আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় আজ থেকে মিটারে চলবে অটোরিকশা



ঢাকায় চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন ভাড়া আজ রোববার থেকে কার্যকর হচ্ছে। তবে মিটার ঠিকভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ১২ হাজার অটোরিকশার মধ্যে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও কম বিআরটিএ থেকে ‘মিটার সঠিক’ মর্মে প্রত্যয়ন নিয়েছে। বাকিগুলো এখনো প্রত্যয়ন নেয়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, সাত হাজারের বেশি অটোরিকশা সঠিকভাবে মিটার প্রতিস্থাপন করেনি।

এ জন্যই প্রত্যয়নপত্র নিতে আসেনি। কিছু মিটার আগের মতোই কারসাজি করা আছে। এগুলো রাস্তায় চললে যাত্রীদের পকেট কাটা যাবে। মিটারে নতুন ভাড়া প্রতিস্থাপনে নিয়োজিত ক্রিস্টাল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ওয়ালিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে আড়াই হাজার মিটার সরবরাহ করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত মাত্র ৭০০ মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, বাকিগুলো আসেনি।

তাঁর ধারণা, এগুলো মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়নি, হলেও বিআরটিএর অনুমোদনহীন গ্যারেজ থেকে করা হয়েছে। তিনি জানান, যে ৭০০ মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর ৯৫ শতাংশই কারসাজি করা ছিল। নতুন করে এগুলোতে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালে অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানোর পর তা মিটারে প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে ৭০ শতাংশেই কারসাজি পাওয়া যায়। জানা গেছে, ২০০৩ সালে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মিটার সরবরাহ, এর ভাড়ার হার ঠিক আছে কি না এবং কারসাজি করা কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ১৭টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করেছিল বিআরটিএ।

এবার ভাড়া বাড়ানোর পর মিটারে নতুন ভাড়া প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানিই বন্ধ হয়ে গেছে। চার-পাঁচটি কোম্পানি চালু থাকলেও সেগুলোর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা আছে। এ জন্য নতুন ভাড়ার হার কার্যকর করার জন্য ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ১৫ দিনেও সব মিটারে ভাড়া ঠিকভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়নি। তালিকাভুক্ত কোম্পানি পিকলের এস এম শাহজাদা জানান, তাঁরা ঢাকায় এক হাজার মিটার সরবরাহ করেছিলেন।

৭৫ শতাংশ মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বাকিরা আসেনি। ভাড়া: গত ৪ নভেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় চালক-মালিকদের চাপে রাজধানী ঢাকায় চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও মালিকের জমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ২৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া সাত টাকা।

মালিকের দৈনিক জমা করা হয়েছে ৬০০ টাকা। প্রতি মিনিট অপেক্ষার (যানজট, যাত্রাবিরতি ও সিগন্যাল) জন্য এক টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ১৪ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ছয় টাকা নির্ধারিত আছে। প্রতি মিনিট অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত আছে এক টাকা। মালিকের জমা ৪৫০ টাকা।

এর আগেও সরকার দুই দফা অটোরিকশার ভাড়া ও জমা বাড়ায়। কিন্তু চালকেরা সরকার-নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী বহন করেননি। বরং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নিয়েও যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে যাননি। এ অবস্থায় সরকার সিএনজির ভাড়া বাড়িয়েছে। মালিকের জমা বাড়ানোর পাশাপাশি পুরোনো অটোরিকশার বয়সসীমাও বাড়ানো হয়েছে এক বছর।

এত দিন সিদ্ধান্ত ছিল, নয় বছর পর পুরোনো অটোরিকশা রাস্তা থেকে উঠে যাবে, কিন্তু মালিকদের স্বার্থে সরকার এগুলো তুলছে না। ৪ নভেম্বর সিদ্ধান্ত হয়, মিটার অনুযায়ী ঢাকায় যেকোনো গন্তব্যে যেতে হবে, মিটারের বাইরে ভাড়া নেওয়া যাবে না, মিটার কারসাজি (টেম্পারিং) না করা, চালকের কাছ থেকে নির্ধারিত হারের বেশি জমা আদায় না করা ইত্যাদি। এসব সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, বিআরটিএ এবং পুলিশের মধ্যে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে যৌথ চুক্তিনামা সই হয়েছে ৯ জানুয়ারি। কোনো অটোরিকশাচালক এসব সিদ্ধান্ত না মানলে যাত্রীদের পুলিশকে ফোন করতে বলা হয়েছে। ফোন নম্বর অটোরিকশার গায়ে লেখা আছে।

ঢাকা মহানগর সিএনজি-অটোরিকশা ব্যবসায়ী-মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে চালকদের মিটার অনুযায়ী যাত্রী বহন ও মালিকদের নির্ধারিত হারে জমা নেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যদিকে ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মালিকেরা নির্ধারিত হারে জমা নিলে চালকেরাও নির্ধারিত ভাড়া নেবেন। তিনি মালিক-চালক দুই পক্ষকে সরকারি সিদ্ধান্ত মানার আহ্বান জানান। কারসাজি: মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত অটোরিকশার চাকা এক হাজার ৬৫০ বার ঘুরলে এক পালস বা এক কিলোমিটার হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু কারসাজি করা মিটারগুলোতে দেখা গেছে, চাকা ৯০০ বার ঘুরতেই এক কিলোমিটার ধরা হয়েছে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, যে সাত হাজার মিটারে এখনো প্রত্যয়নপত্র নেওয়া হয়নি, সেগুলোতে কারসাজি করা থাকলে যাত্রীদের বাড়তি টাকা গচ্চা যাবে। ভাড়া প্রতিস্থাপন: রাজধানীতে যেসব কোম্পানি মিটার সরবরাহ করে, তাদের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন ওয়ান নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় সাত হাজার মিটার সরবরাহ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিক না থাকায় সব মিটারের ভাড়া সেখানে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, এই প্রতিষ্ঠান প্রতিটি অটোরিকশা থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ে রাস্তাঘাটের গ্যারেজ থেকে প্রতিস্থাপন করিয়ে দিচ্ছে। যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মিরপুর কালশী রোডসহ বিভিন্ন স্থানের গ্যারেজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করার খবর পাওয়া গেছে।

যাত্রাবাড়ীতে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত এস এস অটো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শামীম জানান, তাঁরা এ পর্যন্ত ২০০-২৫০টি অটোরিকশার মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করেছেন। আনোয়ার অটো সেন্টারের আনোয়ার হোসেন জানান, তিনিও ৫০০ অটোরিকশার মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করেছেন। এগুলো ডিস্ট্রিবিউশন ওয়ানের করার কথা। সঠিকভাবে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটা কোম্পানি দেখবে। ডিস্ট্রিবিউশন ওয়ানের অফিস নির্বাহী শাহ আলম দাবি করেন, তাঁরা নিজেরাই মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করছেন।

এখনো সব কাজ শেষ হয়নি। সূত্র ঃ প্রথম আলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।