চোখের দেখায় দেখছ যাকেহয়তো কোন মরীচিকা, আঁধার পথেখুঁজছ যাকে হয়তোকোন বিভীষিকা। তাই বারণ করি বারে বারে এসো না এই অন্ধকারে হৃদয় যে মোর কৃষ্ণগহ্বর হারিয়ে যাবে চিরতরে........... Ssc পরীক্ষা শেষ। জিব্রানের মাথায় ভুত চাপল playstation 2 কিনবে। এই ভূত আরো আগে চেপেছিল কিন্তু পরীক্ষার জন্য নিজেকে সামলে নেয় । যাই হোক গেমস
কিনবার জন্য প্রস্তুতি নিবে ভাবছিল অমনিই মোবাইলটা বেজে উঠে।
কানের কাছে মোবাইলটা নিতেই অপর প্রান্ত থেকে খালাত ভাই রবির কণ্ঠ শুনতে পেল।
রবিঃ হ্যালো, কি খবর ভাইয়া,তুমি দেখি আমাদেরকে একেবারেই ভুলে গেলে যে ?
জিব্রানঃ ধুর! পাগল,তোদেরকে ভুলতে যাব কেন?পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত ছিলাম বলে যোগাযোগ করা হয় নি? সরি রে!!
রবিঃঠিক আছে তোমাকে মাফ করব এক শর্তে আর তা হল আগামী সপ্তাহে আমার জন্মদিন,মনে আছে নাকি ওটাও ভুলে গেলে?
জিব্রানঃ আ...আ .. হ্যাঁ ! মনে থাকবে না কেন। উইশ করতে হবে এই আর কি।
রবিঃ উইশের গুষ্টি কিলাই! তুমি সোজা ঢাকায় চলে আসবা আর আমার জন্মদিনে উপস্থিত থাকবা ,আর কিছু জানি না। ডানহাত,বামহাত আর বিশেষ করে তোমার অজুহাত আমি মোটেও সহ্য করব না।
ঠিক আছে ? আমি এখন রাখি,খোদা হাফেয!
ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে এধরনের হুমকি ধামকি খাওয়ার পর মনের মাঝে আর কোন দ্বিধা না রেখে ঢাকায় যাবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিলো জিব্রান। আর এখানেই জিব্রানের গেমস কেনার ইচ্ছাটা কেন জানি ধামাচাপা পরে গেল। উপায়ও ছিল না কারণ রবির জন্ম তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ প্রতি চার বছরে জন্মদিন একবার পালিত হয় মাত্র। অন্যদিকে বাবা-মার একমাত্র ছেলে তাই ওর জন্মদিনটা খুব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানের ২ দিন আগে ঢাকায় পৌছাল জিব্রান।
যেতে না যেতেই দুর্ভাগ্যবশত অনুষ্ঠানের অনেক কাজ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। বেচারা ঠিকমত রেস্ট নিতে পারল না, থাক আর কি করার। ঘরে কারেন্ট ছিল না,তারপরও জিব্রান ঘরের বিভিন্ন কাজে ছুটাছুটি করছিল। আলমারি থেকে কিছু জিনিষপত্র নেবার জন্য জিব্রান খালার অন্ধকার রুমে প্রবেশ করতেই হঠাৎ একটি কালো ছায়ার সাথে ধাক্কা । পরক্ষনে বুঝতে পারলো ছায়াটি ছিল একটি মেয়ে।
জিব্রান তাকে চিনতে না পেরে জানতে চাইলো কে তুমি। মেয়েটি প্রশ্নে মনযোগী না হয়ে অন্ধকারেই পালিয়ে গেল। যাবার আগে শুধু বলল sorry! এত নম্রতার সাথে সরি বলে হঠাৎ অন্ধকারে হারিয়ে যাবার পর তার প্রতি কিছুটা কৌতূহল জাগে। কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে কৌতূহলটাকে জিব্রান হারিয়ে যেতে দেয় নি বরং মেয়েটির পিছু নিল। বাহিরে এসে মেয়েটিকে পেছন থেকে দাড়াতে বলবে অমনি খালা উল্টো পেছন থেকে ডাক দিলেন।
আর পিছু নিতে পারলো না। ফিরে আসার আগে পেছন থেকে মেয়েটির ঝলমলে রেশমি চুলের একটি প্রতিচ্ছবি মনে সংরক্ষণ করে নিল। পরদিন ঘুম থেকে উঠে সকালের আবহাওয়া উপভোগ করতে বেলকনিতে দাঁড়ালো জিব্রান। হঠাৎ দেখলো সামনের ঘরের বেলকনিতে একটি মেয়ে তার ভেজা চুল ঝেড়ে ঝেড়ে হাঁটাহাঁটি করছে। মেয়েটির চুল হতে ঝরে পরা প্রতিটি জলকণা যেন জিব্রানের হৃদয়ে তখন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছিল।
