বনের ধারে সে অপূর্ব মায়াময় বৈকালগুলি মিছামিছিই নামবে চিরদিন।
অবেলার ঘুম
খসস্ ...। শনিবারের পত্রিকাটা দরজার নিচ দিয়ে ঢুকল। একটা মেয়ে এসে পত্রিকাটা তুলে নিল। তার বয়স বড়জোর পনের।
হাসিমুখে পত্রিকাটা নিয়ে বিছানায় বসল মেয়েটা। তার প্রিয় নায়কের ছবি দিয়েছে পত্রিকায় – ছবিটা নিশ্চয় কেটে রাখবে সে। রাজনৈতিক খবরের পাতা উল্টে বিনোদন পাতা বের করল মেয়েটা। পাতাটা আগাগোড়া আধামুখস্থ করে পত্রিকাটা বন্ধ করল। তারপর হঠাৎ চমকে গিয়ে পত্রিকাটা আবার তুলে নিল, একদম মুখের কাছে।
-তিন্নি। নাস্তা করে নে।
মায়ের ডাক শুনে চমকে গেল তিন্নি।
পত্রিকাটা ভাঁজ করে নিজ বিছানার তোশকের নিচে ঢুকিয়ে রাখল ও।
-তোর মুখ এত কালো কেন?
-মাথা ব্যাথা।
ঝটপট বলল তিন্নি। বলেই মুখ নিচু করে ফেলল। হয়তোবা মায়ের কাছে মিথ্যে বলাটা লজ্জাজনক, তাই।
খাওয়া শেষে উঠতে গিয়ে তিন্নির হাত লেগে পানি পড়ে গেল এবং তিন্নির মা চেঁচিয়ে উঠলেন। খানিকবাদে দ্বিতীয়বার চিৎকার করলেন, কারণ পত্রিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
-মা, ব্যাবস্থা কি হবেই না? ওরা সবাই কালই কিনতে যাবে। আর এই একবারই তো মাত্র চাইলাম, মাত্র পাঁচশ টাকা। এইটুকু না দিলে ওদের কাছে আমার মান সম্মান থাকবে না।
-আমি বলব তোর বাবাকে।
তিন্নি চলে গেল।
কিন্তু ওর মা তাকিয়ে রইলেন মেয়ের যাবার দিকে। একটু ভয়ও লাগল তার। কারণ, পনের বছরের মেয়েদের নিয়ে মায়েরা দুশ্চিন্তা করবেই। এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক।
তিন্নি মাস্টার বেডের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল।
পাঁচমিনিট সে নড়তে পারল না। রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে বাবা-মার কথা শোনাটা ঠিক না এটুকু বোধ তার ছিল। কিন্তু হঠাৎ তার এমন অসহ্য লাগল যে দুম দুম করে দুটো কিল বসাল সে দরজায়।
-মা। মা।
আমার কিচ্ছু লাগবে না। টাকা দিলেও আমি নেব না। তুমি কথা বন্ধ কর।
নিজের রুমে চলে এল তিন্নি। রাগে ওর ঠোঁট কাঁপতে লাগল।
রাগ, অভিমান, অসহায়ত্ব আরও নানারকম জট পাকানো অনুভুতি।
পরদিন ফ্রেণ্ডরা ওর রুমের দরজা থেকে ফিরে গেল।
তিন্নি একা বসে রইল রুমে। ফ্রেণ্ডদের সাথে পহেলা বৈশাখের শাড়ি আর কেনা হল না। কি বলবে ও ফ্রেণ্ডদের? অপমানের শেষ থাকবে না ওর।
আরেকবার ঘুমানোর চেষ্টা করল সে –অন্তত এলোমেলো চিন্তা থেকে বাঁচতে পারবে।
-তুই সেদিন দেখা করলি না কেন?
