ডুবোজ্বর
০১.
অরূপ রাহীকে যখন আমি দেখি নি-- তখনও তাকে খানিকটাই চিনতাম তার কবিতা বা লিরিক কখনো পড়া হয় নি কিংবা গান শোনা হয় নি। বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি তিনি ভালো গান করেন। তার গানে কীর্তন অথবা বৈষ্ণবপদাবলির গন্ধ পাওয়া যায়। কারো কাছে শুনেছি তিনি ভালো ইংরিজি জানেন... ওই পর্যন্তই; ভেবেছিলাম, আমাদেরই বয়েসি কেউ হবেটবে, এই যা। খবরের কাগজে এককবার চেহারাও মনে হয় দেখেছি দাড়িঅলা বড়চুল, বিনোদনপাতায়।
তারপর মনে হলো বয়স মনে হয় আমাদের চাইতে একটু বেশিই হবে।
০২.
ঢাকায় আসার পর বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরে এক লোকরে দেখলাম বড় বড় দাড়িঅলা, চুলবড়; লুঙ্গিপইরা দিব্যি বেল্ট দিয়া কোমরে মোবাইল ফোন বাইন্ধা থুইছে। মনে হইতেছিলো তার একলার শোডাউন চলতাছে। যাই হোক, মনে মনে বললাম, বেটা ভাব মারাস না ( প্রকৃত অর্থে ছাপার অযোগ্য একটা গালিই দিছিলাম সেইদিন)। এরপরও দেখেছি আজিজ মার্কেটে।
এবং চিনতে পেরেছি লোকটা অরূপ রাহী। তখনও চান্দি গরম হইয়া যাইতো।
০৩.
সেদিন মোল্লার দোকানো সন্ধ্যার পর অরূপ রাহীকে দেখলাম। না, তাকে দেখে আমার কোনোভাবেই মেজাজ খারাপ হয় নি। কারণ এর মধ্যে আমার শোনা হয়ে গেছে তার গাওয়া লালনের গান।
এবং এখনো শুনছি। লালনকে নতুন করে ফিরিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব একা অরূপ রাহীর। ইচ্ছে হচ্ছিলো তাকে গিয়ে বলি এইসব কথা। কিন্তু ইচ্ছেটাকে জিইয়ে রাখতে চাই বলেই যাই নি।
http://www.youtube.com/watch?v=ewhY2bL-f6E
০৪.
আমাদের ছোটো বেলায় বাড়িতে ক্যাসেটে লালনের গান বাজতো।
গাইতেন ফরিদা পারভীন, মিলন হবে কতো দিনে, খাঁচার ভিতর অচিনপাখি এইসব। তারপর বড়ো হয়ে আরো অনেকের কণ্ঠে লালন শোনা হয়েছে। এপার বাঙলার লালন আর ওপার বাঙলার লালনের সুরের তারতম্যও দেখেছি। এর মধ্যে লালন সম্পর্কে বেশকিছু পড়াশোনাও হয়েছে আমার। সম্ভবত ফরিদা ইয়াসমিনের কণ্ঠে লালন শোনার পর ভালো লেগেছিলো টুনটুন বাউলের কণ্ঠে।
এরপর লালন নিয়মিত শোনা হয় নি। বড়জোড় মাসে তিনমাসে একবার দুবার এইরূপ। এখন প্রতিদিনই শুনি।
০৫.
একদিন ফরিদা পারভীনের এক স্টেজশো তে লালনের জ্ঞান শুনতে গিয়ে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে বের হয়ে এসেছি। এতো অত্যাধুনিক যন্ত্রের শব্দযন্ত্রণার ভিড়ে লালনের চাপা পড়ে মরি মরি দশা।
আমার মাথায় ঢুকে না কেনো বাউল গান অথবা লোকায়ত গানে শিল্পিরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। আমার খালিগলায় রবিনাথের গান ভালো লাগে, আর কেবল একতারায় ভালো লাগে লালন।
০৬.
আমার একবন্ধু আরিফ ফেনী থেকে সপ্তাহের ছুটিতে মধ্যে মধ্যে ঢাকা আসে কেবল বই, মিউজিক আর মুভি কেনার জন্যে। আমার সাথে তার দেখা হয়। এবারে সে এসে জানালো অরূপ রাহীর লালনের কথা।
আজিজ মার্কেটে একটা দোকানে পেলাম। সব দোকানে শেষ। বাসায় এসে শুনলাম লালন। অবাক হলাম। অনেকবার শুনলাম।
একটানা শুনলাম। এখনো শুনছি। ইদানীং কতিপয় কাজের মধ্যে আমার একটা কাজ হলো বন্ধুদের কাছে অরূপ রাহীর লালন শুনতে দেয়া।
০৭.
অরূপ রাহীর লালন ভালো লাগার প্রধান কারণ তার যন্ত্রের ব্যবহার। তিনি আধুনিক কোনো যন্ত্র ব্যবহার করেন নি।
সব লোকজ যন্ত্র। আমার মনে হয়েছে গানের অনুষঙ্গ হিশেবে তিনি মূলত একতারা, বাঁশি, দোতারা, মন্দিরা, খোল, রসমন্দিরা ইত্যাদি যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। দ্বিতীয় কারণ হলো তার গান নির্বাচন। সাধারণত লালনের গান বলতে আমজনতা যে দশবারোটা গানের কথা লালনের গানের তথাকথিত গায়ক-গায়িকাদের কাছ থেকে জানতে পারে, সেইকটা গানের বাইরে গিয়ে তিনি গান বাছাই করেছেন। ফলত অনেকদিন পর লালন যেনো ধরা দিয়েছেন নতুন রূপে।
ভালোলাগার তৃতীয় কারণ, তার গায়কি। যেনো ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়ার শিল্পিদের কণ্ঠেই তার গান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।