১
সকাল ১০টা বাজে।
শুক্রবার দিনটা আকাশের জন্য একটু দেরিতেই শুরু হয়। টানা ছয় দিন ছয়টায় উঠে উঠে ক্লান্ত হওয়ার পর একদিন দশটায় না উঠলে যেন ছুটির দিনটাই বৃথা যায়।
দুধওয়ালা এসেছে। ব্যাটা আসলেই একটা ফাজিল।
নিজের বাড়িতে কলিংবেল নেই। তাই মনের ইচ্ছা মতো কলিংবেল বাজায়। কলিং বেলের এমন বিশ্রি শব্দে বিছানা থেকে উঠে সোজা দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলে আকাশ,
দরজা খুলতেই দুধওয়ালা বক্তব্য,“স্যার দুধ!”
“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি,তুমি তো আর দই নিয়ে আসবে না যে নতুন করে বলার দরকার আছে!” আকাশ উত্তর দেয়।
- “স্যার যে কি বলেন!”দুধওয়ালা আহ্লাদে বলছে।
-“তোমাকে না কতদিন বলেছি এভাবে বেল দেবে না।
আর এত দেড়ি করেছো কেন?তোমার তো সাতটায় আসার কথা”
-“স্যার,আমার পোয়াতি গাইডা অসুস্থ তো তাই দেড়ি হইছে,তাছাড়া আমি জানি আইজ আপনে বাসায় আছেন। ”
-“এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে তোমার পোয়াতি গাই না পোয়াতি বউ অসুস্থ”
-“স্যার যে কি কন!”
-“আচ্ছা ঠিক আছে যাও,আর কাল থেকে সকাল সকাল চলে আসবে। ”
-“জ্বী আচ্ছা স্যার”
দুধ ওয়ালা চলে যেতেই আকাশ দরজা লাগায়। দরজা লাগিয়ে ঘুরে নিজর ফ্ল্যাটটার দিকে তাকায়। তিন রুমের ফ্লাট।
ঢাকা শহরে একা ব্যচেলর মানুষ ভাড়া থাকা যে কি দুসাধ্য তা ব্যাচেলর বেচারারাই জানে। তবুও ধানমন্ডিতে মামার জোরে এই ফ্ল্যাট। ড্রয়িং রুমটা পুরোই আগোছালো। গতসপ্তাহে বন্ধুরা এসে ড্রয়িং রুমে পাকিস্তান ইন্ডিয়ার খেলা দেখেছিল আর সাথে কে.এফ.সি’র ফ্রাইড চিকেন খেয়েছিল। এখনও তার প্যাকেট গুলো সোফার উপর।
ডাইনিং এর অবস্থা আরো করুন,সব ময়লার স্তরে স্তরে ভরপুর। আর কয়েক বছর এভাবে থাকলে নিশ্চিত খনিজ পদার্থের জন্য ওর বাসায়ই যথেস্ট। পুরো ফ্লাটে শুধু নিজের ঘরটা আর রান্না ঘরটাই ভালো আছে। কারন এ দুটো জায়গা ছাড়া আর কোন জায়গা ব্যবহারের সময় ও পায় না। তবুও পরিস্কার করতে হবে।
এভাবে জঙ্গলে তো আর বাস করা যায় না।
বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা রান্না ঘরে ঢুকে এক কাপ চা বানায়। চা খেতে খেতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে আজকের কাজ। প্রথমে পুরো ফ্লাট পরিস্কার করতে হবে,তার পর দুপুরে জুম্মার নামাজ শেষ করে সোজা বন্ধু ইরফানের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে। পর পর দু’সপ্তাহ এটা সেটা বলে কাটিয়েছে,এবার যদি না যায় তবে হাড্ডি আলাদা করে দেবে ব্যাটা।
বিকেলের পর তেমন একটা কিছু নেই,তবে মানিকনগর ইমন এর বাসায় যাওয়া যেতে পারে। ওখানে আরো কিছু বন্ধু থাকবে। ওদের সাথে রাত অবধি জমপেশ আড্ডা দেয়া যাবে। এসব ভাবতে ভাবতে কফি কখন শেষ হয়ে গেছে নিজেও বলতে পারবে না আকাশ। হঠাত কলিং বেল বেজে ওঠে।
এমন অসময়ে কে আসবে? ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে চলে আসে আকাশ। এর মধ্য তিনবার কলিং বেল পরে যায়। চতুর্থ কলিংবেল পরতেই দরজা খুলে ফেলে আকাশ।
-“স্যার একটা চিঠি এসেছে”হাসি হাসি মুখে বলে ওঠে দারোয়ান।
-“আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে যাও।
”উত্তর দেয় আকাশ
দারোয়ান চিঠিটা আকাশের হাতের দিকে এগিয়ে দেয়। আকাশ চিঠিটা কে পাঠিয়েছে তা না দেখেই দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর চিঠির এনভেলাপের দিকে তাকায় সে। কোন নাম নেই,কোথা থেকে পাঠিয়েছে তাও লেখা নেই। শুধু ওর নাম ঠিকানা লেখা।
কে পাঠাতে পারে? চিঠি পাঠানোর মতো তো কেউ নেই,যে কিনা মোবাইলের যুগে চিঠি পাঠাবে। যেখানে চাকরীর জন্য চিঠি আসে ইমেইলে সেখানে কে পাঠাবে চিঠি। ভাবতেই অবাক লাগে। তারপরও দেখা যাক কি!কৌতুহল নিয়ে আকাশ এনভেলাপটার একপ্রান্ত ছিড়ে ফেলে। খুলতেই ভেতর থেকে একটা সাদা কাগজ ওকে উকি মেরে ডাক দেয় ওকে।
আরে না,এটা কাগজ নয়। একটা ফ্যাশন-শো এর টিকেট। সময় আজ রাত আটটায়,হোটেল শেরাটনে। অবাক হয় আকাশ। একজন সাধারন সরকারী কর্মচারীকে কে ডাকবে ফ্যাশন-শো দেখতে? দ্বিধায় পরে যায় আকাশ।
যাবে নাকি যাবে না?
