প্রত্যেক নাস্তিক ও তার নিজস্ব নাস্তিকত্বে আস্তিক,যেমন সকল নাস্তিক ই বলে আল্লাহ নাই ভগবান নাই,আমরা বান্দর থেইক্কা মানুষ হইছি ইত্যাদি কিন্তু এইটাও যে নাস্তিকতার আস্তিকতা সেইটা কি তারা বুঝে!!
সাজানো মুখোস
পাপ শেষে জেগে উঠে পাপবোধ
বিবেককে কামড়ে ধরে হায়েনার মতন
তখন আমি অবুঝ সাজি চোখ ও মুখের নিপুন ভঙ্গিমায়
তারপরও চোখের পেছনে লুকান কুৎসিত নিজেকে টের পাই ভালভাবেই
একটা সময় শেষে ভুলে যাই সব
রক্তের আবেগী টানে পাপে জরাই আবার
আবার ঘুরে ফিরে সেই পাপের দংশন
এই চক্র অবিরাম চলে জীবন ভর
মিথ্যের সাজানো মুখোস ঝুলিয়ে রাখি পরিচিতজনের সামনে
জগতের সকলেই সেই মুখোস দেখে বাহবা দেয়,বলে----
ছেলেটা কত ভাল!!!?
কিন্তু ছেলেটা অপার বিস্ময়ে চেয়ে থাকে
সেই সাজানো মুখোসের পানে।
সর্বসত্ব সংরক্ষিত@ঘুম রহমান
লেখক নৈশচারী
আজ বিকেলে একটা উত্সব আছে। তাতে যোগ দেব কিনা ভাবছি। সারাদিনের রাজ্যের সব ক্লান্তিকর কাজ শেষে অফিস থেকে ফেরা হয়। তখন মাস্কটা খুলে আমি বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই।
সারাদিন এই সময়টার অপেক্ষাতেই থাকি আমি। এই সময় আমি পুরোপুরি স্বাধীন। আমার আলমারিতে যে নিষিদ্ধ জিনিসগুলি দিনের বেলা তালাবন্ধ করে রাখি তখন সেগুলি বেরিয়ে আসতে থাকে একে একে - আমি নেশাতুর হয়ে উপভোগ করি। কাল রাতেই যেমন অন্ধকারে বেরিয়ে এসেছিল আদিম কিউপিডের শর-হানা নগ্ন মূর্তিটা। ওটাকে দেখেই আমার বুক ঢিপ ঢিপ- আমি পিছিয়ে আসতে চাইলেও ওর আকর্ষণ অমোঘ, আমাকে ছাড়ে না কিছুতেই।
আমি প্রায় স্বপ্নতাড়িতের মত হাত বাড়াই রেনেসাঁর দিকে। রেনেসাঁ ভীষণ স্মার্ট মেয়ে। আমার থেকে প্রায় বছর বিশেকের ছোট হলেও বুদ্ধিটা সওদাগরদের মত পাকা। ওর বাবা-মা ওকে রেখে দেশের বাইরে ট্যুরে যাওয়ায় ও কিছুদিন যাবত আমাদের বাসায় আছে । ওর বেস্ট ফ্রেন্ড- আমার ভাইয়ের মেয়ে রিয়া অবশ্য এতটা চতুর নয়।
তাই রিয়ার চোখ এড়িয়ে আমার সাথে চোখের ইশারায় নিয়ত বাক্যবিনিময় রেনেসাঁর জন্য হাতের পাঁচ। আমিও ওর সঙ্গ বেশ উপভোগ করি। শুধু মাস্কটা সময়মত পরে নিলেই হলো। আর ভাবনা কি?
বলছিলাম উত্সবের কথা। পার্টিটা আমার এক বয়স্ক আত্মীয়ের বাসায়।
তার নতুন বাড়ির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে উত্সব এই জাতীয় কিছু একটা। পার্টিতে যেতে হলেই এই অবেলায় মাস্কটা আবার পরে নিতে হবে চিন্তা করেই মনটা বিষিয়ে উঠলো খানিকটা। এই জাতীয় পার্টিগুলিতে আমার সাধারণত করার থাকে না কিছুই। তবু আমি পুরোটা সময় তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি কেবল একটাই কারণে। নানারকম মানুষের রংবেরঙের মাস্ক দেখতে আমার ভালো লাগে ভীষণ।
এ ধরনের সামাজিক পার্টিগুলোতে সাধারণত মাস্ক ছাড়া আসে না প্রায় কেউই। সবাই পরে আসে নিজের সব থেকে ভালো মাস্ক- আমার আনন্দ ও তাই দ্বিগুন। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রত্যেকের মাস্ক চুলচেরা বিশ্লেষণ করি আর নিজের সাথে তুলনা করি। নিজের মাস্ক নিয়ে আমার বাড়াবাড়ি রকমের গর্ব। কারণ বছরের পর বছর ধরে বহু যত্নে,বহু সতর্কতার সাথে নানা উপাদান মিশিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরী করেছি আমি তাকে।
খুব সুন্দর আমার মাস্কটা- দেখে তৃপ্তিতে আমার বুক ভরে যায়। উপাদানগুলির মধ্যে আছে সততা,বিশ্বস্ততা,লোভহীনতা,সরলতা,আর পবিত্রতার মিশেল। আমার বিশেষ এই মাস্কটা যখন আমি মুখের উপর লাগাই তখন বোঝাই যায় না এটা আমার অস্তিত্ব থেকে আলাদা। যার মাস্ক যত নিখুঁত তার মুখশ্রী তত সুন্দর আর তাকে আলাদা করতে পারাও ততটাই কঠিন।
কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে আমি পার্টিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