বুঝতে আর দেরি হল না যে এটিই অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটি। ঐ দিনই প্রথম মেয়েটির প্রতি কেমন একটা দুর্বলতার ছাপ মনে অনুভব করলো সে। মেয়েটি প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। জিব্রান তার খালাত ভাই রবি থেকে জানতে পারলো মেয়েটির নাম ফারিহা আর মেয়েটি তার মধ্যম সম্পর্কের মামাত বোন হয়। মেয়েটি যে তার নিকটাত্মীয় এটা জানার পর মনে মনে কেন যেন খুশি হয়ে গেল জিব্রান।
সন্ধ্যায় জন্মদিনের অনুষ্ঠান ,মেহমানে ঘর ভর্তি। ছেলেরা সামনের রুমগুলোতে আর মেয়েরা ঘরের ভেতরের রুমে মেহমানদের দেখাশুনার দায়িত্ব পেল যেখানে ফারিহাও ছিল। জিব্রান চেয়েছিল বাড়ির ভেতর দিকটায় কাজ করতে যাতে কাজের ফাঁকে ওর সাথে কথা বলার সুযোগ পায়। তাই নানা ছলনার আস্রয় নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠলো সে যাতে খালা বাইরের কাজে না পাঠায়। কখনো স্টোর রুমে আবার কখনো বিছানার নিচে,ছাদও বাদ দেই নি।
কিন্তু তার পরও ধরা পরলো খালার চোখে। খালা বাইরে কাজে যেতে বললে জিব্রান বলে উঠে বাড়িতে অন্তত একজন ছেলে থাকা দরকার যাতে ভারী কাজে তাদেরকে সাহায্য করতে পারে। খালাও আর কিছু না বলে রাজি হয়ে গেলো। কাকতালীয়ভাবে ফারিহা তখন খালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। খালা ফারিহাকে ডেকে জিব্রানকে অনুষ্ঠানের কাজে সাহায্য করার জন্য বলে।
খালা যে নিজ অজান্তে কাজ আরো সহজ করে দেন এটা ভেবে জিব্রান মনে মনে নেচে উঠছিল। কাজের ফাঁকেফাঁকে ফারিহার সাথে অনেক কথা বলা, একে অপরের সম্পর্কে আরো ভাল করে জেনে নেয়া, এক কথায় অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ সময় ওর সাথে লেগে ছিল জিব্রান, কখনো কাজের ফাঁকে ঠাট্টা ,বিরক্ত করা,হাসানো,আবার কখনো গল্পের ছলে ওকে রাগানো, যেন ফারিহার সাথে অনেকটাই মিশে গিয়েছিলো সে। ফারিহার প্রতি আগ্রহ কখন যে ভাল লাগাতে,তারপর ভালবাসাতে পরিণত হল বুঝতেই পারলো না। অনুষ্ঠান ঠিকঠাকভাবে শেষ হল,কিন্তু ঐ দিন সারারাত সে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। শুধু চোখে ভাসছিল ফারিহার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো।
শুধু তাই নয়, তাকে নিয়ে হারিয়ে গেলো এক গভীর স্বপ্নে যেখানে শুধু জিব্রান আর ফারিহা প্রেমের সীমাহীন সাগরে, ভালবাসার ভেলায় ভাসছিলো। জিব্রান মাঝি হয়ে বৈঠা বেয়ে যায় আর ফারিহা তার হাত ধরে গান গায়। এক রাতেই তাকে নিয়ে জীবনের সকল রঙিন সপ্ন সাজিয়ে নিয়েছিল সে। পরদিন থেকে সে সুযোগ খুঁজতে লাগলো কীভাবে তার সাথে কথা বলা যায়। ফারিহা স্কুলে যাবার সময় পিছু নিতো,স্কুল থেকে ফেরার পথে দরজার সামনে দাঁড়িয়েও থাকতো, অহেতুক কাজের নামে ওদের বাসায় যেত ,বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতো শুধুমাত্র খানিকটা কথা বলার জন্য।
