পবিত্র হওয়ার মূল মস্ত্রই যদি অজু হয় তাহলে কুলসিত মনে পাপ থাকতে পারে না। আমার জানামতে অন্তরে কুমন্ত্রনা, সংকির্ণতা ও পাপ নিয়ে পবিত্র হওয়া যায় না, যতক্ষণ না সে তার হৃদয়কে,লোভ লালসা উর্দ্ধে রেখে ক্লবকে আপন করে নিতে পারবে, হিংসার কবল থেকে। অজু করলেই যদি পবিত্র হওয়া যায় তবে এত শরিয়তের বিধি নিষেধ এরকথা আসে কোত্থেকে। ‘অজু, শব্দটি নামাযের প্রস্তুতি হিসাবে দেহের কতক অংশ ধৌত করার প্রতি আরোপিত হয়। ইহা একটি প্রর্থনার পূর্ব শর্ত, যা পূরণ না করলে নামায শুদ্ধ হয় না বলে বিবেচিত।
“অজু”বলতে কোরানে কোন শব্দ নেই; আছে ‘অজহু’ অর্থ মূখ, দিক বা মূখমন্ডল; সুতরাং ‘অজু কর’ বাক্যটির শরিয়তিক বা আধ্যাত্বিক কোনই অর্থ বহন করে না। অজু সম্পর্কে কোরআন এর একটি জায়গার কথা বলা যেতে পারে। সূরা মায়েদা ৫:৬ আয়াতে আল্লাহ্ বলেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থঃ হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
প্রার্থনায় রত হওয়ার পূর্বে কোরআনে উল্লেখিত শর্তমতে মূখমন্ডল ধৌত করার নামই ‘অজু। ’ অতএব ‘অজু’ শব্দটির প্রচলিত স্ব স্ব ভাষায় সংস্কার করা অতিবো প্রয়োজন, যাতে মুমিন-মুত্তাকিনরা সহজেই বিষয়টি উপলব্দি করতে পারে। তবে অজু করলে শরীর যে পবিত্র হয় না তা সূরা মায়েদা ৬ নংম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেনঃ ‘হে মুমিনগণ যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোদের মূখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং পদযুগল গিটসহ’ তাহলে বোঝা গেলো যে, আমরা যে বিভিন্ন কাজে কর্মরত ছিলাম সেই কারণে হাতে মূখমন্ডলে এবং পায়ে ময়লা মাটি থাকতে পারে সেই কারণে ‘অজু’ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ অজু বলতে কেবলী যা বুঝিয়েছেন তা হলো নামাযের পূর্বে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া। কিন্তু অপবিত্র হলে সারা দেহ পবিত্র করে নিতে বলেছেন এই আয়াতেই।
কোরআনের আলোতে একটি কথা বোঝা যায় যে আমি যদি প্রসাব করে পানি না নেই তাহলে আমি অপবিত্র রয়ে যাবো; আর যদি প্রসাব করে পানি নেয় তা হলে পবিত্র থাকবো। কিন্তু ন্ত্রী সহবাস করলে অজু করে পবিত্র হওয়া যাবে না; এই থেকে বোঝা যায় অজু পবিত্র করতে পারে না; পবিত্র হতে অবশ্যই তাকে ফরজ গোসল দিতে হবে। তাহলে স্পষ্ট বোঝা গেলো যে অজু নামাযের পূর্বে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ মাত্র। অজু সম্পর্কে কোরআন আরও এইভাবে উল্লেখ করেন ঃ
সূরা নিসা ৪:৪৩ আয়াতে
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقْرَبُواْ الصَّلاَةَ وَأَنتُمْ سُكَارَى حَتَّىَ تَعْلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلاَ جُنُبًا إِلاَّ عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىَ تَغْتَسِلُواْ وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مِّنكُم مِّن الْغَآئِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا
অর্থঃ কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানি প্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।
