাইরে গিয়ে তিস্তার পানি নিয়ে কিচু বলেচো তবে তবে তোমার চ্যাং আর আমার ছুরি। " বলেই হন হন করে মমতাদির প্রস্থান।
আমাকে সামনে দেখে ইশারায় শিং সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, মমতাজি কি বলে গেলেন? শিং সাহেব পাঞ্জাবি ভাষার লোক। হিন্দির বললেও পাঞ্জাবি টোনে।
আর আমার হিন্দি জ্ঞান তো শুন্য। হাতের কাছে যুতসই উদাহারণ তেমন কিছুই ছিল না। তবে ঢ্যাড়শ আর ছুরি দেখিয়ে বললাম
"Teesta water giving then this ঢ্যারশ you and ছুরি মমতাজি cutting your ঢ্যড়শ "
" ই ভাগয়ান ই ভাগওয়ান" বলতে বলতে অজানা আশংকায় দুপায়ের মধ্যখানে শিং সাহেব হাত চাপা দিয়ে মমতার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
কপাল খারাপ । শিং গিন্নি দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে অন্য অর্থ করলেন।
শিং সাহেবের পশ্চাদদেশে বিশাল গদাম দিয়ে শুরু করে খিস্তি !
" খবিশের বাচ্চা খবিশ। ওই বুড়ি চুড়েল (ডাইনি) খন্নাস মামাতাকে কে দেখে এই বুড়া বয়সে জাওয়ানি পয়দায় হোয়েছে। আইজ তুঝে মার হি ডালুংগা!"
শিং সাহেবকে মার খেতে দেখে শুধু মনে মনে বললাম, বোন ফেলানি, আমরা তোর অর্থব ভাইয়েরা তোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। তবে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে । দেখ চেয়ে দেখ ।
আরো কত মার খেতে হতো কে জানে? প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস থেকে দুত আসাতে শিং গিন্নি থামলেন।
"ঘরমে যেয়ে লেই, তোর খবর হ্যায় !
রাস্ট্রপতির দুত বাঙালি। সে খুব কসরত করে হিন্দিতে বললো
" মহান রাস্ট্রাপাতি, বেগাম জিয়ার সাথে দেখা করতে নাহি পারেঙ্গা। দুর্গা পুজামে ম্যাড কাউ পাঠা খেয়ে উনার পেট মে বিমারি হুয়া !"
শিং সাহেব শুধু বিড়বিড় করে রাম রাম রাম করতে লাগলেন। সেটা কি ভুড়ি প্রণবের পাঠা খাওয়ার বিতৃষ্ণায় নাকি ঘরে গিয়ে পিটুনির আশংকায় বুঝতে পারলাম না।
ওখানে ভালো লাগছিলো না। আরেকটু নির্জনে এক জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। ওই যে অভ্যাস ! এবার কানের সাথে সাথে চোখও ওই ঘরের মধ্যে গেলো।
একি ! ভাবির উপদেস্টা ওই ঘরে। আর্ধেক দিগম্বর।
ফতুয়া আর ধুতি পড়া একটা চালবাজ টাইপের লোক তাকে বলছে
"আরে এডভাইজার সাহাব ! কি বোলছেন? একদাম বলিউড কুইন লায়াছি হাপনের জন্য। মাত্র ষোলা সাল কি জওয়ান লেড়কি আছে। "
" বা হ বা বাহবা খুব ভালো খুব ভালো । কিন্তু এত দেরি কেন? জলদি জলদি। কে কোথায় কি দেখে ফেলে ! "
" আরে এই তো চলিয়া আসিয়াছে।
এসো এসো আশারানী। আচ্ছা সাহাব হাপনি আরাম কোরেন। হামি গেলাম। "
১৬ বছরের যুবতি? এইটা? চেহারা সুরত বাদই দিলাম। বয়স ৪০ বছরের কম হতেই পারে না।
ঘরে ঢুকেই উপদেস্টার দিকে রীতিমত বাংলাদেশের বাংলায় মহিলা বললো,
" হায় হায় খালুজান ! আপনেও ?"
