বৃস্টি বিহীন বৈশাখ
বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে গতকাল সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে ক্ষুব্ধ জনতা। দেশনেত্রীকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করায় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সরকারের এ অন্যায় আচরণের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।
বিভিন্ন স্থানে শতাধিক যানবাহনে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুরের পর থেকে রাজধানীর রাস্তায় যান চলাচল শিথিল হয়ে যায়। সবার মধ্যেই এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সামাল দিতে পুলিশ দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে। টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করা হয়।
লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন আইনজীবী, সাংবাদিক, এমপিসহ অর্ধশতাধিক। আহতদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দু’শতাধিক নেতাকর্মীকে।
বেগম জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সকাল থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পত্রিকা অফিসে অসংখ্য ফোন আসতে থাকে।
সাধারণ মানুষও পরিস্থিতি জানতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে আইএসপিআর থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন মিডিয়ায় পাঠিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়া হয়। বলা হয়—খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা ও সিনিয়র আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন আইএসপিআরের খবরটি সঠিক নয়। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে খালেদা জিয়াকে মানসিক চাপ প্রয়োগ শুরু হয়।
তাকে বাড়িটি ছেড়ে যেতে একপ্রকার বাধ্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিকালে খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেট ও কাকলী গেটে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন। তিতুমীর কলেজের সামনের সড়কে বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জাহাঙ্গীর গেটের সামনে অতিরিক্ত চার প্লাটুন পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে পুরনো ঢাকার লালবাগ, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন।
গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর : খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের সময় যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও টেক্সিক্যাবে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে ৭ বাসযাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের ঘটনায় এ পর্যন্ত শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এদের মধ্যে মহিলা কর্মীও রয়েছেন। বিক্ষোভ চলাকালে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে সকাল ১১টায় বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা বাহাদুরশাহ পার্কের পাশে দাঁড়ানো বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কের কাছে বিআরটিসির দ্বিতল একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। বেলা ২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা আরামবাগ নটরডেম কলেজের সামনে যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটের গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি মিনিবাস জ্বালিয়ে দেয়।
দারুস সালাম থানা এলাকার গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে একটি এবং মিরপুর-১ নম্বরের টোলারবাগ এলাকায় আরেকটি যাত্রীবাহী বাস জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বেলা ১২টার দিকে সেনানিবাসের প্রধান প্রবেশপথ জাহাঙ্গীর গেটের কাছে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে দনিয়া কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ কর্মীরা গরুর হাটের ইজারা নিয়ে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপানোর চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে ২০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
পুলিশ জাহাঙ্গীর গেট এলাকা থেকে ৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করে। এসব ঘটনায় পুলিশ ৩৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করে। এদের ১০ জন হচ্ছেন মহিলা। এছাড়া বিকাল ৫টায় মালিবাগ রেলগেট ও মালিবাগ মোড়ের মাঝামাঝি স্থানে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো ঘ ১৪-১৬৭০) ও একটি ট্যাক্সিক্যাব (ঢাকা-মেট্রো প ১১-৪৯২৫) জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সংঘর্ষ, জলকামান ব্যবহার : ঢাকা সেনানিবাসের বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দু’দফায় সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হটাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এসময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এর আগে পুলিশের সঙ্গে সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষে বিএনপি এমপি শাম্মি আক্তারসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হন। এসময় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে ধাওয়া করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এসময় বেধড়ক লাঠিচার্জও করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করতে চাইলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে এমপি শাম্মি আকতার, সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, মহিলা দলের নেত্রী পান্না, নিলু ও যায়যায়দিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক শফিক কাজলসহ কমপক্ষে ৭-৮ জন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে জাহাঙ্গীর গেটের সামনে দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। তারা মিছিল নিয়ে কয়েক দফা এয়ারপোর্ট রোডে নামতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে রাখে।