-এটা নিয়ে কথা বলিস না তো। আম্মুর সাথে একটু চেঁচামেচি হয়েছিল, এই আর কি! আর জিজ্ঞাসা করিস না কিছু।
তিন্নি হাঁটতে লাগল। ও ওর ফ্রেণ্ডদের মধ্যে সবচেয়ে আস্তে হাঁটে।
তাই ওকে সবাই কচ্ছপ বলে। এরই মধ্যে বাকি চারজন বান্ধবীকে রেখে সানজিদা এগিয়ে গেছে অনেকটা।
হঠাৎ থামল তিন্নি। ওর মুখটা কালো হয়ে গেল।
-চল্, ব্যাক করি।
আসমার বাসায় একটু বসে আসি। মাথাব্যাথা করছে, আর হাঁটতে পারবো না।
সাথের বান্ধবী ওর হাত ধরল।
-একটু আগে বলতি। গলিটা পার হবার সময় বললেই হত।
চল।
আসমার বাসা থেকে যখন তিন্নি বাসায় ফিরল তখন বেলা তিনটা।
ঐদিন রাতে আরেকবার চেঁচামেচি হল তিন্নির বাসায়। তার বড়ভাই কম্পিউটার কিনতে চায়। ওদের বাবা রাজি হয়েছেন।
তিন্নির মা একজন সিক্স পাস মহিলা। কিন্তু ছেলের পড়াশুনার জন্য কম্পিউটার যে অপরিহার্য সেটা উনি তার হিসেবি স্বামীকে বুঝাতে পেরেছেন।
চেঁচামেচি শুনলে তিন্নির মাথা ধরে যায়। মেজাজ খারাপ হলেও মাথাব্যাথা করে ওর। আজও ব্যতিক্রম হল না।
ওর কাছে দুনিয়াটা অসহ্য মনে হচ্ছে। পড়াশুনার বই খাতায় আগুন দিতে মন চাইছে। আরো মন চাইছে একটা কাচের গ্লাস ভাঙতে। কিন্তু কিছুই করল না ও। কারণ, কিছু করলে রাগ ঝাড়ার পর ছাইপাশ অথবা কাচের গুড়া ওর নিজেরই পরিষ্কার করতে হতো।
পরদিন বেলা দশটায় ঘুম ভাঙল ওর।
রাতের মাথা ধরাটা যায়নি এখনও। টিভি দেখলে কেমন হয়? ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়ল তিন্নি।
উহ্, ভাইয়ার ফ্রেণ্ডরা এসেছে! ভাবল তিন্নি। এত বিশ্রি গন্ধ কেন? সিগারেট।
ছিটকে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ও। গিয়ে আবারও নিজের রুমে বসে পড়ল। উফ্। এই রুমটা এত বদ্ধ কেন। দম বন্ধ হয়ে আসছে তিন্নির।
রান্নাঘরে ওর ভাইয়ের গলা শোনা যাচ্ছে। সেমাইয়ের ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে।
ওদেরকে নিয়ে যাব। ওরা কম্পিউটার কিনেছে আগে –ভালো বলতে পারবে। তুমি তিন্নিকে বলোনাই যে ওরা এসচে।
গাধাটা রুমে গিয়ে আবার দুম করে বের হয়ে গেল। বেয়াদবটাকে তো লাই দিয়ে মাথায় তুলেছো; একটা সালাম না কিছু না-বের হয়ে গেল!
এটুকু শোনার পর তিন্নি আর মনোযোগ দিতে পারল না। ওর পেটের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে। বমি হতে পারে। তোশকের নিচ থেকে পত্রিকাটা বের করল তিন্নি।
এত বেশি বমি হল যে ওর মনে হল পরিপাকতন্ত্রটা বুঝি বা বেরিয়ে এসেছে।
একবার দম নিল ও। মা।
ছয়মাস বিভিন্ন জায়গায় দেখাবার পর তিন্নিকে মাদ্রাজ নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হল। এজন্য তিন্নির বাবাকে বড় অংকের ঋণ নিতে হতে পারে।
তিনি মেয়ের জন্য আলাদাভাবে কিছু জমাননি সম্ভবত।
মাদ্রাজে নেবার আগে একসপ্তাহের জন্য তিন্নিকে বাসায় আনা হল। কতদিন পরে তিন্নি তার বিছানাটা ছুঁয়ে দেখল? সাড়ে তিনমাস। দিন গুনেছে তিন্নি। হাসপাতালের দিনগুলো কাটতে চায় না; তাই শুধু দিন গোনা।
তারপরও নিজের রুমটা একটু বিশ্রি লাগছে। স্যালাইনের ব্যাগ ঝোলানো দেখেই কেমন খারাপ লাগে। স্যালাইনের ব্যাগের পাশে টানানো ওর নিজ হাতে আঁকা একটা ছবি। ক্লাস ফোরে থাকতে এঁকেছিল ও। একটা পরী দাঁড়িয়ে আছে পানির ওপর।
সেই জলপরীর চোখ বোঁজা। মুখে হাসি, মাথায় ফুলের মুকুট।
