বাংলাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণীতে লটারীর মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৻ তবে দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি হবে পরীক্ষার মাধ্যমেই।
এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যে শিশু শিক্ষাজীবন শুরুই করেনি তাকে ভর্তি পরীক্ষায় বসানোর কোন যুক্তি নেই৻ উন্মুক্ত লটারীর মাধ্যমে ভর্তি করার কারণে, এক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো সম্ভব হবে না বলে মন্ত্রী মনে করছেন৻
মাধ্যমিক স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা রাজধানী ঢাকায় ১৩টি এবং এই স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণীতে মোট আসন সংখ্যা ১,৫০০। সারাদেশে এধরনের বিদ্যালয়ের সংখ্যা সম্পর্কে কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে বলতে না পারলেও নিশ্চিত করেছেন যে এই সংখ্যা খুব বেশী হবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে যে এই বিদ্যালয়গুলো মানসম্মত হওয়ার কারণে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একটি আসনের বিপরীতে ৫০টি শিশুও প্রতিযোগিতা করে।
প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্যেই প্রথম শ্রেণীতে লটারীর মাধ্যমে ভর্তি করা হবে
নূরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্যেই প্রথম শ্রেণীতে লটারীর মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। তিনি বলেন, এই ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি সঠিক নয় এই কারণে যে তখন তো বাচ্চা স্কুলেই যায় নি, পড়ালেখাই কর নি, সে কি পরীক্ষা দেবে?
মিঃ নাহিদের দ্বিতীয় যুক্তি হলো, এই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রাইভেট টিউটররা অনেক টাকা নিয়ে, বাচ্চাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একটা সমস্যা তৈরী করছে, আর সেই কারণে একটা জনমত গড়ে উঠেছে যে ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারী পদ্ধতি চালু করা হোক।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের কারণে মেধাবী শিশুরা মানসম্মত সরকারী স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে কম মানসম্মত স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন যে তা হতেই পারে। তিনি বলেন, মানসম্মত স্কুলে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হলে সেক্ষেত্রেও অনেক মেধাবী শিশু চান্স নাও পেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা চাইবো মানসম্মত স্কুলে কম মেধাবী শিশুরাও পড়ুক এবং তারা মানসম্মত স্কুলের সুবিধা গ্রহণ করুক।
শুধুমাত্র মানসম্মতরা এক জায়গায় পড়বে, আর কম মানসম্মত দরিদ্র শিশুরা খারাপ স্কুলে পড়বে, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নূরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী
“শুধুমাত্র মানসম্মতরা এক জায়গায় পড়বে, আর কম মানসম্মত দরিদ্র শিশু – যারা প্রাইভেট টিউটর রাখতে পারেনি – তারা খারাপ স্কুলে পড়বে, এই ধরনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। “
তিনি বলেন, অনেকেই বলেন এলাকা-ভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত করার জন্যে, যেমনটা অনেক দেশেই আছে। এতে করে যানজট, টাকা-পয়সা খরচ, ভীড় ইত্যাদি কমে যাবে।
কিন্তু যেহেতু আমাদের মানসম্মত স্কুলের সংখ্যা কম, তাই এই পরামর্শ এখনো গ্রহণ করিনি। সরকারী স্কুলগুলোতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্যে কোটা রয়েছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে ভর্তি করেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেন যে এধরনের অনিয়ম হতে পারে, তবে উন্মুক্ত লটারীর কারণে ভর্তির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের বলে দিয়েছি যে অন্যায় কোন তদবির গ্রহন করবেন না, যদি করা হয় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান যে কোটা ছাড়া প্রথম শ্রেণীর অন্য আসনগুলোতে উন্মুক্ত লটারী হবে এবং সেখানেই নাম ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন যে লটারীর মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির পদ্ধতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, কারণে এসব স্কুলে ভর্তির চাপ কম। আর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্যে অনেক বেসরকারী স্কুল এরই মধ্যে লটারী পদ্ধতি চালু করেছে বলে মিঃ নাহিদ জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।