"খালুজান? কে তুই ? কে তোর খালুজান? কি বলছিস তুই এই সব?"
"খালুজান আমারে চিনতে পারলেন না? আমি আপনে গো বাসায় ছুডা কাম করতাম। দুবাই পাডানোর লোভ দেখাইয়া আমারে ইন্ডিয়াতে বিক্রি কইরা দিছো গো খালুজান। এখন আমারে দিয়া এই সব করায় ! আমারে বাচান খালুজান। আমারে দেশে নিয়া যান গো খালুজান। আপনের দুইটা পায়ে পড়ি !"
সেখান থেকেও ফিরে এলাম।
এই মহিলা কি জানে দেশে তার জন্য কি ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে? স্বামি ফেরত নেবে না, সমাজ ছি ছি করবে। ফিরে যেতে হবে আবারো সেই অন্ধকার জগতে। কারণ তুই অশিক্ষিত, তুই গরিব ! হ্যা প্রভা-চৈতি- শমি- সুবর্না যদি হোতি, তবে সমাজ তোকে মাথায় করে রাখতো !
বুবুর উপর সাংঘাতিক মেজাজ খারাপ হলো। ক্যাচাল লাগাতে যখন বলেছে দেই ক্যাচাল লাগিয়ে।
" হ বাচ্চু, ক শিঘ্রি ক কি খবর !"
"বুবু আর কইয়ো না, তুমার চরম সর্বনাশ হইয়া গ্যাছে।
"
" অ্যা ! কি কস ! "
"হ বুবু ! শিং মমতা আর প্রণব তিন জন মিল্যা ভাবির সামনেই তোমারে ফকিরন্নি, বান্দি এই সব কইছে। বাপ মা তুইলা গাইলাইছে। ওরা কইছে ভাবি নাকি রাজরানী আর তুমি হইলা । না না সেই কথা আমি মুখে কইতে পারমু না বুবু । মাফ করো।
"
"আর তোর ভাবি ? কিছুই কয় নাই?"
"আমি খালি ওগো কথাটি শুনতে পারছি। হের পর অগো সিকিউরিট ই আমারে সরাইয়া দিছে। ভালো কথা অই ক্লূ এর কুনো সমাধান হইছে? "
বুবু মেজাজ যে ফর্টি নাইন সেটা দিব্য চোখে দেখতে পেলাম। আল্লায় জানে আজকে কার কপালে খারাপি আছে। ঝাঝাল স্বরে খালি বললো
"কামের কুন খবর দিতে পারোস না, খালি আকামের খবর? ক্লু এর গুস্টি কিলাই।
তুই ফোন থো ! আর এই রকম আজে বাজে খবর আরেকবার দিলে তোর খবর আছে কইলাম। "
[পরে শুনেছি বুবু নাকি ইন্ডিয়ান হাইকমিশনারকে ডাকিয়ে কি সব বলেছে। তবে কি বলেছে আমি জানি না ]
বুবুর সাথে ক্যাচাল লাগানো শেষ। এখন ভাবির সাথে ক্যাচাল লাগাতে হবে। নইলে দেশের বারোটা বাজবে।
এমনিতেই ভাবি যেভাবে কথা বার্তা বলছে, তাতে বুবুর সাথে ভাবির তো কোন পার্থক্য পাচ্ছি না।
যাই দেখি ভাবি কই? ইতি উতি খুজছি। এক ঘরে দেখি এক লোক সেল ফোনে কথা বলছে। এতো শিং সাহেবের পি এ।
" আরে মতি ভাইয়া ! হাপনি তো কামাল করে দিলেন।
যেই ভাবে নিউজ করলেন, হাপনাদের মানুষ তো ধান্ধে পড়িয়া যাবে যে কোন আওরাত যাদা ইন্ডিয়ান লাভার হায় !
