আমার লেখাই আমার পরিচয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতি ছোট্টবেলা থেকেই আমার দারুন দুর্বলতা। একেতো নিজের দেশের এয়ারলাইন্স বলে কথা, তদুপরি বিমানের লাইভেরী ও লোগো আমার ভীষণ প্রিয়। হতে পারে দেশ দরিদ্র, কংবা এয়ারলাইন্স নিতান্তই ছোট, কিন্তু দারুন আরটিস্টিক এর ডিজাইন। অনেক নামী দামী এয়ারলাইন্সের চেয়েও আমার দেশের ওই বলাকাগুলো দেখতে অনেক সুন্দর।
দেখে বুকের ভেতর পুলক জেগে উঠে, একটা শিহরণ শিরদাড়া দিয়ে নিচে নেমে যায়। সব সময় স্বপ্ন দেখি, একদিন কে,এল,এম এর মত আমার বিমানও ছোট্ট দেশের অনেক বড় এয়ারলাইন্সে পরিণত হবে। অনেক বিদেশীকেও দেখেছি তারা বিমানের নাম জানে। কখনও ভ্রমন করেনি, কিন্তু ছোট্ট একটা সুন্দর নামের কারনেই হয়তো এতো পরিচিতি। আর নয়নমুগ্ধকর লোগো ও ডিজাইন তো আছেই।
যাই হোক, আমি নিজে বিমানে চড়েছি সর্বেসাকুল্যে মাত্র একবার। কিন্তু প্রায় সময়েই ইউটিউবে ঢুকে বিমানের ছবি দেখি, প্লেন দেখি। আর বিমানের ওয়েবেও ঢু মারি। কবে সাইট টা অন্য সব এয়ারলাইন্সের মত প্রফেশঅনাল একটা লুক পাবে। কবে বিমানের বহর বাড়বে আর কবে আরো বেশি ডেস্টিনেশান এ যাবে।
ইউরোপের অনেক বড় বড় শহরে আসবে, হয়তো একদিন আমার এই শহরেও আসবে, সেদিন আমি বিদেশি বন্ধুদের দেখিয়ে গর্ব করতে পারব, দেখো, ঐ সুন্দর পাখিটা আমার দেশের।
মাস দুয়েক আগের কথা, হঠাত্ একদিন বিমানের ওয়েব সাইটে ঢুকে দেখি পুরান সেই ওয়েব সাইট আর নেই। সে জায়গায় নতুন এক সাইট। বিমানের এই নতুন ওয়েব সাইট টা এখানে দেখুন। আগেকার সেই ঐতিহাসিক ও বস্তাপচা ওয়েব সাইটের বদলে যখন এই সাইট টি নাযিল হল, তখন বেশ ভালই লেগেছিল।
আরও ভাল লাগলো অনলাইনে টিকেট বুকিং সিস্টেম দেখে। এক্কেবারে সেইরকম ভাল এমন কিছু না, তবে আগেরটার চেয়ে অনেক ভালো। অনেকগুলো পেইজ তখনো পুরোপুরি রেডি হয়নি, তবে নিশ্চয় খুব শীগঘিরই ঠিক হয়ে যাবে। কয়েকদিন পর আবার ঢুকি, না ঠিক হয়নি। আরও দিন যায়, আবার ঢুকি, সেই একই অবস্থা।
এই আজকে আবার ঢুকলাম, নাহ মনটাই খারাপ হয়ে গেল। দুই মাস হতে চল্লো... কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স ও নতুন ওয়েব সাইট চালু করেছে এই সেদিন, ১লা ডিসেম্বর ২০১০। চালুর পরদিন থেকেই ওটা পরিপুর্ণ। আর বিমানের সাইটটাতে এক্টুখানি ঘুরাঘুরি করে দেখুন।
http://biman-airlines.com/transit-info/ এই পেইজটা এখনও আন্ডার কন্সট্রাকশন। আরেক্টু ঘুরাঘুরি করেন, দেখবেন এরকম পেইজ আরও অনেক আছে। Click This Link এই পেইজটাও আন্ডার কন্সট্রাকশন। বাংলাদেশ কাস্টমস রুলস তো নতুন কোন জিনিস নয় যে সেটা এই ওয়েব সাইট আপলোড করার ২ মাস পরেও আন্ডার কন্সট্রাকশন থাকবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ কাস্টমস রুলস নতুন করে ঢালাও করে লিখিত হচ্ছে, তাই এই বিলম্ব।
সেক্ষেত্রে এই পেইজটা পরে সংযোজন করাই কি ভালো না শুধু শুধু এই ধরনের আন্ডার কন্সট্রাকশন নোটিশ না ঝুলিয়ে?সার্ভিস এন্ড প্রোডাক্ট মেনুতে special services, transit info, cargo services সবগুলো পেইজই আন্ডার কন্সট্রাকশন, যথারীতি ২ মাস ধরে। terms and conditions এর পাতাটিও শুণ্য। এটা শুধু বিমানের খামখেয়লিপনা আর অযত্ন অবহেলারই পরিচয় দেয়।