আনাড়ি হাতে আঁকা, কিন্তু এ ছবিটা এঁকে ও দ্বিতীয় পুরষ্কার পেয়েছিল। জানালার পাশে মানিপ্ল্যান্টটা শুকিয়ে গেছে। তারপরও খুব বেশি খারাপ লাগছে না।
নিজের রুম বলে কথা।
বিকেলে একগাদা ছেলেমেয়ে এল তিন্নিকে দেখতে, একজন স্যারও এলেন। দশ মিনিটের মত ওদের সাথে পার করল তিন্নি। তারপর হাঁপিয়ে গেল। গেস্টরা বিদায় নিল।
কিছুক্ষণ বাদে ওর ফ্রেণ্ডরা এল।
চারজন মেয়ে এবং একজন ছেলে।
-তোর জন্য গিফট এনেছি। পরে খুলবি।
কিন্তু একটা গিফট তখনই খুলতে হল।
ফুলের ছোট্ট তোড়া। সেটাকে পানিতে সাজিয়ে রাখার পর একটু কথা বলল ওরা।
-যাই রে। তিন্নির হাতটা ধরল সানজিদা। ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।
হালকা হাসল তিন্নি। কয়েকমাসে সয়ে গেছে –চট করে চোখে পানি আসে না। ফ্রেণ্ডরা বিদায় নিল।
দুপুরবেলা ঘুম ভাঙল ওর। অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছে ও।
মাথার পাশে রাখা ফুলগুলোর দিকে তাকালো ও। মা কোথায়? সব চুপ কেন? বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। ওহ্। মনে পড়ল ওর। মায়ের তো বাইরে যাবার কথা।
গিফটগুলো খুলল ও। কানের দুল আর শোপিস। সানজিদার দেয়া প্যাকেটটা খুলল ও। একটা বৈশাখি শাড়ি। ওপরে একটা খাম।
চিঠিটা পড়ল তিন্নি। পড়ল আর কাঁদল। এ বয়সের মেয়েরা যেমন মনের কথা বলতে দ্বিধা করে না, তেমনি কাঁদতেও দ্বিধা করে না। শাড়িটায় বাটিকের কাজ সানজিদা নিজ হাতে করেছে। আগামী বৈশাখে ওরা পরবে –একসাথে –কেউ বাদ যাবে না।
আর ফুলগুলোর কথা লেখা আছে। ‘ফুলগুলো কে দিয়েছে বুঝতে তো পারছিস। ওর বিদেশ যাওয়া ঠিক হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে চলে যাবে। ও এমনভাবে বলল যে ওর অনুরোধ না রেখে পারলাম না।
ওকে তোর বাসায় আনার জন্য রাগ করিস না। ’
তিন্নি আরো কাঁদল। হাঁপ ধরা পর্যন্ত। সাধারণত ও কাঁদতে পারে না। কাঁদলেই মুখ ফুলে একাকার।
কারও সামনে মুখ দেখান যায় না। এজন্যে কান্না করতে হয় রাতের বেলা। নদীর স্রোতের মত অশ্রু বয়ে যায় অথচ টু শব্দটি হয় না, পাড় ভিজে একাকার হয়; কিন্তু সকালের রোদে সেই কাদা শুকিয়ে যায়। পাড় ধরে হাঁটতে আর অসুবিধে হয় না। অবশ্য এখন মুখ ফুলে গেলেও অসুবিধে নেই।
মুখ তো ওর এমনিই ফুলে যায়। হাত-পা, সারা শরীর। সপ্তায় সপ্তায় দুবার, কখনও দিনে একবার।
উঠে দাঁড়াল তিন্নি। পড়ার টেবিলে বসে না কতদিন! আজ বসল।
একটু ছুঁয়ে দেখল টেবিলটা। কলম আর নোটপ্যাডটা বের করল।
অনেক্ষণ লিখল ও। অনেক অনেক লেখা। লেখার মাঝে কোন কাটাকাটি নেই, নেই কোন ওভাররাইটিং।
বারান্দার গ্রিলের মত সারি সারি লেখা।
কাগজগুলো ভাঁজ করে রুম থেকে বেরোল তিন্নি।
উহ্। হাতের স্যালাইনটা খোলা হয়নি। খুলল ও।
মা রাগ করবেন যদিও। অবশ্য খুব বেশি রাগ করবেন না, কারণ অসুস্থ মানুষের সাত খুন মাফ।
কাগজগুলো নিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকল ও। কম্পিউটার -টিভি দুটোই অফ। ভাইয়া ঘুমাচ্ছে।
পাশের রুমে ঢুকল ও। ভাইয়ের পড়ার টেবিলের তালা দেয়া ড্রয়ারে ঢুকালো কাগজগুলো। ফাঁকা দিয়ে ঢুকাতে গিয়ে কাগজগুলো দুমড়ে গেল খানিকটা। ফিরে এসে বসে রইল তিন্নি। শুতে ভয় লাগছে।
আর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে চায় না ও। ঘরের পর্দা ফেলা। লাল টকটকে পর্দা। সেই পর্দা দিয়ে আলো এসে পুরো রুমটা কেমন রক্তাভ হয়ে গেছে।
