কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার আশেপাশে অসংখ্য হোটেল। বাংলাদেশী ভিজিটরদের প্রাথমিক আবাসস্থল এই হোটেলগুলোই। ছয় বছর পূর্বে এক বন্ধুকে নিয়ে কলকাতা বেড়াতে গিয়ে উঠেছিলাম নিউমার্কেট এলাকার একটি হোটেলে। টানা রিকশায় নিউমার্কেট থেকে দশমিনিটের রাস্তা। টানা রিকশা হচ্ছে সামনের চাকা ছাড়া দুই চাকার রিকশা।
চালক দৌড়ে রিকশা টেনে আগায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই। বাবার পড়া শেষ হলে আমরা ভাই-বোনরা পত্রিকা নিয়ে টানাটানি করতাম। পত্রিকা না পড়লে মনে হয় কী যেন করা হয়নি। বড় একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে।
কলকাতার পত্রিকার গল্প অনেক শুনেছি। আনন্দবাজার, আজকাল, বর্তমান নাকি অনেক বড় পত্রিকা। আমাদের ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন সকালে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম পত্রিকার খোঁজে।
হোটেল থেকে বের হয়ে একটা গলি দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল একটি বইয়ের দোকান। পুরনো ও নতুন অনেক ধরনের বই,ম্যাগাজিনের ভাল সংগ্রহ।
কিছু সাপ্তাহিক পত্রিকাও ঝুলিয়ে রাখা আছে। দোকানের সামনের অংশে একটি বড় শোকেস রাখা। একপাশ দিয়ে ভিতরে যাবার পথ।
সকাল নয়টা কিংবা সাড়ে নয়টা হবে। মাত্রই খোলা হয়েছে দোকানটি।
দরজার সামনে আগরবাতি জ্বালানো হয়েছে। কড়া ধুপের উৎকট গন্ধও নাকে লাগল। মেঝেতে একটু আগে ছিটিয়ে দেয়া পানি শুকাচ্ছে। সেই পানিতে তুলসী ছিল কিনা দেখা হয় নাই। মাথার উপরে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।
দোকানের ভিতরে দুইজন ব্যক্তি। একজন বয়স্ক ও আরেকজন কমবয়সী।
বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে বই ও ম্যাগাজিনের কভারে চোখ রাখছিলাম। দুই একটা কেনারও ইচ্ছে হল। বই কিনতে গেলে একটু উল্টেপাল্টে দেখতে হয়।
সেই ইচ্ছা থেকেই রাস্তা থেকে উঠে দাঁড়ালাম দোকানের বারান্দায়। আমাদের দেখে দোকানের কর্তা এগিয়ে এলেন। কী চাই?
বললাম পত্রিকা কিনতে চাই। আজকের নিউজ পেপার। আমাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে বয়স্ক লোকটি বললেন, আমরা পত্রিকা বিক্রি করি না।
এই গলি পেরিয়ে একটু সামনে গেলেই দেখতে পাবেন রাস্তায় বসে পত্রিকা বিক্রি করছে। ওখান থেকে কিনে নিন।
আমি বললাম তাহলে ম্যাগাজিন কিনব। অনেকগুলো ম্যাগাজিন দেখছি আছে আপনাদের এখানে।
ভদ্রলোক কোন নড়চড় করলেন না।
ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে বললেন, এই ম্যাগাজিনগুলো অনেক পুরনো। আপনারা বরং ওখান থেকেই ম্যাগাজিনও কিনে নিয়েন।
আমার বন্ধুটি ফিস ফিস করে বলল, এদের এখনও যাত্রা শুরু হয়নি। তাই আমাদের কাছে কিছু বিক্রি করবে না। অনেক সংস্কার মেনে চলে এরা।
এখান থেকে চলে যাওয়াই ভাল। অত:পর বেরিয়ে এলাম সেই বইয়ের দোকান থেকে।
পকেটে টাকা থাকা সত্বেও বইপত্র কেনার সুযোগ না পেয়ে কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। বন্ধুটি বলল আমাদের কথাবার্তা আর চাল চলন দেখে আমরা যে বাংলাদেশী মুসলমান এটা বুঝতে তাদের কোন কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আর প্রতিদিনই সহস্রাধিক বাংলাদেশী আসছেন কলকাতায়।
প্রথম দর্শনেই তারা বুঝতে পারে আমরা কোন দেশী। একজন অচ্চুত মুসলমানের কাছে দিনের প্রথম বিক্রি করে এই বিক্রেতা তার দিনের যাত্রা নষ্ট করতে রাজী নয়। তাই কায়দা করে ফুটপাতের পত্রিকা বিক্রেতার নাম বলল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।