সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল
একটা গল্প দিয়ে লেখা শুরু করছি। ন্যায় বিচারের জন্য খ্যাতিমান কাজির দরবারে দুই আসামি উপস্থিত। একজন ধনি আরেকজন দরিদ্র। কাজি সাহেব রায় দিলেন, ধনি আসামিকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা দরিদ্রের কপালে জুটলো বড় অংকের জরিমানা। এই রায় দেখে এক জন প্রশ্ন করলো, কাজি সাহেব।
আপনার ন্যায় বিচারের কথা কিংবন্ততিতুল্য। কিন্ত আপনার এই রায়ে তেমনটি প্রতিফলিত হলো কি? কাজি সাহেব উত্তর দিলেন, কেন নয়? যার যেখানে পীড়া দেয়, তাকে সেখানে শাস্তিপ্রদানই উপযুক্ত। ধনিকে অর্থদন্ড দিলে সে অনায়াসে সে দিতে পারতো। আর দরিদ্রকে জুতাপেটা করলে, তার সম্মানের ক্ষতি বৃদ্ধি হতো না।
স্টিকি পোস্টসহ টক অফ দা ব্লগ হলো, সম্প্রতি বি এস এফ কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশি শিশু ফেলানিকে নির্মমভাবে হত্যা।
এই সংক্রান্ত পোস্টে সাধারণ মানুষের ক্ষোভই ফুটে উঠেছে। যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
অনেকে বি এস এফকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবার দাবি করেছেন। অনেকে প্রধানমন্ত্রিসহ সরকারের ভারত তোষনকে দায়ি করেছেন। অনেকে বুলেটের বদলে বুলেটে জবাব দেবার কথা বলেছেন।
অনেকে ব্যাঙ্গ করেই বি এস এফকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেবার কথা বলেছেন।
বি এস এফ ভারতের কেন্দ্রিয় সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রনাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। বি এস এফ ক্ষমা চাওয়া মানে হলো, ভারতের সরকারের ক্ষমা চাওয়া। সেটা কি বাস্তবতা হতে পারে? বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর পর ভারত তো কম শত্রুতা করলো না। একটিবারও কি তারা ক্ষমা নিদেনপক্ষ্যে আন্তরিক অর্থেই দুঃখপ্রকাশ করেছে? করেনি।
বলাই বাহুল্য যে, ফেলানির ব্যাপারেও তারা কিছুই বলবে না।
পদুয়ায় কুকুরের মত মার খেয়ে পালানোর পর, বি এস এফ এর সব রাগ গিয়ে পড়েছে, সীমান্তের নিরস্র লোকজনের উপর। সেই ঘটনার পর এমন একটা সপ্তাহ যায় না, যেখানে কোন বাংলাদেশি নাগরিক বি এস এফ এর গুলির শিকারে পরিণত হয় না। এর বিপরীতে আমাদের দৌড় হলো, পত্রিকায় খবর প্রকাশ। বিডি আরের প্রতিবাদ।
লাশ ফেরৎ। আর মানবাধীকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট প্রকাশ ইত্যাদি।
শহরে বসে আমাদের মনোজগতে বাংলাদেশের যত সুন্দর চিত্রই আঁকি না কেন, আমাদের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলির অবস্থা কিন্ত ভিন্ন। দারিদ্রতার কষাঘাতে সেখানে জীবন বিপন্ন। ঠিক এই সুযোগটি গ্রহন করেই কিন্ত সীমান্তের দুই পারের কিছু ব্যাবসায়ি অবৈধ পণ্য চোরাচালানের জন্য এই মানুষগুলিকে ব্যাবহার করে।
সেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও দুটি পয়সা উপার্জনের আশায় জীবনের ঝুকি নিয়েই অবৈধপথে সীমান্ত পারাপার করে থাকে।