উল্লিখিত আয়াতে চারটি মাত্র শর্ত: (ক) মূখমন্ডল ধোয়া (খ) হাতদ্বয়ের কনুই পর্যন্ত ধোয়া (গ) পায়ের গিরা পর্যন্ত ধোয়া (ঘ) মাথা মোছা। ইহাই কোরানে বর্ণিত মূখমন্ডল ধৌত করার সহজ, সরল, সঠিক ও সুন্দর বিধি বিধান যা ফরজ। কিন্তু এই ফরজ অজুর কাজটি অনেকেই সুন্নত বলে চালানোর চেষ্টা করে। তবে শুধু কোরানে যারা বিশ্বাসী নন, যারা উপকিতাব মেনে চলেন শরীয়তি আলেমদের নির্দেশ মত তারা একটি মাত্র প্রশ্ন তুলতে পারেন যে ‘প্রতিটি অঙ্গ কতবার করে ধৌত করতে হবে সেই নির্দেশনা কিন্তু কোরআন দেয় নাই। অবশ্য এই বিষয়ে বাজারে অনেক নামায শিক্ষার নানান বই পাওয়া যায় তাতে আলেম ওলামারা হাদীস মতে অজুর নিয়ম সম্পকে বলেন।
হাদীসে সুষ্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, একজনকে পানি দ্বারা তিনবার হাত ধৌত করতে হয় এবং পরে পানি দ্বারা কুলকুচা করে তিনবার মূখ ধৌত করতে হয়। পরে নাকের অভ্যন্তর ভাগ সামান্য পানি দ্বারা তিনবার ধৌত করতে হয়। এরপর সমস্ত মুখমন্ডল তিনবার ধৌত করতে হয়। এর পরে ডান দিকে থেকে আরম্ভ করে বাহু কনুই সমেত পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হয়। এই ভাবে পর্যায়ক্রমে পানি দ্বারা হাত ভিজিয়ে উভয় হাত দ্বারা মাথার উপরিভাগ মুছে ফেলা, বুড়ো আঙ্গুল দু’টো ছড়িয়ে যেন এতদ্দ্বারা সমস্ত মাথা মোছা হয়ে যায়।
এভাবে মোছার পরে কান পরিস্কার করতে হবে তর্জনী আঙ্গুরের ডগা দ্বারা-ডান হাতের তর্জনী দ্বারা ডান কান আর বাম হাতের তর্জনী দ্বারা বামকান। আঙ্গুলের ডগা কানের বহির্ভাগের ভাজগুলোর মধ্যে ঘুরিয়ে নিতে হবে এবং কানের ছিদ্রের মধ্যে দিয়েও সমান্য প্রবেশ করিয়ে নিতে হবে। আঙ্গুলের ডগা কানের বাইরের ভাজগুলোর ওপরে এবং কানের ছিদ্রের মধ্যে বুলিয়ে নেয়ার পরে সমস্ত আঙ্গুলগুলোকে একত্রিত করে হাত দু’টোকে উল্টিয়ে নিতে হবে যেন, হাতরতালু বাইরের দিকে থাকে। হাতের পিঠে দ্বারা গলা থেকে পেছন পর্যন্ত সামনের দিকে মুছে নিতে হবে। সব শেষে পা দু’টোর প্রত্যেকটি ডান দিক থেকে গেরো সমেত গেরো পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিতে হবে।
যদি অজু করার সময়ে কোন কারনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেবল একবার বা দু’বার ধৌত করা হয় তাহলে অজু সম্পন্ন হবে, যদিও সবচে উত্তম অজু হলো যা আমরা নবী করীম (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠিত সুন্নত (রীতি), অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিনবার ধৌত করা। এভাবে অজু পরিপূর্ণ হয়।
আমি একদিন একজন মাওলানার সাথে হাদীস কোরআনের আলাপ চারিতায় বলছিলাম যে, আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা ক্রমেই যেন কোরাআনের আলো থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই কোরআনের চাইতে হাদীসের গুরুত্ব যেন খুব বেশী দেয়। এই কথায় মাওলানা বললেন কোরআনে অকেন ঘটনা পরিস্কার করেননি।
আমি বললাম কেমন? তিনি বললেন যেমন অজুর ব্যাপার কোরআন ক্লিয়ার করেনী যে, কতবার হাত-মূখ ধৌত করতে হবে। এইজন্য আমাদের হাদীস অনুসরণ করতে হয়। আমি বললাম কোরআনে অজুর ফয়শালা আছে আসলে আমাদের বুঝবার কিংবা জানবার ভুল। অজুর জন্য হাদীস দরকার একথা ঠিক না। আমি মনে করি কোরানের আয়াত নিয়ে একটু চিন্তা করলেই উত্তর সহজ থেকে আরও সহজতর হয় ।
