হিজিবিজি
"ও দাদা নামবেন তো!"
কন্ডাক্টরের ডাকে সম্বিত ফিরে এল। চট করে চিঠিসহ বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। আজ আমার কলেজ জীবনের শেষ পরীক্ষা। তিন বছর ধরে ভূতত্ববিদ্যায় যা শিখেছি তা আজ সমাপ্ত হবে। আর তার সাথে হবে আমার জীবনের আর এক চূড়ান্ত পরীক্ষা।
এই তিন বছর ধরে, যে আস্তে আস্তে আমার জীবনের ধ্যান- জ্ঞানে পরিণত হয়েছে, তাকে আজ আমি আমার মনের কথা এই চিঠিটার মধ্যে দিয়ে জানাতে চলেছি।
অন্তরা আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সবাই ওকে এক অদ্ভুত সম্মানের চোখে দেখত। অথচ ও যে বিরাট কিছু দেখতে ছিল এমন কিন্তু নয়। প্রচুর যে কথা বলত তাও নয়।
তবু কিছু একটা ছিল - ওর হাঁটা চলা কথাবলা সবেতেই একটা অসম্ভব ব্যক্তিত্বের ছাপ থাকত।
আজ শেষ দিন বলেই কিনা জানিনা, গত তিন বছরের বিভিন্ন ঘটনা চোখের সামনে দিয়ে ছায়াছবির মত চলে যাচ্ছিল।
মনে পড়ে যাচ্ছিল প্রথম দিনের কথা।
মফঃস্বলের সাদামাটা সরকারি ছেলেদের বিদ্যালয়ে আগাগোড়া পড়া কোনো ছেলের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোনোটাই একটা বিরাট ব্যাপার। Uniform ছেড়ে যেমন-খুশি-সাজোর দুনিয়া, হঠাৎ স্বাধীনতার আস্বাদ, সর্বোপরি হঠাৎ চারদিকে এত মেয়ের উপস্থিতি আমায় আড়ষ্ট করে তুলেছিল।
জড়ভরতের মত আমাদের বিভাগের নোটিশবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে রুটিন টুকছিলাম।
"Excuse me!" - নারীকন্ঠে ডাক শুনে পিছু ফিরে দেখি একটি বেঁটে খাটো গোলগাল মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
"UG 1-এর ক্লাসরুমটা কোথায় বলতে পারবেন?" বাবাগো!! কোথায় পালাই আমি! একে তো কি উজি না ইউজি কি হিজিবিজি বলছে, তার ওপর সম্বোধনে উত্তম পুরুষ? এত সম্মান জীবনে প্রথমবার। ঢোকগিলে বললাম, "আমি ঠিক বলতে পারব না। আমি এখানে নতুন।
"
"First Year?"
প্রশ্নটা আক্রমণের মত শোনালো। কিন্তু এই শব্দবন্ধটা আমার চেনা। তাই দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম। মুখের ভিতরে একটা অদ্ভুত শব্দ করে সে বলল,"ভালই হল এতক্ষণ একা খুঁজছিলাম এখন দুজনে মিলে খুঁজি চলো। " এক ঝটকায় আপনি থেকে তুমিতে অবনমন ঠিক কতটা ভাল সেটা ভাবতে ভাবতে দেখি কখন আমি তাকে অনুশরণ করতে করতে একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।
ক্লাস চলছে। মেয়েটি সপ্রতিভ ভাবে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করল,"Excuse me sir, এটা কি UG 1-এর ক্লাস?" শিক্ষকের সম্মতি পেয়ে গটগট করে ক্লাসে ঢুকে গেল। অগত্যা, আমিও পিছু পিছু ঢুকে পড়লাম। ও গিয়ে দেখি first bench-এই দিব্যি জায়গা করে নিল। আমি অতটা পারলাম না।
Last bench-এ দুজন বসে ছিল তাদের পাশেই গিয়ে বসলাম। শুরু হল আমার কলেজ জীবন। পরের তিন বছরে বুঝলাম ছোটমামা কেন আমার কলেজে ভর্তি হবার কথা শুনে বলেছিল,"কলেজ! বাব্বা!! তা তোর ক-লেজ?" সত্যি সত্যি কলেজের ছেলেমেয়েদের একটা নয় বেশ কয়েকটা লেজ গজায়।
মজার ব্যাপার মেয়েটির সাথে আমার কোনো প্রথামাফিক পরিচয়ই কখনো হয় নি। এর, ওর, তার ডাক শুনে একে অন্যের নাম জেনেছি ও পরে সেই নাম ধরেই দিব্যি একে অন্যকে ডেকে কথা বলেছি, যেন কতদিনের চেনা।
এটাই ছিল স্বাভাবিক। তারুণ্যের জোরে আমরা প্রথা ভেঙেছি নতুন প্রথা গড়ব বলে। (চলবে...)
পরের পর্ব:
চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ২)
চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।