এসময় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পুলিশের তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। পুলিশ দুপুর পর্যন্ত ফার্মগেট থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তায় কয়েক দফা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে দুপুর ৩টার দিকে যান চলাচল শুরু হয়।
বেগম জিয়ার বাড়ি ইস্যুতে সকাল থেকেই শত শত নেতাকর্মী জমায়েত হন জাহাঙ্গীর গেটের সামনে।
সেখানে আগে থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন ছিল। জাহাঙ্গীর গেটের সামনে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তার পশ্চিম পাশে আটকে দেয়া হয়। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত এমপি শাম্মি আক্তার বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জাহাঙ্গীর গেটের পাশে বসা ছিলাম। পুলিশি বাধায় কেউ রাস্তায় নামেননি। এরপরও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাত্ বেশ কয়েকজন পুলিশ তাদেরকে সেখান থেকে সরে যেতে বলে।
এর প্রতিবাদ করায় পুলিশ মহিলা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় তিনিসহ মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী আহত হন। শাম্মি আক্তার বলেন, পুলিশ মহিলাদের টানাহেঁচড়া করে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা তরে। পরে চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক তাকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ পেশাগত আচরণ করেনি।
তারা দলীয় ক্যাডারের মতো সবাইকে পিটিয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে পুনরায় বিএনপি নেতাকর্মীদের জাহাঙ্গীর গেট থেকে সরিয়ে দিতে জলকামান ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত হটিয়ে দেয়। এসময় মহাখালী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে।
আইনজীবী নেতাদের ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে যেতে দেয়া হয়নি : সুপ্রিমকোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনসহ আইনজীবীদের একটি দল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে জাহাঙ্গীর গেটে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তারা প্রধান বিচারপতির একটি নির্দেশনা নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে যেতে চাইলে জাহাঙ্গীর গেটে তাদের আটকে দেয়া হয়। গেটে দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই বলে আইনজীবী নেতাদের ফিরিয়ে দেন। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করলে দাঙ্গা পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। জলকামান নিক্ষেপ করায় আইনজীবী নেতারাও নাজেহাল হন।
পরে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
দলীয় কার্যালয়ে সংঘর্ষ-ভাংচুর : নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ধাওয়া করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এসময় বেধড়ক লাঠিচার্জও করা হয়।
এর পাল্টা জবাব দেন বিএনপি নেতাকর্মীরাও। তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থল থেকে ৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রেসক্লাবে আইনজীবীদের বিক্ষোভ : এদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে।
এসময় সংগঠন সভাপতি ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সুপ্রিমকোর্টে মামলা শুনানির আগে বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ অভিযান আদালত অবমাননার শামিল। এটি অগণতান্ত্রিক। ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে অপেক্ষা করা উচিত ছিল। দেশের জনগণ যখন পানি, গ্যাস, বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তখন সরকার এসব সমস্যার সমাধান না করে বেগম জিয়ার বাড়ি নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। এই বিচার আল্লাহর আদালতে দিলাম।
তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা কোনো দলের নন, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। এসময় অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম তালুকদার, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আমির হোসেন, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা : বিএনপি খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার যৌথ আয়োজনে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। লাঠিচার্জে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৩ নেতাকর্মী আহত হন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।
মহানগর ও জেলা কমিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম নূরুল ইসলাম দাদু ভাই। বক্তব্য রাখেন মনিরুজ্জামান মনি, সৈয়দা নার্গিস আলী, এসএম মোর্শেদ আলম, ফখরুল আলম, আমির এজাজ খান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো, ফেরিঘাট হয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফেরার উদ্দেশ্যে পিকচার প্যালেস মোড়ের কাছে পৌঁছলে পুলিশ মিছিলের পেছন দিকে লাঠিচার্জ শুরু করে।
পুলিশের বেদম প্রহারে একের পর এক নেতাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপিকে রক্ষা করতে গিয়ে তিন কর্মী আহত হন। তিনি রক্ষা পেলেও লাঠিচার্জ থেকে রক্ষা পাননি নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। তার শরীরে লাঠির একাধিক আঘাত লাগে এবং চশমা ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
রাজশাহী : গতকাল বিকালে রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে।
এ সময় অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন জানান, গতকাল বিকালে নগর বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ডের উদ্যোগে ৩৫টি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সাহেববাজার, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, কোর্ট এলাকা ও সদর হাসপাতালসহ অন্তত ১০টি স্থানে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ : গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের সময় অর্ধশত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ উইন, লিখনসহ তিন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