এভাবে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হতে লাগলো কিন্তু জিব্রান বুঝে উঠতে পারছিল না তার হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে রাখা ভালবাসার পংতিগুলো কীভাবে ওকে বলবে। হৃদয়ের বসন্ত বাতাসে হঠাৎ বজ্রপাতের ভয়ানক আঘাত অনুভব করলো যখন আম্মু এসে বলে আগামীকাল চট্টগ্রাম ফিরে যেতে হবে। অবশ হয়ে গেলো জিব্রানের হাত,পা মাটিতে আটকে গেলো, নির্বাক হয়ে গেলো মুখ। বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করবে। ফারিহা না মোবাইল ব্যবহার করতো আর না ফেসবুক, এমন কোন মাধ্যমও ছিল না যার দ্বারা ওর সাথে যোগাযোগ করা যায়।
জিব্রান কঠিন ভাবনায় মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছিল। যে দিন চলে যাবে তার আগের দিন সারারাত শুধু কান্নাই করছিলো এই ভেবে কেন এত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য ফারিহার সাথে তার দেখা হলো ? কেনই বা ওর প্রেমে পরলো ? আবার কখন তার সাথে দেখা হবে ? আদৌ তার সাথে কি দেখা হবে কিনা ? আরো নানা রকম চিন্তা। ইচ্ছা হচ্ছিল ঢাকায় থেকে যাবে ,কিন্তু তা ও সম্ভব নয়। পরদিন সকালে যাবার আগে সকলকে বিদায় জানাচ্ছিলো, হঠাৎ ফারিহাকে স্কুলের দিকে যেতে দেখে পিছন থেকে ডাক দিলো জিব্রান। দুজনের মাঝে ছিল শুধু দৃষ্টি বিনিময় আর নীরবতা।
মনের লুকানো কথার বহিঃপ্রকাশ করার জন্য নিজের মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করছিল জিব্রান,হঠাৎ যুদ্ধ ভঙ্গ হয় আম্মুর পিছনমুখী ডাকে। যাবার বেলায় সে আর পেছন ফিরে ফারিহার দিকে তাকাতে পারছিল না, বিদায়ও দেয়া হল না , জিব্রানের হৃদয়ে যে তখন বিচ্ছেদের কালবৈশাখী ঝর বয়ে যাচ্ছিল তা কে ইবা জানত। চট্টগ্রাম আসার পর মনটা পাগলের মত হয়ে যায় জিব্রানের । ইচ্ছে করছিল এক মুহূর্তের জন্য ফারিহার সাথে কথা বলি। খালাতো ভাই রবিকে সব কথা খুলে বলল।
সে সাহায্য করতে রাজি হল, কিন্তু সে ভয় পেতো কারণ কাজটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ,ধরা পরার সম্ভাবনা অনেক আর যদি কোনক্রমে ধরা পড়ে যায় তাহলে কপালে মহামুসিবত। ফলে সে আর ঠিকমত সাহায্য করতে পারত না। শেষ পর্যন্ত জিব্রান না পারতে তার আম্মু কে সব কথা জানিয়ে দেয়। ঘটনা যতটা সহজে বলে দিলো তার চেয়ে কঠিন আকার ধারণ করল যখন আম্মুর মুখ থেকে “না” কথাটি শুনল। কারণ জানতে চাইলে আম্মু পুরনো অতীতের ফারিহার বাবা আর তাদের মধ্যকার আভ্যন্তরীণ শত্রুতা এবং তারও আগে তাদের বাবাদের মধ্যকার তুমুল সংঘর্ষের এক কথায় খান্দানি দুশমনি সংক্রান্ত লম্বা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এত কিছু শোনার পর আর কিছু বলতে পারলো না জিব্রান। ভাবছিল তার সাজানো স্বপ্নে এমনিতেই ফাটল ধরে সীমাহীন দূরত্ব আর যোগাযোগের অভাবে, তার উপর আম্মুর মুখের ঘটনাগুলো শোনার পর সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। যত সহজভাবে ফারিহাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন বাস্তব করার ইচ্ছে ছিল তা শুধু কঠিন নয় বরং অসম্ভবে পরিণত হল। এরপর আর কিছু নয়, যে অন্ধকার হৃদয় হতে ভালবাসার অকৃত্তিম আবেগের সূচনা হয়েছিল সেই অন্ধকারেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে লাগলো। হয়তো সে আবেগ হারিয়ে যায় নি , হয়তো অন্ধকার হৃদয়ের এক কোণায় চুপটি মেরে লুকিয়ে ছিল একটি নাম “ফারিহা”।
এরপর একটি লম্বা বিরতি.
