১
ছোটবেলায় বাবার কাধে কম বেশি সবাই চড়েছি। আব্বা যখন আমাকে কাধে নিয়ে জমির দিকে যেত, মনে হত একলাফে আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। জমির আইলে বসিয়ে ধান ক্ষেতে নিড় দিত। আর আমাকে শিখাত ২ এর ঘরের নামতা....দুই এক্কে দুই। দুই দু গুনে চার।
আমি পানির জগ হাতে বসে থাকতাম। আর মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে তাকে পানি খাওয়াতাম। হঠাৎ করে বাবা বলতো বলতো দশ এগার কত হয়?
চট করে বলে ফেলতাম একশ দশ। বাবা বলত গুড। তখন আবার মনে হত আমি আবার বড় হয়ে গেছি।
২
গ্রাম থেকে আব্বা মাঝে মাঝে শহরে যেত। কোন কোন দিন যাবার সময় আমাকে বোলত কি হাওলাদার সাহেব আপনি কি আমার সাথে যাবেন,নাকি? আমি দৌড় দিতাম আম্মার কাছ। আম্মা যদি বলতো যা। আমার মনে হত ,আব্বার সাথে শহরে না,আসমান দেখতে যাব।
গাড়ীতে উঠে আমাকে জানালার পাশে একটা সিটে বসিয়ে আমার হাতে একটা টিকিট দিয়ে বলতো এইটা তোমার সিট।
আসে পাশে পিচ্চিরা যেত ওদের বাবা-মার কোলে চড়ে। আর আমি একা বড়দের সিটে করে যাচ্ছি। আমার তখন আবার মনে হত আমি বড় হয়ে গেছি।
৩
প্রায়ই আমাকে তার সাথে বাজারে নিয়ে যেত। আমার হাতে বাজারের খালই টা দিত।
শুরু হত আমার প্রশ্নের পালা। আব্বা সরকার কি?সরকার কেন অনেক টাকা ছাপায় না?আমাদের লাল গাই টা এইবার কি ছেলে বাছুর দিবে নাকি মেয়ে বাছুর?
পথে মাঝে মাঝে আইসক্রিম ওয়ালার দেখা পেয়ে গেলে,আমি দাড়িয়ে যেতাম। আইসক্রিম খাব। আব্বা এক টাকা দিয়ে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়ে বলত তোর মাকে বলিস না। আমি কিছু একটা বুঝে গেছি এমন ভাব করে বলতাম আইচ্ছা।
বলত ইলিশ মাছের সাথে কি নেয়া যায়?আমি বলতাম আলু। আলু আমার প্রিয় ছিল কিনা তাই।
যখন দেখতাম মাছ কিনে নেয়ার পর বলত চল আলু কিনে আনি। তখন আমার মনে হত আমি বড় হয়ে গেছি।
৪
ছেলেরা যখন মার্বেল খেলত।
আমি পাশে বসে দেখতাম। আব্বাকে দেখলে ওরা ছুটে পালতো। পড়ে থাকা মার্বেল গুলো নিয়ে গেলে,ছেলেরা আমাকে বলত আব্বার কাছ থেকে ওদের মার্বেল গুলো এনে দিতে। আমি গিয়ে আব্বাকে বলতাম ওরা এমনি এমনি খেলে,টাকা দিয়ে নয়। তুমি ওদের মার্বেল দিয়ে দাও।
আব্বা কি মনে করে মাঝে মাঝে দিয়ে দিত। ছেলেগুলো তখন বলতো তুই বলেছিস দেখে দিয়েছে। আমার তখন ও মনে হত আমি বড় হয়ে গেছি।
৫
এমনি করে একটু একটু করে আমাকে বড় হওয়ার অনুভূতি আগ্রহ ইচ্ছা তৈরী করে দিয়ে ছিল আমার অজান্তেই। হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়ে ছিল কি করে চলতে হয়,জীবনে বন্ধুর পথ।
আজ আমি বড় হয়ে গেছি ঠিকই। তবে এখন আর মনের মাঝে সেই অনুভূতি তৈরী হয় না। মাঝে মাঝে জীবনের কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে গেলে খুব মনে পড়ে,ছোটবেলার সেই সব দিন গুলোর কথা।
তখন মনে হয় জীবনে এই গল্পটা যেন কোন দিন শেষ না হয়ে যায়।
আমি এখন শহরে থাকি,আর বাবা গ্রামে।
মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। শুধু খোজখবর নেয়া। এখন আর আমাকে কেউ হঠাৎ হঠাৎ বলতে বলে না ......বলতো দুই এক্কে দুই কত হয়?
পৃথিবীর সকল বাবা যেন ভাল থাকে। সন্তানের জীবন শুরুর যে গল্প শুরু করে দেয় তা যেন কখনো শেষ হয়ে না যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।