লালমোহন : চরফ্যাশনে বিএনপির ডাকা প্রতিবাদ সভায় হামলা করেছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ দলীয় ক্যাডার বাহিনী। পুলিশের উপস্থিতিতে চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হামলার সময় বিএনপির সিনিয়র নেতার চরফ্যাশন থানার অফিসার্স ইনচার্জ নাছির উদ্দিন মল্লিকের কাছে সহযোগিতা চেয়েও কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানান বিএনপির একাধিক নেতারা।
হামলার শিকার উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাজাহান ও মাইনুদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়াসহ ১৫-২০ নেতাকর্মী। ক্যাডারদের তাণ্ডবে রণক্ষেত্র তৈরি হয় চরফ্যাশনে। আহতদের বিভিন্নভাবে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ নামলেও হামলাকারীরা শহরে একাধিকবার মহড়া দিতে থাকে পুলিশের সামনেই।
বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় চরফ্যাশনে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : চকরিয়ায় গতকাল বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশের বাধা দেয়ার ঘটনায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ নেতাকর্মী কমবেশি আহত হয়েছেন।
গতকাল বিএনপি, যুবদল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে মিছিল বের করলে চকরিয়ার প্রধান সড়ক চিরিঙ্গা পুরনো এস আলম কাউন্টারের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পুলিশের লাঠিচার্জে নুরুল ইসলাম হায়দার, অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরায়েজীসহ কমপক্ষে ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সেনবাগ (নোয়াখালী) : গতকাল সন্ধ্যার পর নোয়াখালীর সেনবাগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। শহরের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়া মিছিলটি থানা চত্বরে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাহাব উদ্দিন রাসেলসহ ৭/৮ জন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন বলে রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
নওগাঁ : গতকাল দুপুরে নওগাঁ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট নওজোয়ান মাঠের কাছে এলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
একপর্যায়ে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে প্রধান সড়ক অবরোধ করে সভা করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ বিএনপি আয়োজিত পৃথক দুটি বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জেলা বিএনপি ঝিনাইদহ শহরে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়।
কোটচাঁদপুর উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়।
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কোটচাঁদপুর শহরে বিএনপি মিছিল করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশের লাঠিপেটায় ১০ নেতাকর্মী আহত হন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা বিএনপির বের করা বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ হামলা ও লাঠিচার্জ করেছে। এতে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল বিকাল ৫টায় জেলা বিএনপির শহীদ আবুল কাশেম সড়কের কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়।
এ সময় পুলিশ মিছিলের ওপর শুরু করে লাঠিচার্জ। পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও যুবদল আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, দফতর সম্পাদক আসম আবদুর রউফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু জাফর মন্টু, পৌর বিএনপি সভাপতি সহিদুল ইসলাম রতন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশিদুলসহ ১৫ জন।
পাবনা : পাবনা জেলা ছাত্রদলের মিছিলে ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ৭টার দিকে ছাত্রদলের মিছিলটি পাবনা শহরের সোনাপট্টি পৌঁছলে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলকারীরা আবারও মিছিল করতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
এ সময় দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে ৫ ছাত্র আহত হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জে যুবদলকর্মী রহমত উল্লাহ, ফরহাদ, রিপনসহ কমপক্ষে ৫ কর্মী আহত হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টায় প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল ইউটার্ন থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে মাদানীনগর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। যুবদলের অপর একটি মিছিল শিমরাইল পুলিশ বক্সের সামনে থেকে বেলা সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে ইউটার্ন ঘুরে আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছলে অর্ধশতাধিক পুলিশ ধাওয়া করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে যুবদলের ৫ কর্মী আহত হন।
সিলেট : খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের খবরে সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুরের দিকে হঠাত্ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজপথ। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুপুর ১২টার পর মিছিলটি শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্টে এসে শেষ হয়।
সকাল ১১টার দিকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে মিলিত হয়। দুপুর ১২টায় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতারা সেখানে পৌঁছলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। পরে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ চলাকালে র্যাব ও পুলিশের শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে।