আসলে কোরআনের আয়াত অনুধাবনের বিষয়। যারা বুঝে নাবুঝার ভান করে তারা কখনো তা বুঝবে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন সূরা বাকারায় বলেন ২:৬-৮ আয়াত
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
خَتَمَ اللّهُ عَلَى قُلُوبِهمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ عظِيمٌ
কাফেরদের সতর্ক কর বা না কর উভয়ই সমান; তারা বিশ্বাস করবেই না। উপাস্য তাদের হৃদয়, কর্ণ ও চোখে সিল্ মেরে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাসি-। মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা উপাস্য ও পরকালে বিশ্বাসী কিন্তু তারা বিশ্বাসী নয়।
কোরআন বুঝতে চায়লে সহজতর ভাবে বোঝা সম্ভব। যেমন: আমরা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে মূখ ধুতে, গোসল করতে, শৌচ করতে, জামা-কাপড় ধুতে, সাংসারিক আসবাবপত্র, ভাতের জন্য খাওয়ার প্লেট ধুতে কতবার পানি ঢেলে পরিস্কার করি, বা পানি ঢালতে হয় তা অবস্থা ভেদে সকলেই সাধারণ ভাবে জানি। এ নিয়ে পৃথিবী সৃষ্টির হাজার হাজার বছরের মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান,্ ইহুদি, শিখ, মুসলিম বা আস্তিক-নাস্তিক সমাজে কোন প্রকার জাতী বা মানুষের সাথে মতভেদ বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়নি। আমি যদি পাঠককে প্রশ্ন করি যে, আপনি নিজে টয়লেট সারার পর কি পরিমান পানি খরচ করেন, মানে কয়বার ধৌত করেন? এক, দুই, তিন কিংবা চার ? নিশ্চয় বলবেন যতক্ষনা ময়লা পরিস্কার না হয় ঠিক ততক্ষণ ধুতে হয়। অথবা প্লেটে খাদ্য খাবার পূর্বে প্লেট কতবার ধুতে হয় তিন চারবার নাকি একবার? আমার সাথে নিশ্চয় পাঠক একমত হবেন যে, যতক্ষণ প্লেট পরিস্কার না হয় ততক্ষণ ধুতে হয়।
তাহলে কোরআন অজুর নিয়ম বলেছে কিন্তু কতবার ধৌত করতে হবে তা বলেননি। কারণ হলো আমার মূখমন্ডল পরিস্কারের জন্য কি পরিমান পানি লাগবে বা কতবার ধৌত করতে হবে তা হাত,মূখমন্ডল ও পায়ের গিরার ময়লার উপর নির্ভর করে। কতবার ধৌত করলে এই গুলি পরিস্কার হবে তা জ্ঞানপ্রাপ্ত সকল মানুষের জানার কথা। এক কথায় আমার সব গুলই খূব নিজ প্রয়োজন মতে ধুব।
পক্ষান্তরে মাত্র চারটি বিষয়ের বিপরীতে কোরানের দুর্বলতা (?) বা অপূর্ণতা (?) এই অপূর্ণতা পুরণের জন্য অসংখ্য হাদিছ রচিত আছে।
তাতেও কতবার ধৌত করতে হবে। তার নির্দিষ্ট বা যৌক্তিক সমাধান নেই।
নানা কারণ অকারণে অজু ভাঙ্গা-গড়া, বা এক নামাজ থেকে আর এক নামাজ পর্যন্ত অজু ধরে রাখা, ঘন্টার পর ঘন্টা পূর্বে অজু বানানো দৈবক্রমে অজু ছুটে যাওয়া, অজু দূর্বল বা মাকরুহ্ হওয়ার সময়, সুযোগ বা বিধান কোরআনে উল্লেখ নেই। অজু ভাঙ্গা সম্পর্কে আলেমদের মত পায়ুপথে দুষিত বাতাসের সাথে জেলীর মত অনু পরিমান কিছু নির্গত হতে পারে বলেই অজু করতে হয়। অজু দূর্বল বা মাকরুহ্ হওয়া বিষয়ে নানান কারন বা মতবেদ রয়েছে।
তবে একদিন একজন আলেম গোছের মানুষের কাছে প্রশ্ন করলাম যে, পায়ু পথে দুষিত বাতাস নির্গত হলে পায়ু পথ না ধুয়ে আবারো হাতদ্বয়ের কনুই পর্যন্ত, মূখমন্ডলসহ পায়ের গিরা পর্যন্ত ধুয়ে কেন অজু করতে হবে ? অবশ্য আমি এর সঠিক উত্তর পায় নাই। তবে এক বাক্যে অনেকে বলবেন যে, প্রশ্নটা যুক্তিসংগত। তবে অজু ভাঙ্গা না ভাঙ্গা, ধরে রাখা, ভাংলে এতবার ধুতে হয় এই সব কিছু কোরআনে উল্লেখ থাকার প্রয়োজন ছিলো । কারন অজু সংক্রান্ত যত বিষয় আমরা এখন হাদীসে দেখতে পায় তাকি কেবল কোরআনের দূর্বলতা (?) আমি মনে করি এইসব বিষয় যেহেতু কোরআনে উল্লেখ নেই সেইহেতু এর তাৎপর্যের তেমন একটা গুরুত্বও নেই। দরকার থাকলে কোরআন অবশ্যই বিস্তারিত বলেদিত আর সব অন্য বিষয় গুলোর মত।
