আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুলতানা আপুর গল্প

নিতান্তই আজাইড়া মানুষ আমি।

অফিস ছুটি হয়েছে। আমার তো অনেক খুশি হওয়ার কথা। এখন বাড়ি ফিরবো! কিন্তু মেজাজ খারাপ বাসের ভীড় দেখে। কিন্তু আজ তো আর নতুন কিছু না।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই ভীড় ঠেলে বাসে উঠতে হয়। কখনো আবার বসার জায়গাও হয়ে যায়! তখন তো আনন্দে পাগল ই হয়ে যাবো মনে হয়! তো আজও ধাক্কা-ধাক্কি করে বাসে উঠে পড়লাম আর বসার জায়গাও পেয়ে গেলাম। পাশে গম্ভীর মুখে একটা মহিলা বসে আছে। প্রায় ২ ঘন্টা আমাকে এইখানেই বসে কাটাতে হবে ভেবে গান শুনতে শুরু করলাম। কিন্তু ভাল্লাগছিলো না।

পাশের মহিলার দিকে আড়চোখে তাকালাম। উহু! গল্প করার কোন ইচ্ছে মনে হলো নেই উনার। একটু সাহস করে বল্লাম, -আপু , আপনি কি স্টুডেন্ট? উনি হেসে বল্লেন, দেখে কী মনে হয় ? বল্লাম, দুটোই মনে হয়। এভাবেই কথা শুরু হলো সুলতানা আপুর সাথে। খুব সাধারন কিছু কথার ফাঁকে বের হয়ে গেলো আমার দেখা সবচেয়ে সুখী মানুষটা।

আপু মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চাকরী করে। দেখতে খুবই সাধারন। কথায় চাঁটগাইয়া টান উনাকে আরো সহজ সরল করে তুলেছে। -ব্যাংক এ চাকরী করেন? তাহলে তো আপনি অনেক লাকী! -হুম! তা অবশ্য ঠিক। তবে চাকরীটা ধরে রাখতে অনেক কষ্ট হইছে।

আমাদের এইচ. আর লোকটা খুবই খারাপ। আমার বাড়ি চাটগাঁ বলে আমাকে পটিয়াতে চাকরী দিলো! এতো করে বল্লাম ঢাকায় দিতে, দিলোনা। আমিও নাছোড়বান্দা! পুরো একটা বছর পটিয়াতেই চাকরী করলাম, আর ঢাকায় আসার জন্য ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলাম। অবশেষে এক বছর পর ঢাকায় এলাম। আমি তো শুনে অবাক! আপুর কাছে জানতে চাইলাম, “বাসা থেকে যেতে দিলো?” আপু ভুবন মাতানো হাসি হেসে বললেন, “আমার স্বামী অনেক ভালোমানুষ।

বললাম, পটিয়ায় যেয়ে চাকরী করবো আর ঢাকায় আসার চেষ্টা করবো। তখনো জানতাম না এক বছর পরই ঢাকায় আসা হবে। অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটতে থাকলো জীবন। ” শুনে আমি অনেক অবাক হলাম। কিভাবে যেতে দিলো লোকটা! একা একটা মেয়ে পটিয়ায় থাকবে! স্বামী সেটা মেনে নিলো! এইসব ভাবনার ফাঁকে ফোন আসলো।

ফোন রেখে আপু হাসিমুখে বললো, ” তোমার ভাইয়া ফোন করেছিলো। ভাত রান্না করে ফেলেছে। বাসায় যেয়ে তরকারী গরম করতে হবে শুধু। তোমার ভাইয়া আমার আগে বাসায় ফেরে তো! তাই ও ই ভাত রান্না করে ফেলে। আমি সকালে রান্না করে যাই, তাই রাতে আর চিন্তা করতে হয়না।

” এবার আমি সত্যি অবাক হলাম। এমন ও কি হয় নাকি! একটু অতি উত্সাহী হয়ে জানতে চাইলাম, ”আপনাদের কি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ?” আপু মুখে অদ্ভুত একটা দীপ্তি এনে বললো, ”নাহ, আমরা চার বছর যাবত্ দুজন দুজনকে চেনার চেষ্টা করলাম। কিন্তু চিনতে পারলাম না। তারপর ভাবলাম বিয়েই করে ফেলি! আপুর কথা বলার ধরন দেখে খুব মজা লাগলো। হেসে বললাম, ”আপনি তো অনেক ভাগ্যবতী!” আপু সুন্দর করে ঘাড় কাত করে বললো, ‍‍" হুম, আমি ভাগ্যবতী, এটা সত্যি, ওকে পাওয়া সত্যি অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।

তবে এর জন্য আমাকেও একটু ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমাদের বাসার কেউ ওকে মেনে নিতে পারেনি। চালচুলোহীন একটা ছেলে। আমরা একসাথেই পড়াশোনা করেছি তিতুমীর কলেজে। মাষ্টার্স কমপ্লিট করেও ওর কপালে তেমন ভালো কোন চাকরী জুটলো না।

বাবা-মা, ভাই কেউ ওকে মেনে নিতে নারাজ। আমি যদি পালিয়ে যাই, এই ভয়ে ভাইয়া তাড়াহুড়ো করে আমার বিয়ে ঠিক করলো। আমিও কম জেদী না, সত্যি সত্যিই পালিয়ে চলে এলাম ওর মেস এ। ওই দিন ই আমরা বিয়ে করলাম। ও একটু আপত্তি করছিলো, কারন, মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে কিভাবে সংসার চলবে, এটা ছিলো ওর চিন্তা।

কিন্তু আমার জেদের কারনে চুপচাপ বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো। ” মনে হচ্ছিলো কোন গল্প শুনছি আমি! অবাক হয়ে আপুর কথা শুনছিলাম। " তার পর আমরা কিভাবে যে টিকে থাকার লড়াই করলাম, কী আর বলবো? অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। খুলে গেছে অনেক প্রিয় জনের মুখোশ। বেশি কষ্ট হয় যখন আমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তখন।

খুব দিশেহারা লাগে। কারণ, এখন ওর আমি ছাড়া কেউ নেই, আর আমার ও ছাড়া কেউ নেই । কখনো ওকে হারাবো ভাবলে- ” এতোটুকু বলেই আপুর চোখ টলমল করে উঠলো। কিভাবে এতো ভালোবাসে মানুষ! আমি ভেবে অবাক হই। কান্না লুকানোর জন্য আপু মোবাইল বের করে।

আবার আপুর মুখটা ঝলমলিয়ে ওঠে। আপু বলে, ”দাঁড়াও, আমি তোমাকে ওর ছবি দেখাই। ” ছবি দেখলাম। একটা শুভ্র সরল মুখ দেখতে পেলাম ছোট্ট মোবাইলের স্ক্রিনে। আপুকে বললাম, ”আপনার মতো এমন সুখী মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি।

দোয়া করবো, যেন বাকিটা জীবন এভাবেই কাটে আপনার। ”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.