শুধু তাই না। বিদেশে নেবার কথা বলে, হাজার হাজার নারীকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে আড়কাঠিরা এই সীমান্ত দিয়েই নারী পাচারে লিপ্ত। হতভাগ্যা এই নারীদের স্থান হয়, কলকাতা, মুম্বাই, করাচি কিংবা লাহোরের পতিতালয়গুলিতে।
উভয় দেশের সীমান্তরক্ষিবাহিনীও ব্যাপারটা জানে।
উপরি উপার্জনের আশায় তারা দেখেও সেটা না দেখার ভান করে। তবে দেনা পাওনা নিয়ে সামান্য ভজঘট হলেই তবে তাদের দ্বায়িত্ববোধ চাগাড় দিতে উঠে। তখনই অবৈধ পারাপারকারিদের উপর গুলি ছোড়ার ঘটনাটি ঘটে থাকে। তবে এই গুলি ছোড়ার ব্যাপারটি বিডি আরদেরও অভ্যাস বলে আমার জানা নেই। বস্তুত বি এস এফ এর চাদমারি করার অভ্যাসটির ৯০ ভাগই, বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসুত।
যেখানে যুদ্ধকালিন সময়েও বেসামরিক লোকজনের উপর হামলা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে, সেখানে কি করে শ্রেফ অবৈধপথে সীমান্ত পারাপার করার অপরাধে হত্যা করে বি এস এফ পার পেয়ে যাচ্ছে?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপারটা তোলা যায়। কিন্ত আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে শক্ত মেরুদন্ডপুর্ণ দেশপ্রেমিক মানুষদের অভাব আছে বলেই ব্যাপারটা হয় না। ফারাক্কার ব্যাপারটি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতিসংঘে তোলার কারণে, তৎকালিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে দিয়েছিলেন। জিয়ার ভাগ্য ভালো। সেটা বাস্তবায়িত হবার আগেই ইন্দিরার পতন ঘটে।
নতুন প্রধানমন্ত্রি মোরাজি দেশাই সেই পরোয়ানা নাকচ করে দেন। (লিবারেশন এন্ড বিয়ন্ডঃ জ়ে এন দীক্ষিত)
আর আজকের ভারত তো আরো শক্তিশালি। সামরিক দিক দিয়ে বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকা ইসরাইল লবির সাথে রোমিও জুলিয়েটের মধ্য গভীর প্রেম বিদ্যমান বলে, ভারত ধরাকে সরা জ্ঞান করে আসছে। বাংলাদেশ তো নস্যি। পারলে সে সুদুর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সীমান্ত পর্যন্ত সে তার প্রভাব বিস্তার করে রাখে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেও, আন্তর্জাতিক মিডিয়া আর জাতিসংঘের রোষের শিকার হবে। সেক্ষেত্রে ভারত নিজেকে গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসিপাতা সার্বস্থ করবে। আর বাংলাদেশ হয়ে যাবে সর্বদোষে দোষি। তাই সেই পন্থা বাদ দেয়া যায়।
বিচ্ছিন্নভাবে যদি বিডি আর সীমান্তে পালটা গুলিও ছোড়ে, তাহলে বিডি আরের প্রধানের বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রি (সে হাসিনা বা খালেদা যেই হোক) ক্ষমা চাইতে চাইতে জিহবা ক্ষয় হয়ে যাবে। এর পরেও যদি ভারত ক্ষমা না করে তাহলে ক্ষমতায় থাকাই আর হবে না। তাই বিডি আরের পক্ষ্যেও তেমন শক্ত অবস্থানে যাওয়া সম্ভব না।
ভাবছেন ঢাকায় বিক্ষোভ করবেন? সেটাও হবে না। বর্তমান সরকার নিজেদের স্বার্থেই সেটা হতে দেবে না।
দেশে যতই ভারত বিরোধী মনোভাব কাজ করুক না কেন, সেটা বহিঃপ্রকাশ করতে দিলে ভারতের দৃস্টিতে সরকারে অবস্থান নীচে নেমে যাবে।