দুই বছর পর.........। বাসায় বসে জিব্রান টিভি দেখছিলো হঠাৎ পকেটের মধ্যে কেমন যেন কম্পন অনুভব করলো। পরক্ষণে বুঝতে পারলো মোবাইল vibrate মোড এ কলের আভাস দিচ্ছে। কল রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে খালার কণ্ঠ শুনতে পেলো। খালা জানালেন আগামী সপ্তাহে মামার বিয়ে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আম্মুকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসতে বলল।
পরদিন ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশে আবার রওনা দিল। সময় কাটানোর জন্য কিছুক্ষন গান শুনছিলো জিব্রান, পরে ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়া শুরু করলো। বই পড়তে পড়তে কাকতালীয়ভাবে হঠাৎ একটি শব্দে গিয়ে চোখ আটকে যায়। ফারিহা । হৃদয়ের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া নামটি এক মুহূর্তের জন্য যেন বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিল।
এত সময় অতিবাহিত হবার পর ভুলে যাওয়া পুরনো স্মৃতি খানিকটা আবেগী করে তুলছিল, তবে কেন যেন তার মনে হলো হয়ত অন্ধকার পথে আলোর দেখা পেলাম। সৃষ্টিকর্তা হয়ত পুনরায় একটি সুযোগ দিচ্ছেন। এই ভেবে মনের সেই পুরনো আবেগকে আবার অগ্রাধিকার দিতে লাগল আর তাই বই পড়া বাদ দিয়ে ভাবতে থাকলো কিভাবে কি করা যায়। ঢাকা পৌঁছানর পর বাড়িতে ঢুকতেই ওর রুমের দিকে এক পলক উকি দিয়ে দেখল,নাহ!কেউ নেই। আম্মুর চোখে ধরা পরার ভয়ে জিব্রান নিজের আবেগকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রন করলো।
বিয়ের দিন..................। সবার পাশাপাশি জিব্রানও কাজে ব্যস্ত। তবুও কাজের ফাঁকেফাঁকে ফারিহাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। হ্যাঁ, দীর্ঘ অপেক্ষা আর খোঁজাখুঁজির পর ফারিহাকে ওর বাবা-মার সাথে আসতে দেখল। ফারিহা আগের চেয়ে অনেকটা পাল্টে গিয়েছে ।
চুল আগের মতো খাটো নেই ; লম্বা ,ঘন ও আরও রেশমি হয়েছে। চেহারা আগের চেয়েও আরও দীপ্তিময় হয়েছে তবে চোখ গুলো এখনো আগের মতোই মায়াবী জাদুতে ভরা । ঐ দিন ওকে খুব সুন্দর লাগছিলো। নিজের আবেগকে আর সামলাতে না পেরে চলে জিব্রান গেল কথা বলতে। “কেমন আছো ?” পেছন থেকে জিব্রান জিজ্ঞেস করল।
প্রশ্নের জবাব দিতে পিছনে ফিরতে না ফিরতেই জিব্রানের চোখে ওর চোখ দুটো আঁটকে গেল। ফারিহা নিস্পলক আর নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে। আবার জিব্রানের তরফ থেকে প্রশ্ন, “ দীর্ঘ সময় পর দেখা হল, আমাকে চিনতে পেরেছ?” । জবাবে ফারিহা বলল, “ভুলে যাবার মতো মানুষ তুমি ছিলে না। ক্ষণিকের জন্য একটা দুষ্টু বন্ধু পেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে বিদায় না জানিয়ে সে চলে গিয়েছিল”।
আমি দুঃখিত,ঐ দিন সবার জন্য এতটাই খারাপ লাগছিল যে বিদায়টাও জানানো হয়নি(জিব্রান)। তারপর লোকচক্ষুর আড়ালে জিব্রানের সাথে ফারিহার দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলো। জিব্রান ধারণা করছিল তারা একে অপরকে হয়তো ভালবাসে। কিন্তু কেউ কাউকে কখনো বলতে পারেনি। ঐ দিন রাতে অনুষ্ঠান শেষে সবাই ঘুম,কিন্তু জিব্রান বসে আছে।
