এক একটা দিন এমন হয়। রোদের মেলা বসে আমার উঠান জুড়ে। আমি চেয়ে দেখি। কয়েকটা কাঠবিড়ালি ঘাসের উপর লুটোপুটি খায়। আমি ওদের জন্য বাদাম দেই।
ওরা খোসা ছড়িয়ে বাদাম খায় আর আমাকে দেখে।
আমি উঠানের একপাশে সরিষা শুকাই। অন্যপাশে কাউন।
সরিষা ইলিশ আমার দারুণ পছন্দ আর আর কাউনের পায়েশ।
আরো আছে।
কাঁচামরিচের আচাড়। আমি লাল মরিচ খেতে পারিনা। কাঁচামরিচ সবসময় পাওয়া যায় কই? তাই আচাড় বানিয়ে রাখি।
আমার উঠানের একপাশে কয়েকটা টমেটো গাছ। ও লাগিয়েছে।
ও টমেটো খায়না। তবে সময় হলেই গাছগুলোর যত্ন নেয়। মাঝে মাঝে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । আমি বলি গাছেদের সাথে কথা? ও হাসে। বলে তুমিই তো বলেছো গাছরা কথা বোঝে।
টমেটো গাছ এ ফুল আসে। এরপর সবুজ টমেটো গুলো লাল হয় দিনে দিনে। ও বলে তোমার কাঠবিড়ালীরা টমেটো পছন্দ করেনা। নাহলে সবগুলো ওদের দেয়া যেতো।
আমি কাঠবিড়ালীদের নাম দিয়েছি।
ওদের সবাইকে দেখতে একরকম তবুও। আমি নাম ধরে ডাকলে ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এত ভাল লাগে।
উঠানের একপাশে একটা কাঠের ঘর। পিছন দিয়ে ঘুরে গেলে একটা ছোট্ট বারান্দা আছে।
সেখানে দুটো চেয়ার পাতা। চাঁদের মওশুম এলে আমরা এখানে বসে থাকি। জোছনায় মিলেমিশে একাকার হই। ও বলে জোছনা স্নান। এই সময়টাতে পৃথিবীর আর কোন শব্দ আমাদের কানে যায়না।
যাবার দরকার ই বা কি?
আমাদের বাগানের কোনায় একটা লাইলাক গাছ। সাদা লাইলাক দেখলেই আমার কামিনী ফুলের কথা মনে পড়ে। কত বছর হয়ে গেলো !কামিনী ফুলের গন্ধ কি ভুলে গেছি?
গন্ধ আর সুর প্রানের শক্তি হয়ে মিশে থাকে ,আমাদের রক্তে। আমাদের অনুভবে।
কত গান শুনি আমরা।
প্রিয় সব শিল্পীদের। এক একদিন এক জনের গান। আমাদের পছন্দের গানের তালিকা একই রকম। মাঝে মাঝে খুব মজা হয়। আমি হয়তো একটা গান গুনগুন করছি।
ও অবাক হয়ে বলে এই গান গাইছো কেনো?
আমি বুঝতে পারি। বলি ,মনে মনে তুমিও গুনগুন করছিলে? ও হেসে দেয়।
মানুষ এর পাশাপাশি থাকা সময়ের অনেক আনন্দঘন ব্যাপার থাকে। ছোটছোট এইসব ভালো লাগা বড় হতে হতে রেলগাড়ির মতন লম্বা হয়। আর সেই পছন্দের রেলগাড়িতে চড়ে আমরা ঘুরে বেড়াই।
আমরা দুজনে বই পড়তে ভালোবাসি। একই বই একসাথে পড়তে শুরু করি। আমরা কোন বুক মার্ক রাখিনা। মনে মনে পাতার নম্বর মনে রাখি। বইটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত্য আমরা বই প্রসংগে কোন কথা বলিনা।
যার আগে শেষ হয় সে শুধু অপেক্ষা করি কবে অন্যজনের শেষ হবে। এরপর চলে কথা। কত কথা যে হয়।
আমরা দুজনেই রান্না করতে খুব পছন্দ করি। আমরা রান্না করতে করতে কত গল্প যে করি।
আমাদের কথা জুড়ে ছেলেবেলার দিন। আমাদের বড় হওয়া একদম ভিন্ন পরিবেশে অথচ আমাদের খেলাধূলা, গল্পের বিষয় ,ভাললাগা মন্দলাগা গুলো অনেকটা একই রকম। এর কারন মনেহয় সময়। আমরা একই সময়ের মানুষ।
মাঝে মাঝে আমি অবেলায় ঘুমিয়ে থাকি।
বারান্দার মাদুর পেতে আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমের অতলে ডুবে যেতে খুব ভালো লাগে। মেঘের ভেলায় করে ঘুরে বেড়াই কত আকাশ। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামলে আমি ভিজে একাকার হই।
ঘুম ভাঙলে চেয়ে দেখি ও বসে আছে। বারান্দার ঝুলানো চেয়ারটায়।
মগ্ন ওকে দেখি লুকিয়ে। ও কি করে যেনো বুঝে ফেলে। আমার দিকে হঠাৎ তাকায়।
খেতে বসে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। ও কত কি রান্না করেছে।
সজনে ডাল, মাছ ভাজি, টমেটো ভর্তা ,কাঁঠালের বিচি ভর্তা আর কাউনের পায়েশ। আমি অবাক হয়ে যাই। আনন্দে ওকে জড়িয়ে ধরি। ও হাসে।
আমি ওর মুঠোভরে এনে দেই রোদের ঝিকিমকি।
। আর ও আমার জন্য আনে এক গোছা ঘাসফুল। একেকটা রোদেলা দিন এভাবেই পার হয়ে যায়।
স্বপ্ন এবং সত্যিতে।
(মানুষের জীবনটা বড় অদ্ভুত।
এই জীবনে কাছাকাছি থাকা মানুষগুলো ইচ্ছা করলেই জীবনটাকে বৈচিত্রময় করতে পারি। অথচ তা না করে কেবল যা নেই তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যা আছে তা নিয়ে বেশ কাটিয়ে দেয়া যায় এক জীবন। এই এক জীবনের কত রং বাহারী স্বপ্ন থাকে। একটু প্রয়াসী হলেই বেশ সুন্দর করে কাটিয়ে দেয়া যায় জীবন।
কিছু স্বপ্ন আর কিছু সত্যিতে। নানান অনুভবের তিলতাল সুষমা দিয়ে আমার এই লেখা। মাঝে মাঝে এমন লেখা জমা হয়ে থাকে আমার খাতার পাতায়। কখনো বা মনের পাতায়।
যে গল্পের শেষ নেই এর শিরোনাম, এজন্য যে , আবার ও আসবে জীবন গল্প।
আজ ,কাল বা পরশু সেদিন হয়তো আকাশ ভরা রোদ থাকবেনা, হয়তো একটা বৃষ্টিদিন হবে তা। হয়তো সে গল্পে থাকবে আমাদের চেনা কেউ। তুমি ,সে বা অন্যকেউ। আমাদের স্বপ্ন থাকে বলেই জীবন এত সুন্দর মনেহয়। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আমরা আকাশের মেঘমালায় ঘুরে বেড়াই।
কেউ ভোরের পুরো আকাশটা অন্য কাউকে দিয়ে দেয়। কেউবা ভোরের শিশির। নরম সেই শিশির ছুঁয়ে কারো কারো ঘুম চোখে স্বপ্ন আসে। )
ছবির লিঙ্ক:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।