মহানগর সভাপতি এম এ হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা সহ-সভাপতি সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর সহ-সভাপতি নাসিম হোসেইন প্রমুখ।
এদিকে কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির সভা শেষ হওয়ার পর দুপুর ২টার পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। সোবহানীঘাট, শাহজালাল সেতু মুখ, উপশহর, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, রিকাবীবাজার এলাকা মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় রিকাবীবাজারে ২টি ও সোবহানীঘাট বিশ্বরোড, দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশীদ স্কোয়ার, চৌহাট্টা ও রিকাবীবাজারে ২০-২৫টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম : গতকাল সকাল থেকে নগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের শত শত কর্মী মিছিলসহকারে নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে এসে সমবেত হতে থাকলে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
পরে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বের হয় এক বিরাট গণমিছিল।
নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামের মেয়র মনজুর আলম, সাবেক মেয়র মীর নাসির উদ্দিন, সাবেক ডেপুটি মেয়র আলহাজ দস্তগীর চৌধুরী, ডা. শাহাদাত হোসেন, আবু সুফিয়ান, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত। এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেডিয়াম চত্বরে এসে পুনরায় সমবেত হয়। এ সময় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আরও মিছিল এসে পৌঁছলে এটি গণসমাবেশে রূপ নেয়।
বিকালে কোতোয়ালি থানা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত অপর একটি গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন শিল্পপতি সামশুল আলম, ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিকালে নগরীর দোস্তবিল্ডিংয়ের কার্যালয় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
হালিশহর বি ব্লক এলাকায় বিকালে বিএনপির এক বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতিকালে পুলিশ মিছিলটি ঘেরাও করে রাখে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। লালখান বাজার ও টাইগারপাস এলাকায় বিএনপির মিছিলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। বাকলিয়া বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে শিল্পপতি সামশুল আলম ও ডা. শাহাদাত হোসেন আজকের হরতাল পালন করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
মীরসরাই উপজেলা বিএনপি সভাপতি নুরুল আমিনের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
হাটহাজারী বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান মাহবুব আলম চৌধুরী ও বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়া।
সাতকানিয়া পৌরসভা চেয়ারম্যান আলহাজ মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল গণমিছিল।
বরিশাল : বরিশালে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ট্রাক-প্রাইভেটকার ভাংচুর, টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর পোর্টরোড, সদর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। এ সময় ১টি মাইক্রোবাস ও ১টি ট্রাক ভাংচুর করা হয়। পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে তিন কর্মীকে গ্রেফতার করে।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে অশ্বিনী কুমার টাউন হল সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় মহানগর ছাত্রদলের সম্পাদক জি এম আতায়ে রাব্বীর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
একই সময় মহানগর যুবদলের উদ্যোগে অপর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পুলিশ মিছিলে ধাওয়া করলে কাঠপট্টি রোডে গিয়ে তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একটি প্রাইভেটকার ভাংচুর করে। বেলা ১টায় উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরাদ এমপির নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি কাঠপট্টি হয়ে ফলপট্টি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পুলিশ এখানেও নেতাকর্মীদের ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে। এ সময় কয়েক নেতাকর্মী আহত হন। ওই স্থান থেকে পুলিশ লিটন (২২), শাহিন (২৫) ও হারুন (২৮) নামের ৩ বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করে।
ফেনী : ফেনীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মিছিল সমাবেশ করেছে।
বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-মাইজদী সড়ক অবরোধ করাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা শহরের পাগলামিয়া সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজিরদীঘি, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী সড়কে বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর করে।
দুপুরে ফেনী জেলা যুবদল ও ছাত্রদল পৃথক পৃথক কয়েকটি খণ্ড মিছিল শহরে বের করে। একইভাবে দাগনভূঞা উপজেলা সদরে বিএনপি একটি মিছিল বের করে। পরশুরাম ও ফুলগাজীতে পুলিশি বাধার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করতে পারেননি।
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : গতকাল বাঁশখালী উপজেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। বাঁশখালী উপজেলা প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে স্থানীয় মিয়া বাজার এলাকায় এক প্রতিবাদ সভা বাঁশখালী পৌর মেয়র কামরুল ইসলাম হোছাইনীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল, বিএনপি নেতা ওসমান গনি, নূর মোহাম্মদ মেম্বার, নুরুল হক তালুকদার, হাছান ডিলার, মেম্বার আবু তাহের, জহিরুল ইসলাম, মেম্বার ইব্রাহিম প্রমুখ।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে বিএনপি কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও গাড়ি ভাংচুর করেছেন। বেলা ১২টার দিকে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে থানার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল থেকে বিক্ষোভকারীরা শহরের স্বর্ণপট্টি এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।