হা হা, হাপ্নাদের টাকা ভেজ দিয়া হায়। আরে না না। আগের বারের চেয়ে ডাবল টাকা হায় ! এইভাবে দিলখুস করতে যান হামাদের। মানি ইজ নো প্রবলেম। আর একঠো বাত ! মুন্তাসির সাহাবকে দিল ছোটা করতে মানা কোরেন।
আরে হাপ্নারাই তো আমাদের আসল দোস্ত আছেন। হাস্না খালদা তো মু বোলাই (মুখে বলা) আচ্ছা আচ্ছা পরে হালাপ করবো। বান্দে মাতরাম। "
ওরে শালা মইত্যা ! ঘোড়া ডিংগায়া ঘাস খাও? বুবুরে আমি যদি এই কথা না কইছি !
যাক শেষ পর্যন্ত ভাবিকে পাওয়া গেলো শিং সাহেবের সাথে আলোচনায়। সাথে মন্ত্রি তন্ত্রিও আছে, আমলাও আছে।
" শিং সাহেব, এখন আমার জন্য কি হুকুম?"
"রাম রাম ! কি সব বোলছেন ভাবিজি ! হাপনি মেহমান আছেন। যে কয়দিন আছেন সে কয়দিন ঘুরেন ফিরেন যিতনা চাহে শপিং করেন। "
"তা না হয় করলাম। কিন্তু আমার ছেলেদের ব্যাপারে?"
" ইয়ে তো বায়ে হাতকি খেল হ্যায় ভাবিজি ! পাওয়ারে হাপনি আসলে, সবই তো হাপনারই হাতে। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মে হাস্না বানুর মোতো করেই হাপনি যো চাহে করবেন।
হামরা কিছু বলবে না। আর হিলারিজিকে বোলে এফ বি আইয়ের রিপোর্ট ভি গায়েব করকে দিবো। "
"পাকা কথা দিলেন তো?"
" পাক্কা মানে পাক্কা। ভাগওয়ান কি কাসাম। গান্ধিজি নেহেরুজি ইন্দিরাজি কা কসম।
একদাম লিক্কে দিবো? খুশ? "
ভাবি দেখলাম বেশ খুশিই হলো।
"হাপনি এসেছেন। কিছু তোহফা কবুল করেন। খাস ইন্ডিয়ান চিজ আছে। "
একি ! উপহারের মধ্যে দেখি নকশি কাথা, জামদানি শাড়ি, ফজলি আম , ঢাকার মসলিন।
প্রচন্ড রাগে মুখ দিয়ে গালি বের হতে চাইলো
শুয়োরের বাচ্চা শুয়োর, এইগুলি তোর কোন ইন্ডিয়ান বাপের জন্ম দেয়া রে? রাখ ! এমন ক্যাচাল লাগামু, পরে বুঝবি ঠ্যালা !
পার্টি শেষ। আগামি কাল থেকে ভাবি বেড়াতে যাবে।
হোটেলে ফিরে ভাবি জিজ্ঞেস করলো
" কি দ্যাওরা? কেমন লাগছে ট্যুর ! কোন অসুবিধা নেই তো?"
"আরে না ভাবি ! কি যে বলেন। তবে ভালো লাগতো যদি না মমতা আর প্রনব মিলে... "
"অ্যা ! ওরা মিলে কি করেছে? কি বলেছে?"