না, ধ্যান করছিল না,জেগে জেগে স্বপ্নও দেখছিল না , চিঠি লিখছিল। মনের সকল অনুভূতি উজাড় করে লিখছিল বলে কোনদিকে সকাল হয়ে গেল বুঝতেই পারলো না। আবার যাবার পালা এলো। যাবার দিন ফারিহাকে দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলো। তাই চলে যাবার আগমুহূর্তে ফারিহা জিব্রানের সাথে দেখা করলো ।
চেহারায় বলে দিচ্ছিল যে ফারিহারও মন খারাপ তখন,বিদায় দেয়ার মুহূর্তে হঠাৎ জিব্রান নিজ হাতে ফারিহার হাতের প্রথম স্পর্শ অনুভব করল। সে এমনি হাত ধরেনি বরং জিব্রানের হাতে একটি ঝিনুক গুঁজে দিল যাতে তাদের দুজনের নাম একটি ভালবাসার বৃত্তে খুদাই করা ছিল। আর দেরি না সাথে সাথে পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দিয়ে দিল, সাথে মোবাইল নাম্বারটাও। জিব্রান ট্রেনে করে চট্টগ্রাম ফিরছিল আর ভাবছিল ফারিহা হয়ত ঐ মুহূর্তে চিঠিটি পরছে। এক সপ্তাহ পর..................পুকুরপাড়ে জিব্রান বসে আছে।
হঠাৎ একটি কল তারপর রিসিভ এবং শুনা গেল একটি মেয়েলি কণ্ঠ। বুঝতে দেরি হলো না যে এটা ফারিহা ।
জিব্রানঃ কেমন আছো,এতদিন ঘুমাচ্ছিলে নাকি(হাল্কা অভিমান),চিঠিটা...............?
ফারিহাঃ হ্যাঁ, পড়েছি। তবে আরও খুশি হতাম যদি নিজ মুখে এতগুলো কথা বলতে পারতে। ভীতুর ডিম,কাপুরুষ।
জিব্রানঃ হাহ হাহ হাহ (লজ্জার হাসি)! এত সহজে কি মনের কথা বলা যায়? তুমিও তো কম নিষ্ঠুর না,আমাকে এতদিন অপেক্ষা করালে যে?
ফারিহাঃ মনে করে নাও ওটা তোমার শাস্তি ছিল। হিঃ হিঃ হিঃ। পাগল,মোবাইল কি ভূতে এসে দিয়ে যাবে নাকি? এতদিন ভাবছিলাম কিভাবে কল দিবো । শেষে আমি আমার আপুর নাম্বার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কল দিয়েছি, তারপরও কি বলবে নিষ্ঠুর?
জিব্রানঃ আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম, দুঃখিত!!...............
কথা হলো আরও অনেকক্ষণ, হলো ভাবের আদান-প্রদান, কখনো ভালবাসা ,কখনো বা ঠাট্টা আবার কখনো রাগারাগি। এভাবে যোগাযোগ হতো তবে যোগাযোগের মাত্রা কম ছিল, কারণটাও অস্বাভাবিক নয়।
ফারিহার বাবা টপ ক্লাসের বদমাশ লোক। সবসময় মেয়েকে চোখে চোখে রাখতেন আর একটু ভুলভাল হলেই কথার ঝারিতে গাঁয়ের চামড়া তুলে ফেলত। তার উপর একটা বদ অভ্যাস হলো মেয়েদেরকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া। ফারিহার বড় পাঁচ বোনের বিয়ে ১৭-১৯ বছরেই দিয়ে দেয়া হয়। এখন শুধু ফারিহাই বাকি।
উফ!!!!! মরার উপর এ যেন অতিবিশালকায় খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই ঝামেলা কম নয় তার উপর আরেক ঝামেলা যোগ হল। এভাবে কখনো ১ সপ্তাহ আবার কখনো ২ সপ্তাহ পর কথা হতো। দেখতে দেখতে পাঁচটি মাস চলে গেল। হঠাৎ একদিন ওর নাম্বার থেকে কল আসল আর জিব্রান অতি আনন্দের সাথে কল রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে শুনতে পারল তার আনন্দের সমাপ্তির ঘণ্টা।
