হার্ট যা পারে হাত এবং মুখ একযোগেও তা পারে না...
আমার একজন বস একবার আমাকে বলেছিলেন,“নাজমুল সাহেব, আপনার প্রধান সমস্যাটা কী জানেন, আপনি কথা বলার সময় একদম ষ্টিক হয়ে যান। সবকিছু একেবারে স্ট্রেইটলি বলতে চান। ”
আমি বলেছিলাম,“সেটা ঠিক আছে স্যার, কিন্তু পজিটিভলি বললে এটাই আমার সবচাইতে বড় অ্যাডভানটেজ। ”
এবার আমার এরকম আরেকটি ইন্টারভিউয়ের কথা বলব যেখানে আমি মূলত স্ট্রেইটলি কথা বলেই বসের আনুকুল্য পেয়েছিলাম।
এই ইন্টারভিউটা আমি দিয়েছিলাম আই কেয়ার হসপিটালে:
> স্যার আসব?
> আসেন।
> স্লামালেকুম স্যার।
> ওয়ালাইকুম সালাম, বসেন।
> থ্যাংক ইউ স্যার।
(আমি বসলাম। ইন্টারভিউ বোর্ডে মোট চারজন লোক: এম.ডি, জি.এম. সি.ই.ও এবং এইচ.আর. ম্যানেজার।
)
> আচ্ছা আপনি শার্টের হাতা কাঁধ পর্যন্ত জড়িয়ে এসেছেন কেন? আপনি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন এটা জানেন না?(প্রশ্ন করলেন এম.ডি স্যার। )
> স্যার আপনি হয়তো আমাকে কনসিডার করছেন একজন আই.টি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কিন্তু আমি নিজেকে একজন ওয়ার্কার হিসেবেই ভাবি। আর একজন ওয়ার্কারের কোন প্রেজেন্টেশনের প্রয়োজন থাকতে পারে না। আমি কাজে নামলে ঠিক যে ড্রেসে কমফোর্ট ফিল করব সেই ড্রেসে থাকতেই আমি পছন্দ করি। আমি মানছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশনের দরকার আছে, কিন্তু সেটা সাধারণ মানুষের কাছে যখন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে যাব তখন।
আমি তো এখানে কোন সাধারণ মানুষের কাছে আসিনি স্যার। আপনারা সকলেই অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। আমি আশা করব আপনারা আমাকে একজন ওয়ার্কার হিসেবেই কনসিডার করবেন।
> হুমম, আপনি ঠিকই বলেছেন। ঠিক আছে যান আপনাকে ওয়ার্কার হিসেবেই কনসিডার করা হল।
(হাসতে হাসতে বললেন, অন্য সবাইও তাঁর সাথে হাসলেন। )
> আপনি কম্পিউটারে কি কি কাজ জানেন। (জি.এম স্যারের প্রশ্ন। )
> স্যার সবগুলোই আমি সিভিতে উল্লেখ করেছি। (সিভিটা স্যারের হাতে ধরা তখন।
)
> হ্যাঁ, ঠিক আছে কিন্তু অনেকেই আছে সিভিতে সবই লিখে দেয় কিন্তু সেগুলো জানে না। আপনি নিজের মুখেই বলেন আপনি কি কি কাজ জানেন।
> স্যার অফিস প্রোগ্রাম, হার্ডওয়্যার, ভিডিও এডিটিং, অডিও এডিটিং, এ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং----
> আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে এবার বলেন হার্ডওয়্যার কেমন পারেন?
> স্যার আমার সব কাজের মধ্যে এটাই সবচাইতে বেশি পারি।
> ও, কী কোর্স করা আছে আপনার হার্ডওয়্যার এর উপর?
> না স্যার আমার কোন কোর্স করা নেই।
> তাহলে শিখলেন কিভাবে?
> স্যার নিজে থেকেই।
> নিজে থেকেই?
> নিজে থেকেই মানে স্যার ছাত্রাবস্থায় যখন আমি কম্পিউটার ব্যবহার করতাম তখন এখনকার মত এত কম্পিউটার এক্সপার্ট ছিল না। যার কারণে যখন যার কম্পিউটারের সমস্যা হত তখনই আমাকে ডাকত, আর আমিও যেতাম। যদিও তেমন কিছুই জানতাম না। কিন্তু প্রবলেম পেলেই আগে সেটাকে প্রিভিউয়াস অভিজ্ঞতার সাথে মেলাতাম। যদি না মিলত তবে সেখানে আমার বেসিক অ্যাপ্লাই করতাম।
এভাবেই মূলত আমার শেখা।
> আচ্ছা আচ্ছা। আপনি ভিডিও এডিটিং কেমন পারেন?
> মোটামুটি ছয়টা সফটওয়্যার জানি স্যার ভিডিও এডিটিং এর উপর।
> ওয়েব পেজ এর কাজ পারেন?