তাহলে করবোটা কি? কিছুই কি করার নেই? এই করনীয় নির্ধারনের জন্যই পোস্টের শুরুতে সেই গল্পের অবতারনা করেছিলাম।
দেখতে হবে, বাংলাদেশে ভারতের কি কি স্বার্থ রয়েছে। আঘাতটা সেখানেই করতে হবে।
প্রথমেই করনীয় যেটা সেটা হলো, আমাদের মিডিয়া থেকে হিন্দিকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হিন্দির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে থেকে হিন্দি চ্যানেলের আসক্তি কাটানোর জন্য ব্যাতিক্রম খুজে বের করতে হবে। আর লেখালেখি বলুন কিংবা নাটক সিনেমায় হিন্দির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এভাবে আমাদের মধ্যে থেকেই যদি হিন্দি চ্যানেলের আসক্তি কমে যায়, তাহলে সাধ্য কি কেবল অপারেটরদের যে, দিনরাত হিন্দি চ্যানেল সম্প্রচার করে? আর এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকা আয় থেকে ভারত বঞ্চিত হবে।
আমরা ভোগ্যপণ্যের জন্য ভারতের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকি।
চাল ডাল পিয়াজ গরু ইত্যাদি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাচালানিরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এইসব পণ্য অবৈধপথে নিয়ে আসে। আমাদের ধন ধান্যে পুস্পে ভরা এই বাংলাদেশের গর্ভ কি এতোই শুন্য যে এই সবের চাহিদা পুরণ করতে পারছে না? আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে যদি চাল উৎপাদনে আমরা সক্ষম হয়ে থাকি, তবে একই পদ্ধতিতে আমরা ডাল পিয়াজ বা গরু উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করতে পারবো না কেন? আর সেই পন্থায় আমরা যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন করতে পারি, তাহলে ভারত আরো একটা বিশাল ধাক্কা খাবে।
তবে অফ টপিকে জানাচ্ছি যে, আমাদের মধ্যে অসাধু অনেক ব্যাবসায়ি আছেন, যারা রাজনীতিবিদদের সাথে যোগসাজসে কৃত্রিম সংকট সৃস্টি করে আমদানির সুযোগ তৈরি করে। এবং গাছেরটাও খান, তলারটাও কুড়ান। আর তাদের লোভের বলিকাষ্ঠ গলাকাঁটা পড়ে আমার আপনার মত সাধারণ মানুষদের।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির এক বিশাল অংশ ফেন্সিডিল নামের মরণফাদের প্রতি আসক্ত। বাংলাদেশে এর চাহিদা এতই ব্যাপক যে, ভারত তার বাংলাদেশ সীমান্তাঞ্চলে ফেন্সিডিলের শিল্পাঞ্চল তৈরি করে ফেলেছে। যেহেতু যারা নেশাগ্রস্থ, তাদের আসক্তি কমানোর মত সাধ্য আমাদের নেই, তাই দেশেই ফেন্সিডিল কারগানা গড়ে তুলে, যার মরবার ইচ্ছা, তাকে মরবার সুযোগ দেয়া হোক। সেখানেও আরেকটা থাপড় খাবে ভারত।
বর্তমান সরকার আসার পর, ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা পেয়েছে।
যার মধ্যে আকাশ নৌ এবং সড়ক পথে করিডোর প্রাপ্তি এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যাবহারের সুযোগ। এই সুবিধাগুলি রুখতে প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য সাধারনের মধ্যে ব্যাপক প্রচারনা চালাতে হবে, যেন সাধারণ মানুষই স্বতপ্রনদিত হয়েই প্রতিবাদ করে। এইসব সুবিধা রুখতে
না পারলে, বাংলাদেশের স্বাধীন সত্ত্বা আশংকার মধ্যে পড়বে। যা পুনরুদ্ধারে কয়েক কোটি মানুষের রক্ত ঝাড়াতে হবে।