যেমন রোজা করা না করা , রোজা ভাঙ্গা না ভাঙ্গা, কসম খাওয়া না খাওয়া, কসম ভাঙ্গা নাভাঙ্গা, স্ত্রী তালাক, স্ত্রী নেওয়া সব বিষয় বলা আছে কোরআনে। অথচ কেবল অজু জান্তে নাকি হাদীস অনুসরণ করতে হবে। প্রশ্ন উঠতেই পারে তবেকি হাদীস কোরআনের চেয়ে বেশী প্রয়োজন (?) হাদীস কি ফরজের ফরজ (?) হাদীস ছাড়া তবে কি কোরআন সুদ্ধ নয় (?) হাদীস ছাড়া কি কোরআন পূর্ণতা পাবে না (?) হাদীসের অনেক ঘটনা কোরআনে নাই বলেকি কি কোরআন কে হাদীসের চেয়ে প্রধান্য দিতে হবে বেশী (?) তবে অনেকেই বলবেন সহী হাদীসের কথা।
শরীয়ত ‘হাদীসের সমর্থনে কোরআনের যে সকল আয়াত গুলি ব্যবহার করেন তার সঙ্গে নিæ বর্ণিত আয়াতগুলি বিবেচনায় না এনে বরং রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কোরআন তথা মহানবির উপর যতখানি ইমান আনা বা রাখার দরকার ছিল, তার চেয়ে বেশি ইমান ঢেলে দিয়েছেন ইমাম বোখারীদের উপর; আর এই কারণেই কোরআনের মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) কে চিনতে মুমিনরা আজ ১৫০০ শত বৎসরেও পারেনী।
যদি রাসুল কে চিনতেন তবে আল−াহর হাদীস ও রাসুলের হাদীসের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পেতেন না। কারণ, কোরআন আল−াহর অহি তা রাসুলের মুখেই প্রকাশ। আল−াহর সমূহ অহিই রাসুলের পবিত্র মুখ নিসৃত বাণী। উহাই আল−াহর হাদীস, আল−াহর হাদীস মানেই রাসুলের হাদীস। এতে যারা পার্থক্য করে, কোরআন তাদের কাফের বলে ঘোষণা করেছেন।
এ সম্বন্ধে কোরআনে বেশ কয়েকটি সাক্ষি প্রমাণ আছে। মাত্র দু’টি আয়াত নিæে বর্ণিত হলোঃ
১. সূরা নিসা ৪:-১৫০, ১৫১
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيْنَ اللّهِ وَرُسُلِهِ وَيقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً
أُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি কিন্তু কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।
২. সূরা নিসা ৪ঃ-১৫২
وَالَّذِينَ آمَنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُواْ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ أُوْلَـئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ وَكَانَ اللّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থ: আর যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর রসূলের উপর এবং তাঁদের কারও প্রতি ঈমান আনতে গিয়ে কাউকে বাদ দেয়নি, শীঘ্রই তাদেরকে প্রাপ্য সওয়াব দান করা হবে।
বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু। এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।
সূরা আরাফ ৭:-৩
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ
অর্থ: তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা শুধু তারই অনুসরণ কর এবং ইহা ছাড়া অন্য গুরুদের পরামর্শ অনুসরণ করিও না। তোমরা খুব অল্প সংখ্যকই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।
