সাধারণ ও টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়াসহ বিসিএসের পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ ছাড়া 'পিএসসি দিবস' ঘোষণা, কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোকে শক্তিশালী করাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মোট ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পিএসসির চেয়ারম্যান, সদস্যসহ কর্মকর্তাদের বিদেশে শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে এসব সুপারিশ করা হয়েছে, যা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠানোও হয়েছে। কমিশন মনে করে, নিয়োগ ও পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে এসব সুপারিশ অর্থবহ ভূমিকা রাখতে পারে। পিএসসির সংশ্লিষ্ট সদস্য ফরিদা আবিদ খানম এর সত্যতা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র মতে, তিনটি ক্যাটাগরিতে ১৮ দফা সুপারিশ বিন্যাস করা হয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরিতে কমিশন সম্পর্কে সাতটি সুপারিশ রয়েছে। প্রথম সুপারিশে বলা হয়, কর্ম কমিশনের একটি মূলমন্ত্র (মটো) থাকবে; এটি হবে ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। এর ভিত্তিতে পরবর্তীকালে কমিশন একটি রূপকল্প (ভিশন) প্রণয়ন করতে পারে। এ ছাড়া কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য ও কমিশন সচিবালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি, কমিশন সচিবালয়ের আঞ্চলিক অফিসগুলো শক্তিশালী করে একজন পরিচালককে প্রতিটিতে প্রধান করা, বছরের এক দিনকে 'বিপিএসসি ডে' অর্থাৎ বাংলাদেশ কর্ম কমিশন দিবস ঘোষণা, কমিশন থেকে ত্রৈমাসিক বুলেটিন বের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কর্ম কমিশনের গবেষণা কার্যক্রম ও গবেষণা শাখাকে আরো শক্তিশালী করে এই শাখাকে 'গবেষণা ও প্রকাশনা' শাখারূপে অবহিত করা এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব যেমন_সরাসরি নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা কেসের গুরুদণ্ড প্রদানের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এক বা একাধিক চেকলিস্ট প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পরীক্ষার বিষয়ে সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ও টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, প্রার্থীকে সাধারণ অথবা টেকনিক্যাল ক্যাডার_এ দুইয়ের যেকোনো একটিতে অথবা আলাদাভাবে দুটিতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক সমস্যা ও রাজনৈতিক সংশ্লেষ সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে পিএসসির অধীনে সাধারণ ও টেকনিক্যাল ক্যাডারের পরীক্ষা একই সঙ্গে নেওয়া হয়।
এতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় যাঁরা একবার প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় যোগ্য হবেন, তাঁদের প্রার্থিতার প্রয়োজনীয় শর্তাদি পূরণ সাপেক্ষে পরবর্তী বিসিএসে সরাসরি লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ রাখা, প্রচলিত কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে একে যৌক্তিকীকরণেরও সুপারিশ করা হয়েছে। কোটার বিষয়ে বলা হয়, কোটা পদ্ধতিতে সাধারণ পদগুলো পূরণের ক্ষেত্রে বড় রকমের কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না। তবে টেকনিক্যাল পদের ক্ষেত্রে প্রাধিকার কোটার বাইরে সাধারণ শ্রেণীর (ক্যাটাগরি) বহু উত্তীর্ণ প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেক পদ শূন্য থেকে যায়। কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনাকালে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা সমীচীন বলে মনে করে পিএসসি।
প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার আগে আবেদনপত্র বাছাইপ্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করা, কমিশনের পরীক্ষা পদ্ধতি অটোমেশন ও কমিশনের কাজে ব্যাপক হারে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, শিগগিরই অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া, ভবিষ্যতে প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে একটি বা দুটি লিখিত পরীক্ষা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়। কর্ম কমিশনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে বিশেষায়িত কাজে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে পারদর্শী করে গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে এই ক্যাটাগরিতে।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং অনুন্নত অঞ্চলের প্রার্থীদের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা, কিছু কিছু চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমানির্বিশেষে সবার জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়া যায় কি না, তা পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সাংবিধানিক অনুশাসন অনুযায়ী যেসব বিষয়ে কমিশনের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে অবশ্যই কমিশনের পরামর্শ
গ্রহণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট প্রণয়নে কমিশনের মতামত গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পিএসসি সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সমর্থনপুষ্ট প্রকল্পের আওতায় পিএসসির চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১৯টি দল বিশ্বের ২২টি দেশে শিক্ষা ভ্রমণ করে।
এই দলগুলোর সুপারিশ নিয়ে একাধিক সেমিনার ও কর্মশালা করে পিএসসি উলি্লখিত সুপারিশমালা তৈরি করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।