আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওর একটি নিরাপদ দেশীয় প্রজাতীর মত্স্য উত্পাদন কেন্দ্র

আমি সততা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি।

দেশে অফুরন্ত মত্স্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের নাম অনেকেরই জানা। শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া ও প্রকৃতির এক নৈপুণ্য অবদান স্বরূপ এ অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা হাইল হাওর দেশের মত্স্য সম্পদের জন্য এক সু-বিশাল মত্স্য অভয়াশ্রম হিসেবে সু-পরিচিত। এখানে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম মত্স্য সম্ভার। হাইল হাওরে আমাদের দেশীয় মত্স্য প্রজাতির জন্য একদিকে যেমন নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে তেমনি অতিথি পাখিদের জন্যও হয়ে উঠেছে একটি নিরাপদ অভয়াশ্রম।

তাই শীতের শুরুতেই এ অঞ্চলে দেখা যায় নানা রকম অতিথি পাখির বিচরন। শুধু তাই নয়, হাইল হাওরের অলো আধারে জীবিকা নির্বাহ করছে হাওর এলাকার মত্স্য নির্ভর ৬০ টি গ্রামের ৩০ হাজার বসতবাড়ির প্রায় সোয়া লাখ মানুষ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানকার মাটি, পানি আর মাছ নিয়েই যেন এদের জীবন ও কর্ম। হাইল হাওরের বাইক্কা বিলটিকে মাছের নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে তোলা হেেয়ছে। কই, মেনি, আইড়, ফলি, চিতলসহ আরো অনেক প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ এখানে বংশ বৃদ্ধি করে পুরো হাওরে ছড়িয়ে পরে।

এই বিল এখন মাছের জন্য চমত্কার একটি নিরাপদ আবাসস্থল। এছাড়াও অন্যান্য বণ্যপ্রাণী এবং দেশি ও বিদেশী পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বলা হচ্ছে হাওরটি এখন ৯৮ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। যেখানে বিপন্ন মাছের পোনা বিমুক্ত করা হচ্ছে, ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হচ্ছে এবং সরকারি সংরক্ষিত এ বিলটি হাওরে মাছের বৃহত্তম প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত করা হযেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়ন, ভূনবীর, আশিদ্রোণ, মির্জাপুর, কালাপুর ও মৌলভীবাজার জেলার সদর ইউনিয়ন, নাজিরাবাদ, গিয়াসনগরসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সীমানা ঘেষে বিস্তৃর্ণ এ হাইল হাওরের অবস্থান।

শহর থেকে হাইল হাওরে যাতায়াতের জন্য রয়েছে একাধিক পথ। তবে যেভাবেই হোক না কেন শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে আবস্থিত এ হাইল হাওরে যেতে সময় লাগে মাত্র আধা ঘন্টা। আপনার পছন্দ মতো যে কোন ধরনের যানবাহন নিয়ে যেতে পারেন হাইল হাওরে। হাইল হাওরের চতুর্দিকে রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য বিল। এদের মধ্যে বাইক্কা বিল অন্যতম।

বলতে গেলে বাইক্কা বিলের জন্য হাইল হাওরের সৌন্দর্য্য ও অপরূপ নয়নাভিরাম পরিবেশ বহুগুণ বেড়েছে। বাইক্কা বিলের পানির দিকে তাকালেই অনুভব করা যায় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, বোয়াল, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের ছড়াছড়ির দৃশ্য। মাছের ছড়াছড়িতে বিলের পানিতে জেগে ওঠে ঢেউ। ঢেউয়ের তালে ঘোলা পানির দৃশ্য দেখেই বুঝা যায় মাছগুলোর ওজন ১০-১২ কেজি ওজনের নীচে হবে না। পানির নীচে বোয়াল মাছ যখন তার শিকার খোজে বেরায়, তখন মলা মাছের লাফিয়ে ওঠার দৃশ্য দেখে যে কেউ বিমোহিত না হয়ে পারবেন না।

কখনো কখনো দেখা যায় পরিস্কার পানির মধ্যে বেশ কিছু অংশ কালো হয়ে গেছে। এগুলো আর কিছু না- পানকৌড়ি। পানকৌড়ির প্রধান খাদ্যই হলো মাছ। তাই খাদ্যের সন্ধানে এদেরকে বিলের পানিতে দেখা যায়। জানা যায়, সমাজ ভিত্তিক মত্স্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিষদের ম্যাধ্যমে বিগত কয়েক বছর ধরে বাইক্কা বিলটি সরকার ঘোষিত দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবস্থাপনা করে আসছে বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সদস্যরা।

এ সংগঠনের সদস্যরা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশীয় মত্স্য সম্পদকে টিকিয়ে রাখছে এবং তাদেরকে সার্বিকভাবে কারিগরি জ্ঞান দিয়ে সহায়তা করছে উপজেলা মত্স্য বিভাগ। বর্তমানে কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী ও দুস্কৃতিকারীদের আনাগুনায় হাইল হাওরের মত্স্য ভান্ডারে কিছুটা আঘাত এনেছে। এসকল অসাধু ব্যবসায়ী ও দুস্কৃতিকারীরা কারেন্ট জাল ব্যবহারের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলের মত্স্য সম্পদকে বিনষ্ট করে চলেছে। এ ব্যপারে সমাজ ভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সদস্যদের দাবী, দেশের অফুরন্ত মত্স্য ভান্ডার এবং মত্স্য চাষের অভয়াশ্রম হিসেবে হাইল হাওরকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ অঞ্চলে জনসচেতনতার পাশাপাশি সরকারি টইল বাহিনী ও সশস্ত্র আনসার বাহিনী নিয়োগ করা প্রয়োজন। তবেই হাইল হাওর হয়ে উঠতে পারে একটি নিরাপদ দেশীয় প্রজাতীর মত্স্য উত্পাদন কেন্দ্র।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.