চুপ!
মাটির তলার ঐশ্বর্যের দিকে বিস্মিত দৃষ্টি নতুন প্রজন্মের
জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে উয়ারী-বটেশ্বরে পুনরায় শুরু হয়েছে খনন-কার্য!আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারী এর আনুষ্ঠানিক উদবোধন। যে কোনদিন ঘুরে আসতে পারেন এই প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক সভ্যতা থেকে। অনেক ব্লগার যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের জন্যে এ তথ্য সংযোজন!
শেকড়ের সন্ধানে ১ এ মূলত ছবি দিয়েছিলাম আমার এলাকার এক পুরনো জমিদার বাড়ীর, প্রচেষ্টা ছিল এলাকার ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছু জানা তার স্থাপত্যের মাধ্যমে, অথচ আশ্চর্যজনক আমার জেলার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য- এক প্রাচীন সভ্যতার উৎপত্তিস্থল উয়ারী-বটেশ্বর নিয়েই কিছু বললাম না এতদিনে। তা তো হবেই- ওই জেলাতে বড় হয়েও এই স্থানটির সাথে পরিচিত হতে আমার নিজেরই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল।
খুব সম্ভবত ২০০০ সাল, উয়ারী-বটেশ্বরের অফিসিয়াল খনন শুরু হওয়ার পর একদিন টিভিতে দেখছিলাম হাবীবুল্লাহ পাঠান আর তার ছোট্ট মিউজিয়াম, অবাকই হলাম জানি না কিছুই অথচ আমার বাড়ীর এত কাছে! তারপর ভুলেই গিয়েছিলাম, ২০০৮ সালে ৫ম বর্ষে সেমিনার কোর্সে আমার হঠাৎই মাথায় আসল- সেমিনার করব উয়ারী-বটেশ্বরের স্থাপতিক তাৎপর্য নিয়ে; তখনো পর্যন্ত শুধু জানি এটা একটা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, খনন কাজ চলছে- আদৌ এখানে কোন স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া গেছে কি না জানি না অথবা যা পাওয়া গেছে তা কি শুধুই প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য নাকি স্থাপতিক গুরুত্বও আছে!- তাও বলা যাচ্ছে না, এটা নিয়ে সেমিনার করা মানে অনিশ্চয়তায় তার থেকেও বলা ভাল আগুনে ঝাঁপ দেওয়া; আর আগুনে ঝাঁপ দিতে আমার বরাবরই চরম আগ্রহ!
যাই হোক, সেবারই প্রথম কথা হয় সূফী মুস্তাফিজুর রহমান স্যার ওরফে লাল স্যার এবং তার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের টিমের সঙ্গে, কথা হয় ডেপুটি টিম লীডার মিজান ভাইয়ের সঙ্গে।
ওরাও স্থপতিদের অংশগ্রহণ চাচ্ছিলেন কিন্তু তখনো পর্যন্ত খননকৃত আবিষ্কার স্থপতিদের আকৃষ্ট করতে পারে নি। তখনো পর্যন্ত পাওয়া যায় অনেক রকমের পুঁতি (অদ্ভুত সুন্দর সব পুঁতি আর ভীষণ ভালো রকমের রঙ ও ফিনিশিং), মুদ্রা,তাবিজ- ধারণা করা হয় প্রাচীন কোন জনপদের রাজধানী ছিল এই স্থান, সমতট বলেন কেউ কেউ। একটা দুই প্রাচীরবিশিষ্ট দুর্গনগরীর নিদর্শন পাওয়া যায়, সাথে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরী রাস্তা, লেন ও বাই লেন এক অজানা শহরের কথা বলে! গর্ত বসতির সন্ধান ইতিহাসবিদদের চিন্তায় ফেলে দেয় আর অনেককে মাথা খুঁড়ে মরতে হয় সেই ইনভার্টেড ইটের স্থাপনার ব্যবহার জানার চেষ্টায়!
হরেক রকম পুতিঁ
তাবিজ
চুন-সুরকির রাস্তা
গর্ত বসতি (ছোটবেলায় কত্ত pit dwelling এর গল্প পড়েছিলাম সমাজ বইয়ে)
উয়ারী-বটেশ্বর যাওয়া খুব সোজা, সময়ও খুব কম লাগে। সায়দাবাদ থেকে ভৈরবগামী যে কোন বাসে চড়ে নেমে পড়বেন মরজাল বাজারে, তারপর সেখান থেকে রিকশায়- সবাই জানে খননকার্য কোথায় চলে; তবে আগে থেকে অবশ্যই জেনে যাবেন খননকার্য শুরু হয়েছে কী না- নইলে মাটির তলার ঐশ্বর্য না দেখে মাটির উপর থেকেই ফিরে আসতে হবে!
সেমিনারের পর আর যোগাযোগ করা হয় নি, ব্যস্ততা আর অকৃতজ্ঞতাও বটে! আমার সেমিনার পেপারের একটা কপি দেওয়ার কথা ছিল- সেই সময়টুকুও বের করতে পারি নি। কিন্তু অদ্ভুতভাবেই প্রায় সকালে জগিং এর সময় দেখা হত লাল স্যারের সাথে, নীলক্ষেতে মোড়ে স্যার জা বি এর বাসের জন্যে অপেক্ষা করার সময়।
তখনই একদিন স্যার বললেন নতুন খননকৃত লোটাস টেম্পল ঘুরে দেখে আসতে; মিজান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলাম। প্রত্যেক উইক এন্ডে যাব যাব করে যাওয়া হচ্ছিল না- শেষ পর্যন্ত যখন মিজান ভাই জানালেন এবার উনাদের খনি ঢেকে ফেলার সময় এসেছে, আর দেরী করার সাহস পেলাম না; ওই উইক এন্ডেই বাড়ী যাওয়ার পথে আবারো গেলাম সেই ঐশ্বর্যের দর্শন লাভে!architectural conservation নিয়ে আমার আগ্রহ থাকলেও specialization না থাকায় মিজান ভাইয়ের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারছিলাম না, নিজের মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে ফিরে আসলাম।
প্রথম ধাপঃ বৌদ্ধ মন্দিরের প্রদক্ষিণ পথ
মন্দিরের বেদী
বর্গাকৃতি মন্দিরের দুই বাহু
দ্বিতীয় ধাপঃ পদ্ম (লোটাস)
প্রবশ বারান্দা
তৃতীয় ধাপঃ এখনো জানা যায় নি
শীতকাল চলে এসেছে, কিছুদিনের মধ্যেই আবার শুরু হবে খননকার্য! ঘুরে আসুন এই প্রাচীন সভ্যতার অবশেষ থেকে- এর তাৎপর্য কতটুকু বোঝা যাবে জানি না, তবে এই শীতে গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, একেবারে পয়সা উসুল ভ্রমণ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।