বাঙলার ইতিহাসে বেঈমান-দুশমনের কদাচ আভাব হয় নাই। বখতিয়ার খলজী যখন লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী নদিয়া আক্রমণ করিয়াছিলেন, তখন, শোনা যায়, কে বা কাহারা রাজবাড়ির সদর দরজা খুলিয়া দিয়াছিলো। ইহা তাহাদের বুঝিবার অক্ষমতা না তাহাদের পকেটে কিছু গিয়াছিলো, তাহা আজ এত বছর পর আর সঠিক বলিতে পারি না। সুলতানী আমলেও ইতিহাস ঐরূপ চলিতা লাগিলো—বিশ্বাসঘাতকতা আর হত্যার সে এক ন্যাক্কারজনক অধ্যায়। ইহার পরে আসিলো ১৭৫৭।
পলাশীর আম্রকাননেও মীর জাফরের সাঙ্গ-পাঙ্গ আর চ্যালা-চামুন্ডের কমতি হয় নাই। ঠিক তাহার একশত বতসর পরেই শুরু হইলো ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম। কিন্তু তথায়ও দেখিতে পাই, একশ্রেণীর দেশীয় বেনীয়া-মুতসুদ্দি— হিদুঁ-মুছলমান উভয়ই —ইংরাজের সহিত হাত মিলাইয়া বিপ্লবকে পিছন হইতে ছুরি মারিলো। ইহাদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ সহ অনেক রথী-মহারথী রহিয়াছেন। এর দশ-কম-একশত বতসর পর পুনরায় ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়িয়া শুরু হইলো আর এক ডামাডোল—দেশভাগ।
এবারো কুমতিধারী লোক অনেক মিলিলো। যাহারা ১৯০৫-১৯১১ সনে বাঙলাকে দুই প্রদেশে ভাগ করা হইয়াছে বলিয়া ক্ষোভে অন্ন-জল স্পর্শ করা রদ করিয়াছিলেন, তাহাদেরই একটি অংশ মারোয়াড়ীদিগের টাকায় আর হিন্দু মহাসভার প্ররোচনায় একেবারে স্থায়ী রূপে বঙ্গমাতার অঙ্গহানী করিবার নিমিত্তে আদা-জল খাইয়া লাগিলেন। উহার পর ’৫২ তে নাজিমুদ্দিন-নূরুল আমিনের গাদ্দারী, ’৬০ এর দশকে মোনেম খানের মোনাফেকি, আর ’৭১ এ জামায়াত-এ-এসলামি-মুসলিম লীগে-নেজাম-এ-এসলামের দেশদ্রোহীতা স্বচক্ষে দেখিয়াছেন এরূপ জীবিত বান্দা তো অদ্যবধি আকছার মিলিবে। ’৭৪-’৭৫-’৭৯-’৮২-’৮৬-’৯৬-’২০০১-’০৭ ইত্যাদি বতসরের কথা নাহয় নাই পাড়িলাম; পাঁক ঘাটিয়া দুর্গন্ধ বাড়াইয়া কি লাভ? এইবারো শাহবাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইবার লোকের কোনো অভাব পড়িবে না। ইহারা আন্দোলনকে ভেতর হইতে অন্তর্ঘাত করিতে চাহিবে, বাহির হইতে চাপ প্রয়োগ করিবে, চলিবে প্রকাশ্যে-গোপনে আতাঁত আর সংগ্রামের ফসল ছিনতাই করিবার অপচেষ্টা।
ইহা নিয়া রাজনীতি, দর কষাকষি, হিসাব-নিকাশ, আর অপপ্রচারের কোনো লাগাম দেখিতেছিনা। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই ইহার ভেতরই ধর্মের সেই পুরাতন আফিমে বুঁদ হইয়া, বা ধর্ম-ব্যবসায়ীর ঘুলঘুলাইয়াতে পথ হারাইয়া, বা কম্যুনিস্ট কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতি আদি বিদ্বেষ বশত, অথবা বিএনপি’র অন্ধ আনুগত্য-হেতু এই মহত জাগরণকে পিঠ দেখাইয়াছেন দেখিতে পাইতেছি। তথাপি, মোদ্দা কথা এই যে, এই প্রায়-বিপ্লবকে যদিবা সঠিক হস্তে হাল-মাস্তুল ধরিয়া রাখিয়া যুদ্ধাপোরাধীদের ন্যায় বিচারের পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির জীবনে এক নবচেতনার উন্মেষ ঘটাইবার কার্যে না লাগানো যায়, তাহা হইলে এইবারো পূর্বের বহুবারের মতনই আন্দোলনের লাভের গুড় ডেয়ো-পিঁপড়ায় খাইয়া যাইতে পারে। তারুণ্য, পকেটমারদীগের ব্যাপারে তাই সাবধান।
২৬/০২/১৩ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।