আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোর নিচের অন্ধকার!


বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যানচালনারত এক শিশু চট্টগ্্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন। শহরম্ূখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ শাটল ট্্েরন। ভিতরে উপচে পড়া ভিড়। দু’জনের জায়গায় বসেছে তিনজন। খালি নেই সিটের উপরের অংশটুকুও।

তারপরও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অনেককে। এই প্রচন্ড ভিড়কে উপেক্ষা করে মাথায় গামলা নিয়ে বগির এপাশ থেকে ওপাশ হাঁটছে একটি শিশু। বয়স ৮/৯ এর বেশি নয়। এলোমেলো চুল, মুখে কালির দাগ, একটা বোতামও অবশিষ্ট নেই শার্টের। বড্ড বেমানান পরিবেশের সাথে।

শাটল ট্্েরনে সিংগারা, সমুচাসহ তেলে ভাজা নানা দ্রব্য বিক্রি করাই শিশুটির কাজ। সুতরাং সময় নেই বেশিক্ষণ এক বগিতে থাকার। কাজ শেষ করেই উঠে পড়ছে পরেরটিতে। শিশুটির নাম আরিফ হলেও পরিচিত ভাগিনা নামে। চাকুরি করে স্টেশনের পাশেই অবস্থিত ‘ভাগিনার দোকানে’।

তার নেই ন্যূনতম অক্ষর জ্ঞানও। এ যেন বিধাতার এক নিষ্ঠুর পরিহাস। নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশস্ত প্রাঙ্গন যেখানে জ্ঞানের প্রদীপকে ঘিরে উৎসবের আসর বসে সেখানে তিনি এমন কালিমা লেপন করবেন কেন? কলা অনুষদ ঝুঁপড়ির জনি স্টোরে কাজ করে আরিফের মত শিশু কাদের (১৩)। কাদেরের কিছুটা সুযোগ হয়েছে অ-আ জ্ঞান অর্জনের। পড়েছে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত।

কিন্তু তারপরই রূষ্ট হল ভাগ্যবিধি। । পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম দিনমজুর পিতা পতিত হলেন গুরুতর অ্যাজমা রোগে। ফলে, প্রায় সমবয়সী বড় ভায়ের সাথে হাল ধরতে হয় পরিবারের। এখন সে কাজ করে কলা অনুষদ ঝুপড়ির ‘জনি স্টোরে’।

থাকা-খাওয়ার পরও বেতন পায় ৪০০ টাকার মত। অবশ্য খাটুনী খাটতে হয় প্রচুর। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু অবসর পেলেই ভাবে তার ফেলে আসা প্রিয় স্কুলটির কথা। পড়ালেখার ইচ্ছা আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে দিল। বলল “আমার তো মনে চায় পড়ালেহা করমু কিন্তু বাবার যে অসুখ, সংসার চলব ক্যামনে?’ শুধু আরিফ কিংবা কাদেরই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে প্রায় শতাধিক শিশু।

যাদের অনেকেরই নেই ন্যূনতম অক্ষর জ্ঞান বা থাকলেও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর বেশী নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিশুদের অধিকাংশই কাজ করে হোটেল, ক্যান্টিন বা ছোট ছোট ঝুপড়িগুলোতে। অবশ্য দুই নাম্বার গেইটের মুদি দোকানগুলোতেও দেখা যায় বেশ কয়েকজন শিশু। সারা দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও যাদের জোটে না ৩০০-৪০০ টাকার অধিক উপার্জন। অধিকাংশই কাজ করে থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে।

এছাড়াও শহর থেকে শাটল ট্রেনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিক্ষা করতে আসে এক ঝাঁক শিশু। যাদের অনেকেরই নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা। কেউ থাকে শহরের বস্তিগুলোতে, কেউবা স্টেশনে কিংবা ফুটপাতে। সারাদিন ভিক্ষা শেষে সন্ধ্যায় হাসিমুখে শহরে ফিরে যায়, উপার্জিত ক’টা পয়সা নিয়ে। অপেক্ষা করতে থাকে পরবর্তী দিনের।

এ ক’টা পয়সার বাইরে তাদের যেন আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। তারা জানেইনা তাদের শিক্ষা কিংবা অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলোর কথা। শাটল ট্রেনে করে শহরে ফিরছে ভিক্ষা করতে আসা শিশুরা শিশু দিবসসহ বিভিন্ন উপলক্ষ সামনে এলেই নেতা ও সুবিধাভোগীদের মুখ ফেনিয়ে উঠে শিশু অধিকারের দাবীতে। কিন্তু এসব বুলি ফিরিয়ে দেয়না নিরক্ষর শিশুদের শিক্ষার অধিকার। দেশ পরিচালনার কারিগর তৈরীর কারখানা বিশ্ববিদ্যাালয়ের মত আলোকিত অঙ্গনেও চিরদিন এদের পড়ে থাকতে হয় চেরাগের নিচে পড়ে থাকা ছায়ার মত!
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.