কতোকী করার আছে বাকী...
এক।
সকালবেলায় নীলাভ্র এেসে বলল, এসব কি শুরু করেছ তোমরা ?
যেখানে থেকে এলে সেই লজ্টা তো লন্ডভন্ড করে এসেছ , সারা বাথ্রুম নাকি জলে থই থই করছে , বিছানা-বালিশে অশান্তি মাখামাখি, ভাঙা টেবিল ল্যাম্প মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ...
নীলাভ্রকে খুব হতাশ দেখাচ্ছে , বেচারা ওর নামেই লজ্টা বুক্ ছিল আর মাঝখান থেকে ওই যেতে পারল না কাজের চাপে । আমরা চারজন ওর নামেই বুক্ করা লজে্ দুদিন-একরাত কাটিয়ে এলাম জর্জিয়ার জঙ্গলে , সারারাত ধরে আড্ডা-হৈ-চৈ , সভ্যতার সঙ্গে সমস্ত ন্যাকামো-হিপোক্রেসি জলাণ্জলি দিয়ে আমরা নিয়ম ভাঙতে চেয়েছিলাম আর ঠিক তক্ষুনি অর্কর মোবাইলটা কর্কশস্বরে ডেকে উঠল রাতপ্যাঁচার মতো , সন্জয়ের ইনবক্সে আরেকটা নতুন ই-মেল্ এলো , শেখরের প্যান্টের পকেট থেকে বেরিয়ে এলো আইপড্ , আর এই আমি , টেবিলে রাখা রিমোট্টা তুলে চালিয়ে দিলাম টিভিটা ।
নীলাভ্রকে চিন্তা করতে বারন করলাম। ওকে লজের পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে আমাদের বাঁদরামোর কথা।
আমাদের ওপর থেকে ওর কন্ফিডেন্স হারিয়ে যাচ্ছে দেখে খুব লজ্জা করলো। কিন্তু নিজেদের বেলেল্লাপনা ঢাকার জন্য মনেমনে কিছুএকটা কৈফেয়ত খুজতে লাগলাম।
সদ্য জোটানো সোনালী চুলের আমেরিকান বান্ধবীটির প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অর্কর ফোনের ফ্রী টক্ টাইম শেষ হয়ে গেলো তবুও বিদেশীনির কৌতূহলের শেষ নেই। অবশ্য প্রেমিক বা হাজ্ব্যান্ডের মতো নিজস্ব সম্পত্তির প্রতি অকারন কৌতূহল সব মেয়েদেরই একটা গ্লোবাল্ প্রপার্টী বলে ধরা যেতে পারে। ই-মেল্ চেক্ করতে করতে সন্জয় অর্কদের কথাবার্তা ফলো করার চেস্টা করলো , আমি টিভির সাউন্ডটা মিউট্ করে দিলাম আর শেখর বাথ্রুম যেতে গিয়েও থম্কে দাড়িয়ে গেলো।
ঘরে পিনড্রপ্ সায়লেন্স্ , শুধু অর্কর ফোনের ও-প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে মিস্টি রিন্রিনে আমেরিকান আ্যক্সেন্টের নারী কন্ঠস্বর।
দুই।
অমাবস্যার ঘন কালো রাত। সারা পৃথিবী নিশ্চুপ ,গভীর মায়াময়।
স্বচ্ছ আকাশে কতোগুলো তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে এমনই এক পিচ্কালো রাতে বেত্লার জঙ্গলের আকাশেও এই তারাগুলোকেই দেখেছিলাম না ? কিন্তু তখনতো তাদের ভিন্দেশী বলে মনে হয়নি। অথচ আজকে কেন এদেরকে এত অচেনা বলে মনে হচ্ছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। সাত বছর আগের বেত্লা অনেক বেশি বন্য ছিল সেই সাত বছর আগের আমির মতো , এখন এ দেশের জঙ্গলে কৃত্তিমতার গন্ধ পাই । আমিও কেমন যেন একটা ভদ্র-সভ্য গোছের হয়ে উঠছি দিন্-কে-দিন্ , লোকজনকে দেখলেই আজকাল কেমন মাথা ঝাকিয়ে " হাউ আর ইউ ডুয়িঙ্ " বা " হোয়াট্স আপ্ " বলে উঠি।
এবছর যখন দেশে গেছিলাম তখন কলকাতায় আমার এক দাঁতক্যালানে প্রতিবেশী আমাকে বলেছিলো , দেখবে , আস্তে আস্তে তুমি আর বাঙালী থাকবে না।
ওখানেই চাকরি করবে, গাড়ি কিনবে , বাড়ি কিনবে , বৌ কিনবে , সরি, আই মিন্ , বিয়ে করবে , শর্টস্ পরে কার্ডিও করবে ,
শনিবার সকালে বাথ্রুম পরিষ্কার করবে , রোববার দুপুরে লনের ঘাস ছাঁটবে আর পাশের বাড়ির সুন্দরীর বিট্কেল পোষা কুত্তাটাকে দেখে হেসে গড়িয়ে বলবে " হাউ কিউট্ "।
আমি তখন মনে মনে ভাবছি , শালা , আউট অফ জেলাসি এই সব কথা বলছো ,সারা জীবন তো লুঙ্গি পরে কাটিয়ে দিলে একইজায়গায় , আর এখন আমাকে পেয়ে কাগুজে বুলি কপচাচ্ছ। এইসব ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সম্বিত্ ফিরল একটা চেনা গানের গুনগুন সুরে।
সন্জয় গান ধরেছে "এ যে দৃশ্য , দেখি অন্য , এ যে বন্য , এ অরণ্য "।
আমরা চার মূর্তিমান জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি উদ্দেশ্যহীনভাবে ।
শেখর সিগারেট ধরিয়ে লাইটারটা জ্বালিয়ে রাখছে কিছুক্ষন । ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে । শুকনো পাতা মাড়িয়ে আমাদের চলার শব্দ আর লাইটারের আগুন অশরীরি রাত্রির নিস্তব্ধতাকে আরো বাঙ্ম্য় করে তুলেছে। অর্ক সেলফোনটা সুইচ্ অফ্ করে দিয়েছে , নিশির ডাক ভুলে এখন
রাত্রি-সম্ভোগের সময়।
(ক্রমশ ...)
(আবার কবে লিখব তা বলতে পারছি না।
)
(এই গল্পটিতে শুধুমাত্র লেখক ছাড়া বাকী সবকটি চরিত্র এবং ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এদের সাথে বাস্তবের কোনোরকমের মিল থাকলে তা পুরোপুরি কাকতলীয় এবং এর জন্য লেখক বিশেষভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। )
( লেখাটি আমার অন্যতম দুই প্রিয় ব্যাক্তিত্ত শ্রী সত্যজিৎ রায় ও শ্রী সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি উৎসর্গীকৃত। )
Shibasish Dasgupta
2nd December
Gainesville, Florida
USA.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।