বন্ধু টমাসকে এক সপ্তাহ আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়েছি নির্ধারিত দিনে ঢাকা থেকে এসে আমাদের শহরের ষ্টেশনে থাকতে । আমিও বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় শহরের ষ্টেশনে চলে যাই । তূর্ণা-নিশীথা চড়ে রাত দেড়টায় টমাস আসবে । তাকে নিয়ে সকালে ওর মামাতো বোনের কাছে যাব কলেজ হোষ্টেলে আশার(ছদ্মনাম) চিঠি আনতে । আমাকে দেয়া আশার শেষ চিঠি ।
রাত ন'টা থেকে দেড়টা, আবার টমাস আসলে বাকি রাত কোথায় কাটাব ? এতরাতে শহরের কারো বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না । এছাড়া টিন-এজের গোপন মিশন বলে কথা ! তাই রেলষ্টেশনের পাশেই বোর্ডিংয়ে একটা ডাবল সিট রুমের বুকিং দিলাম। জীবনের প্রথম এই রকম আবাসিক বোর্ডিং আগপাছ কিছু ভাবি নাই । রাতের খাবার খেয়ে ষ্টেশনের বুকষ্টল থেকে পছন্দের একটা ম্যাগাজিন কিনে বোর্ডিংয়ে চলে এলাম । কারন রাত যত গভীর হচ্ছে আমার প্রিয় চিরচেনা রেলষ্টেশনটাকে কেমন অপরিচিত মনে হতে লাগল ।
দিনের বেলা যে ভিক্ষুকেরা দলবেঁধে কোরাস গেয়ে ভিক্ষা করে ওরা জটলা বেধে এক জায়গায় বসে প্রদীপ জালিয়ে গুমোট পরিবেশে কি যেন করছে । কাছে যাওয়া যায় না ধোয়া উঠছে, কি বিশ্রী গন্ধ মনে হয় বমি আসবে ।
রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে ম্যাগাজিনে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম । কিছুক্ষন পরই পরিবেশটা অন্যরকম মনে হতে লাগল । বারান্দায় কে যেন আসছে যাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে ।
ভয় লাগতে শুরু করল নারীকন্ঠের কথাবার্তা শুনে। লাইট অফ না করেই শুয়ে রইলাম কারন আমি ঘুমাতে চাইনা দেড়টায় ট্রেন আসবে । কিছুক্ষন পর কে যেন দরজায় কড়া নাড়তে লাগল, ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম। আমার বয়সী একজন রুমে এসে খোজ খবর জানতে চাইল। কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ? কেমন রহস্যময়ভাবে জিজ্ঞেস করছে কিছু লাগবে কি ? অনেক ভাল কিছু ... ... ।
আমি ওর কথা শেষ না হতেই বললাম কিছু লাগবেনা আর লাগলে আমি ডেকে নেব। ধন্যবাদ বলে তাকে বিদায় দিলাম।
ঘন্টাখানেক পরে আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে কিছুটা বিরক্তি নিয়েই দরজা খুললাম । এবার আগের সেই লোক না আমার বাবার চেয়ে বেশী বয়সের একজন । যাকে দেখে আমি শ্রদ্ধায় সালাম দিয়ে বসতে বলি।
আমাকে এই লোকটা ঐ একইভাবে জিজ্ঞেস করছে " মিঞা কিছু লাগবনি ? "
" না আমার কিছু লাগবে না। " আমার সরল জবাব।
" আরে লাগলে বল শরমের কিছু নাই । "
" শরমের কিছু নাই মানে ! "
" তুমি মনে হয় নতুন আইছ, আগেতো তোমারে দেহি নাই। "
" হ্যা আমি জীবনে প্রথম আসছি ।
ঢাকা থেকে আমার বন্ধু আসবে তার জন্যেই অপেক্ষা করছি। "
ট্রেইনতো দেড়টা আইব, তোমার সময়টা ভাল কাটব এই বেবস্তা আছে। মাত্র ১০০ ট্যাকা ... ... । "
বাইরের বারান্দায় বিশ্রী হাসাহাসির আওয়াজ পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছে কয়েকজন নারী দরজার ওপাশে দাড়ানো। আমার কানগুলো দিয়ে যেন গরমে আগুনের ফুলকি বেরুচ্ছে ।
ভয়ে বোবা হয়ে যাচ্ছিলাম । সাহস করে যে প্রতিবাদ করব সেই উপায় নেই। এরা ব্ল্যাকমেইল করতে খুবই দক্ষ । শুধু সৃষ্টিকর্তাকেই বেশি বেশি স্মরন করছিলাম। সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল,সারা রাতের বোডিং ভাড়া ১৪০টাকা আর মাত্র ১০০টাকায় নারীসঙ্গ, কত সস্তায় !
বুড়োর সাথে ভাল মানুষের টেকনিক খাটিয়ে সফল হলাম।
আমাকে ভয়াভহ বিপর্যয় থেকে আল্লাহ রক্ষা করেছিল কোনরকম পদস্ফলন ছাড়াই। মনের ভিতর শুধুমাত্র আশার চিঠিটা কখন পাব ? ঐ চিঠিটার জন্যে এত কিছু ? চিঠিটা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনি ভাবতে চাইনি।
রাত দেড়টায় টমাস এসেছিল । তাকে নিয়েই বোডিংয়ে বাকি রাতটা কাটাই কিন্তু তাকে বোডিংয়ের ঘটনা কিছু বলিনি। সকালে সোজা হোষ্টেলে চলে যাই ।
গেটে অপেক্ষা করে জানতে পারি টমাসের মামাত বোন হোষ্টেলে নেই। ওর মায়ের অসুস্থতার জন্য আগেরদিন ঢাকা চলে গেছে। ৯৮সালের কথা,তখনতো মোবাইল ফোন ছিল না যত্রতত্র । চিঠিটা আমি প্রবাসে আসার ৪/৫ মাস পর পেয়েছি টমাসের মাধ্যমেই। যে চিঠি আমার জীবনকে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করেছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।