উলি−খিত আয়াতগুলি সহজ, সরল-প্রাঞ্জল যার পুনঃ ব্যাখ্যাও নি®প্রয়োজন। এতে সমূহ হাদীসের সুফল-কুফল সম্বন্ধে নিশ্চিত ভাবে মীমাংসা রয়েছে; মীমাংসা রয়েছে ফরজ ও সুন্নত পার্থক্য সম্পর্কে । কিন্তু আমরা অবুজের দল তা বোঝবার চেষ্টা করি না। আমরা মনে করি বাব-দাদার পূর্ব আমল থেকে চলে আসছে যে সব রিতি নিতি আমরা তা কিভাবে অস্বীকারকরি, এমন কথা বলতে গেলে ইব্রাহিম (আঃ) এর কথা বলতে হয়। তার বাবা আযর মূর্তি পূজা করতেন বলেকি ইব্রাহিম (আঃ) সেই মূর্তি পূজার অনুসরণ করেছে? করেনি; তিনি তা তার গভীর জ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করে বুঝে মাবুদের অনুস্বরণ করেছেন।
কোরানের ব্যাখ্যা কোরান নিজেই; তা কোরানের পাতায় পাতায় সাক্ষি আছে। মহানবির জীবনদসায় ‘হাদিছ’ শব্দটির অর্থ ছিল একমাত্র অহি; হাদিছ বলতে তখন কোরানকেই বুঝানো হত এবং সকলে তায় বুঝতো।
কোন নবী বা রাসুলগণ আল্লাহ প্রেরিত বিধানের উপর উপ-বিধান রচনা করেন না এবং করেননি বা করতে বলা হয়নি এবং তারা করতে পারতেন না। কোরাআন মানব জীবনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। যদি কেই মনে করেন যে কোরাআন পূর্ণাঙ্গ নয় বলেই হাদীস মানতে হয়।
তাহলেতো অনেকেই একবাক্যে বলবে কোরআন আল্লাহ্র একটি অপূর্ণাঙ্গ কিতাব (নাউজুল্লিাহ্)। হাদীস তবেকি ফরজের ফরজ? হাদীসের প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোরআনকে খাটো করা যাবে না, এটা যে কোন মুসলিম এক বাক্যে বলবে, শুধু বললেই হবে না তা মানতে হবে। “আমি কোরআন সম্মত হাদীসের সম্মান করিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু উহাকে কোরআনের উপর প্রাধান্য দিতে প্রস্তুত নহি”। দ্বীন সম্পর্কে কোন কিছু জানার জন্য হযরত ওমর (রাঃ) বলিতেন ‘খোদার কেতাব তোমাদের জন্য যথেষ্ট। ’
নামাজের ঠিক পূর্বক্ষণে কোরআন মতে চারটি শর্ত পুরণ করেই অজু শেষ করে নামাজে দাড়িয়ে পড়লেই চলে যা, কোরআন পড়লেই বোঝা যায়।
অজুর সঙ্গে সঙ্গেই নামাযে যোগদান অর্থাৎ মধ্যবর্তী সময় থাকে না বললেই চলে। তবুও মাঝে প্রাকৃতিক বা দৈবক্রম অর্থাৎ উর্দ্ধ-অধ বায়ু, হাচি ইত্যাদি ঘটলে কোরানের কোথাও কোন অজু ভাঙ্গার ওজর-আপত্তি নেই। নাকি মাবুদ এই বিষয়ে লিখতে ভুলে গেছেন? (নাইজুবিল্লা) আল্লাহ্ লিখতে ভুলেন নাই বা তিনি ভুল করতে পারেন না। তবে কতবার অজু করতে হবে সে ব্যপারে তাহলে কোরআন বললো না কেন অনেকেই বলতে পারেন। কাদিয়ানি, দেওয়ানী, শিয়া, সুন্নী, হানাফি, হাম্বলি, চিশতীয়া কারো পার নাই যদি তাঁরা না মেনে চলে আল্লাহ্র বিধান।
অজু করতে হাদীসের এত শর্তের কথা আদৌ কি কোরআন স্বীকৃত? কাকরাইল মসজিদ,বায়তুল মোকাররম এমন কি বড় বড় মসজিদ গুলোতে গিয়ে কোরানে বর্ণিত নিয়মে অজু কললেই অনেকেই দেখে ফেলতে পারে আর দেখলেই খবর আছে। আপনি যতি কোরআন মতে অজু করেন আপনাকে কঠিণ জবাবদিহি করতে হবে কোরানিক অজুর জন্য; এমন কি কাদিয়ানী, শিয়া, খারেজী সন্দেহে মসজিদ থেকে আপনাকে বের করে দিতে পারে। আর যদি আপনি শরীয়তি হাদীসি অজু করেন তাহলে সকলেই জানবে আপনি একজন প্রকৃত মুমিন। এই মূহুতে’ কোরআনের একটি আয়াতের কথা মনে পড়ছে। সূরা নামল ২৭:৭৫ আয়াতে বলেছেন
وَمَا مِنْ غَائِبَةٍ فِي السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
