আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্য গল্প- "নিস্পাপ খুন" (পর্ব-৫)


পর্ব ১ ও ২ এখানে পর্ব ২ ও ৩ এখানে ৫ দুপুর বারোটা বাজে। আকাশের ঘরে আকাশ ঘুমিয়ে। জানালার ফাক দিয়ে চোখে আলো লাগতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে পারছে না সে। মাথার পেছনটায় প্রচন্ড ব্যথা।

কাল রাতে যে পোশাক পরে ছিল সেটাই পরে আছে এখনো। কিন্তু কাল রাতে ও বাসায় এলো কখন? ও তো নিজে বাসায় আসেনি। কিভাবে আসলো বাসায়?রাতের ঘটনা মনে করতে চেস্টা করলো আকাশ। ভয়ংকর সময়টা মনে করতেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। রাতে নিলার বাসায় সোফায় বসে চা খেতে খেতে নিলা তার ব্যাগ থেকে বের করে আকাশকে একটা জিনিস দিয়েছিল।

একটা ঘড়ি। ঘড়িটা অনেক দামী। এখনও পরে আছে সেটা আকাশ। নিলা নিজ হাতেই পরিয়ে দিয়েছিল এটা। ঘড়িটা দেয়ার পর নিলা শুধু বলেছিল, -“এটাই আমার মৃত্যর জন্য দায়ী থাকবে,সময় হলে এটাই সব প্রশ্নের উত্তর দেবে তোমাকে আকাশ।

” নিলা কথা শেষ হলে আকাশ কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই কেউ একজন আকাশকে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে। সম্ভবত ধাতব কিছু দিয়ে। নিলা চিতকার দেয়। তারপর সমস্ত দুনিয়া ঝাপসা হয়ে আসে আকাশের। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আকাশ।

ড্রয়িং রুমে যেতেই খেয়াল করলো দরজা খোলা। দরজা লাগাতে গিয়ে দেখলো বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে বাংলাদেশী ইন্টারপোল অফিসার আজাদ শেখ। আজাদ শেখ প্রায় কয়েক মাস ধরেই ঢাকায় আছে। একটা তদন্তের কাজে এসেছে সে। কিন্তু সে আকাশের কাছে কি চায়? আকাশকে দরজার কাছে আসতে দেখেই ফোন রেখে আজাদ শেখ বলতে থাকে, -“মি.আকাশ।

আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ যে আপনার জ্ঞান ফিরেছে” -“আপনি এখানে কি করছেন?” সরাসরি প্রশ্ন করে আকাশ। -“যেখানে বি.এস.এস এতটা এগিয়ে গেছে সেখানে ইন্টারপোল কি করে বসে থাকে বলুন” আজাদ শেখের মুখে কথাটা শুনেই আকাশের হৃতপিন্ডের পানি সংকট দেখা দেয়। আকাশ বাংলাদেশ সিক্রেট সার্ভিসের একজন উর্ধতন অফিসার। প্রায় তিন মাস যাবত সে হন্য হয়ে খুজছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আর বাংলাদেশের চোরাচালানের প্রধান মির্জা আকবরকে। যে কিনা এম.এ নামে পরিচিত।

শেষ খবর পাওয়া যায় এম.এ রেডিয়ান অয়েল নামে একটা কোম্পানি কিনেছে। আকাশ সেখানেই কাজ করছিল এতদিন তথ্য সংগ্রহের জন্য। কিন্তু বি.এস.এস থেকে এই তথ্য কি করে ফাস হলো? আকাশকে কিছু বলতে না দেখে আজাদ শেখ কথা বলতে শুরু করে, -“অবাক হবার কিছু নেই মি.আকাশ। ইন্টারপোল একটা সোজা হিসেব কসেছিল মাত্র। আর তা মিলে গিয়েছে হুবহু” -“মানে?কিসের হিসেব?”আকাশ এখনো অবাক।

-“বাংলাদেশের ক্রাইম জগতে যে কাজ গুলো হচ্ছে তার মধ্য সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ড্রাগস আমদানী। আর এই ড্রাগস গুলো আসছে নদীপথে,তাও আবার জাহাজে। খবরটা এফ.বি.আই বের করেছিল। আর এই খবরটা এফ.বি.আই থেকে জানে বি.এস.এস। কিন্তু বি.এস.এস এর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি এ ব্যপারে।

এরকম একটা কথা বি.এস.এস চীফ মাসুদ রানাকে জানায়নি। কারন মাসুদ রানা নিজেই এখন রানা এজেন্সীর কাজে সুইডেনে। তাহলে কি হাত পা গুটিয়ে রেখেছে বি.এস.এস?”কথা বলতে বলতে সিফারেট ধরায় আজাদ শেখ। তারপর আবার বলতে শুরু করেন, “মাসুদ রানার পরে এরকম একটি কাজ যদি কাউকে এই মূহুর্তে দেয়া যায় সেটা হচ্ছেন আপনি,আকাশ রহমান,AR10। আকাশ রহমানের কথা অনেকেই জানত না।

তবে কয়েক মাস আগে প্যারিসে যে ভুমিকম্প হয়েছিল সেটা যে আসলে একটা অস্ত্রের পরীক্ষা ছিল তা জানত ইন্টারপোল। আর সেই অস্ত্র ধ্বংস করেছিল এ.আর-১০ এটাও ইন্টারপোল জানে। কয়েকমাস ধরে এই আকাশ রহমান কোন কাজে নেই,ব্যপার কি?ইন্টারপোল তারপর বের করে,আকাশ রহমান একজন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরী করছেন রেডিয়ান অয়েল কোম্পানিতে,যা কিনা এম.আর বা মির্জা আকবরের। আর এফ.বি.আই এর ধারনা অনুযায়ী এই রেডিয়ান অয়েল তেলের নামে সমুদ্র পথে আনছে ড্রাগস গুলো। ” -“হুমম।