> ওয়েব পেজ এর কাজ বলতে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন স্যার? ওয়েব ডিজাইন নাকি ডেভেলপিং?
> বুঝলাম না। ডিজাইন আর ডেভেলপিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?
> স্যার ডিজাইন হল একটা ওয়েব পেজ এর ইন্টারফেসটা আর ডেভেলপিং বলতে এটার অভ্যন্তরীন কোডিংটাকে বুঝায়।
> আপনি দুটাই পারেন?
> না স্যার আমি শুধু ডিজাইনটা জানি, ডেভেলপিং জানি না।
> আচ্ছা ওতেই চলবে। এ্যানিমেশন মানে কোন কার্টুন বানাতে পারবেন?
> পারব স্যার, আমি ফ্লাশে একটা দুই মিনিট বিয়াল্লিশ সেকেন্ডের কার্টুন বানিয়েছিলাম। তবে এ্যানিমেশন মূলত প্রজেক্ট ওয়ার্ক তো স্যার, এজন্য বেশি বড় কাজ হয়ে গেলে একার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
> আমাদের কোম্পানির জন্য কোন প্রেজেন্টেশন এ্যানিমেশন বানাতে বললে পারবেন তো?
> হ্যাঁ, তা পারব স্যার।
> ওকে এবার বলেন আপনি এই জবের ব্যাপারে কতটুকু কমিটেড?
> মানে বুঝলাম না স্যার।
> অনেকেই আছে জবে ঢুকেই অন্য জব খোঁজা শুরু করে। আর কোম্পানির কাজ বুঝে উঠতে না উঠতেই জব ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। তখন আমাদের আবার নতুন করে লোক নিয়োগ দিতে হয়। এজন্য আপনাকে বলেছি আপনি এই জবের ব্যাপারে কতটুকু কমিটেড।
> সেটা নির্ভর করছে স্যার আপনি আমার ব্যাপারে কতটুকু কমিটেড।
> কেমন?
> এর অর্থ হল স্যার আপনি যদি আমাকে আমার ন্যায্য পারিশ্রমিক দেন আর একজন ওর্য়াকারের মত প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা দেন তাহলে প্রশ্নই ওঠে না আপনার এখানে জব ছেড়ে দেয়ার। আমি অন্য জায়গায় আরো ভাল পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা যে করব না সেটা বললে মিথ্যা বলা হবে কিন্তু অন্য কোথাও যাওয়া আগে অবশ্যই আপনাকে জানাব স্যার যে ঐ পরিমান বেতন আপনি আমাকে দিতে পারবেন কি না। যদি না পারেন তারপর যেতে পারি কিন্তু তার আগে নয়।
> হুমম, ভার লাগল আপনার কথা।
কিন্তু আপনার কথায় আমি বিশ্বাস করব কিভাবে?
> দেখুন স্যার আমি বিশ্বাস করি উপরে ওঠার যে সিঁড়ি আছে সেটা সততা দিয়ে গড়া। আমি মিথ্যা বলে আপনাকে ফাঁকি দিতে পারি কিন্তু জীবনও তাহলে আমাকে ফাঁকি দেবে। আমি ঠাট্টার সময় ছাড়া কখনও মিথ্যা বলিনা স্যার।
> ঠিক আছে আপনি আসেন। আমরা কালকের মধ্যে আপনাকে জানাব।
(জবটাতে জয়েন করার পর এইচ.আর ম্যানেজার স্যার আমাকে বললেন,“দেখুন নাজমুল সাহেব একজন রাইটার হিসেবে এ্যাডমিনিষ্ট্রেশনে আপনার খুব ভাল একটা ফিল্ড তৈরী হয়েছে, আমি আশা করব আপনি সে ফিল্ড ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। ”
আমি বললাম,“আমার ঐ ফিল্ড ধরে রাখার কোন চেষ্টা আমি করতে পারব না স্যার। আমি আমার সমস্ত যোগ্যতা আর ক্রিয়েটিভিটি কোম্পানির পেছনে ব্যয় করতে পারি। ”
“গুড, এটাই তো চাই নাজমুল সাহেব। ”
এখানে খুব ভাল একটা পরিবেশে ছিলাম আমি।
এম.ডি স্যার প্রত্যেকদিন আমার সাথে আধাঘন্টা পার্সোনাল মিটিং করতেন। আর সাপ্তাহিক এ্যাডমিন মিটিং এ এক্সিকিউটিভদের মধ্যে শুধুমাত্র আমিই বসার সুযোগ পেতাম।
অবশ্য জবটাতে বেশিদিন কনটিনিউ করতে পারিনি। মাত্র বাইশ দিন অফিস করেছিলাম। টাইফয়েডে পড়ে জবটা ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।