নিতান্তই আধুনিক শহুরে ছেলে আমি। প্রযুক্তির এ যুগে বসত গড়েছি আকাশচুম্বী সুরম্য অট্টালিকায়। যান্ত্রিকতায় খোলস বন্দি অভ্যস্ত নাগরিক জীবন আমাকে করেছে পাষান। সোঁদা মাটির টান ছেড়ে যবে আমি পদার্পন করেছি এই ব্যস্ত শহরটিতে, সেদিন থেকেই পিছু লেগেছে অপবাদ আর অভিশাপ । শহুরে জীবন আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে এঁদো পুকুরে ঝাঁপাঝাপি, সাতসকালে সরু আইল ধরে ক্রোশ তিনেকের পথ, আর ছুটির দিনে ঝাঁপি মাথায় হাটের বিকিকিনি।
আমি ভুলে গেছি স্কুল পালিয়ে চায়ের দোকানে বসে বাঙলা সিনেমার আটার বস্তার গল্প কিংবা একাকী বিকেলে মেঘনার উত্তাল গর্জনের সুরে সুর মেলানোর গল্প। শ্যামলাবরণ সাদাসিধে মায়ের মুখটি ক্ ক্ষনিকের জন্য ভেসে উঠে মনের পর্দায়, কিন্তু বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড আমাকে ভুলিয়ে দেয় তাঁর আঁচল। তবে আমার সবচেয়ে বড় দোষ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে আমি ঈশ্বরকে ভুলে গেছি। আমি মসজিদ, মন্দিরে যাই না বলে ঘরে ঢুকলেই শুনতে হয় আমি নাস্তিক, আমি ঈশ্বরবিবাদী। আমি পাড়ার হুজুর কিংবা শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতের পান্ডিত্যের বিন্দুমাত্র সম্মান দেই না বলে আমি বেয়াদব, কুলাঙ্গার।
আমি জুম্মা ছাড়া আর এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি না, কখনো আলসেমীতে সে জুম্মাও কাযা করে ফেলি। ঘরের পাশে অষ্টপ্রহর কীর্তনে খোল করতাল নিয়ে নাচি না বলে আমার কত বদনাম। ফতোয়া আর মন্ত্র মানি না বলে বারবার এলাকায় নিষিদ্ধ হয়েছি আমি । নোংরা সামাজিকতাকে আইনের জোরে থামিয়ে দিয়েছি বলে গোষ্ঠী শুদ্ধ আমাকে ভিটে মাটি ছাড়া করেছে গ্রামের সুশীল সমাজ। তাদের কাছে শহুরে জীবন মানেই নোংরামি আর অশ্লীলতা।
ঘড়ির কাটা ধরে চলা চলমান জীবনের কষ্টের গল্পটা শোনার সময়ই যে নেই তাদের! অথচ আজ মেয়ের বিয়ে তো কাল মসজিদ হবে, মন্দির হবে - কত বাহানায় হাত পেতে বসে তারা। মাটির টানে আত্মহারা হয়ে শত অপবাদ বুকে চেপে দু হাত উজার করে যথাসম্ভব সাহায্য করি। খুশিতে টগবগ করতে করতে গুনকীর্তনের ঝর্ণাধারায় সিক্ত করে ফিরে চলে গ্রামে। কিন্তু কোথায় মসজিদ, কোথায় মন্দির ! খবর নিয়ে জানতে পারি সে টাকার পুরোটাই ওনি লাগিয়েছে দু নম্বরি ব্যবসায় ! শহুরে মানুষটাকে ভালোবাসার অপরাধে সদ্যই কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা ফেলা মেয়েটিকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ৫৫ বছরের বেকার মদ্যপ এক বুড়োর কাছে। হাজারো কষ্ট নিয়ে এভাবেই বেঁচে থাকি আমি।
আমি এক নিতান্তই আধুনিক শহুরে ছেলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।