আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারী ভিক্ষুক

কিসের পুথি, কিসের পত্র, সুপথে চলার দীক্ষা সব কিছুই অসার অচল, লক্ষ্য হল ভিক্ষা চুলোয় যাক গুরুর বচন, নিষ্প্রাণ সুশিক্ষা বৃথাই তোমার ঘ্যানোর ঘ্যানোর, লক্ষ্য আমার ভিক্ষা। ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের নিচু স্তরের কাজের মধ্যে অন্যতম। অনেক মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিনানিপাত করলেও আত্ম সম্মান বোধ সমুন্নত রাখতে ভিক্ষাবৃত্তিকে বরণ করে নেয়নি। দু-একজন দিশাহারা শারীরিক অক্ষম মানুষ হয়ত সকল লজ্জা ও আত্মসম্মানকে বলি দিয়ে রাস্তায় নেমেছে ভিক্ষার থালা হাতে নিয়ে। তবে সেসব এখন পৌরাণিক গল্পে পরিনত হয়েছে।

এখন সমাজের প্রায় সকল শ্রেণীর ও পেশাজীবীর মানুষের মাঝে এই বৃত্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। অবাক করলেও কথাটি সত্য যে, সমাজের একটা বড় অংশ এই বৃত্তিকে জীবনের লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করছে। এবার একটু খোলসা করে বলি, দয়া করে একটু মিলিয়ে নিন। আমার বাসা থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। বাসা থেকে বেরোলেই গল্লামারী মোড়।

মোড়ে দাড়ালেই চোখে পড়ে দু-একজন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষুক, যারা সন্নিকটে এসে ভিক্ষার থালা বা হাত বাড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা চায়। মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে কয়েক পা বাড়ালেই দেখা যায় ইউনিফরম পরা একদল লোক (ভিক্ষুক) হাত পেতে বিভিন্ন পরিবহনের চালক বা তাদের সহকারীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আর তাদের সহচর যারা তাদের সোর্চ বলে খ্যাত, তারা টাকা সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস (তরি-তরকারী, গরুর দুধ) হাতিয়ে নিতে ব্যাস্ত (সোজা কথায়, সোর্সদের আউটসোর্সিং!! ). আর একটু এগোলেই একই দৃশ্য আর একবার চোখে পড়ে। তবে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ভিক্ষা করলেও তারা সরকারী ভিক্ষুক। সরকারী অফিস আদালতে ফাইল প্রসেসিং সহ যেকোনো ধরনের কাজের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ হাত পেতে নির্লজ্জের মতো টাকা নিচ্ছে, মানে ভিক্ষা করছে।

এমনকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা (ভিক্ষা) নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের যারা কর্ণধর, যারা জনপ্রতিনিধি, আমাদের স্বপ্নের সফল রূপকার বলে দাবি করে থাকেন তাদের ভিক্ষা বৃত্তি আরো জোরাল এবং ভিক্ষার পরিমানও কল্পনাতীতভাবে বেশী। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি লাভের আশায় পূর্বতন ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দিচ্ছি। যাদের ভিক্ষার পরিমান ঐসব ভিক্ষুকদের খুশি করতে পারছে, তারাই কেবল এই বৃত্তি লাভের সুযোগ পাচ্ছে। তাইলে বুঝেন ঠেলা!! আমরা যদি একটু পর্যালোচনা করে দেখি তাহলে সহজেই অনুধাবন করতে পারব যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের যে যত বেশি উচু স্তরে আসীন আছেন, সে তত বেশি ভিক্ষাবৃত্তি নির্ভর।

তবে আমাদের দেশের সনাতন ভিক্ষুকরা অন্তত পকেটমার নয় (পকেটমারঃ না বলে গোপনে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া. এটা তাদের মহত্ত্ব, কিন্তু আধুনিক ও সরকারী ভিক্ষুকেরা অনেক ক্ষেত্রে পকেটমারও, তার অনেক নজির আমরা দেখছি। এখন প্রশ্ন হল, ভিক্ষা একটি ঘৃণ্য বৃত্তি হওয়া সত্ত্বেও কেন ক্ষনস্থায়ী সমৃদ্ধির আশায় আত্মসম্মানকে জলাঞ্জলি দিয়ে এই বৃত্তিকেই বেছে নিচ্ছি? যারা এই বৃত্তিকে স্বেচ্ছায় বরণ করে হাত পেতে বসে আছেন, তাদের জন্য রইল আমার সহস্র-কোটি দিক্কার, ভৎসনা। দূর হোক এই নির্লজ্জ ভিক্ষা বৃত্তি, নিজের কষ্টে সৎ পথে অর্জিত সম্মদই হোক আমাদের জীবনের একমাত্র সম্বল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.