আয়নার সামনে দাঁড়াল তিন্নি।
চিরুনিটা তুলে আবার রেখে দিল। হাত কাঁপছে ওর। বাম হাত দিয়ে ডান হাতটা চেপে ধরল ও। লাভ হল না। দুটো হাতই কাঁপতে লাগল।
চুপচাপ শুয়ে পড়ল ও। চোখ বেয়ে পানি গড়াতে লাগল। আল্লাহ্ তুমি আমাকে সুস্থ করে দাও। ভেবেই হঠাৎ হাসি পেল ওর। এ দুনিয়ার সুস্থতা কে চায়! চোখের সামনে অনেকগুলো গোলাপ।
আস্তে চোখ বুঁজল ও। গোলাপগুলোর ঘ্রাণ ভাসতে লাগল বাতাসে।
২. দেখ ভাইয়া, আমি মাদ্রাজে যাবার আগে এই কথাগুলো বলতে চাই। কারণ পরে বলার সুযোগ নাও হতে পারে। পত্রিকায় মিছিলের মধ্যে আমি তোমার ছবি দেখেছি।
তুমি কি পড়া বাদ দিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছ? বাবা-মা কিন্তু ব্যাপারটা পছন্দ করবেন না। আর আমি এখন অসুস্থ। তোমার উচিত হবে না বিপদজনক কাজে জড়ানো। তাহলে বাবা -মা পাগল হয়ে যাবে। আমি তোমাকে নিষেধ করছি।
সব ভালো কাজ কোরো-কিন্তু এই রাজনীতি কোরো না। আরেকটা কথা। তোমার বন্ধু-সুমন ভাইয়াকে আমার পক্ষ থেকে সরি বলো। উনার সাথে কথা বলতে আমি সানজিদাকে মানা করেছি। আমি রাস্তায় তোমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম।
সুমন ভাইয়া তোমার সাইকেল নিয়ে সানজিদার রিকশার পিছু নিল কেন সেদিন? ও কিছুই জানত না-অথচ এজন্যে বাসায় মারও খেয়েছে। আরেকটা কথা, সেদিন আমি তোমার হাতে সিগারেট দেখেছি। আর সিগারেট খেও না; কম্পিউটারে বসে খারাপ কিছুও আর দেখো না। এগুলে খুব খারাপ নেশা। তোমার আর তোমার ফ্রেণ্ডদের ওপর বিতৃষ্ঞা জন্মেছিল বলে তোমার সাথে অনেক বেআদবি করেছি।
কিন্তু তোমরা ভালো হয়ে যেও-ঠিক মা যেমনটা চায়। বাবার মতো টাকা জমাতে গিয়ে সব হারিয়ো না। শুধু আর একটা কথা, আমার জন্ম হোক এটা নাকি বাবা চায়নি? এজন্যেই কি আমি তাড়াতাড়ি চলে যাব? তুমি এমন বাবা হয়ো না। ওহ্ আরেকটা কথা। বাকি কাগজগুলো পড়ো না প্লিজ।
সানজিদার হাতে ওর পাওনা কাগজটা দিও। ওখানে আরেকটা চিঠি আছে। ওটা অস্ট্রেলিয়ার ঠিকানায় পাঠাতে হবে। সানজিদা বললে ওকে সাহায্য করো। আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।
একটু ভয় লাগছে। তুমি তো এখন ঘুমাচ্ছো। ভালো হতো যদি একটা গল্প শোনাতে। আমার শাড়িটা খুব সুন্দর। আমার খুব শাড়ি পরতে মন চাইছে।
তুমি জান, আমার বান্ধবীরা কি বলে? বলে-জোড়া ভ্রু থাকে যাদের তাদের মনটা খুব ভালো হয়। তোমার জোড়া ভ্রুটা খুব ভালো লাগে আমার। আর লিখতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কথা ফুরাচ্ছে না। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
তোমাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আমি মারা যাবার পরপরই তুমি আমার জন্য তেলাওয়াত করবে। কারণ তুমি খুব সুন্দর তেলাওয়াত কর। আর বাসায় রোজা রেখেছো বলে বাইরে গিয়ে কোল্ড ড্রিংকস খাবে না। আমি তো বাবার দিকে কখনও নজর দেইনি –তুমি দিও।
দেখে রেখ বাবা-মাকে।
আমার মনে হয় আমার হাতে আর মাত্র একদিন আছে । তারপরও আমাকে মাদ্রাজ যেতে হবে।
যা হোক। চিঠিগুলো পৌঁছে দিও।
তোমাদের জন্য আমি আমার সব শুভকামনা রেখে গেলাম।
৩. প্লেনে ওঠানোর আগে তিন্নির কপালে চুমু খেল ওর ভাই। জোড়া ভ্রুটায় হাত বুলিয়ে দিল একবার। তার বোনটা এতো সুন্দর দেখতে!
