সুমতের শরীরটা ভীষণ রকম অসুস্থ ছিল। জ্বরে গা পোড়ে যাচ্ছিল। শরীরটা কেমন শীত শীত অনূভূতি। গ্রীষ্মকালে কম্বল গায়ে শুয়ে আছে। ব্যাপারটা কেমন? সবাই গরমে ভীষণ আস্বস্তিতে।
গা দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। সেখানে ও কাপছে। তার মা মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছেন। আনারস কেটে রাখা আছে সামনে। মুখে দারুণ অরুচি।
অন্য কিছু খাওয়া যাচ্ছে না। খেতে গেলে বিস্বাদ একটা অনুভূতি। বেশ কয়েকবার বমি হওয়াতে শরীরটা আরো দূর্বল লাগছে। তবে বমি আসার সময়টা খুব বিরক্তিকর। মা লাগাতার সেবা যত্ন করে যাচ্ছেন।
দিন নেই রাত নেই। সবসময়। পাশে ই ঘুমিয়ে পরছেন বালিশে মাথা রেখে বসা অবস্থায় । কপালে পানি পট্টি দেয়া,গা পানি দিয়ে দিয়ে মোছে দেয়া। কিছুক্ষণ পর পর জিজ্ঞাসা করছেন।
কেমন লাগছে কি খেতে ইচ্ছা করে। বাসা মোটামুটি ফলের স্টল বানিয়ে ফেলেছেন। লালন মরলো জল পিপাসায় থাকতে নদী মেঘনা। এত খাবার থাকলে কি হবে। খাচ্ছি শুধু করলার তরকারি সাদা ভাত।
আর ফলের মধ্যে আনারস। জ্বর একটু বেড়ে গেলেই মা কেদে কেটে একাকার করছেন। আর বাবা মার কথা মত সব কিছু এনে হাজির করছেন। মাঝে মাঝে দোআ দরূদ পড়ে ফু দেয়া চলছে। ওষুধ ও চলছে।
তবে সুস্থ করার মালিক আল্লাহ। ডাক্তার বেটার ওষুধের কিছুই করার নাই্ ।
সামনে ঈদ । সুমিত সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হয় যখন ঈদের মধ্যে জ্বর আসে। হাতে মাত্র চারদিন বাকি এর মধ্যে সুস্থ হওয়া লাগবে।
ভাইরাস ফেভার হলে সুস্থ হওয়ার ব্যাপক চান্স। তবে জ্বর চলে যাওয়ার আসল খেলা শুরু হয়। মুখটা আরো অস্বাদ হয়ে যায়। ঈদের খাওয়া মাটি মানে বিশাল ক্ষতি। বছরে দুটো ঈদ বিশেষ খাওয়াদাওয়ার প্রগ্রাম সেখানে এই ব্যাঘাত কি প্রাণে সয়।
তাছাড়া বিরাট একটা ক্ষতি তার হয়েই গেছে। আদুরীকে সে প্রতিদিন ফুল গিফট করে। অসুস্থতার কারণে তা করা হচ্ছে না। একেক দিন একেক রকম ফুল। আদুরীর পছন্দ টিউলিপ।
আদুরী প্রচন্ড অভিমানি। তার দেয়া সব কিছুকে পচা বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করবে কিন্তু নিভৃতে সেই ফুল গুলো হাতে নিয়ে বসে থাকে। ফুল গুলি তাকে ভাল বাসার অনুভূতি দেয়। অবশ্য ফুল না পেয়েই সে নিশ্চিৎ হয়েছে সুমিত অসুস্হ। কিন্তু কিছু্ই করার নেই সুমিতের ফোন নম্বর তার কাছে নেই।
তারটাও সুমিতের কাছে নেই। ও ফোন নম্বর নেয়না এজন্য যে তাহলে সুমিত প্রতিদিন ওর সঙ্গে দেখা করবে না। সুমিতের সঙ্গে ঝগড়া করাটা তার কাছে ব্যাপক উপভোগ্য। ওটা করার জন্যই সারা জীবন সুমিতের সঙ্গে থাকার চিন্তা ভাবনাা। সুমিতের কোন কাজ কর্ম তার মোটেই ভাল লাগে না।
সুতরাং ঝগড়া করার অনেক সুযোগ থাকায় লাইফপার্টনার হিসেবে তার নাম্বার ওয়ান চয়েস সুমিত।
মাঝে মাঝে অনুপস্থিতি নাকি উপস্থিতির চেয়ে অনেক বেশি অনুভূতির জন্ম দেয়। যাই হোক ওর অনুভূতি বোধ করি এখন তুঙ্গে। কারণ জ্বরের বেশ কয়েকদিন তার সংগে দেখা হয়নি। অনেকগুলো ঝগড়া জমে আছে।
সুমিতের কিন্তু ওর জন্য খুব মায়া হচ্ছে মনে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে তার সঙ্গে দেখা নেই। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা। কোথায় আছে, কি করছে,খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করছে কিনা?রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা তাতে যে কোন ঝুকি নেমে আসতে পারে। তার প্রেমে ফিদা লোকজনের অভাব নেই। তাই সব আশংকার চেয়ে বড় আশংকা হলো ওকে হারানোর আশংকা।