একটা দেশের জাতীয় পতাকা বহনকারী একটা এয়ারলাইন্সের ওয়েব সাইট এ ধরনের অবহেলা প্রদর্শন জাতীর জন্য একটি বড় লজ্জা। যে সফটওয়ার কোম্পানী এই সাইট টি ডেভেলপ করেছেন তার নাম esoftarena. তাদের পেশাদারিত্ব নিয়েও এখানে প্রশ্ন আসে।
সাইট্ টি ঘুরে দেখা যায় যে এর কন্টেন্ট অনেক পেইজ এ রেডি না কিংবা অনেক ক্ষেত্রে আসম্পুর্ণ। যেমন অতিরিক্ত ব্যাগেজ নিলে কি পরিমান চার্জ প্রদান করতে হবে তা উল্লেখ করা নাই। তাছাড়া কয়টি লাগেজ ও কত কেজি ওজন এর মধ্যে কোন সম্পর্ক দেখানো হয় নাই। তথ্যগুলো পরিষ্কার নয় আর তাই কনফিউশন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। http://biman-airlines.com/2010/09/welcome/ পেইজটি দেখুন, এর কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
“Discover the lovely grace of the bewitching beauty and enjoy the glorious traditional hospitality, to take back fondest memories ……………………………………. a warm welcome awaits you in Bangladesh.”
“737 – 800NG”
এরকম অসংখ্য টাইপিং বা ফন্ট এরর এই সাইটে দেখতে পাবেন। এটা কোন আন্তর্জাতিক কোম্পানির ওয়েব নয়, যেন কোন স্টুডেন্ট এর করা প্রথম ওয়েব ডেভেলপিং কাজ, পরীক্ষামুলক ভাবে আপলোড করা। প্রশ্ন হল বিমান এই ওয়েব সাইট করতে কত টাকা বাজেট করেছিল?নিতান্ত কম বাজেটে কোন ২ দিনে গজিয়ে উঠা অপেশাদার কোম্পানিকে দিয়ে করানো হয়েছে কাজ? নাকি এক্ষেত্রে কোন মামা চাচা সম্পর্ক বা ঘুষের লেনদেন হয়েছে, সচরাচর বিমান এর সব কাজে যা হয়ে থাকে। আর যদি এর কোন কিছুই না হয়ে থাকে, তবে ইসফটএরেনা কোম্পানীটি কি বাংলাদেশের সফটওয়ার ফার্মগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে? যদি তাই করে সেটা যেই মুহুর্তে দেশ গার্টনার এর রিপোর্ট অনুসারে টপ আউটসোর্সিং দেশের তালিকায় পা দিয়েছে, তখন এটা দেশের সফটওয়ার শিল্পের জন্য একটা বিরাট লজ্জা। আশা করি বিমান কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই ওয়েব সাইট টি সম্পুর্ণ করবে এবং এতে বিদ্যমান ভুলভ্রান্তি দূর করবে।
তবে এ ধরনের ওয়েব সাইট তৈরীর ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ কে যথেষ্ট পারদর্শী ও প্রফেশনাল সফটওয়ার নির্মাতা কোম্পানীর সেবা নিতে হবে। আর ওয়েবের কন্টেন্টও কোনও বিশেষজ্ঞ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। তাছাড়া ওয়েবের স্ট্রাকচার, কন্টেন্ট, লুক এন্ড ফীল, ব্যবহার উপযোগীতা, যথাযথ শব্দচয়ন, আবশ্যকীয় তথ্য ইত্যাদি কোনও ইউজাবিলিটি এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সংযোজিত ও উন্নত করা দরকার। এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট শুধুই একটি ওয়েবসাইট নয়, এটা একদিকে যেমন বিমান সংস্থা ও দেশের একটি শৈল্পিক উপস্থাপনা, অন্যদিকে তেমনি যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের সমারোহ, তদুপরি সাধারনের জন্য এটা হতে হবে ব্যবহা্র বান্ধব। বিশেষ যত্ন নেওয়া তাই অত্যাবশ্যক।
এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর সজাগ দৃষ্টি আমাদের সবার কাম্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।