হাউকাউ পার্টি
কদিন থেকেই সোহার আম্মুর বেশ মেজাজ খারাপ, সেই বিশেষ দিনটা ক্রমশ: এগিয়ে আসছে অথচ তা নিয়ে বাসার কারোরই কোন মাথা ব্যাথা নেই!!
ভাইটা ব্যস্ত তার নতুন চাকরি নিয়ে, মা সংসার আর সোহার বাবা তার অফিস আর রিসার্চ নিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারেও তার জন্মদিনটা মনে হয় সবাই ভুলে যাবে, তারপর জন্মদিনের দিনে মনে পড়বে 'ওহ আজ তো সোহার আম্মুর জন্মদিন'। তখন তরিঘরি করে, এটা সেটা দিয়ে খুশি করার ব্যার্থ চেষ্টা
সোহার আম্মু তাই এবার মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, শুধু ভুলে যাক না এবার সবাই, তারপর দেখা যাবে, হু!
এর উপর আবার শুরু হয়েছে নতুন জ্বালা, অফিস থেকেই ফিরেই কদিন ধরে খেয়াল করছে সবাই কি নিয়ে যেন গুজগুজ ফিসফাস করছে। অথচ সামনে আসলেই কথা ঘুরানো, এসব সোহার আম্মুর একেবারেই অসহ্য লাগেছে!
এভাবেই নিরুত্তাপে চলে আসলো সেই কাংখিত দিনটি, যথারীতি সবাই গেছে ভুলে।
'যাক ভুলে সব আমি কিছুতেই কাউকে মনে করিয়ে দেবো না'.....অভিমানে গাল ফুলিয়ে সোহার মা অফিসে চলে গেলো!
অফিস শেষে হলে হটাৎ সোহার বাবার ফোন....."তুমি এখনই বাসায় এসো না, আজ আমার এক বন্ধু আসবে, ওকে বিমান বন্দর রেল স্টেশন থেকে রিসিভ করে এক সাথে বাসায় ফিরবো।
"
'তোমার বন্ধু আসবে তো আমার কি, আমি এখনই বাসায় যাবো। '
'না প্লিজ, একটু ওয়েট করো, আমি আসছি। '
অগত্যা সোহার আম্মু ওয়েট করে সোহার বাবার জন্য তারপর সোহার বাবার সাথে মুখ ভার করে গেলো রেল স্টেশন। ট্রেন আর আসেই না, প্রায় আধ লেটে এল ট্রেনটা।
কিন্তু একি সোহার বাবা ট্রেনে উঠছে কেন, তাও আবার কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটায় আর জানালা দিয়ে মাথা বের করে রেখেছে কে ও , সোহার মামা না!!
কিছু বুঝতে না বুঝতেই এক সময়ে সোহার আম্মু নিজে কে আবিস্কার করে ট্রেনের কামরার ভেতরে, আর কিছু যাত্রীর চেহারা দেখে সে রীতিমত হতভম্ব, পরিচিত প্রিয় সব মুখ গুলো সব এক সাথে এখানে কেন?
হটাৎ সমনে থেকে কচি কন্ঠের ডাক..আম্মু মা..........
সামনে তাকিয়ে দেখে, নানুমনির কোলে হাস্যমুখি সোহা!
হতবাক সোহার মা সোহাকে কোলে নিয়ে সিটে বসার সাথে সাথে ট্রেন দিল ছেড়ে, কি হচ্ছে এ সব!!
এরই মাঝে বিকট সুরে কানে চারপাশে হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ........ট্রেনের অন্য যাত্রীরাও সুর মেলালো তাতে!
আনন্দের সোহার মা।
র চোখে তখন পানি!
ভাগ্নে ভাগ্নি গুলো কেকেও নিয়ে এসেছে, কেকে কাটার পালা এবার। কিন্তু ছুরি নিয়ে আসেনি বোকা গুলো, আর সারা ট্রেন খুজে পাওয়া গেলোনা একটাও!
কি করা যায়, কিন্তু সোহার আম্মু তো চাচা চৌধুরীর শিষ্য (চাচা চৌধুরির ব্রেন কম্পিউটারের চাইতেও দ্রুত কাজ করে ), বের করে ফেললো তার এটিম কার্ড। শেষ পর্যন্ত এটা দিয়েই কেকে কাটা হলো....
সোহা কেক কাটা দেখে তো অবাক, ওর ধারণা ছিল কেকে শুধু সেই কাটতে পারে!
কেক কর্তন পর্ব শেষ হবার পরে শোনা গেলো পারিবারক ষড়যন্ত্রের মধুর কাহিনি।
যাচ্ছি কোথায় আমারা, উত্তর এলো শ্রীমঙ্গল, ফিনলে টি স্টেট!
একসময় স্বপ্নীল যাত্রার শেষ হলো, শ্রীমঙ্গলে ট্রেন থেকে নেমে ভোরের প্রথম সূর্যোদয়.....
এরপরে ভোরে তারা পৌছে গেলো পুরানো বন্ধুর চা বাগানের কোয়াটারে। অপূর্ব সেই বাড়ি, উঠোনে বোগেনভেলিয়ার উচ্ছাস....
সেই সাথে উচ্ছাসিত সোহামনিও.........
বাগানের সাদা দোলনাটা মনে হয় ওর জন্যই অপেক্ষায় ছিল....
পরের কয়েক দিন খুব ঘোরাঘুরি হলো, কখনো রাবার বাগান কখনো বা মাধবপুর লেক।
কিভাবে রাবার গাছ কেটে রাবার সংগ্রহ করা হয় তা দেখতে চাইলে খুব ভোরে যেতে হয় ওখানে!
এগুলো দিয়েই গাছ কাটা হয়।
মাধবপুর লেকটা অনেকটা বগালেকের মতো, তবে এত উচুতে না আর এটাতেও অনেক লাল শাপলা ফোটে।
খুবই চমৎকার তবে তেমন প্রচার নেই বলে অনেকেই জানে না এটার কথা!
ওদের ড্রাইভার কাম গাইড রাস্তর উপর দিয়ে বয়ে চলা এই ঝিরি দেখানোর জন্য ২৫ কি: মি: রাস্তা বেশি ঘুরিয়েছিল..
দেখা হলো বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মরণে নির্মিত এই স্মৃতি সৌধটিও..
লাউয়া ছড়া রিজার্ভ ফরেস্টে সোহা ভেবেছিল অনেক বানর টানর দেখবে, তার বদলে দেখা হলো এদের সাথে...
আদিবাস গ্রামে তার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধবও জুটে গেলো.....
এভাবেই সময় হয়ে গেলো এক সময় ঘরে ফেরার, আর সোহার আম্মু ভাবলো, এবারের মতো সোহার বাবার সব অপরাধ মাপ করে দেয়া যায়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।