চক্ষু মেলিয়া তাকানোর পর থেকে খালি বাঁদরামি করি যাহা দেখি সবই নয়া লাগে , , পাখির মতো মন হলেও,কলিজা বাঘের মতো , মানুষের মতো খালি দেখতে তে তে তে ১০ মে , ২০১২ ইং , ভার্সিটির চাপে অবস্থা বেগতিক । বেশ কিছু দিন ধরেই রুটিন জীবন যাপন করছি । ঢাকার আশেপাশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য মনটা আনচান করছিল । রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম কাল উয়ারী- বটেশ্বর দেখতে যাব । দু-এক জনকে আমন্ত্রণ জানালেও ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে রবি ঠাকুরের একটা গানের লাইন মনে পড়ল " যদি তোর ডাক শুনে কেও ........... "
দেয়ালে টাঙ্গানো বাংলাদেশের ম্যাপ খানা দেখলাম , আর হাতে নিলাম দেখুন বাংলাদেশ বইটি ।
সকালে আসলাম কমলাপুরের বিআরটিসি কাউন্তারে । টিকেট কেটে বসে আছি বাস গুলো বেশ কিছুদিন বের হয়েছে , তবে সিট গুলান মাশাল্লাহ , একবার বসলে আর নড়াচড়া করার উপায় থাকে না । মজার ব্যাপার হল , চায়নার তৈরি এই বাস গুলোতে ব্যাগ রাখার জন্য ভেতরে বা বাইরে কোন ব্যবস্থা নেই , , মহা সমস্যায় পড়ে ছিলাম বগুড়া থেকে আসার সময় । যাই হোক , মরার উপর খাড়ার ঘা , বাসে উঠে দেখলাম সবার পিছনের ৬টি সিট থাকে ওখানের একটিতে আমার সিট কি আর করার বসলাম , আর এবার ভাবনা পালটালাম এইভাবে - পিছনে আর একটু উপরে সিট তো ভালোই হয়েছে , বাসের সবাইকে দেখা যাচ্ছে
কিভাবে যাবেন :
গন্তব্য নরসিংদীর , মরজাল বাস স্ট্যান্ড ।
কমলাপুর BRTC বাস স্ট্যান্ড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী এসি বাসে করে মরজাল যেতে পারেন , ভাড়া ১৫০ টাকা ।
BRTC বাস কাউন্তারের উল্টা দিকে রাস্তার পাশে নরসিংদীগামী বাস পাবেন , কিন্তু নামতে হবে ভেলানগর । ভেলানগর থেকে টেম্পু করে মরজাল যেতে ১৫ টাকা লাগবে ।
মহাখালি থেকে নন এসি বাস পাবেন ১০০ টাকা মরজাল পর্যন্ত । এছাড়া সিলেটগামী যেকোনো বাস মরজাল হয়ে যায় । যেটাতেই যান না কেন মরজাল যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করে নিন
মরজাল নেমে অটো রিকশা ঠিক করুন - -
মরজাল বাস স্ট্যান্ড > বটেশ্বর ( যেখানে মাটি খুঁড়া হয় ) > হাবিবুল্লাহ পাঠান সাহেবের বাড়ি > মরজাল বাস স্ট্যান্ড = ২০০ টাকা সর্বাধিক ।
কি দেখবেন :
জায়গা ১ : মরজাল থেকে বটেশ্বর খোঁড়াখুঁড়ির জায়গা
জায়গা ২ : খোঁড়াখুঁড়ির জায়গা থেকে হাবিবুল্লাহ পাঠানের বাড়িতে তার সংগ্রহশালা দেখা ।
( ২ টা কিন্তু আলাদা জায়গা , খোঁড়াখুঁড়ি মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে গর্ত গুলো বন্ধ থাকে তবুও দেখে আসেন । হাবিবুল্লাহ পাঠান সাহেবের বাড়ি না গেলে মাটি খুঁড়ে পাওয়া জিনিস দেখতে পাবেন না । এলাকার সবাই চিনে তার বাড়ি , রিকশাওয়ালা না চিনলে , আশেপাশের মানুষ থেকে জিজ্ঞসা করুন । )
ঢাকা নরসিংদী দূরত্ব ৪৬ কিমি , নরসিংদী থেকে মরজাল ২৪ কিমি , মরজাল থেকে উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামের দূরত্ব ৫-৬ কিমি ।
ঘণ্টা ২ আর মধ্যে পৌঁছে গেলাম মরজাল । নেমেই দেখতে পেলাম সাইনবোর্ড - - আশ্বস্ত হলাম , যাক ঠিক জায়গায় এসেছি
>
এবার একটা রিক্সা ঠিক করলাম । রিক্সা ওয়ালা বেশ ভালোই , ফ্রেন্ডলি , উদ্যম ও উৎসাহে পরিপূর্ণ
হালকা ইতিহাস :
উয়ারী ও বটেশ্বর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন একটি দুর্গ-নগর । সম্প্রতি মনে করা হচ্ছে উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমী বর্ণিত বাণিজ্যকেন্দ্র সউনাগড়া বা গাঙ্গে । উয়ারী ও বটেশ্বর একটি প্রাচীন জনপদের রাজধানি , একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি নগর সভ্যতা ।
