সবার আমি ছাত্র.....
টাউন হল মাঠের এক কোনায় মুজাহিদ মামার চা দোকান। আর যাকে নিয়ে লিখছি, সে মুজাহিদ মামার ভাগিনা ওরফে শাকিল। সে মামার দোকানেরই হেল্পার। চায়ের কাপ ধোয়া, আনা-নেয়া করা আর মামার ফরমায়েশ খাটা তার কাজ। এছাড়া সন্ধ্যায় যখন কাস্টমারের ভিড় থাকে তখন সে ও দোকানদারি করে।
তখন সে নিজেকে সেকেন্ড ইন কমান্ড মনে করে। আর একটা কথা সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মামার হাতে মার খায়, কাঁদে আর গালি গালাজ করে...........
শাকিল। বয়স ৮-১০। কালো শরীর। মোটা আর বেটে।
চোখ দুটি ডিপজল টাইপ, ভয়ংকর লাগে বেশ। মেজাজ সব সময় চড়া। মাথার চুল ছোট বলে ভিলেনের কোন ংশই ফেলা যায়না। জামা কাপড়ের ছিরি ভালো না। ও.... কয় দিন আগে সে এক জোড়া কালো বুটও কিনেছে।
সন্ধ্যার ঘটনা। সন্ধ্যা ৭.৩০। প্রতি দিনের মতো আজও তার শরীরের কাজ করার মেয়াদ শেষ। আজ মনে হয় তার বেশীই অবস্থা খারাপ। মেজাজের অবস্থা আরও চরম।
সে যেখানে দাঁড়ায় সেখানেই ঘুমাচ্ছে, স্বপ্নে বোধহয় তার কাঁথা, বালিশ, লেপ তাকে ডাকছে। যাই হোক একজন কাস্টমার আসলেন। বয়স ২০/২২। দোকানদার কিন্তু শাকিল.............
কাস্টমার: একটা বেনসন সিগারেট দে
শাকিল: টাকা দেন
কাস্টমার: আমি আছিতো। চা খামু।
একসাথে দিমু
শাকিল: না, আগে দেন, নাইলে সিগারেট নাই.....
কাস্টমার: ( রাগ করে) সিগারেট দে। নাইলে মাইর খাবি
শাকিল: বেচতাম না আমনের কাছে
কাস্টমার তাকে একটা চড় মারলো, শাকিল তার চোখের জলে দোকান বাসিয়ে ওই কাস্টমারের নাগালের বাইরে। আর জোরে জোরে গালি দিতে লাগলো.......... মা---- আমারে মারছস। আমি তোরে দেইখ্যামু। তোর কাছে না বেচলে আমার কি হইবো।
আমি তোর.................
কা্সটমার আর কিছু না বলে নিজের ইজ্জত বাচিয়ে বিদায়। শাকিল আবার দোকানে, দাঁড়িয়ে আছে। ঘুমে তার চোখ একবার খুলে আবার বন্ধ হয়। এপাশে ওপাশে ঢুলছে। গালে কান্নার জলে দাগ।
এতক্ষন এই চিত্রটা কিন্তু আমরা দেখছিলাম, আমাদের চেয়ে বেশী মনোযোগী ছিলো আমাদের পাশেরই আরেক ভদ্রজন( চা খাচ্ছিলেন)। উনি এবার সিগারেট চাইলেন...
শাকিল: নাই
......: তোরে কইছি সিগারেট দিতে
শাকিল: নাই কইছি না.....সিগারেট বেচতাম না।
.......: (রাগ করে) ধিরর.... সিগারেট দে। ( একটা থাপ্পর মারলেন)
শাকিল: ওই মা............র বাইচ্চা............................
...................................
...............................................(গুষ্ঠি উদ্ধার)
বেচারা ভদ্রলোকের গাঁয়ের লেবাশ খুলে যাচ্ছে....। আর আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।
শাকিলকে কিছু বলতে পারছিনা, কারন তার প্রতিদিনের কাহিনী আমরা জানি। আর ওই ব্যাক্তিতো কারে দিকে মুখ তুলতে পারছেন না। (লজ্জা).......... মামা এবার শাকিলকে দিলেন তার প্রতিদিনের ওষুধ। আর শাকিল এবার আগ্নেয়গিরি।
...............: বা..............আমি তোর দোকানে থাকতাম না।
যাইগ্গামু আইজকাই। তোর এনে না থাকলে কি হইবো। মা............ তো পেটের মইদ্যে গেলাস ভাইঙ্গা ঢুকাইয়া দিমু....................
আমরাসহ আশে পাশের সবাই থ......... একি আজব কারখানা। সে তো পুরোপুরি আউট। কাস্টমারও কমে গেল।
অনেক্ষন পর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায়, আমি এবার শাকিলের কাছে একটা সিগারেট চাইতে গিয়ে বললাম..... তোরে পুলিশে ধরাইয়া,
(আগের দুই ব্যক্তির কথা মনে পরলে) ...........না মানে পুলিশে ভর্তি করানো দরকার।
আর সিগারেট টানতে টানতে চিন্তা করলাম, আসলে শাকিলকে কি কিছু বুঝানো দরকার নাকি আমরা কিছু বুঝা দরকার?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।