তৈরী হওয়ার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজের মাস্কবিহীন মুখ দেখে আঁতকে উঠলাম। বহুদিন আমি আয়নায় নিজের মুখ দেখি না তাই হঠাৎ নিজের কদর্য চেহারা দেখে ক্ষণিকের জন্য চমকে উঠলাম। তারপর একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্রুতগতিতে মাস্কটা পরে নিলাম। এখন আমাকে দেখাচ্ছে ঠিক রূপকথার রাজপুত্রের মত। আরো একবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিজেকে দেখে নিয়ে আমি রওনা হলাম পার্টির উদ্দেশ্যে।
পার্টিটা চলছে বাড়ির দোতলায়। হাসি হাসি মুখে অতিথি ও অভ্যাগতরা একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। আমি বরাবরের মতই এককোণে দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট মনোযোগ দিয়ে প্রত্যেকের মাস্ক পর্যবেক্ষণ করছিলাম। কারো আসল চেহারা থেকে মাস্কটাকে আলাদা করে চিন্হিত করতে পারাটা খুব কঠিন কাজ এবং এই কাজটা করার মধ্যে আমি এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করি। বলা যায় এটা আমার একটা নেশা।
দেখতে দেখতে একসময় আমার চোখ পড়ল হলরুমের বাঁদিকের কোণে দাঁড়ানো এক কিশোরের দিকে। তাকে দেখে হঠাৎই আমার খুব চেনা চেনা মনে হতে লাগলো। আমি সন্তর্পনে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। ছেলেটির দৃষ্টিতে কিছুটা দিশেহারা ভাব - আমাকে দেখে সে ক্ষণিকের জন্য থমকে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি? তোমাকে কি আমি আগে কোথাও দেখেছি? সে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে চেয়ে রইলো।
আমি ততক্ষণে আমার পুরনো স্বভাব অনুযায়ী তার মুখের সবখানে আঁতিপাঁতি করে মাস্কের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়েছি আর সেটা খুঁজে না পেয়ে মনে মনে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। কিন্তু একী? আজ আমি বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি কেন? আমি নিজেকে প্রবোধ দিলাম, কোনো জাগতিক মানুষের মুখ কখনো মুখোশবিহীন হতে পারে না। এই অস্থির সময়ে তো মোটেই না। কিন্তু অনেক খুঁজেও আমি ওই ছেলেটির মুখে মুখোশের ছায়ামাত্র কোথাও খুঁজে না পেয়ে শেষে বেপরোয়া হয়ে দুই হাত দিয়ে তার কাঁধে একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মত জিজ্ঞেস করলাম, বল তুমি কে? কোথা থেকে এসেছ? ছেলেটি তখন আমার দিকে তাকিয়ে এক রক্ত জল করা অপার্থিব হাসি হেসে বলল, আমাকে চিনতে তোমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন আজ? বছরের পর বছর ধরে তুমি আমার অস্তিত্বকে একটু একটু করে হত্যা করে ভেবেছ আমাকে বিনাশ করে দিয়েছ? তোমাকে আজ তাই জানাতে এসেছি আমার বিনাশ নেই.......বিনাশ নেই আমার.......আমি বারবার ফিরে আসব তোমার ব্যর্থতা আর পরাজয়কে জানান দিতে......
আমি পকেট থেকে রুমাল বার করে মুখের ঘাম মুছলাম আর চোখ বন্ধ করে নিজেকে বোঝালাম আমার হেলুসিনেশন হচ্ছে.....আমি যা দেখছি সব ভ্রম। চোখ খোলার পর দেখতে পেলাম আমার এক আত্মীয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
তিনি উদ্বিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
- রাশেদ তোমাকে এত টেন্সড দেখাচ্ছে কেন? আর ইউ অলরাইট?
- ওহ ইয়েস আন্টি আই এম পারফেক্টলি ওকে !
-মনে হচ্ছে তুমি পার্টিটা ঠিক এনজয় করছ না।
- না আন্টি আসলে একটু টায়ার্ড আমি আর কিছুই না। এই পার্টিগুলির অপেক্ষাতেই তো থাকি আমি সারাবছর। এখানে এলেই আপনাদের সাথে দেখা হয়, আপনাদের খোজ খবর নেয়া হয়, নইলে তো আপনারা বাসার ওদিকে যানই না একেবারেই.....
- ওহ রাশেদ তুমি ভীষণ ভালো ছেলে। আমি আমার নিজের ছেলেদের কাছে সবসময় তোমার এগজ্যাম্পল দেই জানো? ওদের কে বলি, রাশেদের মত স্মার্ট, সোশ্যাল আর পোলাইট হতে শেখ।
ইউ নো আই লাইক ইউ ভেরি মাচ।
- দ্যাটস সো কাইন্ড অফ ইউ আন্টি।
আমি বিনয়ে বিগলিত একটা হাসি দিয়ে কোল্ড ড্রিকংসের গ্লাসে চুমুক দিলাম.....
ভাই নৈশচারীর লেখা আর আমার কবিতার মূল কথা এমন ভাবে মিলে গেছে যে লেখাটা আমার মূল কবিতার সাথে সংযুক্ত করতে বাধ্য হলাম।
ধন্যবাদ ভাই নৈশচারীর
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।