প্লানিং করা সব কিছুই হল,দুপুরে ইরফানের বাসায়ও যাওয়া হলো। ইরফানকে ব্যাপারটা বলতেই বলে ওঠে,
-“দেখ,তোর কোন প্রেমিকা মনে হয় ফ্যাশন শো করছে,তাই তোকে ইনভাইট করলো” কথাটা বলেই ও হাসতে শুরু করে। এদিকে ইরফানের হাসিতে ওর স্ত্রীও হাসতে থাকে।
সবশেষে কিছুই মিললো না আকাশের। এর মানে কি!অবশেষে ঠিক করে ফেললো আকাশ।
হ্যা,সে যাবে। অন্তত ইমন ওদের সাথে আড্ডা দেয়ার চেয়ে একদিন ফ্যাশন শো দেখা,তাও আবার শেরাটনে অনেক ভালোই হবে। যেই কথা সেই কাজ। সন্ধ্যা হতেই আকাশ রওনা হয়ে পরে শেরাটনের উদ্দেশ্য।
২
শেরাটনের মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়েই বোঝা যাচ্ছে ভেতরে বেশ রাজকীয় হালের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।
সবাই তাদের স্ত্রীকে নিয়ে গাড়িতে করে ঢুকছে। বেশ সুট টাই পরা। আকাশ সুধু সাধারন একটা নীল রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে। পায়ে কালো স্যু। মেইন গেট দিয়ে ঢুকে সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে করতে চলে যায় মুল অডিটরিয়ামের সামনে।
গেটে টিকেট চাইলে ও ওর পকেট থেকে টিকেটটা বের করে এগিয়ে দেয়।
ভেতরে ঢুকে আকাশের চোখ তো পুরো ছানাবড়া। এ আবার কোন জগত। এটা বাংলাদেশ নাকি পশ্চিমের কোন রাজ্যে আছে সে? সবাই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা,ছেলেরা সব হা করে তাকিয়ে আছে স্টেইজে ছোট ছোট বস্ত্র পরা মেয়ে গুলোর দিকে। আকাশের দেখতেই লজ্জা লাগে।
তারপরো স্টেইজের কাছের একটা কর্নারের সিটে গিয়ে বসে পরে আকাশ। আর ভাবতে থাকে কে ওকে টিকেট পাঠালো সেই কথা।
কিছুক্ষন পরে ওর পাশের সিটে একটা মেয়ে আসে। সম্পুর্ন সাদা শাড়ী পরা। আধো আলো,আর স্টেইজের আলোর ছটফটানিতে ঠিকমতো চেহারা দেখা যাচ্ছে না।
তবে মেয়েটা অপরুপ সুন্দরী এটা নিশ্চিত। ব্লাউজের সামনে ও পেছনটা অনেক নিচে নেমে গিয়েছে। শাড়িও অনেক নিচে নামানো,অনেক সরু আচল দেয়া। বোঝায় যাচ্ছে অনেক উচু সোসাইটির মেয়ে। বয়সটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
কারন চেহারা দেখতে পাচ্ছে না আকাশ। তবুশ,সরু শারীরিক অবয়ব দেখে এতটুকু বোঝা যায় সম্ভবত ২৫-২৬ বছর হবে। আর হাতের আংটি বলে দেয় সে বিবাহিত। ধারনা করা যায়,এর স্বামীর অনেক টাকা করি।
আকাশ আবার অন্যদিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে কে ওকে এখানে ডাকলো এভাবে? আর এখনও কেন সে ওর সামনে আসছে না? রহস্য কি?
-“কেমন আছো আকাশ?”পাশের সাদা শাড়ী পরা মেয়েটি আকাশকে জিজ্ঞাসা করে।
-“কে?” আকাশ অবাক হয়ে তাকায় মেয়েটির মুখে ওর নাম শুনে।
হঠাত স্টেইজের একটা আলোর ঝলকানিতে মেয়েটার মুখ দেখতে পায় আকাশ। মেয়েটি অন্য কেউ নয়,মেয়েটি নীলা। প্রায় ৩ বছর আগে ফেলে আসা সেই নীলা।
(চলবে........)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।