ফারিহার বাবা!!!!!! এত ভয়ানক মাপের গালিগালাজ আর হুমকি দিলেন যে জিব্রান বুঝতেই পারছিল না আসলে তিনি কি বলেছিলেন, কেনই বা বলেছিলেন। কলটা কেটে যাবার কিছুক্ষণ পর খালার নাম্বার থেকে কল এলো। খেল ২য় দফা গালি ,সাথে এটাও বলে দিলেন যে জীবনে কখনো যেন আর ঢাকা না যায়। প্রথমে ঘটনা বুঝতে পারেনি সে কিন্তু পরে জানতে পারলো ঘটনাক্রমে জিব্রানের দেয়া চিঠি ফারিহার বাবার হাতে পৌঁছে গেছে। হুম.........! একটি দীর্ঘশ্বাস।
ভাঙ্গা মন আর মস্তিষ্কের সাথে জিব্রান যুদ্ধ করছিল। আবার একটি কল এল। অনেক ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করলো। না, অন্য কেউ নয়, ফারিহা । ফারিহার উপর কি কি ভয়ানক শাস্তি গেল সব জানালো।
তেলে বেগুনে জলে উঠা ফারিহার বাবার মাথা হয়ত পরে ঠাণ্ডা হয়েছিল কিন্তু ব্যাপারটাতো সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেল। ঐ রাত জিব্রান আর ফারিহার মধ্য বিনিময় হওয়া প্রতিটি শব্দের মাঝে শোনা যাচ্ছিল বিচ্ছেদের আর্তনাদ। কথার শেষের দিকে ফারিহা শুধু এইটুকু বলল “ আমার আর তোমার মাঝে LOVE MARRIAGE হওয়া হয়তো সম্ভব নয়, যদি পারো তাহলে আমাকে ARRANGE MARRIAGE করো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো, I LOVE U…………………………………” ।
জীবনে প্রথম বারের মতো ফারিহার মুখ থেকে ভালবাসার শব্দ শুনতে পেরেছিল জিব্রান।
আদৌ সে শব্দ কখনো শোনা যাবে কিনা তাও সে জানে না। ২য় বারের মতো চোখ দিয়ে আবেগি অশ্রু ঝরতে লাগলো। ভাঙ্গা স্বপ্নটা জোড়া লাগতে লাগতে একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবার উপক্রম।
জিব্রান মনে মনে ভাবছিল, ‘তোমার আর আমার মিলন অসম্ভব কারনঃ
১.আমাদের মধ্যকার দূরত্ব
২. যোগাযোগের অভাব
৩.আমাদের পারিবারিক শত্রুতা
৪.শেষ পর্যন্ত তোমার উদাসীনতা
ভেবেছিলাম যদি তুমিই নিজ ভালবাসায় অটল থাকো তাহলে হয়ত এই অসম্ভবও সম্ভব হত। কিন্তু না, তুমি তোমার ভয়ের কাছেই হার মানলে।
আমিও পুরোপুরি তোমাকে দোষারোপ করতে পারব না। এখানে তোমার কিছুই করার ছিল না।
জিব্রান তাই এত গভীর চিন্তা হতে নিজেকে সরিয়ে বাস্তবতার আদলে নিজেকে মানিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিল। জিব্রান জানেনা ফারিহাকে পাবে কিনা তবে তাকে হারানোর কষ্টটা কমিয়ে নেবার চেষ্টা করবে। ভাববে আর মনকে সান্ত্বনা দেবে এই ভেবে যে আল্লাহ্ যা করেছেন নিশ্চয়ই!তার ভালোর জন্যই করেছেন।
জীবনে কখনো হয়ত অন্য কাউকে মন-প্রাণ আর এতো আবেগ দিয়ে ভালবাসতে পারবে না সে। কারণ বাস্তবতা যে তার জানা হয়ে গেছে। না,আর আবেগ নয়, বিবেক দিয়েই নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রনের সিদ্ধান্ত নিল জিব্রান। তাই ভালবাসার এই কঠিন আবেগকে মন থেকে ঝেড়ে বিবেকের সাথে বাস্তবতাকে হাসিমুখে বরণ করার প্রয়াসে জিব্রান আজ স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করছে। আল্লাহ্র রহমতে ভালই আছে,হয়তো বা আরও ভাল থাকবে যদি ফারিহা তার জীবনে আবার ফিরে না আসে।
তবে তার জীবনে যত সত্য আছে তার মধ্য একটি বড় সত্য হল “ আমি তোমাকে ভালবাসি,ফারিহা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।