বুঝলাম,ইন্টারপোল অনেক এগিয়ে”আকাশ এবার কথা বলে ওঠে। “কিন্তু আমাকে কি কাল রাতে আপনি বাসায় নিয়ে এসেছেন?” -“হ্যা,ইন্টারপোল প্রায় একসপ্তাহ ধরে আপনার দিকে নজর রাখছিল। কিন্তু কাল রাতে আপনাকে ফ্যাশন শোতে যেতে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো একটু এন্টারটেইনমেন্ট খুজছেন। পরে দেখলাম শো শেষ হবার আগেই আপনি আর নিলা বের হয়ে এলেন” -“আপনি নিলাকে কি করে জানলেন?”প্রশ করে আকাশ। -“বলছি”জবাব দেয় আজাদ শেখ, “রাতে মিস নিলার বাসায় মিস নিলা আর আপনি ঢোকার প্রায় আধ ঘন্টা পর একটা গাড়ি আসে।

তারা ভেতরে ঢুকতেই কিছুক্ষন পর একটা গুলির আওয়াজ আসে। তার পর ওই দুজন একটা বডি নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে ওঠে। আমাদের একজন বাড়ির ভেতরে ঢোকে আর আমি জানি ঐ দুজনের গাড়ির পেছনে। কিছুদুর যেতেই ওরা বডিটাকে ফেলে দেয়। সেই বডিটা ছিল আপনার”কথা শেষ করেই সিগারেটটা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।

-“এক মিনিট! আপনি বললেন গুলি চলেছিল,কিন্তু আমার তো গুলি লাগে নি। তার মানে?” আকাশ কিছুটা উদ্দিগ্ন “তার মানে কি নিলা?” -“হ্যা,ঠিক ধরেছেন। মিস নিলা খুন হয়েছে” উত্তর দেয় আজাদ শেখ। আকাশের মাথা আবার ঘুরতে শুরু করেছে। চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে।

তবুও নিজেকে সামলে নেয় আকাশ। আকাশ জিজ্ঞাস করে, “কিন্তু,নিলাকে কেন? ও তো কোন দোষ করেনি” -“মি.আকাশ,মিস নিলা আসলেই নির্দোশ ছিলেন। তবে ধারনা করা যায় মিস নিলা এমন কিছু জানতেন যা মির্জা আকবরের ক্ষতির কারন হতে পারে। ” -“মির্জা আকবরের সাথে নিলার কি সম্পর্ক?”আকাশ জানতে চায় আজাদ শেখের কাছে। -“মিস নিলার স্বামী রাহুল ছিল মির্জা আকবরের বিজনেস পার্টনার,আর রাহুল মারা যাবার পর নিলা হয় মির্জা আকবরের বিজনেস পার্টনার।

কিন্তু মিস নিলা কোন ধরনের স্মাগলিং এর কাজ করতে চাইতেন না। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মিস নিলার জন্য” এবার আকাশের কাছে সব কিছু একটু একটু পরিস্কার হতে শুরু করে। তার মানে নিলা জানতো যে আকাশ বি.এস.এস এজেন্ট। নিলা নিশ্চই আকাশকে কিছু বলতে চাচ্ছিল। কি বলতে চাচ্ছিল নিলা?আর এম.এ কি আকাশের ওপর নজর রাখছে? তা না হলে কি করে জানলো যে কাল রাতে নিলা আকাশকে সব কিছু বলতে যাচ্ছে? যদি তাই হয় তবে আকাশ এখন আর নিরাপদ নয়।

আকাশ এবার আজাদ শেখের দিকে তাকায়, -“ইন্টারপোল কি বি.এস.এস এর সাথে কাজ করতে চায়?”আকাশ জিজ্ঞাসা করে আজাদ শেখকে। -“ইন্টারপোল বি.এস.এস এর সাথে কাজ করতে চায়,তবে আমি আর থাকছি না” উত্তর দেয় আজাদ শেখ। -“কেন?” -“কারন,আমার ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে এম.এ। তাই আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। তবে হ্যা,ইন্টারপোল এর নতুন এজেন্ট আসবে।

”উত্তর দেয় আজাদ শেখ। -“কে সে?”জানতে চায় আকাশ। -“এলেই জানতে পারবেন”কথাটা বলে দরজা দিয়ে বের হয়ে যায় আজাদ শেখ। আকাশ এবার মনে মনে একটা অঙ্ক কষতে শুরু করলো। মির্জা আকবর বি.এস.এস এর কাছ থেকে কোন খবর পায়নি,খবর পেয়েছে ইন্টারপোল থেকে।

আর ইন্টারপোল কাজ করছিল আকাশের পেছনে পেছনে। তাই আকাশের সব খবর পাচ্ছিল এম.এ বা মির্জা আকবর। নিলা মির্জা আকবরের কাছ থেকে জানতে পারে আকাশ সম্পর্কে। আর তাই নিলা আকাশের কাছে এসেছিল । কিন্তু কে দিয়েছে খবর গুলো ইন্টারপোল থেকে? কেন এতদিন রেডিয়ান অয়েলে কাজ করলেও মির্জা আকবর সব কিছু জেনেও কোন কিছু করেনি আকাশকে? অনেক প্রশ্ন থেকে যায় আকাশের মনে।

তবে একটা জিনিস স্পস্ট,মির্জা আকবর শেয়ালের চেয়েও ধূর্ত। তাকে খাচায় বন্দি করা যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সহজ নয়। (চলবে...)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।