আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংশপ্তক

আমার খুব কষ্ট হয়, যখন RAJAKAR বানানটা বাংলা বর্ণমালায় লিখা হয়। এটা বর্ণমালার জন্য অপমান।

আমার দরিদ্র ঘরটা ওদেরকে দিয়েই সাজিয়েছি। কারণ, আমার কাছে ফুল কিংবা ফুলদানি কেনার পয়সা ছিলনা। বইয়ের মলাটের উপর যে ছবিটা আছে নদী কিংবা রাজপথের, আমার কাছে বরং ওই ফুল গুলোই সত্যি মনে হয়।

এক একটি ছবি আমার সাথে কথা বলে-ঠিক যেমন করে কথা বলে আমার বাবা । ওরা চুপি চুপি নয়, সদর্পে আসে, কথা বলে আমার সাথে। হাসে। গল্প করে। আমি যে মাটিতে হাঁটি, সেই মাটি ওদের তৈরি করে দেয়া।

এই যে আমি বলি 'আমার দেশ', ওরা না থাকলে কি বলতে পারতাম? আমার দৈনন্দিন জীবন ওদেরকে নিয়েই। ওইযে টেবিলে রাখা আরেক ফাল্গুণ। ওখানে শেষে যে কথাটি লিখা আছে- 'এতেই ঘাবড়ে গেলেন দাদা? আসছে ফাল্গুণে আমরা দ্বিগুণ হব'। এই কথাটি পড়ে আমার ভেতর কেমন যেন তোলপার হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ঘুমাতে পারিনি।

মাথার ভেতর ঘুরছিল কথাটা। অদ্ভুত! সারারাত রাস্তায় হেঁটেছিলাম। কি অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁদের। ৬৯ এ লিখা কিছু কথা এখনো ছুঁয়ে যায় আত্মার অনুভূতিকে। ওই বইটিতে লিখা ছিল 'নিশ্চিত পরাজয় জেনেও যে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যায়; সে-ই সংশপ্তক।

'। ১৯৬৪ সালে লিখার সময় তিনি কি ভেবেছিলেন, ৭ বছর বাদে তিনিই সংশপ্তক হতে চলেছেন! হ্যাঁ, তিনি লড়াই করেছিলেন শেষ পর্যন্ত। জিতিয়ে দিয়েছেন আমাদের। নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করেই। আমার বাড়িটা সূর্য দীঘল বাড়ি।

এখানে সূর্য ওঠে অন্য রকম আনন্দ নিয়ে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার মুখ দেখতে পাই। এই আনন্দ আমার অসীম! একুশের কবিতা আমাকে ভাবতে শেখায়, মুক্তির গান আমাকে পথ দেখায়, ১৪ ডিসেম্বর আমাকে দেশাত্ববোধ শেখায়। আর মুক্তিযোদ্ধারাঁ আমার হাসি মুখের অবলম্বন। তাই আমার দিন কাটে ওদের নিয়েই।

আরেক ফাল্গুণ, সংশপ্তক, একুশের কবিতা, সূর্য দীঘল বাড়ি, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ওরা ১১ জন, আরো কত কি আমার ঘরে। যেদিকে তাকাই-সেখানেই। বোকার দল ওদের হত্যা করার সময় এটা বোঝেনি-'কর্তা হত্যা করা যায়, কীর্তি নয়। অবিনশ্বর অমরত্ব দিয়ে নিজেদের তৈরি করেছেন ওঁরা। এতো সহজেই মেরে ফেলা যায়! পারেনি।

সেই সব নরপশুরা পারেনি ওদেরকে মুছে ফেলতে। এইতো আমরা আছি। জহির রায়হান বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে। এই যে তাঁর লিখা বই আমি ছুঁয়ে দেখছি-তিনি নিজে হাতে লিখেছিলেন এটা। 'সময়ের প্রয়োজনে'।

শহীদুল্লাহ কায়সার, একজন সংশপ্তক পুরুষ। বেঁচে আছেন। এইতো, আমার হাতেই আছে 'সারেং বউ'। লাল সালু ছিঁড়ে তা দিয়ে তিনি বানিয়েছিলেন পতাকার লাল রঙ। তাঁকে মেরে কি লাভ হল তোদের 'মজিদের' দল? আমার দেশের পতাকার লাল রঙ স্যালুট না দিয়ে বাঁচতে পারবি? নিজের কবর হবার আগেই তোদের 'কবর' রচনা করেছিলেন মুনির চৌধুরী।

হায়! এখানেও তোরা পেছনে পড়ে আছিস! যার ভাবনা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিসনি, তাঁকে মেরে নিজেদের কবরটাও তো ঢাকতে পারিসনি! এইতো মুনির চৌধুরী আমার পড়ার টেবিলে। আমার দরিদ্র ঘর আলো করে আছেন। আজকে যারা আস্ফালন করছিস শকুনের দল, আমাদের সঙ্গে তফাৎ তোদের যোজন যোজন। বৃথা আস্ফালন করিসনা। তোরা দিনে দিনে ফুরিয়ে যাবি-যেমন ফুরিয়ে গেছে RAJAKAR-এর দল।

ঘৃণা আর অসম্মানের ঘানি তোদের টানতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তারপর একদিন তোরা উধাও হয়ে যাবি। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবি। নিজের খাদ্য হয়ে যাবি তোরা। বেঁচে থাকবে এই বই গুলো।

এই মানুষ গুলো। তাঁদের কীর্তিগুলো। বেঁচে আছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আজীবন থাকবেন। যেমন, আমরা থাকব।

এবং প্রতি ফাল্গুণে দ্বিগুণ হব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।