তবে এটা সত্যি তাসফিয়া আর সুমিতের জন্ম হয়েছে ভালবাসবার জন্য। বন্ধুরা অন্তত তাই বলে। সুমিত তাসফিয়াকে আদর করে ডাকে তেসো। যাই হোক সুস্থ হয়ে ঈদের শেষ কার্যদিবস শেষে তেসোর সঙ্গে সাক্ষাৎ। অনেক দিনের জমানো ঝগড়া সেগুলো করতে হবে।
কত দায়িত্ব। তেসো ও সুমিতের জন্য পাগল পারা হয়ে আছে। কয়েকদিনের বিরতীতে তেসো হৃদয়ে ব্যাপক অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। রমনায় পড়ন্ত বিকেলে তারা দুজন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনিত হয় । খোলা আকাশের নিচে আর কোন ঝগড়া ঝাটি নয়।
ঝগড়া হবে বাসায় বেড রুমে ,খাওয়া টেবিলে মোট কথা একই ছদের তলায়।
রমনায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। এর মধ্যে কপোত কপোতি বসে আছেন পরম সুখে। রাজ্যের সুখ ভর করেছে রমনায়। কারো দিকে কারো কোন ভ্রক্ষেপ নাই।
মিষ্টি প্রেমের মিষ্টি খেলায় ভাসিয়েছে ভেলা তরুণ তরুনী। এক দল যুবক যুবতি মেতেছে দারুন আড্ডায় । হাতে গীটার । একজন গান ধরেছে কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই। আরো কত গান।
অঞ্জন দত্ত বোধ করি তাদের প্রিয় সিঙ্গার। রঞ্জনা আমি আর আসবো না,মেরিয়েন ,বেলাবোস কাঞ্চন জংঘা কাঞ্চন মন । ছেলে গুলো দারুণ গাছ্ছিল। অঞ্জন দত্ত নচিকেতা ওদের গানে কেমন যে তারুণ্যের ছোয়া মেশানো। আড্ডার সঙ্গে বেশ য়ায়।
যাই হোক সঙ্গীত মুখর সন্ধ্যা রাত্রিরে জীবনের হিসেব নিকেশে ব্যস্ত সুমিত আর তেসো। সিদ্ধান্ত দ্রুত বিয়ে করে ফেলবে তারা।
বাসায় ব্যাপারটা জানাতে হবে। সেখানেই যত বিপত্তি। সুমিতের ফমিলিতে ব্যবসা বাণিজ্য নেই আর তেসোর ফ্যামিলি বনেদি ব্যবসায়ী।
দুই ফ্যামিলি তেসো -সুমিতের ব্যাপারে এক হতে পারবে তো। ব্যাপারটি তেসো আর সুমিত দুজনে বেশ আলোচনা করলেও সিদ্ধান্ত হলো তারা বিয়ে করবে। ফ্যামিলি না মানলেও তারা সিদ্ধান্তে অটল। সুমিত জব করে। না খেয়ে মরার চান্স নেই।
চলে যাবে ভালবাসাবাসি করে দিন। ভালবাসাই তাদের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিবে। লাভ উইল মেক দেম পারফেক্ট ফর ইচ আদার।
ভালবাসা হয়েছে। ঝগড়া হয়েছে।
হয়েছে ফুল বিনিময়।
সময় কোথা দিয়ে কেটে গেছে । মধুর সময় এমনই হয়।
সুমিতের কাধে মাথা রেখে গান শুনছে তেসো। তরুণ তরুনীদের মধ্যে কে একজন গান ধরেছে জেমসের ;হতেও পারে এ গানই শেষ গান হতে পারে এ দেখাই শেষ দেখা।
ব্যাপারটা দারুন সত্যি ঈদে চুরী ডাকাতি বেড়েছে। বেড়েছে ছিনতাই। অজানা আশংকা কাজ করে। মরে গেলেই এ দেখাই শেষ দেখা । কিসের এত দুঃখ তোমার বসে বসে কার কথা ভাবছো।
সুমিত তেসোর চোখে কঠিন প্রতিশ্রুতির দৃষ্টি। অনিন্দ্য সুন্দরী তেসোকে পুতুলের মতই লাগছে। অনেক সুন্দর পুতুল আছে তবে কোনটাই তেসোর মতো নয়। হঠাৎ তেসোকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকে সুমিত। বিয়ে তারা করবেই।
ওরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
তেসোকে নিরাপদ জায়গায় পৌছে দিয়ে শাহবাগে এসে হাজির হয় সুমিত। গাড়ীর অপ্রতুলতা। ব্যাপক টেনশনে সুমিত। বাসা থেকে মা বাবরবার ফোন করছে।
এর মধ্যে দেখলেন এক বৃদ্ধা অসহায় ভাবে দাড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা ব্যাগ। জানতে পারলো ঘন্টাখানেক ধরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু কিছু কোন গাড়ি পাচ্ছে না। বেচারা পেশারের রুগী। প্রচন্ড টেনশনে আছেন।