" না না শুনতে চাইবেন না। "
মানা করলে নারীদের ঔৎসুক্য আরো বেড়ে যায়।
উনি যতই পীড়াপীড়ি করে আমি ততই মানা করি। শেষমেস ভাবিজির মেজাজ এতই খারাপ হলো যে রীতিমত ধমক দিয়ে বসলো
" বলো জলদি ! এক্ষুনি বলো। নইলে এই ঘর থেকে তুমি বের হতে পারবে না। "
আমি ভীতু মানুষ, নরম মনের। তাই বললাম
"ওরা বলেছে, আপনি চোর, আপনার পোলারা চোর, আপনার মরে যাওয়া ভাই চোর, আপনার ১৪ গোস্টি চোর।
আপনার চরিত্র খারাপ। আপনি বিধবা হয়েও ভুরু প্লাক করে, শিফন শাড়ি পড়েন, উচা খোপা করে পুরুষের দৃস্টি আকর্ষন করতে চান। আর হাস্না বুবু রাজরানী আর আপনি... ছি ছি ছি , আরো যা যা বলেছে, সেই সব আমি মুখে আনতে পারবো না ভাবি। আমাকে ক্ষমা করবেন। "
ভাবির ফর্সা মুখ রাগে রক্ত লাল হয়ে গেলো।
খালি বললেন
"শমসের সাহেব, রিয়াজ সাহেব দুপুরে যে প্লান করেছিলাম ওদের মতই প্রতিধবনি করতে হবে, সেটাই বজায় থাকবে। যদি প্রণব আর মমতাই শিং কে নাড়ায়, তাহলে আমাদের তো আর এত কথা বলার দরকার নেই। ওরা মিথায় প্রতিশ্রতি দিয়ে এসেছে, আমরাও যা বলবো শ্রেফ কথার কথাই বলবো। একবার ক্ষমতায় এসে নেই ওই মমতা আর প্রণবের খবর আছে। "
ভাবির উপদেস্টা সাবিহ উদ্দিন সাহেব অবশ্য একটু দালালি করতে চেয়েছিলেন, কিন্ত এক ধমক দিয়ে ওনাকে ভাবি বললেন
" চুপ থাক খাঃ পুলা, তোর ইয়েতে এত খাউস থাকলে, তুই ইন্ডিয়ান গো দিয়া মারা গিয়া।
আরেকবার দালালি করতে আইলে দেশে গিয়া তোর পাচায় আইক্কা ওয়ালা বাশ ঢুকামু । "
আহ ! শান্তি ! দুই দিকেই ক্যাচাল লাগানোতে সাকসেস ফুল। রুমে যেতেই দেখি মেসেজ। বুবু নাকি আরেকজন গোয়েন্দা পাঠাচ্ছে। আমার দিল্লি ভ্রমন শেষ।
কালই দেশে ফিরে যেতে হবে।
এয়ারহোস্টেস রে দেখি চেনা চেনা লাগে। আরে ! এই তো ওই ক্যালকেশিনা মাইয়া। এইখানে কি করে? ১০,০০০ টাকা নিয়ে দেখি দিব্য ভালোওমানুষ সেজে আছে। খাড়াও !
সুযোগের অপেক্ষায়।
প্লেন মধ্য আকাশে ! সবাই বিশ্রামে। এক পেয়ে ওর ঘাড় চেপে ধরলাম।
"ওই ছেমড়ি ! ওই দিন আমারে ভোগা দিয়া ১০ হাজার ট্যাকা সহ গায়েব হইয়া গেছিলা। অহন কই পলাইবা?"
"উফফ ছাড়ো ! ব্যাথা পাচ্ছি তো ! ইসস ভাষার কি ছিড়ি? কতদিন পর দেখা আর ভালোবাসার মানুষের সাথে এই রকম ব্যাবহার? "
যাই বলেন, মেয়েটা অনেক সুন্দর। ভাষা গলা সবই মিস্টি।
ভালোবাসার কথাটা তো মিথ্যা বলেনি। আপনাদের অবশ্য বলা হয়নি। কাজের ফাকে ফাকে অনেকবারই মেয়েটার কথা মনে এসেছিল।
" এহ ! ভালোবাসা? ভালোবাসো যদি, তাহলে এই রকম গায়েব হয়ে যায় কেউ? তাছাড়া প্রেমিকের গাট থেকে পয়সা সরায় কেউ?"
"তুমি কোন যুগের মানুষ হে? প্রেমিকারাই তো গাট কাটে গো ! হিহিহি !
তবে আমি আড়ালে ছিলাম, পালাইনি। টাকাটা সরাইনি গো।
ক্লু দেবার জন্য টাকাটা কাজে লেগেছিল। "
" ফিরতি প্লেনেই তো ইন্ডিয়াতে ফিরবে তুমি। "
" ওও কি দারুন মিনসে আমার। কেন? ধরে রাখবার মুরোদ নেই তোমার? আমি যেতে চাইলেই যেতে দেবে আমাকে?"
আমার মুখের খুব কাছাকাছি মুখ নিয়ে এলো সে। ওর চোখে তখন রাজ্যের তারার ঝিকিমিকি।
সেই দুই চোখে হারিয়ে যেতে আমার সময় লাগলো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।