আর কতদিন লাগবে সেটাও অনিশ্চিত। আর সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের কারণে অন্তত সরকার মুখে বলতে পারবে যে, চুক্তি তো ভাই করেছিলাম, দেশের মানুষ না মানলে আমরা কি করবো? তাছাড়া যে কোন আইনজীবি হাইকোর্টে গিয়ে এই চুক্তির বিরুদ্ধে স্থগতিদেশ আনতে পারে। যার কারনে এই চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব / কালক্ষেপন করা যেতে পারে। যেমনটি গত ৪০ বছরেও পার্লামেন্টে পাশ হয়নি বা হাইকোর্টের স্থগতিদেশ রয়েছে বলে ভারত, মুজিব ইন্দিরা চুক্তির অনেকগুলিই পুর্ণ করেনি।
ভারতীয় সরকারের বৈষম্যমুলক দমন আর নিপীড়নের কারণে অনেক অঞ্চলেই বিদ্রোহের সৃস্টি হয়েছে।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশ এসেছিলেন। মানবিক কারণেই বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা বিধান প্রয়োজন। তাদেরকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে উপস্থিত করার সুযোগ দিয়ে বিশ্ববাসিকে জানানো হোক, বলিউডের ঝলমল তারার আলোর পেছনে কত গভীর অন্ধকার রয়েছে।
আমাদের দেশে একদল মানুষ রয়েছেন। যারা বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন আলোকিত করে রয়েছেন।
অজ্ঞাত কারনে এদের অনেকের মধ্যে দেশপ্রেমের চাইতে ভারতপ্রেম প্রবল। হতে পারে, তাদের পুর্বপুরুষেরা ৪৭ এর আগে ভারতবাসি ছিলেন। এদের মধ্যে ভারত বিরোধীতা দেখলেই সেটা জুজু বলে উড়িয়ে দেবার একধরণের মানসিকতা কাজ করে। রাজনৈতিক আদর্শের কারণেই হোক, কিংবা সাংস্কৃতিক জগতেই হোক, এদের সংস্পর্শে এসে অনেক ঢাকা শহরভিত্তিক অনেক শিক্ষিতদের মধ্যেও ব্যাপারটি সংক্রমিত হয়েছে।
যুক্তি প্রমান উপস্থাপন করে দেখাতে হবে, যে ভারত বিরোধীতা কোন জুজু নয়, বাস্তব সত্যি।
তারা অজ্ঞাত কারনে অন্ধ হয়ে বরং দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছেন। সবাই যে যুক্তি প্রমান মানবেন, এমন না। দেশের স্বার্থেই তাদেরকে অন্যপথে বোঝানোর ব্যাবস্থা করতে হবে।
ভাবছেন, এতো বিশাল দক্ষ যজ্ঞের ব্যাপার। তা, যে দেশের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করার কথা উঠেছে, সেদেশটি আয়তন আর ক্ষমতায়ও বিশাল।
সেখানে ক্ষুদ্র পরিসরে সফলভাবে কিছু করা কি সম্ভব?
কয়েকটা শর্টকাট আছে। যেমন রাজপথে নামুন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনি অনুষ্ঠান যেন বলিউড কেন্দ্রিক না হয়ে বাংলাদেশ কেন্দ্রিক হয়, তা সুনিশ্চিত করতে যা যা করার দরকার তাই করুন। পুলিশ কিংবা ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতন সহ্য করার সাহস যোগাড় করুন। রিমান্ডে অত্যাচারিত হবার ঝুকিও নিতে পারেন।
কিংবা খেলার সময় উপস্থিত হয়ে ব্যানারের মাধ্যমে মিডিয়ায় আপনার প্রতিবাদ জানিয়ে দিতে পারেন।
আর যদি কিছুই না করার ক্ষমতা থাকে, তাহলে পর্দায় শিলার যৌবন উপভোগ করুন, নইলে মুন্নির বদনামে নিজেকেও সম্পৃত্ত করার আনন্দে বুদ হয়েও থাকতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।