নারায়ণগঞ্জ : গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শহর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, সুরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার, ছাত্রদলের নেতা মাহাবুব আলম, মনিরুল ইসলাম সজল, রানা মজিব, রিটন দে প্রমুখ।
যশোর : গতকাল বিকালে শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাকশালী কায়দায় দেশ শাসনের পঁয়াতারা করছে।
এর আগে সকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিএনপি। শহরের লালদীঘিপাড়স্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপুর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আবারও দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
মৌলভীবাজার : গতকাল মৌলভীবাজারে জেলা বিএনপি ও যুবদল পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় চৌমোহনা চত্বর থেকে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে কুসুমবাগ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
অপরদিকে দুপুর একটার দিকে যুবদল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে চৌমোহনা এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
শেরপুর : দুপুরে শেরপুর জেলা বিএনপি শহরে এক বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
মাগুরা : গতকাল মাগুরা জেলা ছাত্রদল সন্ধ্যায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও ভায়না মোড়ে পথসভা করেছে।
জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে শহরের কাঁচাবাজার এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে ভায়না মোড়ে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।
কক্সবাজার : গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে কক্সবাজার জেলা বিএনপি। বিকাল ৪টায় শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না।
নরসিংদী : নরসিংদী জেলা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয় ও একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের বাধার মুখেও প্রায় ঘণ্টাব্যাপী নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন।
মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরে ও লৌহজংয়ে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। জেলা বিএনপি সভাপতি আঃ হাইয়ের নেতৃত্বে মিছিলটি বিএনপি কার্যালয় থেকে শুরু হলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সুপার মার্কেট গোল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
এদিকে গতকাল পুলিশি বাধার মুখে মাওয়ায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করতে পারেননি বিএনপি নেতাকর্মীরা।
গতকাল বিকালে মাওয়া বাজারে মেদিনী মণ্ডল ইউনিয়ন বিএনপি অফিসের সামনে শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল রাস্তায় বের হয়ে আবু নাছের সুপার মার্কেটের কাছে গেলে পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যায়।
শ্রীপুর (গাজীপুর) : শ্রীপুর উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকালে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শ্রীপুর উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা করা হয়। রাতে স্থানীয় আ’লীগের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ব্যাপক হামলা চালিয়ে উপজেলা বিএনপি অফিস, বিএনপি নেতা আবদুল হাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি মো. কাজী খানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।
পিরোজপুর : গতকাল দুপুরে বিএনপির অফিস চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অফিস চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে এক পথসভা হয়।
পটুয়াখালী : গতকাল পটুয়াখালীতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। সন্ধ্যায় শেরে বাংলা সড়কের সুরাইয়া ভিলা থেকে মিছিলটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হোটেল বনানী চত্বরে পুলিশি বাধায় তা শেষ হয়। কিছুক্ষণ পর সরকারি কলেজের সামনে থেকে মিলনের নেতৃত্বে অপর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুকুল সিনেমা রোডে গিয়ে শেষ হয়।
অপর দিকে লঞ্চঘাট থেকে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিঠাপুকুর সড়কে গিয়ে শেষ হয়।
ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে শেষে চৌরাস্তায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে যুবদলের একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে চৌরাস্তায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া ভালুকা, লাকসাম, তালা, মংলা, পলাশ, বাঘা, শাহরাস্তি ও মধুখালীতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মাদারীপুর : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাঁচ্চর বাজারে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা চালায়। এতে বিএনপির কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিবচর থানা বিএনপির সভাপতি নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাঁচ্চর বাজারে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করলে মাদবরের চর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতি হাওলাদারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের মিছিলের পেছন দিক থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় শিবচর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম খান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাওন চৌধুরী, যুবদল নেতা বেল্লাল মুন্সী, ছাত্রদল নেতা শামীম, নাসিরসহ প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।