প্রাকৃতিক নদী ছাড়াও মূল দুর্গ নগরকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়েছিল ৫.৮ কিমি দীর্ঘ অসম রাজার গড় নামে ২য় একটি বৃহদাকার নিরাপত্তা বেস্তনি ও পরিখা । নগর প্রাচীরের বিভিন্ন অংশে ছিল একাধিক প্রবেশদ্বার , যা প্রশস্ত রাস্তার মাধ্যমে সমগ্র নগরে বিস্তৃত ছিল । প্রত্নতাত্ত্বিক খননে দুর্গ-প্রাচীরের গোঁড়া থেকে একটি ৬ মিটার চওড়া রাস্তার সন্ধান পাওয়া যায় । এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৬০ মিটার রাস্তা সহ ২.১ মিটার চওড়া , ৩১ মিটার লম্বা একটি পার্শ্ব রাস্তাও আবিষ্কৃত হয় ।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে উয়ারী গ্রামের একদল শ্রমিক মাটি খননকালে একটি পাত্রে সঞ্চিত কিছু রৌপ্য মুদ্রা পায়।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিলো বঙ্গভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা। এ বিষয়ে তৎকালীন সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকাতে "প্রাচীন মুদ্রা প্রাপ্তি" শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। জনাব পাঠান এবং তাঁর ছেলে জনাব হাবিবুল্লা পাঠান তখন থেকে এই এলাকার বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে হাত দেন। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে এই অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব-রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, স্বল্প-মূল্যবান পাথর, কাচের পুঁতি এবং উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা।
এই খনন ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে উল্টো-পিরামিড আকৃতির স্থাপত্যকর্ম। প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল এই দুর্গটি এটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরানো। এই অঞ্চলে প্রাপ্ত কিছু বস্তুর কার্বন-১৪ পরীক্ষার প্রেক্ষিতে ধারণা করা হয় – উয়ারীর বসতির সময় ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ। ২০০০ সাল থেকে সুফি মোস্তাজিফুর রহমানের নেতৃত্ব এ এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালিত হয় । প্রত্নতাত্ত্বিক খনন একটি জটিল, সময়সাপেক্ষ , ব্যয়বহুল , এবং যৌথ প্রয়াস ভিত্তিক কাজ ।
তাই বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছে সহযোগিতা করতে , যেমন - -
* ২০০০ সালে - বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র
* ২০০২ সালে - দ্যা ডেইলি স্টার
* ২০০৪ সালে - এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ
* ২০০৫ সালে - ক্যাপ্টেন ইমাম আনোয়ার হোসেন
* ২০০৬ ও ২০০৭ সালে - গ্রামীণ ফোন
* ২০০৮ সালে - অধ্যাপক সানজীদা খাতুন ও প্রাইম ব্যাংক
* ২০০৯ সালে - সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও ময়নুল আবেদিন
* ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে নবম ধাপের খনন কাজ শুরু হয়। এই সময় উয়ারী থেকে চার কিলোমিটার দূরে, শিবপুর উপজেলায় ধুপিরটেকে আবিষ্কৃত হয়েছে – একটি বৌদ্ধমন্দির। এই মন্দির চত্বরে আটটি পাপড়িযুক্ত একটি পদ্ম প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই কারণে এই মন্দিরটিকে বৌদ্ধ পদ্মমন্দির বলা হয়। ধারণা করা হয়, এই মন্দিরটি প্রায় ১,৪০০ বছর আগের ইটে নির্মিত হয়েছিল।
প্রাচীন এই মন্দিরটি বর্গাকার (১০.৬ মিটার x ১০.৬ মিটার)। এর দেয়াল কাদামাটির গাঁথুনির ।
এবার কিছু ফটু দেখেন
জেলা পরিষদ
মরজালে নামলে দেখবেন এই সাইনবোর্ড
পথে , রাস্তাটা বেশ সুন্দর ও আরামদায়ক , , গাছপালায় ভরা , , ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা সি আরাম
রিক্সা করে পোঁছে গেলাম খোঁড়াখুঁড়ির এই স্থানে , , বছরে নির্দিষ্ট সময়ে এইখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলে , এর পর এবার সব মাটি চাপা দিয়ে দেয়া হয় । তাই বুক ভরা আশা নিয়ে গিয়ে হতাশ হলাম , তবে একটু কম কারণ রিক্সাওয়ালা আগেই বলে দিয়েছিল
খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বন্ধ , তাই নিজের পরিশ্রম একটু কম হল , ভাবসিলাম নিজেই খুঁড়ে বের করব সব
এইখানে আর দেখার মত তেমন কিছুই নেই , এবার মিশন হাবিবুল্লাহ পাঠান সাহেবের বাড়ি , দাওয়াত নারে ভাই , সেই খানে তার একটা ছোট সংগ্রহশালা আছে , , ওইটার খোঁজেই রউনা । চোখ রাখুন আগামী পর্বে
>> বানানভুল মার্জনা করবেন , তথ্য সকল সংগৃহীত ।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।