প্রচণ্ড জ্যাম। গাড়ি গুলো নড়ছে না। এমন জ্যামে গন্তব্যে পৌছতে সময় লাগবে তিন চার ঘন্টা। ব্যাপারটা আসলেই ভয়ানক। প্রচুর মানুষ গাড়ীর অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে।
দেখলে মনে হবে কোন সমাবেশ মিছিলের প্রস্তুতি। বাসে উঠতে হলে মোটামুটি যুদ্ধ করে উঠতে হবে।
বেশি সময় ধরে প্রেম করার জন্য স্রষ্টা প্রদত্ত পানিশমেন্ট। আসলে স্রস্টাকে ভালবাসতে হবে সবচেয়ে বেশি। সেখানে অন্য কেউ এলেই তার ঘাড়ে শাস্তি মাস্ট।
এখন সুমিতের ঘাড়ে শাস্তি আসার কারণ তেসোকে বেশি পারিমানে ভালবাসা । আল্লাহর মার দুনিয়ার বার। দেখা যাবে তেসোকে দিয়ে ই স্রস্টা কঠিন শান্তি দিবেন। তেসো তার অনেক প্রিয়। তেসো তাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়ার যোগ্যতা রাখে।
সুমিতের খুব মায়া হলো বৃদ্ধার জন্য। বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করলো মা আমি আপনাকে বাসায় পৌছে দিব। দুশ্চিন্তা করা অনুচিৎ। বাসে বসে অনেক কথা হলো বৃদ্ধার সঙ্গে। তার মেয়েদের কোথায় বিয়ে দিয়েছেন ব্লা ব্লা ব্লা।
তার একমাত্র ছেলে। ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন এ সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ের সঙ্গে। ছেলে তার বউ ছাড়া কারো কথা শুণেনা। তার বউমা ও সব কিছুতে ব্যাপক বাড়াবাড়ি করেন। প্রায়ই তার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাওয়া লাগে।
আজে বাজে খরচ করে প্রচুর। আর নিজের বাবার বাড়ি যা পারে তাই পাঠিয়ে দেয়। বৃদ্ধার দুঃখের শেষ নেই। সুমিতকে পরামর্শ দেয় গরীবের ঘরে বিয়ে করতে নাই। গরীব ঘরের মেয়েরা হয় লোভি ।
আর প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। তাদের খাই খাই শেষ হয় না। এমন মেয়ে বিয়ে করা উচিৎ না। ছেলেটাকে তার শেষ করে দিল। হুকুমের চাকরের মত ছেলেকে দিয়ে সব করায়।
আর ছেলেও বউ যা বলে তাই করে। তার ছেলের অনেক কষ্ট। এসব বলতে বলতে বৃদ্ধার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে। সুমিত কি বলে সান্তনা দিবে ভাষা খুজে পায় না। বৃদ্ধা গাড়ী থেকে নামা আগে বলল ছেলেকে আলাদা করে দিয়েছি।
ওই বউয়ের সঙ্গে থাকা যায় না।
সুমিত রিকশা নেয়। দ্রুত বাড়ি পৌছতে হবে। ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। হয় বৃদ্ধাটি তার ছেলের জন্য অনেক মমতাময়ী কিন্তু ছেলের বউয়ের জন্য তেমনটি নয়।
হতে পারে তিনিই দজ্জাল শাশুড়ী । কিংবা বউটি হয়তো শাশুড়ীকে দেখতে পারেন না মোটেই। মায়ের মত দেখলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। নিজের ব্যাপারেও ভাবে সুমিত। সেও একমাত্র ছেলে।
তাকে ছেড়ে তার মা আলাদা থাকবে ভাবতেই কেমন গা শিউরে ওঠে। বৃদ্ধার জন্য প্রচন্ড মায়া লাগে। মায়া লাগে বউটির জন্য ও। ছেলেটেরি জন্যও কারণ সে মার মমতা থেকে দূরে থাকছে। মায়ের মমতা তার জুটছেনা।
হাও প্যাথেটিক!
যাই হোক ভালবাসা গভীরিকরণ চলছে। তেসো ঠিক মত পৌছেছে জানা থাকলেও সুমিতের ব্যাপারে জানতে পারছে না তেসো। সুমিতের অনুপস্থিতি তেসোর মনে গভীরতর অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে। অনুপস্থিতি জনিত ভালবাসার গভীরতা তেসো মনে সৃষ্টি হলেও সুমিতের মনে আশংকার সৃষ্টি করে। তেসোকে হারানোর আশংকা ।
তবে বিয়েটা হয়ে গেলে তার এ অযাচিত বেদনা আর আশংকা থেকে মুক্তি মিলবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।