আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনে দিনে কুমিল্লা (কপি পেস্ট বাংলা আই থেকে )

আমরা আমাদের প্রবাসী জীবনের কথা বলতে চাই........

দিনে দিনে কুমিল্লা ঢাকা থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমৃদ্ধ কুমিল্লা। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বেড়ানোর অনেক জায়গা। ঢাকা থেকে সকালে গিয়ে জায়গাগুলো দেখে আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়। এক দিনে কুমিল্লা ভ্রমণ নিয়ে এবারের বেড়ানো। ওয়ার সিমেট্রি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ জায়গা থেকে শুরু হতে পারে আপনার কুমিল্লা ভ্রমণ।

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিলেট সড়কে এক কিলোমিটার সামনে গেলেই পাবেন ঐতিহাসিক এ স্থানটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সদর দপ্তর ছিল কুমিল্লায়। ৫ একর জায়গা জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ ৭৩৮ জন সৈনিকের কবর আছে এখানে। এর মধ্যে ৩৫৭জন ব্রিটিশ সৈনিক, ১৭৮ জন ভারতীয়, ৮৬ জন পশ্চিম আফ্রিকান, ৫৬ জন পূর্ব আফ্রিকান, ২৪ জন জাপানিজ, ১২জন কানাডিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ান, ৪ জন নিউজিল্যান্ডের, ১ জন করে পোলিশ, বেলজিয়াম, বার্মিজ এবং রোডেশীয় সৈনিকের এবং ১ জন বেসামরিক লোকের কবর রয়েছে এ সিমেট্রিতে। কুমিল্লা ওয়ার সিমেট্রির রক্ষণাবেক্ষণ করে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন।

ঈদের দিন ছাড়া বছরের সবদিনই সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে কুমিল্লা ওয়ার সিমেট্রি। শালবন বিহার ওয়ার সিমেট্রি দেখে এবার চলুন শালবন বিহার দেখতে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বা বার্ড লাগোয়া লালমাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত শালবন বিহার। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে একটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিহারের আয়তন ১৬৭ বর্গমিটার।

এতে মোট ১৫৫টি কক্ষ রয়েছে। ধারণা করা হয় বিহারটি দেব বংশের চতুর্থ রাজা ভবদেব কর্তৃক আনুমানিক ৭ম শতাব্দির শেষে কিংবা ৮ম শতাব্দির শুরুর দিকে নির্মিত হয়েছে। এর মূল নাম ভবদেব মহা বিহার। পূর্বে এ জায়গাটি শালবন রাজার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল বলে খননের পরে এর নাম হয় শালবন বিহার। শালবন বিহারের শীতকালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) সময়সূচী হলো- সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা।

দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। দুপুর ১২.৩০ থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি। গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সময়সূচী হলো- সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১২.৩০ থেকে ২.৩০টা পর্যন্ত বিরতি। ময়নামতি জাদুঘর শালবন বিহার দেখে এবার চলুন পার্শ্ববর্তী ময়নামতি জাদুঘর দেখতে। লালমাই ময়নামতি অঞ্চলে বিভিন্ন সময় প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন দেখা যাবে এখানে। জাদুঘরের সময়সূচী শালবন বিহারের মতোই।

তবে এটি সাপ্তাহিক রোববারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কোটবাড়ির একটি মনোরম জায়গা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বা বার্ড। ১৯৫৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৫৬ একর জায়গা জুড়ে এ জায়গাটি খুবই সাজানো গুছানো। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এখানেও কাটাতে পারেন কিছুটা সময়।

ইটাখোলা মুড়া কোটবাড়ি বাজারের সামনের সড়ক ধরে কিছুটা পশ্চিমে ডান দিকে আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থল ইটাখোলা মুড়া। স্থানীয় লোকজন বহুদিন পুরনো ইটের ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে এর এরূপ নামকরণ। বেশ কয়েকবার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে দুটি বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান মিলেছে। খননের সময় এ জায়গা থেকে সোনার তিনটি গুলি, একটি তাম্র লিপি ইত্যাদি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এ স্থাপনাগুলো ৭ম কিংবা ৮ম শতকে নির্মিত।

এ জায়গাটি অরতি এবং খোলা বলে দিনের যে কোন সময়েই প্রবেশ করা যায়। রূপভান মুড়া ইটাখোলা মুড়ার সামান্য পশ্চিমে সড়কের বিপরীত দিকেই এর অবস্থান। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে একটি বিহার, একটি মন্দির, একটি ছোটকূপ ও একটি উচ্চ মঞ্চের স্থাপত্যিক নিদর্শন উন্মোচিত হয়। ময়নামতি এলাকার অন্যান্য বিহারের মতো এখানকার মন্দিরটি বিহারের ভেতরে না হয়ে বাইরে স্থাপিত। এ জায়গাটি খননের ফলে একটি গুপ্তানুকৃতির স্বর্ণ মুদ্রা, খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দির খড়গরাজা বলভট্টের মিশ্রিত ধাতুর চারটি মুদ্রা, তিনটি রৌপ্য মুদ্রা, গুপ্ত পরবর্তী রীতিতে তৈরি একটি বেলে পাথরের বৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি, প্রচুর পোড়া মাটির ফলক ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে।

এসব প্রত্নসম্পদ বিচার করে ধারণা করা হয় রূপভান মুড়া ৮ম শতাব্দীর আগেই নির্মিত হয়েছে। এ জায়গাটিতো দিনের যে কোন সময় প্রবেশ করা যায়। কুমিলা শহর এক দিনের এ ভ্রমণের শেষে এবার চলুন কুমিল্লা শহরে। পুরনো এ শহরটি ঘুরে দেখতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এখানে বিভিন্ন দোকানে পাবেন কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি কাপড়ের পোশাক।

আর এতদিন ঢাকার অলি গলিতে যেসব নকল মার্তৃভান্ডারের রসমালাই খেয়েছেন এবার একটু পরখ করেই আসুন আসল মার্তৃভান্ডারের স্বাদ। কীভাবে যাবেন ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী বাসগুলো ছাড়ে সাধারণত সায়েদাবাদ থেকে। এ পথে ভাল বাস সার্ভিস হলো তিশা, এশিয়া লাইন, প্রিন্স ইত্যাদি। ভাড়া ১১০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম কিংবা ফেনীর যে কোন বাসে চড়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এসে নামতে পারেন।

সেখানে ওয়ার সিমেট্রি ঘুরে টেম্পু কিংবা বেবি টেক্সি করে যেতে পারেন কোটবাড়ি। ভাড়া পড়বে ৮০-১০০ টাকা। তবে এ ভ্রমণ নির্ঝঞ্জাট করতে চাইলে ৪/৫ জন মিলে কোন রেন্ট এ কার থেকে মাইক্রো বাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো। ঢাকা থেকে সারাদিনের জন্য একটি মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.