তখন সন্ধ্যা নামে নামে। সূর্যের আলো নরম হয়ে আসছে।
রূপসী সন্ধ্যারাণী তখন কেবলই নীল শাড়ি পরেছেন; কিন্তু হঠাৎই তিনি ঘোমটা টেনে দিলেন। কারণ আজকের সন্ধ্যাকুমারী অচেতন হয়ে আছে। তার ঘুম না ভাঙলে উৎসবের সাজসজ্জা বৃথা।
পরদিন দুপুরে দ্রুত ড্রয়ার খোলা হল।
সেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজগুলোর ভাঁজও খুলে গেল।
কাগজে একটানা লেখা। বারান্দার রেলিং এর মত-সারি সারি। সেই রেলিং ধরে অসহায় মানুষের ক্রন্দন বৃষ্টি হয়ে নামল।
ভোরগুলো স্বপ্ন দেখায়, দুপুর বিশ্রাম দেয়, বিকেলগুলো হেসে ওঠে আর রাতগুলো কাঁদার জন্য অবসর খোঁজে। আর সন্ধ্যা! সন্ধ্যা বিকেলের হাসি আর রাতের কান্নাকে একাকার করে দেয়।
সেই সন্ধ্যা নামছে। বাটা মেহেদি হাত থেকে ঝরানোর পর মেহেদির রংটা যেমন মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায়, আর মসৃণ জ্বলজ্বলে লাল হয়ে থাকে – তেমনি করে সন্ধ্যা নামছে।
তাছাড়া এই আলোটা যে সন্ধ্যাকুমারীর জন্যে! তাই বুঝি আজকের সন্ধ্যা এত মায়াজড়ানো।
পনেরোর কিশোরীর মাঝে স্রষ্টা যে রূপ ঢেলে দেন তা বোঝার ক্ষমতাও ওদের থাকে না। ওরা ভোরের শিউলির মতন; শাখাছিন্ন করতেও হাত কাঁপে।
শিউলিফুল যদি নিজের রূপ বুঝতই তবে শুধু পুকুরের জলে নিজ রূপই দেখত, পথিকের হাতে ধরা দিত না। সন্ধ্যাকুমারী তেমনি হাসে, ঝরে পড়ে। প্রজাপতির মত ডানাও মেলে। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি।
সন্ধ্যারাণী পুরোপুরি লুকিয়ে পড়লেন।
রাত নেমেছে। ক্রন্দনের রাত। সে ক্রন্দনে নদীর স্রোতের মত নিঃশব্দ বেদনা বয়ে যায় নিরবধি, আর চোখের অশ্রু পড়ে বৃষ্টির মত টুপটাপ করে।
সেদিন রাতে ভীষণ বৃষ্টি হল। ঢাকা-মাদ্রাজ ভিজে এক হয়ে গেল।
পথের কালি মুছে দিতে সন্ধ্যার মেঘ আত্মাহুতি দিল বর্ষণে।
রিং বাজল।
-কখন?
-একটু আগে। তোকে একবার ডেকেছিল, তারপর আর...
রাত্রি তখন দ্বিপ্রহর। বৃষ্টি থেমে গেল।
তারপর হঠাৎই সব চুপ।
০৩ ডিসে’২০১০
(অনেকদিন পর ব্লগে আসলাম। সবাই কেমন আছেন?)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।