নিচে তাকিয়ে থাকার মজা হল কাওকে দেখতে হয় না, আবার কাওকে দেখা দিতে হয় না। লুকিয়ে থাকতে চাই বলে উপরে তাকাই না। একদিন তাকাবো, আর সব কিছু দেখে নেব। চেনা মানুষ দেখতে দেখতে আজ ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্ত।
অযথাই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি চারিদিক কালিগোলা অন্ধকার। আমার ধারণা ছিল ঘুমিয়েছি দুপুরে। সেই হিসেবে ঘুম ভাঙ্গার কথা বিকেলে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে পারে। রাত করে দেয়া মাতাল ঘুমকাতুরে তো আমি নই।
সময় দেখার জন্য বালিশের তলে হাত চালিয়ে দিলাম। আমার মূল্যবান মোবাইল খানা সেখানেই চাপা পড়ে থাকার কথা। মোবাইল খুজে পেলাম হাটুর কাছে। মাথার ফোন হাটুতে গেল কি করে সেই রহস্যে চমকে উঠার আগে ঘড়ি দেখে চমকে উঠলাম।
আমার চোখের সামনে পরপর সাজানো তিনটা চার এর শেষ চারটা হঠাৎই পাঁচ হয়ে গেল।
পৌনে পাঁচটার বিকাল আমাকে আবারো মনে করিয়ে দিল চারিদিক এত অন্ধকার কেন?
আমি দরজা খুলে বাইরে বেরোলাম। বাইরে আকাশের মন খারাপ। বেচারা কেঁদেকেটে রাস্তাঘাট স্যাঁতসেঁতে করে ফেলেছে। আকাশের মন খারাপ দেখলে আমারো মন খারাপ হয়। মন খারাপ হলে রিয়াকে ফোন দিতে ইচ্ছে করে।
আমি ইচ্ছে পূরন করতে রিয়াকে ফোন দিলাম।
'হ্যালো স্লামালেকুম। '
রিয়া ফোন ধরলেই সালাম দেয়। ছোট বড় নির্বিশেষে সবার উপর সে শান্তির বার্তা দেয়। আমি ফিরতি শান্তির বার্তা না দিয়ে বললাম,
-রিয়া বৃষ্টিতে ভিজবি?'
'কুত্তা তুই! এতদিন কই ছিলি? আজ ফোন দিতে আসছিস! আবার বলিস বৃষ্টিতে ভিজবি? তোর না ঠান্ডার ধাত? বৃষ্টিতে ভিজতে গেলে তোর ঠ্যাং ভেংগে হাতে ধরিয়ে দিব।
'
-'কি বলিস! তুই আমার ঠ্যাং ভাংগতে পারবি? যদি পারিস তাহলে তোর হাতে আমার ঠ্যাং দুইটা ধরিয়ে দিয়ে খোঁড়াতে খোড়াতে বাসায় চলে আসব। '
'কি খারাপ তুই! মানুষ এত খারাপ হয় কি করে!! আশ্চর্য। '
আশ্চর্য বলার সাথে সাথে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে আশ্চর্য রকমের গোলমেলে শব্দ শোনা যেতে লাগল।
আমি ফোন কেটে দিলাম। রিয়া নামের মেয়েটিকে আমি ভাল পাই।
ভাল পাই কথাটা বলা ভুল। সত্য কথা হবে রিয়াকে আমি ভালবাসি। দুইটাকার বাদাম খাওয়া ভালবাসা না জীবন দিয়ে দেওয়া ভালবাসা।
ভালবাসায় সমস্যা নাই। সমস্যা হল রিয়া আমাকে ভালবাসে না।
তার ভালবাসার মানুষ আছে। ভালবাসার মানুষ আছে জেনেও কারো উপর প্রেমে পড়া বড় ধরনের পাপ। আমি সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি মন খারাপের সন্ধ্যা দিয়ে।
মন খারাপ হলে ভাল কিছু কল্পনা করতে হয়। আমি রিয়াকে নিয়ে কল্পনা করা শুরু করলাম।
কল্পনায় রিয়া আমার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছে। বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। ঝিরঝির বৃষ্টি আমার পছন্দ না। কল্পনায় ঝিরঝির বৃষ্টিকে ঝুম বৃষ্টি বানিয়ে ফেললাম।
কল্পনায় রিয়াকে বউ বউ লাগছে।
আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে গলায় মধু ঢেলে বললাম, 'রিয়া, তোমার হাত টা একটু ধরি?
রিয়া চোখ বড় বড় করে বলল, 'খবরদার বদ পুলা! হাত ধরবি না। হাত ধরলে ঠ্যাং ভেঙ্গে তোর হাতে ধরিয়ে দিব। '
নাহ! কল্পনাতেও রিয়াকে ক্যারেক্টার থেকে বের করা যাচ্ছে না। আমি আরো কিছু কল্পনা করার আগেই বাস্তবের রিয়ার ফোন এসে আমাকে কাঁপিয়ে দিল।
'বদ পুলা! ফোন কাটলি ক্যান?'
-'ফোন আমি কাটি নাই।
নেটওয়ার্কে গিট্টু লেগে কেটে গিয়েছে।
ও আচ্ছা। কেমন আছিস?
-'ভাল। '
'ভাল' শব্দটা বলতে গিয়ে কেন যেন আমার গলাটা হাহাকার করে উঠল। হাহাকারের সুর ধরতে পেরে রিয়া বলল,
'অই তোর কি হয়েছে বল তো? মন টন খারাপ নাকি?'
রিয়া ধরে ফেলেছে আমার মন খারাপ।
আরো কিছু ধরা পড়ার ভয়ে আমি ফোন কেটে দিলাম।
রিয়ার একজন আপন মানুষ আছে। পৃৃথিবীর সব মেয়ের একটা করে আপন মানুষ থাকে। তাদের কেউ বয়ফ্রেন্ড, কেউ প্রেমিক, বা কেউ প্রেমিক হতে চাওয়া বন্ধু নামে পরিচিত। আমার কোন আপন মানুষ নাই।
যদি থাকত তাহলে তাকে বলতাম, 'জানো, 'রিয়া নামে একটা মেয়ে ছিল যাকে আমি খুব খুব বেশি ভালবেসেছিলাম।
গল্পটি পূর্বে আমার ফেসবুকে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।