অর্থঃ আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন ভেদ নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে না আছে।
এখন আমার অভিমত আল্লাহ্ বলছেন আমি কোরআনে সব বিষয় পঙখা-পঙ্খানু ভাবে বলে দিয়েছি। পক্ষান্তরে দু’টি আয়াতে চারটি মাত্র সাধারণ শর্র্তের উপর কোরানের বিপরিতে শরিয়ত রাসুল্লাহ্ (সাঃ) এর নাম জুড়ে দিয়েছে প্রায় শ’ খানিক হাদিসে অসংখ্য উপশর্ত, যাতে স্বয়ং রাসুল্লাহ্ (সাঃ) কে নানাভাবে বিতর্কীত ও বেইজ্জতি করেছে; যা সাধারণ মুসল্লীদের অহেতুক সন্দেহ, কষ্ট-দূর্ভোগ বহুগুণে বাড়িয়েছেন। কোরআনের আলোতে যা মোটেই সঙ্গত নয়। আমারা দ্বীন বলতে ইসলাম বুঝে থাকি যার প্রচারের দায়ীত্ব পেয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) । কোরাআনের আলোতে জানতে পারি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আল্লাহ্র নির্দেশ ছাড়া কোন কথা বলতেন না, এমনকি তিনি ধর্মে নতুন কোন সংযোজন করেননি।
প্রকৃতপক্ষে শরীয়তে কোন সংযোজন করার বিধান তিনার ছিল না। এব্যাপারে বুখারী হাদীসে বর্ণিত আছে ঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ (যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা তার উপর নিক্ষিপ্ত হবে)। (বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)।
দ্বীনের মধ্যে নেই বলতে বোঝানো হয়েছে কোরআনের মধ্যে নেই। অপর আরেকটি হাদীস আছে তিনি আরো বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে কোন নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য)।
(মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮)।
একটু চিন্ত করলেই বোঝা সম্ভব রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কার নির্দেশের কথা বলেছেন? এটা স্পষ্ট বোঝা যায় আল্লাহ্র নির্দেশের কথা বলেছেন। আল্লাহ্র নির্দেশ মানে কোরআনের নির্দেশ। যদি তায় হয় তবে কোরআনের বিপরিতে হাদীসের যুক্তি গুলো হাদীস দ্বারই খাটো করা হচ্ছে পবিত্র কারআনকে। আমরা সুন্নত নিয়ে যত পথ কিংবা মত সৃষ্টি করিনা কেন ফরজ বাদ দিয়ে সুন্নত নিয়েই বেশী বাড়া বাড়ি করে থাকি মুসলিমরা।
মনের ভিতর পরিস্কার না করে কেবল গায়ের পয়লা মাটি পরিস্কার করে পবিত্র খাঁটি হওয়া যায় না। ইবাদ করতে হলে আগে কল্ব পরিস্কার করতে হবে তবেই মাবুদের কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে আপন চাওয়া পাওয়া। মানুষে ইচ্ছা করলে পবিত্র হতে পারে না, পবিত্র করেন আল্লাহ্ আর তায় কোরআনে বলেন। আমরা একটু সূরা নিসার দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখবো মাবুদ কি বলেনঃ
সূরা নিসা ৪:৪৯ আয়াত দেখি
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُمْ بَلِ اللّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاء وَلاَ يُظْلَمُونَ فَتِيلاً
অর্থঃ তুমি কি তাদেকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র বলে থাকে অথচ পবিত্র করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকেই
ফরজ গোসুল কিংবা অজু করে যতই পবিত্র হইনা কেন মনটা যদি নংরা থাকে তাহলে কোন ইবাদতই কাজে আসবেনা
চলবেঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।